কাহিনী

বিকাল ৪টা বেজে গেছে। স্কুল সবেমাত্র ছুটি দিয়েছে। সব ছেলেমেয়েরা হইচই করে স্কুল থেকে বের হচ্ছে। এই ভিড়ের মাঝে দেখা গেল সজীব কে। সজীব সয়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। পড়ালেখায় সে বরাবরই ভালো ছিলো এবং এখনো সে সেইরকমই আছে। ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত সে বাসায় শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েছে কিন্তু ১০ম শ্রেনীতে তার বাবা তাকে ব্যাচ এ ভর্তি করিয়ে দেয়। এখন সে পড়ার পাশাপাশি বাইরে প্রকৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সে সবকিছু নতুন করে দেখছে, শিখছে এবং জানছে। সে এখন অনেক প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে। এই নতুন জীবন তার চেনা ও জানার পরিধিকে এক নতুন পরিবেশে নিয়ে গেছে। সত্যি দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দি থাকার পর মানুষ যখন একটু উড়ে যাওয়ার অবকাশ পায় তখন সে উড়তেই থাকে। সজীবের জীবনটাও ঠিক একটা খাঁচাছাড়া পাখির মতো। সে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তার ইচ্ছা সে একজন ডাক্তার হবে তাই সে মনোযোগ দিয়ে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। সজীবের বাবা মোঃ সিরাজ হোসেন, একজন ব্যবসায়ী আর মা সালমা বেগম, সাধারণ গৃহিণী। তার একটা ছোট বোন নাম সীমা, ক্লাস ৬ এ পড়ে। এই ১০ম শ্রেণীতে এসে সজীবের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে তার বন্ধুরা ফাহিম, সিয়াম আর সৌরভ। এদের মধ্যে সিয়াম হলো তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র বলে তার প্রাইভেট পড়তেও হয় বেশি পদার্থ রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান এইসব তো সাধারণ বিষয়।

সজীব ছুটির পর বাসায় ফিরলো সিয়ামের সাথে, সিয়ামের বাসা সজীবের বাসার পাশেই। বাসায় এসেই বাবার সামনে পড়লো সে।
বাবা : ক্লাস কেমন হলো?
সজীব  : ভালো, সামনের নভেম্বর মাস থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু।
বাবা : ওহ তাহলে মনোযোগ দিয়ে পড়, এই রেজাল্ট ভালো হলেই এসএসসি এর রেজাল্ট ভালো হবে।
সজীব  : হুম ভালো রেজাল্ট করবো, ইনশাল্লাহ।
সজীব তারপর তার ঘরে গেল। তার মাথার মধ্যে অজস্র চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। তার আরো কতো কিছু করা বাদ আছে। অনেক বই যত্নে তুলে  রেখে দিয়েছে সে, পরীক্ষা শেষে পড়বে। দূরে কোনো এক নির্জন প্রকৃতির মাঝে ঘুরতে যাবে। তার এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা। তারপর এই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সে যাবে কলেজে, নতুন অজানা শহরে। স্কুলের পোষাক বদলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সে তার পড়ায় মন দিলো, সকালে রসায়ন প্রাইভেটে পরীক্ষা আছে। এই স্কুল, প্রাইভেট, পড়াশোনা নিয়েই তার জীবন চলছে।

পরের দিন পরীক্ষা দিয়ে বের হলো সজীব সাথে সিয়ামও আছে। ১২টায় স্কুল, এখন বাজে ১১টা আরো ১ঘণ্টা দেরি আছে। সজীব, সিয়াম, সৌরভ, ফাহিম আরো কয়েকজন মিলে সবাই বড় রাস্তা দিয়ে স্কুলের দিকে হাঁটা শুরু করলো। মাঝপথেই প্রায় সবাই থেমে গেল, প্রথমে ও বুঝতে পারেনি পরে বুঝতে পারলো যে ওরা সবাই এখন ধূমপান করবে মানে বিড়ি-সিগারেট খাবে। সজীব এখনো এইসব খারাপ অভ্যাসের সাথে যুক্ত হয়নাই। কিন্তু যুক্ত হতেও হয়তো বেশি সময় লাগবে না। সবাই মিলে একটা নির্জন জায়গায় গেল কিন্তু আজকে ফাহিমকে একটু বেশিই অন্যরকম লাগছিলো। একটু পর ফাহিম ব্যাগ থেকে একটা শিশি আর সিরিঞ্জ বের করলো। তারপর শিশির তরল পদার্থটা সিরিঞ্জের মাধ্যমে ফাহিমের শরীরে প্রবেশ করলো। ফাহিমের চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছিলো, সজীব বুঝতে পারছেনা ফাহিমের কি হয়েছে, ও এইরকম কেন করছে? সবাই মিলে আবার হাঁটা শুরু করলো, সৌরভ ফাহিমকে ধরে আছে। ওরা হাঁটছে হঠাৎ একটা ট্রাকের ধাক্কায় একজন ছাত্র রাস্তার মাঝে পড়ে গেল। সজীব চেহারাটা দেখলো, লাশটা ফাহিমের। সৌরভকে ধাক্কা দিয়ে ফাহিম রাস্তার মাঝে চলে এসেছিল আর তাতেই ফাহিমের এই পরিণতি। সজীব এই প্রথম মৃত্যুকে দেখল, রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় ওর বন্ধুর মৃতদেহ পড়ে আছে।

সজীব মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে খুব ভালোভাবেই কিন্তু ফাহিমের কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। ফাহিমের মৃত্যু তখনই হয়েছিল, ওকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আর ২টা পরীক্ষা আছে তাই শেষ, তারপর রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সজীবের ইচ্ছা ও উচ্চ মাধ্যমিক এর জন্য ঢাকায় যাবে কিন্তু ওর বাবার তাতে মত নেই। কারণ দূরে গেলেও সজীবের অবস্থাও হয়তো ফাহিমের মতো হবে। তিনি ছেলেকে শহরের ভালো কলেজে ভর্তি করাবেন এবং ছেলেকে কলেজের হোস্টেলে রাখবেন।

আজকে ফলাফল প্রকাশের দিন। সব ছাত্র-ছাত্রীরা ফলাফল জানার জন্য অধীর আগ্রহে স্কুলের মাঠে সমবেত হয়েছে। সজীব আর বন্ধুরাও অপেক্ষা করছে। একটু পর বাংলা শিক্ষককে দেখা গেল ফলাফল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যাচ্ছে। সবার যেন আর তর সইছে না ফলাফল জানার জন্য। একটু পর প্রধান শিক্ষক বেরিয়ে এলো, তার হাতেই রেজাল্টশীট।
প্রধান শিক্ষক: আজ সয়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সবার ফলাফলই অত্যন্ত ভালো হয়েছে। সবার এই কঠোর পরিশ্রমের উপযুক্ত মূল্য আজ পাবে। এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে সজীব হোসেন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম হয়েছে ফারজানা আক্তার। ব্যবসায় বিভাগ থেকে প্রথম হয়েছে রুবাইয়াত মামুন। এই তিনজন স্কলারশীপ পেয়েছে।
পুরো মাঠে হইচই পড়ে গেল, সবাই নিজের নিজের রেজাল্ট দেখার জন্য ছুটলো বাংলা শিক্ষকের কাছে। দেখা গেল কেউ কেউ খারাপ রেজাল্টের জন্য কাঁদছে, আবার আবার কেউ কেউ ভালো রেজাল্টের জন্য হাসছে।

 

 

Level 1

আমি মোছাঃ মাহিয়া খাতুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস