
কেমন আছেন টেকটিউনসের পাঠকরা? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন, ভালো না থেকে থাকলেও এই টিউনটি পড়ার পড়ে সবার মন ভালো হয়ে যাবে কারণ আজকের টিউনে আমি আলোচনা করবো আমাদের পরিবার এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত একটি ফোনের এবং সেই ফোনটির একটি নতুন ভার্সন এসেছে সে সম্পর্কে। অবাক হচ্ছেন? কিভানে একটি ফোন কিভাবে আপনার পরিবার বা ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে সেটা ভেবে ? তবে বন্ধুরা নোকিয়া ৩৩১০ সেটটির নাম শুনে যদি না চিনে থাকেন তাহলে ছবিটি দেখুন,
আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন কেনো আমাদের পরিবারের সাথে এই মোবাইলের সম্পর্কের কথা বলছি আমি। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও এই মোবাইলটি দেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের হাতে হাতে ছিলো। আপনার পরিবারের যদি ৩ জন মোবাইল ব্যবহারকারী থেকে থাকে সে সময়ের আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি তার মধ্যে কমপক্ষে ১ জন হলেও নোকিয়া ৩৩১০ মোবাইলের ব্যবহারকারী ছিলেন।
কি মনে পড়ছেনা কার ছিলো এই মডেলের মোবাইল ? তাইলে মনে করিয়ে দি আপনাকে, যার এই মোবাইল ছিলো তার মোবাইলে আপনি তার অগোচরে চুপি চুপি লুকিয়ে লুকিয়ে স্নেইক নামক গেইমটি খেলতেন (হে হে হে)
আসলেই এই মোবাইলটির সাথে আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাই এত কথা বলে ফেললাম, আশা করি আপনারা বিরক্ত হননি। আর বিরক্ত হবেনই বা কিভাবে বেয়াদবী হয়ে যাবে তো! এটা হচ্ছে আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য শৈশবের ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়া সকল মোবাইলের দাদা নোকিয়া ৩৩১০ নিয়ে লেখা টিউন ।
তো চলুন রসাত্নক আলাপ বাদ দিয়ে আসল আলোচনায় চলে আসি, আলোচনা বা পারিবারিক স্মৃতি রোমন্থন করবো বলতে পারেন আজকে। (আমাকে জোকার ভাববেন না প্লিজ 🙁 )
আগের অরিজিনাল নোকিয়া এবং ২০১৭ সালে নোকিয়ার পক্ষ থেকে নোকিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এই ফোনের প্রতি হোমেজ,ট্রিবিউট বাংলায় বলতে পারেন সম্মান জানিয়ে, এই ফোন তৈরি করার ১৫ বছর ফুর্তি উপলক্ষে যে আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ এনেছে।
আজকের টিউনে আমি এই দুইটি মোবাইল ফোনের মধ্যকার পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করবো,চলুন তাইলে শুরু করি
নোকিয়া ৩৩১০ যারা চিনেন তাদের মধ্যে ৯৮% মানুষরাই এই মোবাইলটিকে ভালোবাসেন, কারণ এর জটিল জটিল দুইটি গেইম (স্নেইক এবং ফাইটিং গেইম :p) আর এর টেকসই মজবুত সুপারম্যানের মতো শক্তিশালী গঠন এবং আয়রন ম্যানের মতো দীর্ঘক্ষন ব্যাটারি লাইফের কারণে এই মোবাইলকে ভালো না বেসে পারাই যায় না।
তো এই মোবাইল তৈরির ১৫ বছর পরে এই মোবাইলের প্রতি সম্মান জানিয়ে নোকিয়া কর্তপক্ষ নিয়ে এসেছে নোকিয়ার ৩৩১০ নতুন একটি ভার্সন।

ফোনটি কয়েকটি কালারের পাওয়া যাচ্ছে যার মধ্যে নতুনত্ব পছন্দ করা লোকদের জন্যে কমলা এবং লাল এই দুই রঙ্গের নোকিয়া ৩৩১০ ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে।
আর যারা পুরোনো ওল্ড স্কুল জিনিস পছন্দ করেন তাদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে নোকিয়া কর্তিপক্ষ অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ এর আদলে গাঢ় নীল এবং ধুসর রঙেও পাওয়া যাচ্ছে ফোনটি।
যেখানে আগের ফোনটির রঙ ছিলো শুধুমাত্র গাঢ় কালো।

অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ থেকে ২০১৭ সালের আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ বাজারে আসা নোকিয়া ফোন সবদিক থেকেই এগিয়ে থাকবে সেটা জানা কথা তবে বিশেষভাবে যেটা পার্থক্য করা যায় সেটা হচ্ছে ফোনের স্পিড, নোকিয়ার পুরোনো ৩৩১০ মডেলের ফোন যদি আপনি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে বুঝবেন আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ ফোনটি আগেরটির তুলনায় অনেক দ্রুত চালু হয়।

অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ এর ডিসপ্লে ছিলো সাদাকালো ঐ যে আগেই বলেছি ঐতিহ্য আমাদের :p আর আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ এর ডেসপ্লে হচ্ছে রঙ্গিন কালারফুল ডিসপ্লে তবে নোকিয়ার কাছে এই ফোনটি নিয়ে ক্রেতাদের যা চাহিদা ছিলো সেটা ভালোভাবে মেটাতে পারেনি বলে মনে করবো আমি, কারণ আপডেটেড ফোনটির কালারফুল ডিসপ্লে থাকলেও ডিসপ্লেটি এইচডি বা এইচডি-২ কোনোটিই নয়। যদি যে ডিসপ্লে আছে ওটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে ভালোভাবেই।

অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ ফোনে যেসব ফিচার্স ছিলো এসব ফিচার্স গুলোর পাশে আপডেটেড নোকিয়ার মেনুতে গেলে আপনি দেখতে পাবেন কি কি ফিচার্স আছে আমি নতুন ফিচার্সগুলির কথা বলি যা আপডেটেড ভার্সনে যুক্ত করা হয়েহচে ইন্টারনেট ব্রাউজিং- আপনি আপডেটেড নোকিয়া ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন তবে এটা শুধুমাত্র ২.৫জি সাপোর্ট করে তাই ৩জি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হলে আপনি এই ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে বিরক্ত হবেন, আর এই ফোনে কোনো ওয়াইফাই ব্যবহার করার মাধ্যমও নেই তাই এর মাধ্যমেও আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না।
এছাড়া নতুন আরো যা যা ফিচার যুক্ত হয়েছে এই ফোনে সেগুলো হচ্ছে ক্যামেরা,এক্সাটারনাল মেমোরি কার্ড যোগ করার সুযোগ, ফোন এপস স্টোর, গেইমস যা এই ফোন শৈশবে কাছে পাওয়া সব মানুষদের কাছেই প্রিয় ছিলো, স্নেইক সে গেইমটির আপডেটেড ভার্সন পাওয়া যাবে এই ফোনে যেটা বানিয়েছে জনপ্রিয় গেইমতৈরির কোম্পানি গেইমলোফট।
এছাড়া রেডিও,ভয়েস রেকর্ডার, ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর, অর্থাৎ বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেসব ফিচারগুলো থাকা দরকার একটি মোবাইলে তার সবগুলোই আছে নতুন ভার্সনে ৩৩১০ ফোনে যদিও ২.৫ জি ইন্টারনেট আর ওয়াইফাই ব্যবহার করতে না পারাটা একটা নেগেটিভ পয়েন্ট এই ফোনের জন্যে, আমার মনে হয় নোকিয়ার উচিত ছিলো এই ফিচার্সগুলোও যুক্ত করা এই ফোনের সাথে।

আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ ফোনটি দেখলেই বুঝতে পারবেন এটা আগের ভার্সনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রয়াস করা হয়েছে,
স্ক্রিনের চারিদিকে বোর্ড, মেনু বাটন কি প্যাড এসব অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ এর সাহে সাদৃশ্য রেখেই বানানো হয়েছে।
অরিজিনাল নোকিয়া এবং আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ ফোন যদি হাতে নিয়ে আপনি তুলনা করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ টি অরিজিনাল ৩৩১০ অনেক হালকা ওজনের।
তবে এই দুইটি ফোনের পিছনের অংশ ডিজাইন একটি থেকে অন্যটি সম্পুর্ন আলাদা আগেরটাতে যেখানে একটি ঢাকনা মতন ছিলো যেটা পিছনে থাকতে সে জায়গায় এখন ক্যামেরা থাকছে ফোনটির পিছনে।
যদি বলা হয় আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ অরিজিনাল নোকিয়ার ৩৩১০ এর ডুপ্লিকেট তাহলে ভুল বলা হবে তবে বলা যায় অনেক ক্ষেত্র এই দুই ভার্সনের ফোন দেখতে একই ধরনের।

অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ ফোনে যেখানে দুই দিকের কেসিং এ খোলা যেতো ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা যেতো কোনো রকমের ঝামেলা করা ছাড়াই সেখানে আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ ফোনে আপনি শুধুমাত্র পিছনের অংশটিই খুলতে পারবেন যেখানে রয়েছে রিমুভবল ব্যাটারি এবং মেমোরি কার্ডের স্লটে যেটাতে আপনি ৩২ জিবি পর্যন্ত মেমোরি ব্যবহার করতে পারবেন। ফোন মেমোরি মাত্র ১৬ এমবির মতো সুতারাং আপনার অবশ্যই মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে হবে যদি এই ফোন আপনি ব্যবহার করতে চান।

আপোডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ তে নোকিয়ার যে অফিসিয়াল রিংটোন আছে যেটা নোকিয়া রিংটোন নামে পরিচালিত সেটার মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের রিংটোনটিতে যেখানে শুধুমাত্র একটি চ্যানেলের মধ্য দিয়ে রিংটোনের সাউন্ড ট্রান্সমিশন হতো সেই জায়গায় আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ রিংটোনে যাতে কয়েকটি চ্যানেলের মাধ্যমে ট্রান্সমিশন হবে ধ্বনিটি যা এটাকে আগের রিংটোনের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে কোয়ালিটির বিবেচনায়।

অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ যে জিনিসটির জন্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেটা হচ্ছে ব্যাটারি লাইফ দীর্ঘক্ষন চার্জ ধরে রাখার সক্ষমতাই এই ফোনের জনপ্রিয়তার মুল কারণ হিসেবে মনে করি আমি, সেই ধারাকে বজায় রেখে আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ তেও দীর্ঘক্ষন চার্জ থাকার আশ্বাস দিয়েছে নোকিয়া কর্তিপক্ষ, একবার চার্জ দিলে ১ মাস পর্যন্ত সেই চার্জ নিয়ে স্ট্যান্ডবাই মুডে অন থাকতে সক্ষম এই ফোনটি।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ টিউনটি পড়ার জন্যে, এত বিরাট বিশাল ইতিহাস তাও ইন্টারনেটের প্রস্থর যুগ চলছিলো যখন আমাদের জন্যে সে যুগের ফোন সম্পর্কে আলোচনা আসলে হাজার পাতা লিখে শেষ করা সম্ভব না কিন্তু শেষ তো করতেই হবে বন্ধুরা কারণ টিউন মানেই হচ্ছে এমন একটি লিখা যার শুরু এবং শেষ থাকবে, কারণ লিখা শেষ না করলে টিউনতো টিউনই করা যাবে না। অরিজিনাল নোকিয়া ৩৩১০ ভালো নাকি তার তুলনায় আপডেটেড নোকিয়া ৩৩১০ ভালো সেটা ক্রেতাদের কথার মাধ্যমেই বুঝা যাবে।
টিউনটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো, অবশ্যই জানান আমাকে টিউনমেন্টের মাধ্যমে। এছাড়া নোকিয়া কর্তিপক্ষ আর কি কি বিষয় যুক্ত করতে পারতো এই ফোনে সেটা জানান যদি আপনার মনে কোনো সাজেশন আসে। প্রশ্ন করতে পারেন নোকিয়া কর্তিপক্ষ কি আপনার টিউমেন্ট এসে পড়ে যাবে, না তবে আমি একদিন নোকিয়ার মতো জনপ্রিয় একটি ফোন কোম্পানির মালিক হলে আপনার এ সাজেশন গুলো আমার অনেক কাজেই আসতে পারে, যদি আমি কোনোদিন মালিক হয়ে যাই বড় কোনো ফোন কোম্পানির আর আপনার সাজেশন যদি আমার কাজে লাগে তাহলে আমার কোম্পানিতে আপনার চাকরি নিশ্চিত ধরে নিতে পারেন (হে হে হে হে) সবাই ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেয।
আমি ফারহান সাদিক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।