৫জি প্রযুক্তি: নতুন যুগের পথে

বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জগতে সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত ও প্রতিশ্রুতিশীল আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ৫জি (5G) প্রযুক্তি। এটি হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক, যা ৪জি’র তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগামী, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যক্ষম।

৫জি প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর অত্যন্ত উচ্চ ডেটা গতি এবং নিম্ন ল্যাটেন্সি। এর মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবিট পর্যন্ত ডেটা আদান-প্রদান সম্ভব, যা ৪জি নেটওয়ার্কের চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। এই উচ্চ গতির কারণে ৫জি নেটওয়ার্ক শুধু মোবাইল ফোনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি শিল্প, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, পরিবহন এবং শহর ব্যবস্থাপনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে ৫জি বড় ভূমিকা রাখবে তা হলো ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ যন্ত্রপাতি—যেমন স্মার্ট হোম ডিভাইস, গাড়ি, সেন্সর ইত্যাদি—একইসাথে দ্রুত এবং নিরবিচারে সংযুক্ত থাকতে পারবে। যেমন, একটি স্মার্ট সিটি ব্যবস্থায় ট্রাফিক লাইট, রাস্তার ক্যামেরা, পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সবকিছু একত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

চিকিৎসা খাতেও ৫জি প্রযুক্তির প্রভাব হবে বিপুল। বিশেষ করে রিমোট সার্জারি বা দূরবর্তী অস্ত্রোপচার, যেখানে একজন সার্জন হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও রোবটিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে রোগীর অপারেশন করতে পারবেন—তা কেবল ৫জি নেটওয়ার্কের উচ্চ গতি ও স্থিতিশীল সংযোগের কারণেই সম্ভব হবে।

শিক্ষা এবং বিনোদন জগতে ৫জি এনে দেবে নতুন মাত্রা। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), এবং হাই-ডেফিনিশন ভিডিও স্ট্রিমিং আরও সহজ ও ত্রুটিমুক্ত হয়ে উঠবে। ফলে ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা বাস্তব ঘরের মতো ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ক্লাস করতে পারবে।

তবে এতসব সম্ভাবনার মাঝেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, ৫জি প্রযুক্তির অবকাঠামো স্থাপন খুব ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। এর জন্য নতুন নতুন টাওয়ার, স্মার্ট ডিভাইস এবং বিশেষ স্পেকট্রামের প্রয়োজন হয়, যা অনেক দেশের পক্ষেই তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, ৫জি প্রযুক্তির তরঙ্গ (frequency) তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায়, তা কম দুরত্বে কাজ করে। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে কাভারেজ নিশ্চিত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও একটি বিতর্কিত বিষয় হলো—৫জি প্রযুক্তি স্বাস্থ্য বা পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না। যদিও এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে এর ক্ষতিকর প্রমাণ মেলেনি, তবে সচেতনতার দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা ও নজরদারি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

সব মিলিয়ে, ৫জি হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি যা শুধু আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরণই বদলে দেবে না, বরং পুরো সমাজব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জীবনের গতি ও গুণমানকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ বিশ্ব হবে আরও বেশি সংযুক্ত, স্বয়ংক্রিয় এবং প্রযুক্তিনির্ভর—আর এর চালিকাশক্তি হবে ৫জি।

Level 0

আমি বদরুল পিয়াস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 সপ্তাহ 2 দিন যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস