মন বসে না পড়ার টেবিলে ? কি করবেন ?

—ফেসবুকে সারাদিন পড়ে থাকলেও কিংবা মোবাইল এ ভিডিও গেম খেলার সময় ভুলেও মনযোগ হারাই না কিন্তু পড়তে বসলেই যেন মনযোগ জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়, কেন ?
–পড়ার সময় দুনিয়ার ফালতু চিন্তা মাথায় আসে,যতই চাই দূরে থাকব ততই আঁকড়ে ধরে চিন্তা গুলো, কি করা যায় ?
—পরীক্ষার চিন্তা মাথায় আসলেই শুধু পড়ার চাপ ফিল করি,অন্য সময় তেমন করি না,কেন এমন হয় ?
………এ ধরনের হাজার প্রশ্ন যাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এবং যারা অমনোযোগিতার যন্ত্রনায় অতিষ্ট,তাদের জন্য আমার এই টিউনটি সহায়ক হয়ে যেতেও পারে।সময় করে পুরোটা একবারে পরে নেবেন,মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন যুক্তি ও মানব মস্তিষ্কের আচরন পর্যবেক্ষন করেই উপায় গুলো বর্ণনা করা হয়েছে-
আগে জানা দরকার অমনোযোগী ছাত্রছাত্রী বলে কি বিশেষ কোনো গোষ্ঠী আছে ? আসলে তা নয়। মনোযোগ প্রয়োগ করার ক্ষমতা প্রত্যেকেরই আছে। ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী ছেলেটা- যে সারাদিন ক্রিকেট নিয়েই থাকে, তাকে দেখুন টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার সময় কী মগ্ন আর মনোযোগী! আবার পরীক্ষার আগে যখন চার মাসের পড়া করতে হবে এক সপ্তাহে, তখন কী গভীর আর অখন্ড মনোযোগ দিয়ে আপনি পড়তে পারেন! অর্থাৎ মূল বিষয়টি হচ্ছে আপনি ভিডিও গেমকে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন,প্রতিদিনের পড়াশোনাকে ততটা দিচ্ছেন না,বইএর সামনে বসতে হয় তাই বসছেন। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাতে আপনার ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে পড়া, তাই তখন আপনি ঠিকই পড়তে পারছেন। ভিডিও গেম, গাড়ি চালানো এবং বিনোদনমূলক কাজে যে আগ্রহ রয়েছে আস্তে আস্তে পড়াশোনায় সেই আগ্রহটা সৃষ্টি করতে হবে, তাহলেই মনযোগ সহকারে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হবে। কিন্তু কিভাবে আনব এই আগ্রহ ? পড়াশোনার মত নীরস বিষয়ে আবার আগ্রহ আনা যায় নাকি !

আমি বলব, হ্যা যায় -অবশ্যই যায়।আর এজন্য আপনার দরকার কিছু মোটিভেশন বা পিছুটান।যার জন্য আপনার মনে পড়ার আগ্রহ তৈরি হতে বাধ্য।আর এই মোটিভেশন যে একেক জনের জন্য একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক।তবে আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে কারো সাধারণ লক্ষ্য একটাই- চাকরী পাওয়া।হ্যা-এটাইঅধিকাংশ মানুষের একমাত্র শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্য হতে দেখা যায়।

অনেকে এই মানসিকতার বিরোধিতা করলেও আমি বলব-কোনো সমস্যা নেই।অন্তত এই লক্ষব নিয়ে হলেও বই টাকে হাতে তুলে নিন;চিন্তা করুন কি ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা চলছে বর্তমান চাকরীর বাজারে,এর মাঝে টিকে থাকতে হলে আপনাকে আমাকে এখনকার সময় টুকু কাজে লাগাতেই হবে।মনে রাখবেন একটি চিরন্তন সত্যি কথা-‘বর্তমানের প্রতি মুহুর্তের অপচয়ের জন্য আপনাকে ভবিষ্যতে মুল্য দিতে হবে’ এর বাস্তব প্রমাণ পেতে আপনার বেশি দূর যাবার দরকার নেই।স্কুল-কলেজেপরীক্ষায় কারা ভালো ফল পায় জানেন তো?সারা বছর যারা সময়টাকে কাজে লাগায় তারা,নাকি যারা ফেসবুক আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে বছরটাকে পাড় করে দেয় তারা ?

অনেকের আবার স্টুডেন্ট লাইফেই জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী খুঁজে নেওয়া হয়ে যায়।আমি জানি গুনীজনেরা এক বাক্যে বলবেন ‘এদের জীবন শেষ’.কিন্তু আমি একটু বেশিই পসিটিভ মাইন্ড এর লোক,তাই এর ভেতর ও ভালো দিক দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট।আসলে আমার কাছে মনে হয় আপনার স্বপ্নের সাথীটিও আপনার পড়া লেখার প্রতি আগ্রহ তৈরীতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা হতে পারে,যদি না তার অনুষঙ্গ কে আপনার সময় নষ্টের নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করেন।তাকে সাথে করে জীবন সাজাতে হলে আগে তো আপনার নিজেকেই স্বাবলম্বী হতে হবে তাই না?জানেন তো-“অভাব যদি ঘরে ঢোকে,ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়”.

এখন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করুন-পারবেন, শুধু মাত্র আর্থিক অক্ষমতার জন্য নিজের প্রিয় মানুষটিকে অন্যের কাছে বিসর্জন দিতে?পারবেন কি,চাকরি না পেয়ে যাযাবরের মতো অপরের বোঝা হয়ে জীবন কাটাতে?কিংবা,নিম্ন মানের একটা চাকরি পাওয়ার পর সকলের অহরাত্রি টিটকিরি সহ্য করতে? প্রশ্ন গুলোর উত্তর আপনার আমার সবার জানা,কিন্তু এর থেকে মুক্তির পথ আমরা জেনেও কি না জানার ভান করি না ?

তাই বলছি,সময় ফুরিয়ে যায়নি……জীবন অনেক বড় ব্যাপার।আপনার আপ্রাণ চেষ্টা যেকোনো মুহূর্তে ঘুরিয়ে দিতে পারে জীবনের মোড়।

এবার আসুন জেনে নেই কিভাবে পড়ায় আগ্রহ ও মনযোগ তৈরি করা যায় তার কিছু সহজতম কৌশল—

(১) প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কেন আপনি পড়ছেন। যখন আপনি বুঝবেন, এই পড়াটা ভালোভাবে করার মাধ্যমেই আপনি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারবেন এবং আপনার পক্ষে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, তখনই আপনি আগ্রহী হবেন। আর আগ্রহ থাকলে যেকোনো কাজে মনোযোগ এমনিতেই আসে। অর্থাৎ আপনাকে জানতে হবে যে, কেন এই কাজটা গুরুত্বপূর্ণ।

২) মনোযোগের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আনন্দ। পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।তাহলে দেখবেন আপনার সমস্ত মনযোগ ঐ পড়াটুকু কমপ্লিট করাতে নিবদ্ধ হবে।

(৩) বিষয়ের বৈচিত্র রাখুন।ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন সাব্জেট পরুন।একঘেঁয়েমি আসবে না।নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।রং বেরঙ্গের পেন দিয়ে বই দাগানোর অভ্যাস করতে পারেন,এটিও পড়াকে আনন্দঘন করে তুলতে সাহায্য করে।

(৪) এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে।এনার্জি যত বেশি, মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে এক ঘণ্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন,বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।

(৫) আরেকটা কাজ করবেন-একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন।কারণ গবেষণায় দেখা গেছে,সাধারণত একটানা ৪০ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পড়ার পর ৫-১০ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন।কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো পাঁচ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।একটু ফেসবুকে ঢুঁ মারলেন বা গান শুনলেন এই আরকি পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে-জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না।কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।

(৬) পড়ার পরিবেশ আপনার মনযোগ তৈরীতে তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।আপনার চোখের পরিধির মধ্যে বই এর আশেপাশের কোনো আকর্ষনীয় বস্তু(যেমনঃছবি,শোপিস,মোবাইল) যেন চলে না আসে তা খেয়াল রাখতে হবে।এ জন্য সাদামাটা পরিবেশ এ(যেমন টেবিলে বসে বা বিছানায় হেলান দিয়ে) পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং উল্লেখিত বস্তু গুলোকে এ সময় দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।

(৭) দিনে যখনি সময় পান ঐ দিনের টার্গেট করে রাখা পড়া টুকু করতে থাকুন।এই টাইম পড়ার জন্য নয় ঐ টাইম পড়ার জন্য ভালো এসব কথা ভুলে যান।.আর সবশেষে,যদি টার্গেটমতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারেন,তাহলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন,তা যত ছোটই হোক।

(৮) পড়তে বসলেই বাইরের হাজারো গুরুত্ববহ কাজের কথা মনে আসে।কিন্তু,সাবধান! পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।

(৯) আরেকটি জিনিস মনে রাখবেন- পড়ার জায়গায় যেন পর্যাপ্ত আলো থাকে। আলো পড়ার মনোযোগ বাড়ায়। পড়ার কাজে যে জিনিসগুলো লাগবে তার সবগুলোই নিয়ে বসুন যাতে বার বার উঠে গিয়ে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে না হয়। বন্ধু রুমমেট বা বাসার কেউ আপনার মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কি না খেয়াল করুন।তাকে এড়ানোর জন্যে যথাসাধ্য কৌশল অবলম্বন করুন,অন্যথায় তাকে সরাসরি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন।আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হলে যেকোনো মূল্যে সে নিজেকে সংযত রাখবে।

সবাইকে কষ্ট করে লেখাটি পরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরো সহজ ভাবে বুঝতে ভিডিওটি দেখতে পারেন।

Level 0

আমি নাহিদ হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস