অ্যাডভোকেট- ব্যারিস্টার ভুল ধারণার অবসান

অ্যাডভোকেট- ব্যারিস্টার
ভুল ধারণার অবসান।

আজকের বিষয়বস্তুটি অনেকের নিকট একই মনে হলেও অ্যাডভোকেট এবং ব্যারিস্টার সম্পর্কে যাদের ধারনা একেবারেই শূণ্য ঠিক সেই তাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হতে যাচ্ছে এটি। যারা জানেন তারা ত জানেনই। যারা জানেন না লেখাটি মূলত তাদের উদেশ্যে যারা অ্যাডভোকেট এবং ব্যারিস্টারকে এক করে ফেলেন। ব্যারিস্টারগণ অ্যাডভোকেটদের থেকে একধাপ উপরের স্তরের উকিল এমন ধারণা করেন। যা নিতান্তই ভুল। এটা সম্পূর্ণভাবে একটা মিস কনসেপ্ট।

আমাদের দেশে অ্যাডভোকেটের চেয়ে ব্যারিস্টার শব্দের/ডিগ্রী বা উপাধির রমরমা জনপ্রিয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে যারা আইন পেশা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চায় তারা বেশিরভাগই অ্যাডভোকেট না হয়ে ব্যারিস্টার হতে চায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে ব্যারিস্টার এবং অ্যাডভোকেট দুটি ভিন্ন দেশের ভিন্ন দুটি ভাষা ও সনদ যাদের কাজ তথা কর্মপদ্ধতি ও কর্মপন্থা মূলত একই। আমাদের দেশে ব্যারিস্টার নিয়ে যতোটা না মাতামাতি বা ডাক-ঢোল বাজানো হয় এবং যতোটা না গুরুত্বের সাথে বিবেচনা ও মর্যাদার আসনে রাখা হয় আমাদের পাশ্ববর্তি দেশ ভারতে এটা তেমন কিছুই না।

বিভিন্ন দেশ তাদের নিজ নিজ আইনি ব্যবস্থা অনুযায়ী আইনজীবীদের বিভিন্ন নামে সম্বোধন করে থাকে। বাংলাদেশের আইনজীবীদের বলা হয় অ্যাডভোকেট বা উকিল। অপরদিকে ইংল্যান্ডের ল'ইয়ার বা উকিল বা আইনজীবীদেরকে বলা হয় ব্যারিস্টার ও সলিসিটর।

ব্রিটেন (United Kingdom) চারটা রাজ্যে বিভক্ত। ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ড। এই চারটি রাজ্যের মধ্যে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে উকিল বা ল'ইয়ার হচ্ছে দুই ধরনের। যথাঃ ব্যারিস্টার ও সলিসিটর। সলিসিটরগণ নিম্ন আদালতে কাজ করেন এবং তারা সরাসরি জনসাধারণের সাথে আইনি বিষয়ে ডিল করেন। এক কথায় কোর্ট সংক্রান্ত কাজ ব্যতিত অন্যান্য যাবতীয় আইনি বিষয়ে পরামর্শ দেবে সলিসিটরগণ।
ব্যরিস্টারগণ কোর্টে প্র্যাকটিস করবে তথা তারা উচ্চ আদালতে কাজ করেন এবং তারা সলিসিটরগণ থেকে মামলার যাবতীয় তথ্য- উপাত্য গ্রহন করেন। এগুলো হচ্ছে ইংল্যান্ডের লিগ্যাল সিস্টেম। তবে ব্যারিস্টারগণ এবং সলিসিটরগণ যোগ্যতায় একে অন্যে সমানে সমান।
আমাদের দেশে অনেক মানুষ বিশেষত গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষ জন ব্যারিস্টার নাম শুনলেই ভাবেন এই লোক মনে হয় সব থেকে বড়ো মাপের উকিল। কিন্তু এই ব্যারিস্টার যে আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্টের উকিলের মত একই জিনিস এ বিষয়টা তাদের নিকট পরিস্কার নয়। আমাদের বাংলাদেশে ব্যারিস্টারি ডিগ্রির প্রকৃত মূল্য বা গুরুত্ব ঠিক কতটুকু এটা জানা সবার জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখন ব্যারিস্টারি পড়া- শোনা করে কি শেখা বা জানা যায় আর অ্যাডভোকেট হলে কি শেখা বা জানা যায় সেটা একটু সংক্ষেপে বলি। ব্যারিস্টারি আসলে করা হয় ইংল্যান্ডের অর্থ্যাৎ ব্রিটিশদের আদালতে প্র্যাকটিস করার জন্যে। আর বাংলাদেশে অ্যাডভোকেট হতে হলে তাকে যেমন সর্বপ্রথম বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি (এলএলবি) অর্জন করতে হয় ঠিক এমনই এক পরিক্ষা পদ্ধতি রয়েছে যুক্তরাজ্যে।

তবে ব্যারিস্টার হওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়াদি প্র্যাকটিস করতে হয় এর সঙ্গে বাংলাদেশের অ্যাডভোকেটের প্র্যাকটিসের কোনো প্রকার কোনো মিল নেই। তাদের দেশের আইন আর আমাদের দেশের আইন সম্পূর্ণ ভাবে ভিন্ন। মিল যে নেই এর সবথেকে বড়ো সত্যায়ণ হচ্ছে, বাংলাদেশের একজন অ্যাডভোকেট ধারী কখনোই ইংল্যান্ডের আদালতে আইনজীবি হিসেবে কাজ করতে পারবে না। কেননা তাকে যদি ব্রিটিশ আদালতে একজন আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে হয় তাহলে তাকে ব্রিটিশ বার কাউন্সিল থেকে পেশাদারিত্বের সনদের সার্টিফিকেট নিতে হবে। তবেই তিনি যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আবার যারা ব্যারিস্টার তারা বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে বা আদালতে প্র্যাকটিস করতে হলে তাকে বাংলাদেশের অ্যাডভোকেট শীপ পরিক্ষায় পাশ করেই অ্যাডভোকেট শীপ নিতে হবে। যদিও তিনি ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার পাশ করা বা নিবন্ধনধারি হোন। আমাদের বাংলাদেশের আইন পেশার একটাই উপাধি, আর তা হলো অ্যাডভোকেট। আমাদের বাংলাদেশের আইনে কেবল অ্যাডভোকেটরাই কোর্ট অফিসার। আমাদের দেশে ব্যারিস্টার সামাজিক উপাধি ছাড়া আর কিছুই না।

Level 0

আমি জাহাঙ্গীর আলম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস