তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী

তাহাজ্জুদের নামাজ খুবই ফজিলতপূর্ণ একটি নফল ইবাদত। শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদাত গুলির মধ্যে তাহাজ্বতের নামাজ প্রথম সারির গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যারা তাহাজ্জুদের নামাজ খুব যত্নের সঙ্গে আদায় করেন তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুতের নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন এবং সাহাবীদেরকেও এই নামাজ আদায়ের উৎসাহিত করতেন। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন সূরাই তাহাজত নামাজ আদায়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি? 
তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা। ফরজ নামাজের পর অন্যান্য নফল ও সুন্নত নামাজের মধ্যে তাহাজ্বতের নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর তাহাজ্জুতের নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল পাঁচ ওয়াক্ত  নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্বে। তবে উম্মতে মুহাম্মদের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ বাধ্যতামূলক নয় তবে এটি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা। এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে অনেক বেশি পূর্ণ লাভ করা যায় তবে কেউ আদায় না করতে পারলে গুনাহ হবে না। তবে বলা হয় যে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ভাগ্য সবার হয় না বরং আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই নামাজ পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন। 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত আছে যে, " আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজ পড়ার পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ। "
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়মাবলী 
তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাত দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। তিনি কখনো চার রাকাত আবার কখনো ৮ রাকাত কখনো বা ১২ রাকাত নামাজ পড়তেন। কেউ যদি  দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেন তাহলেও তার আদায় করা হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আই ওয়াসাল্লাম লম্বা সূরা বা কেরাত, লম্বা ওর নাম্বার রুকু সহকারে একান্ত নিবিষ্ট হয়ে এই নামাজ আদায় করতেন তবে কেউ চাইলে যেকোনো ছোট সূরা দিয়ে এ নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো একটু লম্বা আজকে রাতের মাধ্যমে এই নামাজ আদায় করা। এই নামাজ পড়ার জন্য কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজ এর মাধ্যমে পড়া যাবে এটি জায়েজ তবে কারো কোন প্রকার সমস্যা থেকে থাকলে তিনি ধীরে পড়তে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো: 

  • তাহাজ্বতের নামাজের নিয়ত আরবিতে পড়তে পারেন অথবা চাইলে বাংলাতে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করে নিবেন এবং  তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধবেন। 
  • এরপর ছানা পড়বেন 
  • অতঃপর সুরা ফাতেহা পড়বেন 
  • সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো সূরা পড়া মেলানো তথা  কেরাত পড়বেন। 
  • এরপর অন্যান্য নামাজের মতই রুকু ও  সেজদা আদায় করে নেবেন। 
  • প্রথম রাকাত পড়ার পর এভাবেই দ্বিতীয় রাকাত আদায় করার পর তাশাহুদ, দরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবেন। এভাবেই দুই রাকাত নামাজ সম্পন্ন করবেন। 

এরপর আপনি চাইলে আরো দুই রাকাত দুই রাকাত করে বেশি রাকাত নামাজ পড়তে পারবেন। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। আর যদি এশার নামাজের পর বিতরের নামাজ আদায় করে না থাকেন তবে তাহাজ্জুদের নামাজের পর বিতর আদায় করে নেবেন। কিন্তু এশার নামাযের সঙ্গে বিতর পড়ে থাকলে শুধু তাহাজ্জুদের নামাজ পড়লেই হবে। আরও পড়ুন ইসলামিক স্ট্যাটাস ও ক্যাপশন 

 
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। এই নামাজ পড়ার মূল সময় শুরু হয় রাত দুইটা হতে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত। তবে যদি ঘুম থেকে ওঠার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে রাতে এশার নামাজ পড়ার পর বিতরের আগে দুই রাকাত করে করে নিতে পারেন। এটি জায়েজ আছে তবে শেষ রাতে পড়াই সর্বোত্তম। 

এশার নামাজের পর হতে সুবহে সাদিকের আগ  পর্যন্ত নামাজ বা সালাতুল লাইন পড়া যায়। কোরআনের রাতের যে অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার তাকিদ দেওয়া হয়েছে সেখানে বলা আছে রাতে ঘুম হতে ওঠার পর এই নামাজ পড়া কেননা এশার নামাজের পর মানুষ ঘুমাবে এবং অর্ধেক রাত ঘুমানোর পর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কখনো মধ্যরাতে আবার কখনো তার কিছু আগে অথবা তারপরে ঘুম হতে উঠতেন এরপর ওযু ও মেসওয়াক করে নামাজ পড়তেন। এভাবেই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী অনুযায়ী 

এই নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত 
ফরজ নামাজের পর সকল সুন্নত ও নফল নামাজ এর মধ্যে  সবচেয়ে গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি তাহাজ্জুদ নামাজের। (আহমাদ, মিশকাত ১১০ পৃঃ)

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,   যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার আসমানের নেমে আসেন এবং বলেন তোমাদের কে আছো যে আমাকে ডাকবে! তার ডাকে আমি সাড়া দেব। আমার কাছে কে কিছু চাইবে তাকে আমি তা  দেব যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চাইবে তাকে আমি ক্ষমা করে দেব। (মুসলিম, মিশকাত ১০৯ পৃষ্ঠা) 

রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম আরো এরশাদ করেছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি রাত্রে ঘুম থেকে ওঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও ঘুম ঘুম থেকে ডেকে তোলে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে আর যদি সে না জাগে তবে তার চোখে মুখে পানির ছিটা দেয় তাহলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে সেই ব্যক্তির প্রতি। 

অনুরূপভাবে কোন মহিলা রাত্রে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে এবং তার স্বামীকে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার জন্য জেগে তোলে এমনকি স্বামী যদি না জাগতে চায় তবে স্ত্রী তার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভেঙে দেয় তাহলে সেই স্ত্রীর প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে। (আবু দাউদ, নাসায়ী, মিশকাত ১০৯ পৃষ্ঠা) 

 

রাসুল সালাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয় নামাজ হল দাউদ আলাই সাল্লাম এর নামাজ। কেননা দাওদ আলাই সাল্লাম অর্ধেক রাত ঘুমোতেন এবং রাতের তৃতীয় অংশে নামাজ আদায় করতেন এবং ষষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমিয়ে পড়তেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১০৯ পৃষ্ঠা) 

কেয়ামতের কঠিন হিসাব- নিকাশ ও ভয়াবহ বিপদ থেকে এবং  সহজ হিসাব করতে চাইলে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হবে। তাহাজ্জুতের নামাজ কেয়ামতের সময় জবাবদিহিতা সহজ করতে সহায়তা করবে। হাশরের দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল উপস্থিতিতে মহান সম্মানে ভূষিত করবেন  তার তাহাজ্জত আদায়কারী প্রিয় বান্দাদের। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী এবং কত রাকাত পড়া উত্তম সেগুলি জেনে নিতে হবে। 

 
মর্যাদা বৃদ্ধিতে তাহাজ্জুদ নামাজ 
 

হযরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ  থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাঃ বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন সমগ্র সৃষ্টিকে একত্রিত করবেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে তখন একজন আহ্বানকারী আহবান করবেন যে পিয়ারা পিয়ারা হে হাশরের মাঠে সমাবেত সকল মানব মন্ডলী আজ তোমরা জানবে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কে সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী? শেখার ফেরেশতা যিনি  'পার্শ্বদেশ শয্যা হতে পৃথক থাকে ' এমন গুণের যারা অধিকারী সেসব লোকগণকে দাঁড়াতে আহবান করবেন। তার আহবান শুনে তাহাজ্জুদ গুজার লোকেরা দাঁড়িয়ে পড়বে কিন্তু তাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। এবং এইসব লোকের হিসাব নিকাশ ব্যতীতই জান্নাতে প্রেরণ করা হবে। এরপর অন্যান্য সকল লোকেরা দাঁড়াবে এবং তাদেরও হিসাব নেওয়া হবে।  (মা'আরিফুল কুরআন, তাফসীরে ইবনে কাসির, মাযহারী, )। এছাড়াও মন্দ কাজের কাফফারা তাহাজ্জুদের নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তিরায় প্রার্থনা করেন, আল্লাহ যেন তাদের মনের আশা পূরণ করেন, তাদের ইবাদত বান্দাকে কবুল করেন সকল ভুল ত্রুটি মাফ করে দেন। এ সকল চাওয়া পাওয়ার এক সমন্বয় নাম হলো তাহাজ্জুদের নামাজ এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী জানতে হবে এবং পারলে 

সবচেয়ে উত্তম সময় রাতের শেষভাগে আদায় করতে হবে। 

 
উপসংহার 
তাহাজ্বতের নামাজ হলো কি এমন লাইন বা রাতের নামাজ। এই নামাজ হলো একটি ঐকিক ইবাদাত ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য এবং এটি রাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তার সাথে তাহাজ্জুদের সালাত নিয়মিত আদায় করতেন এবং এবং এই নামাজ পড়ার জন্য তিনি সাহাবীদের উৎসাহিত করতেন। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য এর সঠিক সময় এবং রাকাত সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হবে। আজ এই আর্টিকেলে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী সহ এর গুরুত্ব ও ফজিলত আলোচনা করেছি। আমরা যারা আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দা হতে চাই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাই তাদের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত।

 
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 
১. তাহাজ্জুদের নামাজ কি?

উত্তর: তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা। ফরজ নামাজের পর অন্যান্য নফল ও সুন্নত নামাজের মধ্যে তাহাজ্বতের নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ ইবাদত। এটি রাতের শেষ অংশে আদায় করা হয়। 

২. তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময় কোনটি? 

উত্তর: তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। 

৩. তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ম কি? 

উত্তর: প্রথমে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে এবং এরপর ছানা পড়ে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে এবং তারপর যেকোনো একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত এবং দ্বিতীয় রাকাত পড়ে  তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। 

৪. তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?  

উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বনিম্ন রাকাত হল দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়াই উত্তম তবে কেউ চাইলে আরো বেশি পড়তে পারে এটি জায়েজ আছে। এবং এরপর বিতর নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়মাবলী হলো দুই রাকাত দুই রাকাত  করে যথাসম্ভব চেষ্টা করা যেন কেরাত, রুকু ও সেজদা লম্বা হয়। Read More : জুম্মা মোবারক বাংলা স্ট্যাটাস

Level 0

আমি ড্রিমি হেলথ বিডি। Officer, Dollar buy sell bd, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

Dreamy Health BD is Bangladeshi Blogging site


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস