
বর্তমানে যেকোনো ব্যবসার প্রসারের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। Statista-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বাজার ৯১০.৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর কারণ হলো, গ্রাহকরা এখন তাদের বেশিরভাগ সময় অনলাইনেই কাটাচ্ছেন। SME Foundation-এর একটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ৭৫% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত এবং ৭০% মোবাইল ব্যবহারকারী তাদের কেনাকাটার জন্য ফোন ব্যবহার করেন।
আজকের দিনে একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দিনের অনেকটা সময় মোবাইলে ব্যয় করেন। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ কাজে লাগাতে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির সাহায্য নিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা খুব সহজে ব্র্যান্ডের পরিচিতি, সম্ভাব্য গ্রাহক সংগ্রহ এবং পণ্যের বিক্রি বাড়াতে পারছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো ব্যবসার পণ্য বা সেবা গ্রাহকের নিকট পৌঁছে দেওয়ার আধুনিক পদ্ধতি, যা পুরোপুরি অনলাইনের মাধ্যমে হয়। এখানে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন, ইমেইল এবং অন্যান্য ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার করে টার্গেটেড গ্রাহকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা হয়। শুধু বিক্রি বাড়ানো নয়, বরং এটি ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ানো, গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বাস তৈরি করতেও সাহায্য করে।
অর্থাৎ, আপনার ব্যবসার পণ্য বা সেবা অনলাইনে প্রদর্শিত হলে সহজে টার্গেটেড গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এই ধরনের ডিজিটাল উপস্থিতি ব্যবসাকে দ্রুত প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন সুযোগ তৈরি করে।
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো এমন এক শক্তিশালী প্রক্রিয়া যা ব্যবসাকে অনলাইনে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এর বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেগুলো আলাদাভাবে বা একত্রিতভাবে ব্যবহার করে ব্যবসা টার্গেটেড গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস এর প্রত্যেকটি প্রকারভেদ গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন মার্কেটিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনঃ(SEO) ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিনে দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করে প্রাকৃতিক ট্রাফিক আনে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ(SMM) সামাজিক মাধ্যমে ব্র্যান্ড পরিচিতি এবং গ্রাহক সংযোগ বৃদ্ধি করে।
৩. কন্টেন্ট মার্কেটিংঃ মূল্যবান ও তথ্যবহুল কন্টেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের আগ্রহ এবং বিশ্বাস তৈরি করে।
৪. ইমেইল মার্কেটিংঃ সরাসরি ইমেলের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সেল্স বাড়ায়।
৫. পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপণঃ প্রতিটি ক্লিকের বিনিময়ে খরচ হয়, ফলে বিজ্ঞাপণ পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে।
৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ অন্য কারো পণ্য বা সেবা প্রচার করে বিক্রির উপর কমিশন আয় করা।
৭. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংঃ কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির (যেমন: সেলিব্রিটি বা ব্লগার) মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করা।
৮. ভিডিও মার্কেটিংঃ আকর্ষণীয় ভিডিও তৈরি করে গ্রাহকদের কাছে পণ্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা।
৯. মোবাইল মার্কেটিংঃ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট গ্রাহকদের কাছে বিজ্ঞাপণ এবং অফার পাঠানো।
১০. কনভার্সেশনাল মার্কেটিংঃ চ্যাটবট বা মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া ও বিক্রি বাড়ানো।
১১. রি-টার্গেটিং/রি-মার্কেটিংঃ যারা একবার আপনার ওয়েবসাইট বা পণ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে, তাদের কাছে পুনরায় বিজ্ঞাপণ পাঠিয়ে বিক্রির জন্য উৎসাহিত করা।
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো ব্যবসার প্রসারের জন্য এক শক্তিশালী উপায়। এটি শুধু পণ্যের বিক্রিই বাড়ায় না, বরং ব্র্যান্ডের পরিচিতি তৈরি করে, গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে। একটি ব্যবসা যখন অনলাইনে নিজেদেরকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে, তখন এটি একদিকে নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করে, অন্যদিকে পুরোনো গ্রাহকদের সাথেও সম্পর্ক মজবুত রাখে।
আজকের যুগে কোনো ব্যবসার অনলাইন উপস্থিতি না থাকলে গ্রাহক খুব সহজেই অন্য ব্র্যান্ডের কাছে চলে যেতে পারে। একটি ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ বা অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবসা সবসময় গ্রাহকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারে। যেমন, আপনি যদি একটি মোবাইল ফোন কিনতে চান এবং একটি ব্র্যান্ডের আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তাদের ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে দেখতে পান, তাহলে আপনি স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং একটি ব্র্যান্ডকে গ্রাহকের মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিতে সাহায্য করে। এটি শুধু পরিচিতিই বাড়ায় না, বরং মানুষের মনে বিশ্বাসও তৈরি করে। নিচে এর কয়েকটি মূল দিক তুলে ধরা হলো:
ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে নতুন গ্রাহক খুঁজে বের করা বা 'লিড' তৈরি করা অনেক সহজ। যেমন, পেইড সার্চ বিজ্ঞাপণের সাহায্যে নির্দিষ্ট পণ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের সরাসরি টার্গেট করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করলে বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ডিজিটাল চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে একটি ব্যবসা সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে পারে। ইমেইল, চ্যাট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত গ্রাহক সেবা দিলে তাদের সন্তুষ্টি অনেক বাড়ে। একজন সন্তুষ্ট গ্রাহক শুধু যে বারবার পণ্য কেনেন তা নয়, অন্যদের কাছেও আপনার ব্যবসার সুনাম প্রচার করেন।
অনলাইন বিজ্ঞাপণ ও প্রচারণার খরচ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন, পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপণে শুধুমাত্র কেউ ক্লিক করলেই টাকা কাটে। এতে নিশ্চিত হয় যে আপনার প্রতিটি টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগছে। গবেষণায় দেখা যায়, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগের উপর প্রাপ্ত আয় (ROI) প্রচলিত বিজ্ঞাপণের চেয়ে অনেক বেশি হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে একটি ব্যবসা তার প্রতিযোগীদের থেকে সহজে এগিয়ে থাকতে পারে। সঠিক কৌশল প্রয়োগ করলে গ্রাহকরা আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই মনে রাখে। ধরা যাক, কোনো একজন ক্রেতা একই ধরনের দুটি পণ্যের মধ্যে একটি বেছে নিতে চাইছেন। যদি আপনার ব্র্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট বেশি আকর্ষণীয় হয়, তবে প্রায়শই তারা আপনার পণ্যটিই কিনতে আগ্রহী হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং সফল হয়েছে কিনা, তা শুধু অনুমানের ওপর নির্ভর করে বোঝা সম্ভব নয়। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠি ব্যবহার করতে হয়। ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা, গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া, বিক্রির হার এবং লিডের মান এই সবকিছু মিলিয়েই একটি সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। এই পরিমাপগুলো থেকে ব্যবসা বুঝতে পারে, কোন কৌশলগুলো কাজ করছে এবং কোথায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
একটি ওয়েবসাইটকে ব্যবসার অনলাইন দোকান বলা যায়। এখানে প্রতিদিন কতজন গ্রাহক আসছে এবং তারা কী করছে, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় আপনার মার্কেটিং সত্যিই কাজ করছে কি না। যে বিষয়গুলো আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে:
অডিয়েন্সের সংখ্যাঃ প্রতিদিন বা প্রতি মাসে কতজন অডিয়েন্স আপনার ওয়েবসাইটে আসছেন। যত বেশি ট্রাফিক, তত বেশি সুযোগ।
পেজ ভিউঃ একজন ভিজিটর গড়ে কতগুলো পেজ দেখছেন। বেশি পেজ দেখা মানে, আপনার কন্টেন্টে তাদের আগ্রহ আছে।
গড় সময়ঃ একজন ব্যবহারকারী আপনার সাইটে গড়ে কতক্ষণ থাকছেন। উদাহরণ হিসেবে, তিন থেকে পাঁচ মিনিট থাকলে বোঝা যায় আপনার কন্টেন্টটি কার্যকর।
বাউন্স রেটঃ কতজন অডিয়েন্স প্রথম পেজ দেখেই সাইট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। বাউন্স রেট বেশি হলে বুঝতে হবে সাইটে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন।
জনপ্রিয় কন্টেন্টঃ কোন ব্লগ টিউন বা পেজে সবচেয়ে বেশি অডিয়েন্স আসছে, তা চিহ্নিত করা। এটি আপনাকে ভবিষ্যতে কোন ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
এভাবে ডেটা বিশ্লেষণ করলে একটি ব্যবসা বুঝতে পারে কোন জায়গাটা শক্তিশালী এবং কোথায় উন্নতি করতে হবে।
ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানো প্রথম ধাপ হলেও, আসল লক্ষ্য হলো সেই দর্শককে গ্রাহকে পরিণত করা। কতজন ভিজিটর শেষ পর্যন্ত আপনার পণ্য কিনছেন বা ফর্ম পূরণ করছেন, সেটিই হলো কনভার্সন রেট। এই হার যত বেশি হবে, আপনার ব্যবসার আয়ও তত বাড়বে। কনভার্সন পরিমাপের সময় যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণঃ
কনভার্সন হারঃ ধরা যাক, আপনার ১, ০০০ অডিয়েন্সের মধ্যে ১০০ জন পণ্য কিনলেন। তাহলে আপনার কনভার্সন রেট হলো ১০ শতাংশ।
ল্যান্ডিং পেজের কার্যকারিতা: আকর্ষণীয় ছবি, স্পষ্ট শিরোনাম এবং সহজ নেভিগেশন অডিয়েন্সকে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
অফার ও ডিসকাউন্টঃ সীমিত সময়ের অফার বা বিশেষ ছাড় গ্রাহকদের দ্রুত কেনাকাটার জন্য উৎসাহিত করে।
কল টু অ্যাকশনঃ(CTA) "এখনই কিনুন" বা "ফ্রি ডেমো নিন" এর মতো স্পষ্ট নির্দেশনা গ্রাহকের আগ্রহ বাড়ায়।
লিডের মানঃ শুধু সংখ্যায় বেশি লিড এলেই হবে না, তাদের গুণগত মানও জরুরি। সঠিক টার্গেট অডিয়েন্স থেকে আসা লিড বিক্রিতে রূপান্তরের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল কতটা সফল।
একটি ব্যবসা সফল করতে শুধু প্রচার-প্রচারণা যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কার্যকারিতা নির্ভর করে আপনার কৌশলটি কতটা লক্ষ্যভিত্তিক এবং ব্যবসার সাথে মানানসই। তাই লক্ষ্য নির্ধারণ, বাজেট পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী কৌশল তৈরি করা জরুরি।
ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে একদিনে ফলাফল আসে না, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নিচে এই কৌশলগুলো ধাপে ধাপে সহজভাবে তুলে ধরা হলো।
আপনি ঠিক কী অর্জন করতে চান, তা স্পষ্টভাবে লিখে নিন। যেমন, আগামী তিন মাসে ওয়েবসাইটের ভিজিটর ৩০% বাড়ানো অথবা ছয় মাসে বিক্রি ২০% বৃদ্ধি করা। মনে রাখবেন, আপনার লক্ষ্য সব সময় নির্দিষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য হওয়া উচিত।
আপনার আসল গ্রাহক কারা, তা খুঁজে বের করুন। তাদের বয়স, আগ্রহ, অনলাইনে কী ধরনের অভ্যাস সবকিছু লিখে রাখুন। এতে আপনার প্রচারণা আরও কার্যকর হবে।
আপনার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইমেল লিস্ট সবকিছু ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন। দেখুন কোন কৌশলগুলো কাজ করছে এবং কোনগুলো করছে না। প্রয়োজনে বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে বিস্তারিত রিপোর্ট নিন।
সব চ্যানেল একসাথে ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। আপনার লক্ষ্য এবং গ্রাহকদের অনলাইন অভ্যাস অনুযায়ী ২-৩টি চ্যানেল দিয়ে শুরু করুন। যেমন, নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে ফেসবুক বিজ্ঞাপণ এবং গুগল সার্চ ভালো কাজ করতে পারে।
প্রতিটি চ্যানেলের জন্য আলাদা কন্টেন্ট তৈরি করুন। ব্লগ, ভিডিও, ছবি বা ছোট টিউন সহ যে ধরনের কন্টেন্টই হোক না কেন, সেটির উদ্দেশ্য যেন স্পষ্ট থাকে।
আপনার মোট বাজেটের কত টাকা কোথায় খরচ হবে, তা আগে থেকে ঠিক করে নিন। যেমন:
৩০ দিন, ৯০ দিন এবং ছয় মাসের জন্য আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করুন। যেমন, প্রথম মাসে ওয়েবসাইটের ত্রুটি খুঁজে বের করা, পরের মাসে বিজ্ঞাপণ চালু করা এবং তৃতীয় মাসে কনভার্সন বা রূপান্তর বাড়ানোর কাজ করা।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক, কনভার্সন রেট এবং খরচের বিপরীতে আয় (ROI) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়মিত ট্র্যাক করুন।
শুরুতে ছোট পরিসরে প্রচারণা চালান। যেমন, ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপণ চালানো বা একটি ল্যান্ডিং পেজ পরীক্ষা করা।
প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে আপনার প্রচারণার ফলাফল দেখুন। শুধু সংখ্যা নয়, কেন ভালো বা খারাপ হচ্ছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করুন।
ছোট ব্যবসা হলে নিজেই শুরু করতে পারেন। তবে ব্যবসা বড় হলে একজন কন্টেন্ট রাইটার, বিজ্ঞাপণ ম্যানেজার বা একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
যখন আপনার ব্যবসায় ইতিবাচক ফল আসতে শুরু করবে, তখন বাজেট বাড়ান। ইমেল অটোমেশন বা বিজ্ঞাপণের মতো কাজগুলো সহজ করতে বিভিন্ন অটোমেশন টুল ব্যবহার করুন।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ নিজে করবেন নাকি পেশাদার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কে দিয়ে করাবেন এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক প্রতিষ্ঠানই দ্বিধায় পড়ে যায়। সঠিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করে আপনার ব্যবসার আকার, বাজেট এবং লক্ষ্য কতটা বড় তার ওপর।
ইন-হাউস মার্কেটিং মানে হলো, আপনার নিজস্ব টিম দিয়ে সব ডিজিটাল প্রচারণা পরিচালনা করা। এতে কাজের ওপর আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং টিম শুধু আপনার ব্যবসার দিকেই মনোযোগ দেয়। তবে এর জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি কেনার খরচ অনেক বেশি হতে পারে।
অন্যদিকে, এজেন্সি ব্যবহার করলে তারা অভিজ্ঞ পেশাদারদের মাধ্যমে কাজটি দ্রুত এবং মানসম্মতভাবে করে দিতে পারে। তারা এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের মতো বিভিন্ন ডিজিটাল কৌশল একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারদর্শী। কিন্তু এতে তুলনামূলকভাবে খরচ বেশি হয় এবং কাজের ওপর আপনার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সীমিত থাকে।
| বৈশিষ্ট্য | ইন-হাউস মার্কেটিং | এজেন্সি মার্কেটিং |
| নিয়ন্ত্রণ | পুরোপুরি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। | নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সীমিত থাকে। |
| অভিজ্ঞতা | আপনার টিমের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। | অভিজ্ঞ পেশাদারদের দিয়ে কাজ করানো যায়। |
| খরচ | কর্মী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিতে বেশি খরচ হতে পারে। | তুলনামূলকভাবে খরচ বেশি, তবে সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত থাকে। |
| ফোকাস | শুধু আপনার ব্যবসার দিকেই ফোকাস থাকে। | তারা একাধিক ক্লায়েন্টের অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়। |
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবুন:
যদি আপনার ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদী ব্র্যান্ড তৈরি করতে চায় এবং আপনি সবকিছুর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান, তবে নিজস্ব ইন-হাউস টিম গড়ে তোলা ভালো। আর যদি আপনি দ্রুত ফলাফল চান এবং দক্ষ পেশাদারদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান, তাহলে এজেন্সির সাহায্য নেওয়া উপযুক্ত হবে।
আজকের প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক জগতে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। এটি কেবল পণ্যের বিক্রিই বাড়ায় না, বরং ব্র্যান্ডের পরিচিতি, গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বাজারে এগিয়ে থাকার সুযোগ তৈরি করে।
একটি ব্যবসা যদি সঠিক কৌশল ব্যবহার করে, তাহলে তা ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই কার্যকর হয়। সফল ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ, বাজেট পরিকল্পনা এবং ব্যবসার সঙ্গে মানানসই কৌশল তৈরি করা জরুরি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো শক্তিশালী অনলাইন উপস্থিতি তৈরি করা, নতুন গ্রাহক খুঁজে বের করা, বিক্রি বৃদ্ধি এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা। এছাড়া নিয়মিত ফলাফল বিশ্লেষণ করলে আপনার প্রচারণা আরও কার্যকর হয়ে উঠবে।
পরিশেষে বলা যায়, আপনি নিজস্ব টিম ব্যবহার করুন বা কোনো এজেন্সিকে দায়িত্ব দিন, মূল বিষয়টি হলো ডিজিটাল মার্কেটিংকে যদি পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে তা আপনার ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখে।
আমি পারভেজ হোসেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।