
এআই (AI) দিয়ে বিনামূল্যে ভিডিও তৈরি করে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে আয় করার পরিপূর্ণ গাইডলাইন
এই নির্দেশিকায়, আমরা দেখবো কিভাবে বিনামূল্যে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা যায় এবং সেই ভিডিওগুলো ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করে কিভাবে আয় করা সম্ভব। বর্তমানে, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে অর্থ উপার্জনের দারুণ সুযোগ রয়েছে, এবং এআই এই প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করে তুলেছে। এই গাইডলাইনটিতে, আমরা এআই সরঞ্জাম নির্বাচন, ভিডিও তৈরি, অপটিমাইজেশন এবং নগদীকরণের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
বিনামূল্যে এআই ভিডিও তৈরি করার জন্য বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নিচে উল্লেখ করা হলো:
Synthesia: এটি একটি জনপ্রিয় এআই ভিডিও জেনারেটর। এখানে আপনি বিনামূল্যে একটি ডেমো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ভিডিও তৈরি শুরু করতে পারেন। যদিও সম্পূর্ণ ব্যবহারের জন্য পেইড প্ল্যান প্রয়োজন, ডেমো অ্যাকাউন্ট দিয়ে শেখা শুরু করা যেতে পারে।
Pictory: এই প্ল্যাটফর্মটি ব্লগ টিউন বা স্ক্রিপ্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিও তৈরি করতে পারে। এটিও বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেয়, যা নতুনদের জন্য খুবই উপযোগী।
Lumen5: Lumen5 একটি সহজ ইন্টারফেসযুক্ত ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফর্ম, যা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ছোট ভিডিও তৈরি করতে বিশেষভাবে তৈরি। বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট খুলে এর ফিচারগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
Designs.ai: এই প্ল্যাটফর্মটি লোগো, ভিডিও এবং অন্যান্য ডিজাইন তৈরি করার জন্য এআই ব্যবহার করে। এখানেও বিনামূল্যে কিছু সুযোগ রয়েছে, যা ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা যায়।
এআই দিয়ে ভিডিও তৈরি করার আগে আপনাকে ভিডিওর বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে। বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
ট্রেন্ডিং টপিক: বর্তমানে কোন বিষয়গুলো মানুষ বেশি দেখছে বা খুঁজছে, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভিডিও তৈরি করুন। গুগল ট্রেন্ডস (Google Trends) ব্যবহার করে আপনি সহজেই ট্রেন্ডিং টপিক খুঁজে নিতে পারেন।
নিজস্ব আগ্রহ: যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে, সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারবেন এবং আপনার দর্শকদের জন্য মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন।
সমস্যা সমাধান: মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে ভিডিও তৈরি করলে তা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। যেমন - কিভাবে ওজন কমাতে হয়, কিভাবে ইংরেজি শিখতে হয় ইত্যাদি।
ভিডিওর বিষয়বস্তু নির্বাচন করার পর একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করা প্রয়োজন। স্ক্রিপ্ট হলো আপনার ভিডিওর মূল কাঠামো। একটি ভালো স্ক্রিপ্ট তৈরি করার জন্য কিছু টিপস:
সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট: স্ক্রিপ্টটি সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট হতে হবে, যাতে দর্শক সহজেই বুঝতে পারে।
আকর্ষনীয় শুরু: ভিডিওর শুরুটা আকর্ষনীয় হওয়া উচিত, যাতে দর্শক পুরো ভিডিওটি দেখতে আগ্রহী হয়।
মূল বার্তা: স্ক্রিপ্টে আপনার মূল বার্তাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
কল টু অ্যাকশন: দর্শকদের জন্য একটি কল টু অ্যাকশন যোগ করুন, যেমন - লাইক, টিউমেন্ট বা শেয়ার করতে বলা।
স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়ে গেলে, এবার এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করার পালা। নিচে একটি সাধারণ প্রক্রিয়া দেওয়া হলো:
আপনার নির্বাচিত এআই প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
স্ক্রিপ্টটি প্ল্যাটফর্মে আপলোড করুন বা সরাসরি লিখুন।
প্ল্যাটফর্মের দেওয়া বিভিন্ন টেমপ্লেট এবং ভিজ্যুয়াল উপাদান ব্যবহার করে ভিডিওটি কাস্টমাইজ করুন।
এআই ভয়েস-ওভার ব্যবহার করে স্ক্রিপ্টটিকে অডিওতে রূপান্তর করুন অথবা নিজের ভয়েস রেকর্ড করে আপলোড করুন।
ভিডিওটি প্রিভিউ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পাদনা করুন।
সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ভিডিওটি ডাউনলোড করুন।
ভিডিও তৈরি করার পর তা অপটিমাইজ করা খুবই জরুরি। অপটিমাইজেশন করলে আপনার ভিডিওটি বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং ভিউ বাড়বে। নিচে কিছু অপটিমাইজেশন টিপস দেওয়া হলো:
আকর্ষনীয় থাম্বনেইল: একটি ভালো থাম্বনেইল আপনার ভিডিওর ভিউ বাড়াতে সাহায্য করে। থাম্বনেইল এমন হওয়া উচিত, যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
উপযুক্ত টাইটেল: ভিডিওর টাইটেলটি আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক হতে হবে। টাইটেলে মূল কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যা মানুষ সার্চ করে।
বিস্তারিত বিবরণ: ভিডিওর বিবরণে ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। এখানেও কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং দর্শকদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
ট্যাগ ব্যবহার: ভিডিওর সাথে প্রাসঙ্গিক ট্যাগ ব্যবহার করুন। ট্যাগগুলো আপনার ভিডিওকে সার্চ রেজাল্টে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
ভিডিও অপটিমাইজ করার পর ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করার পালা। নিচে আপলোড করার নিয়ম দেওয়া হলো:
ফেসবুকে আপলোড:
আপনার ফেসবুক পেজে যান।
"Photo/Video" অপশনে ক্লিক করে ভিডিওটি আপলোড করুন।
টাইটেল, বিবরণ এবং ট্যাগ যোগ করুন।
টিউন করুন।
ইউটিউবে আপলোড:
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে লগইন করুন।
"Create" অপশনে ক্লিক করে "Upload video" সিলেক্ট করুন।
ভিডিওটি আপলোড করুন।
টাইটেল, বিবরণ এবং ট্যাগ যোগ করুন।
ভিডিওর ভিজিবিলিটি পাবলিক, প্রাইভেট বা আনলিস্টেড হিসেবে সেট করুন।
"Publish" করুন।
ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য আপনাকে আপনার চ্যানেল বা পেজ নগদীকরণ করতে হবে। নগদীকরণের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, যা পূরণ করতে হয়। নিচে দুটি প্ল্যাটফর্মের নগদীকরণ প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো:
ফেসবুক নগদীকরণ:
ফেসবুক ক্রিয়েটর স্টুডিওতে যান।
"Monetization" সেকশনে ক্লিক করুন।
ফেসবুকের পার্টনার মনিটাইজেশন পলিসি অনুসরণ করুন।
আপনার পেজে কমপক্ষে ১০, ০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে।
গত ৬০ দিনে কমপক্ষে ৬, ০০, ০০০ মিনিটের ভিউ থাকতে হবে।
আপনার ভিডিওগুলোতে বিজ্ঞাপণ দেখানোর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব নগদীকরণ:
ইউটিউব স্টুডিওতে যান।
"Monetization" সেকশনে ক্লিক করুন।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করুন।
আপনার চ্যানেলে কমপক্ষে ১, ০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
গত ১২ মাসে কমপক্ষে ৪, ০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে।
গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের সাথে আপনার চ্যানেল লিঙ্ক করুন।
আপনার ভিডিওগুলোতে বিজ্ঞাপণ দেখানোর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করা আপনার চ্যানেল বা পেজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করলে আপনার দর্শক ধরে রাখা যায় এবং নতুন দর্শক আকৃষ্ট করা সহজ হয়।
একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুসরণ করুন এবং সেই অনুযায়ী কনটেন্ট আপলোড করুন।
দর্শকদের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন।
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপনার ভিডিও শেয়ার করুন।
এভাবে, এআই ব্যবহার করে বিনামূল্যে ভিডিও তৈরি করে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং নিয়মিত প্রচেষ্টা।
আমি Diya। Social Media marketing, Lum IT Hub, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 54 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।