সবকিছু জানার পরও কেন আপনি সফল হচ্ছেন না? সফল ক্যারিয়ারের জন্য টিউন পড়ুন

গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন, এসইও কিংবা অন্য কিছু জানেন। কিন্তু তারপরও আপনি এখনও বেকার। সমস্যা কোথায়? আসলে কি কাজের কিংবা চাকুরীর অভাব? ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে  ২ বছর চাকুরী করতে গিয়ে বুঝেছি, আসলে চাকুরীর কিংবা কাজের অভাব নেই। বরং বিষয়টি পুরো উল্টো। বললে অবিশ্বাস্য মনে হবে, প্রতিটি কোম্পানী প্রচুর লোক সংকটে আছে। তারা লোক খুজতে খুজতে ক্লান্ত। তারপরও চাকুরী করার মত লোক পায়না। তাহলে কেন আপনি চাকুরী পাচ্ছেননা? আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ সবার জন্য শেয়ার করলাম।

১। নিজেকে ছোট না ভেবে কনফিডেন্ট রাখুনঃ

নিজেই নিজের উপর কনফিডেন্ট রাখতে না পারলে বায়ার আপনার উপর কিভাবে কনফিডেন্ট রাখবে। আগে ভাবতে শিখুন, সকল কিছুই আপনার দ্বারা করা সম্ভব। শুধু মাত্র নতুন কাজ হিসেবে একটু পরিশ্রম হবে, সেটি হলেও করা সম্ভব। এ বিশ্বাস আগে তৈরি করুন।

২। ছোট ছোট প্রজেক্ট করুনঃ

কাছের মানুষদের কাছ থেকে ছোট ছোট প্রজেক্ট নিয়ে সেগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। এরকম কাজ কমপক্ষে ৩মাস করুন। তাহলে নিজের পরিচিতি তৈরি হবে, সেই সাথে কাজের পোর্টফলিও তৈরি হবে, অভিজ্ঞতাও তৈরি হবে। লোগো ডিজাইন, ব্যবসা কার্ড কিংবা হতে পারে পিএসডি টু এইচটিএমএল ইত্যাদি ধরনের কাজ করুন। আর কাজ করার সময় নিজের কনসেপ্টের উপর নির্ভর না করে অনলাইন থেকে রিসোর্স দেখে, সেগুলোকে অনুসরন (নকল করবেননা)করে ডিজাইন করুন।

৩। প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস:

যখন হাতে কোন কাজ না থাকবে, তখনই রিয়েল কাজের প্র্র্যাকটিস করুন। নিজের জন্য কোন কাজ করুন, বিভিন্ন প্রতিযোগীতাতে অংশগ্রহন করুন, বিভিন্ন কমিউনিটিতে কিংবা ফোরামে কাজ জমা দিন। অন্যদের থেকে কাজের ব্যাপারে মতামত নিন। সেই অনুযায়ি কাজের আরও আপডেট করুন। প্রতিদিন এই জন্য কিছু সময় নির্ধারণ করুন। এই প্র্যাকটিস আপনার কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও বেশি সহযোগিতা করবে। সেই সাথে আপনার কনফিডেন্টও বৃদ্ধি করবে অনেক। মনে রাখতে হবে, যেকোন কোর্স আপনাকে  সেই কাজের জন্য মাত্র ২০% উপযুক্ত হিসেবে তৈরি করবে কিন্তু পুরোপুরি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য প্রচুর কাজের প্র্যাকটিস করতে হবে।

৪। সেরা কাজগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষন করুনঃ

গ্রাফিকস ডিজাইনাদের ক্ষেত্রে বলব, যেখানেই কোন সুন্দর বিজ্ঞাপন দেখবেন কিংবা অন্য সুন্দর কোন ডিজাইন দেখবেন, সেগুলোকে মাথার মধ্যে গেথে নিন। কেন এই ডিজাইন আপনার কাছে ভাল লেগেছে, সেটি আইডিন্টিফাই করার চেষ্টা করুন। সেই একই বিষয় নিজের কাজের ক্ষেত্রে অনুসরণ করুন। আর ওয়েবডিজাইনাররা ভাল ভাল কাজগুলো দেখলে সেটি পযবেক্ষণ করুন এবং নিজে করার চেষ্টা করুন। নতুন ট্রেন্ডের দিকে খেয়াল রাখুন, নিজেকে সেইভাবে আপডেট করুন। যতবেশি অন্যদের ভাল কাজ দেখবেন, ততবেশি আপনার নিজের জন্যই ভাল হবে।

৫। অনলাইন পোর্টফলিও তৈরি করুনঃ

নিজের কাজের পোর্টফলিও ছাড়া সফল হওয়া ৯০% ক্ষেত্রেই অসম্ভব। এখন ইন্টারনেটের যুগ। সেজন্য এ পোর্টফলিওটি অবশ্যই অনলাইন ভিত্তিক হওয়া উচিত। যেকেউ নতুন হিসেবে আপনাকে কাজ দিতে চাইলে অবশ্যই আপনার কাছেই কাজের লিংক চাইবে। সেজন্য এমনভাবেই সময় নিয়ে একটি পোর্টফলিও তৈরি করুন, যাতে আপনার কাজের কনসেপ্টের ব্যাপারে একটি ধারণা খুব সহজেই পাওয়া যায়।

৬। নিজেকে ব্র্যান্ডিং করুনঃ

আপনি অনেক ভাল গ্রাফিকস ডিজাইনের কিংবা ওয়েবডিজাইনের কাজ জানেন, কিন্তু সেটি যদি কেউ না জানে, তাহলে আপনাকে কিভাবে কাজ দিবে। ডিজাইনার হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরির জন্য পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। বিভিন্নভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিতি তৈরি করার চেষ্টা করুন।

৭। প্রিন্টিং ডকুমেন্ট প্রস্তুত করুনঃ

নিজের ব্রান্ডিংয়ের কাজে এটি অনেকে কাজে লাগবে। নিজের জন্য বিজনেস কার্ড, কাজের পোর্টফলিও, বায়োডাটা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বিষয় খরচ করে প্রিন্ট করুন। এ ধাপটি যাদের পক্ষে সম্ভব শুধু তাদের জন্য বলা হচ্ছে।

৮। আপনার যোগ্যতা প্রচারে সাহসী হোনঃ

অন্যদের কাছ থেকে কাজ পেতে আপনার অফারটি জানিয়ে দিন। আমার কাছের অনেককেই দেখি, তারা কারও কাছ থেকে কাজ চাওয়ার সময় বলে, নতুন কাজ শুরু করেছি। কিছু কাজ দেন, একটু করা শুরু করি। কেউ যখন জানবে, তার কাজটি এমন একজন দেওয়া হচ্ছে যার এটি জীবনে প্রথম কাজ। এরকম বিষয় জানার পর কেউ কি রিস্ক নেওয়ার সাহস পাবে কিনা, সেটি নিজেকেই প্রশ্ন করুন। কাজের অফার দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় প্রফেশনাল হোন।

৯। ওয়ার্ড অফ মাউথ অ্যাডভার্টাইজঃ

ওয়ার্ড অফ মাউথ অ্যাডভার্টাইজ অর্থাৎ মুখে মুখে প্রচার টেকনিক যেকোন কিছু মার্কেটিংয়ে সবচাইতে কাযকরী অস্ত্র। আপনি কাজ ভাল জানেন, কিন্তু কেউই সেটা জানেনা। তাহলে কাজ পাবেন কিভাবে সেটা একবার ভেবে দেখেন। মার্কেটপ্লেসে কাজ করলেও প্রচারের এই টেকনিক অবশ্যই ফলো করতে হবে।

১০। নেটওয়ার্ক তৈরি করুনঃ

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার যোগ্যতা অনুসারে  নিজের পরিচিতি তৈরি করতে চেষ্টা করুন। ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, লিংকডিনে আপনার দক্ষতার পরিচিতি পাওয়া যায়, এমন কিছু প্রতিদিন পোস্ট করুন কিংবা অন্যের পোস্টে কমেন্ট করুন। বিভিন্ন ব্লগে গিয়ে সেখানকার পোস্টে কমেন্ট করুন। যাদের লিখার অভ্যাস আছে, তারা কমপক্ষে ১৫ দিন পর পর আপনার দক্ষতার পরিচিতি পাওয়া যায়, এমন কোন লেখা পোস্ট করতে পারেন।

মনে রাখবেন, সফলতার কোন সংক্ষিপ্ত রাস্তা নাই। সেজন্য দরকার আপনার পরিশ্রম করার মানসিকতা, ধৈয্য এবং সাধনা। এই তিনটি কাজ ঠিক মত করলে ভাল ক্যারিয়ার গড়তে কখনও ব্যর্থ হতে পারবেননা্। যাদেরকে সফল হতে দেখেছি নিজের চোখে, তাদের মধ্যে এ বিষয়গুলোর চর্চা খুব বেশি ছিল।

গাইডলাইন এবং কোন ধরনের পরামর্শের জন্য আমাকে ফেসবুকে প্রশ্ন করতে পারবেন। কিংবা ফেসবুক গ্রুপে এসেও প্রশ্ন করতে পারেন।

ফেসবুক গ্রুপঃ ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট

নিয়মিত অনেক ভাল ভাল লেখা পড়ার জন্য, আমার ব্লগটি থেকে ঘুরেও আসতে পারেন। ব্লগঃ http://genesisblogs.com/

Level 0

আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 103 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 2

চমৎকার লেখা । আচ্ছা, ইকরাম ভাই, এসইও/এসএমএম/ওয়েব রিসার্চ/ভিএ ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রে কেমন পোর্টফোলিও হওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন অথবা এসংক্রান্ত কোন লিংক দিয়ে সাহায্য করবেন ।
উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম ।

Level 2

ধন্যবাদ

Level 2

অনেক ভালো হয়েছে! আমার নিজের একটি পোর্টফোলিও আছে https://bestsocialplan.com/portfolio