
ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য কেমন ডেস্কটপ পিসি নির্বাচন করবেন? জেনে নিন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর, র্যাম, SSD, GPU, মনিটর ও বাজেট ফ্রেন্ডলি কনফিগারেশনের সাজেশন। বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং অনেক তরুণ-তরুণীর আয়ের অন্যতম বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য ডেস্কটপ পিসি। দীর্ঘ সময় বসে কাজের জন্য এবং আপগ্রেড করার সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ডেস্কটপ পিসির কোনো জুড়ি নেই। সঠিক কনফিগারেশনের ফ্রিল্যান্সিং পিসি আপনাকে শুধু দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করবে না, বরং দীর্ঘ মেয়াদে প্রফেশনাল ক্যারিয়ার গড়তেও সহায়তা করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ “ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য কেমন ডেস্কটপ পিসির প্রয়োজন”। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত-
ফ্রিল্যান্সিং পিসির জন্য প্রসেসর (CPU) নির্বাচন
ডেস্কটপ পিসির পারফরম্যান্স মূলত নির্ভর করে প্রসেসরের উপর। ডেস্কটপ পিসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রসেসর। আপনার কম্পিউটারের প্রসেসর যত উন্নত হবে, আপনার কাজের গতি তত বাড়বে। আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী প্রসেসর নির্বাচন করতে হবে।
কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে প্রসেসর নির্বাচনঃ
বেসিক কাজঃ আপনি যদি কনটেন্ট রাইটিং, ডেটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদির মতো লাইট কাজ করেন, সেক্ষেত্রে Intel Core i3 বা AMD Ryzen 3 - ই যথেষ্ট।
মিড-লেভেল কাজঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং এর মতো মিড লেভেল এর কাজের জন্য Intel Core i5 বা AMD Ryzen 5 সিরিজের প্রসেসর বেশি কার্যকর।
ভারী কাজঃ ভিডিও এডিটিং, 3D মডেলিং, হাই-এন্ড অ্যানিমেশন বা গেম ডেভেলপমেন্টের মতো ভারী কাজ করতে চাইলে Intel Core i7/i9 বা AMD Ryzen 7/9 সিরিজের প্রসেসর বেঁছে নেওয়ছে অনেক গুণ ভালো।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে
র জন্য র্যাম (RAM) নির্বাচন
মাল্টিটাস্কিং ও সফটওয়্যারের স্মুথ পারফরম্যান্সের জন্য র্যামের গুরুত্ব অনেক। র্যাম যত বেশি হবে, মাল্টিটাস্কিং তত সহজ হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের গতি ও মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন র্যাম থাকা গুরুত্বপূরণ।
বেসিক কাজের জন্যঃ
ন্যূনতম “৮ জিবি র্যাম” দিয়ে শুরু করতে পারেন।
মিড - লেভেল বা ভারী কাজের জন্যঃ
গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং ও ভিডিও এডিটিংয়ের মতো কাজের জন্য “১৬ জিবি বা তার বেশি র্যাম” বেছে নেওয়া উত্তম।
এছাড়াও ভবিষ্যতে উচ্চ গতি ও হাই - পারফরম্যান্সের জন্য যেন র্যাম আপগ্রেড করা যায়, সেজন্য মাদারবোর্ডে ফ্রি স্লট আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য স্টোরেজ (HDD/SSD) নির্বাচন
স্টোরেজ যত বেশি হবে, কাজ তত দ্রুত শেষ করতে পারবেন। ডেটা সংরক্ষণ এবং দ্রুত কাজ করার জন্য স্টোরেজের দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। SSD (Solid State Drive) এখনকার দিনে অপরিহার্য হয়ে পরেছে। এতে সিস্টেম বুট হয় দ্রুত এবং সফটওয়্যারগুলোও দ্রুত গতিতে চলে।
বেসিক কাজের জন্যঃ
২৫৬ জিবি SSD দিয়ে শুরু করতে পারেন। অথবা ২৫৬ HDD জিবি ব্যবহার করতে পারেন।
ভারী কাজের জন্যঃ
বড় আকারের ফাইল (ভিডিও, প্রজেক্ট ফাইল) সংরক্ষণের জন্য অথবা আরও উচ্চ গতির জন্য ৫১২ জিবি SSD অথবা “১ টেরাবাইট HDD” যুক্ত করলে আরও সুবিধা হবে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য গ্রাফিক্স কার্ড (GPU) নির্বাচন
সব কাজের জন্য আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন হয় না। তবে ফ্রিল্যান্সিং কাজের ধরন অনুযায়ী এর গুরুত্ব ভিন্নতা রয়েছে।
বেসিক কাজের জন্যঃ
কনটেন্ট রাইটিং, ডেটা এন্ট্রি বা মার্কেটিংয়ের কাজের জন্য ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্সই যথেষ্ট।
মিড-লেভেল কাজের জন্যঃ
গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপিং, ভিডিও এডিটিং, মোশন গ্রাফিক্স ইত্যাদির জন্য ন্যূনতম “NVIDIA GTX 1650” বা “AMD RX 6500 XT” ভালো অপশন।
ভারী কাজের জন্যঃ
ভিডিও এডিটিং, 3D মডেলিং, হাই-এন্ড অ্যানিমেশন 3D কাজ বা গেম ডেভেলপমেন্ট এর জন্য “RTX” সিরিজের কার্ড ব্যবহার করা উচিত।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য মনিটর নির্বাচন
দীর্ঘ সময় কাজ করার জন্য একটি ভালো মনিটর অপরিহার্য। সারাদিন কম্পিউটার স্ক্রিনে কাজ করতে ভালো মানের মনিটর ব্যবহার করতে হবে। ভালোমানের মনিটর না হলে দীর্ঘ সময় কাজ করা কঠিন হয়ে পরে।
বেসিক কাজের জন্যঃ
“১৭-২৪” ইঞ্চি Full HD মনিটর” ব্যবহার করা ভালো। কনটেন্ট রাইটিং, ডেটা এন্ট্রি বা মার্কেটিংয়ের জন্য এ ধরনের মনিটরই যথেস্ট।
মিড-লেভেল বা ভারী কাজের জন্যঃ
গ্রাফিক্স ডিজাইন, 3D অ্যানিমেশন বা ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য IPS প্যানেলের মনিটর নির্বাচন করা উচিত, যাতে রঙের পার্থক্য স্পষ্ট বোঝা যায়।
এছাড়াও চোখের আরাম বজায় রাখতে “Eye Care Technology” বা “Low Blue Light” ফিচার যুক্ত মনিটর ব্যবহার করা অনেকাংশে ভালো।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য যেমন মাদারবোর্ড ও পাওয়ার সাপ্লাই দরকার
মাদারবোর্ড নির্বাচন করার সময় ভবিষ্যতে আপগ্রেডের সুযোগ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। মাদারবোর্ড ও পাওয়ার সাপ্লাই নির্বাচনের সময় যে বিষয় গুলোর দিকে খেয়াল রাখা দরকারঃ
ইন্টারনেট ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম
ফ্রিল্যান্সিং মানেই অনলাইনে কাজ করা। তাই দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশিঃ—
কাজকে আরো সহজ ও গতিশীল করে দেবে।
বাজেট অনুযায়ী কনফিগারেশন সাজানো
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য উপযোগী ডেস্কটপ পিসি তৈরি করতে বাজেট অনুযায়ী নিচের কনফিগারেশন বিবেচনা করতে পারেনঃ—
বেসিক লেভেল(৩০-৪০ হাজার টাকা):
Core i3/Ryzen 3 সিরিজের প্রসেসর, ৮ জিবি র্যাম, ২৫৬ জিবি SSD
মিড লেভেল (৫০-৭০ হাজার টাকা):
Core i5/Ryzen 5 সিরিজের প্রসেসর, ১৬ জিবি র্যাম, ২৫৬ জিবি SSD + ১ টেরাবাইট HDD, GTX 1650 GPU
হাই লেভেল (৯০ হাজার থেকে ১.৫ লাখ টাকা):
Core i7/Ryzen 7 সিরিজের প্রসেসর, ৩২ জিবি র্যাম, ৫১২ জিবি SSD + ২ টেরাবাইট HDD, RTX সিরিজ GPU
কেন ডেস্কটপ পিসি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আদর্শ?
আপগ্রেড সুবিধা: যেকোনো সময় র্যাম, GPU বা স্টোরেজ বাড়ানো যায়।
পারফরম্যান্স: দীর্ঘ সময় কাজ করেও গরম হয় না বা স্লো হয় না।
ইফেক্টিভ কস্ট: একই দামে ল্যাপটপের তুলনায় অনেক ভালো কনফিগারেশন পাওয়া যায়।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে সঠিক ডেস্কটপ পিসি নির্বাচন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রসেসর, র্যাম, স্টোরেজ, গ্রাফিক্স কার্ড সহ সব কিছু আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী নির্বাচন করলে পিসি দীর্ঘ সময় ভালো পারফরম্যান্স দেবে। মনে রাখবেন, একটি ভালো কম্পিউটার শুধু আপনার কাজকে দ্রুত করবে না, বরং প্রফেশনাল আউটপুটও নিশ্চিত করবে। সকল ধরনের ডেস্কটপ পিসি বর্তমান আপডেট জানতে ভিজিট করুন অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিডিস্টল.কম। এখান থেকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী একটি “ফ্রিল্যান্সিং উপযোগী ডেস্কটপ পিসি” কিনুন এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ শুরু করুন।
আমি কোরাইশ মিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস 1 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
"জ্ঞানার্জনের জন্য একটি উন্মুক্ত মন প্রয়োজন, একটি পূর্ণ পাত্রের মতো নয়" - এপিজে আব্দুল কালাম