
চলতি বছরের মে মাসে শেষ Post এসেছিলো bProperty এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে। তারা জানিয়েছিলো রুপায়ুন গ্রুপের সাথে কোন স্ট্রাটেজিক পার্টনারশীপে যাচ্ছে তারা। এরপরে আর কোন ফেসবুক কমিউনিকেশন তাদের থেকে আসেনি।
এর পরে ২ - ৩ মাস আগে হঠাৎ বিনা নোটিশে বন্ধ হয়ে যায় তাদের ওয়েবসাইট। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে উৎকণ্ঠা। অনেকেই তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ই-মেইল পাঠায় কিন্তু সেই মেইলগুলো বাউন্স করে। অর্থাৎ, তাদের অফিসিয়াল ই-মেইলগুলোও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেকে চলে যায় তাদের ঢাকার অফিসে কিন্তু অফিসের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ। অনেকেই জানিয়েছে লেনদেনের পরে পোপার্টি বুঝে পায়নি তারা। যদিও এর সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। যার কারণ, bProperty বাংলাদেশে প্রোপার্টি কেনা বেচাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো এবং কোন ধরনের জালিয়াতি তথ্য এর আগে পাওয়া যায়নি। মূলত বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে তাদের ব্যবসা হয়তো পুরোপুরি অথবা আপাততঃ বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে শেষ মূহুর্তে কিছু ভোক্তা হয়তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। গত কয়েক মাস আগে bProperty-এর কর্মীরা মানববন্ধনও করেছিল, কয়েক মাস যাবৎ বেতন না পাওয়ার কারণে। এর কয়েক মাস আগে তারা নিজেরাও অনেক কর্মী ছাটাই করেছিলো। bProperty-এর অনেক প্রাক্তন কর্মীদের কাছেই শোনা যাচ্ছে, তাদের কয়েক মাসের বেতন পরিশোধ করেনি এই PropTech কোম্পানীটি এবং বর্তমানে অন্য প্রতিষ্ঠানের অধিনস্থ হয়ে চাকুরি করছেন তারা।
bProperty এর মাদার কোম্পানী মূলত Emerging Markets Property Group (EMPG), যেটি আরব আমিরাতের একটি ভেঞ্চার কেপিটাল। বাংলাদেশে bProperty ছাড়াও আরব আমিরাতে Bayut.com, পাকিস্তানে Zameen.com এবং মরক্কোতে Mubawab ইত্যাদি জায়ান্ট প্লাটফর্মের মালিক কিংবা শেয়ার হোন্ডার তারা।
bProperty এর বিজনেস মডেল অন্যান্য প্রোপার্ট কিংবা ক্লাসিফাইড প্লাটফর্মের তুলনায় আলাদা ছিলো। তাদের প্লাটফর্মের প্রতিটি প্রোপার্টি তারা নিজেরা বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতো এবং বিনিয়মে ভালো পরিমাণের কমিশন তারা প্রোপার্টি মালিকের কাছে নিয়ে নিতো। এবং bProperty একটি ট্রাস্টেড প্লাটফর্ম হওয়ার কারণে ক্রেতারা তাদের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলো। তবে এই বিজনেস মডেল পরিচালনার জন্য তুলনামূলক বেশি লোকবল এবং ফান্ডিং এর দরকার। যেখান প্রোপার্টি সাইটগুলো শুধুমাত্র এড লিস্টিং-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো, সেখানে bProperty এর উদ্দ্যোগ ছিলো তাদের জন্য বেশ স্কেলেবন আইডিয়া।
২০১৯ সালে তারা Lamudi Bangladesh-কে কিনে নেয়, যাতে দ্রুত নিজেদের এক্সপান্ড করতে পারে। তখন বিক্রয় ডট কম এর পাশাপাশি লামুডি ছিলো প্রোপার্টি ক্রয় বিক্রয়ের নামকরা প্লাটফর্ম। অনেকেই হয়তো জানেন, বাংলাদেশে Carmudi-ও এক সময় জনপ্রিয় ছিলো গাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য কিন্তু মার্কেট সাইজের তুলনায় হয়তো তাদের অপারেশন খরচ বেশি ছিলো, তাই এক সময় সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক বছর বাংলাদেশে ব্যবসা করে হয়তো Lamudi বুঝতে পেরেছিলো, এখানে এক্সপান্ড করাটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। পরিশেষে, bProperty এর কাছে বিক্রি করে দিয়ে বাংলাদেশে তাদের বিজনেস অপারেশন বন্ধ করে দেয় তারা। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, যেমন ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে তারা বেশ ভাল করছে।
মূল টপিকে ফিরে আসি। ৭ দিন আগে ঢাকা ট্রিবিউনের একটি নিউজ পাবলিশ হয়ে, যেখানে জানা যায় রুপায়ুন গ্রুপ bProperty এর ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিতে চেয়েছিলো ১৭ কোটি টাকার বিনিময়ে কিন্তু ২ বার রুপায়ুন গ্রুপের চেয়ারম্যানের দেয়া চেক বাউন্স করে। bProperty এ ব্যাপারে রুপায়ুন গ্রুপের সাথে আলোচনার চেষ্টা করলেও কোন সদুত্তর মেলেনি। ব্যাপারটি এখন এক প্রকার ঝুলে আছে বলা যায়।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে, bProperty-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা Mark Nosworthy বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং তিনি বুঝিয়েছেন, এমনটা হলে আগামীতে বিদেশী ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলো এদেশে ফান্ডিং করতে আগ্রহী হবে না।
হয়তো, ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ ফান্ডিং দরকার তার যোগান bProperty করতে পারছে না। এর পেছনে আরো গল্প থাকতে পারে, যা হয়তো আমাদের অজানা। Emerging Markets Property Group (EMPG) কেনো আর ফান্ডিং করছে না বা মাত্র ১৭ কোটি টাকায় bProperty এর ৬০ শতাংশ শেয়ার তারা বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে এটিও ভাবনার বিষয়, যেখানে গত কয়েক বছরে bProperty এর পেছনে খরচ কয়েক শো কোটি টাকা।
এদিকে bProperty-এর ওয়েবসাইট বন্ধ থাকার কারণে প্রতিনিয়ত তারা হারিয়েছে ট্রাফিক এবং ট্রাস্ট। গুগল থেকে অনেক লিঙ্ক ডি-ইন্ডেক্স হয়ে যাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াতে চাইলেও, এই পিছিয়ে পড়াকে রিকভার করা মোটেই সহজ হবে না তাদের জন্য।
মূলত, অফিসিয়ালি কোন বিবৃত না দিলেও অনেকেই ধরে নিচ্ছে bProperty বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা বর্তমান পরিস্থিতির উপর হয়তো তাদের নিজেরও কন্ট্রোল নেই।
যদিও Lamudi বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু Lamudi এবং bProperty থেকে বাংলাদেশে PropTech ইন্ডাস্ট্রির অগ্রগতি ও ভবিষ্যত অনুমান করা যায়। প্রথমত, এই দুইটি কোম্পানীই প্রচুর ফান্ড নিয়ে নেমেছিলো কিন্তু বাংলাদেশের প্রোপার্টি মার্কেট এখনো ট্রেডিশনাল স্ট্রাটেজি থেকে খুব একটা বের হতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, এই কারণের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় টিকে থাকাটা কঠিন।
বর্তমানে বিক্রয় ডট কম, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ ছাড়া প্রোপার্ট কেনা বেচার জন্য কোন জায়ান্ট প্লাটফর্ম চোখে পড়ার মত নয়। তবে দেশীয় কোম্পানী বিডিহাউজিং এবং আরো কিছু প্লাটফর্ম কিছুটা এগিয়েছে।
আগামী ৩ - ৪ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছে নতুন একটি প্রোপার্টি ক্রয় বিক্রয়ের প্লাটফর্ম Property64.com. যদিও তারা এখনো একটি ব্লগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং আমাদের জানা মতে তারা মার্কেটপ্লেসের জন্য ব্যাকইন্ডে কাজ করছে।
প্রোপার্টি ক্রয়, বিক্রয় জনিত লেনদেন এখনো বাংলাদেশে সহজ নয়। বিশেষ করে ভূয়া দলিলে জমি বিক্রি, একই জমি অনেকের কাছে বিক্রয়, কিস্তিতে ফ্লাট বিক্রির নামে হয়রানি ইত্যাদি নানা ধরনের স্ক্যাম তো আছেই। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে PropTech কোম্পানীগুলো ক্রেতা - বিক্রেতার লেনদেনকে ব্যাংক এবং এসক্রো এর মাধ্যমে অনলাইনে একদম সহজ করে দিয়েছে, বাংলাদেশের প্রক্ষাপট এখনো অনেক পিছিয়ে।
অনলাইনে প্রোপার্টি ক্রয়-বিক্রয়ের বিজ্ঞাপণ এখনো অনেকটাই ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই আগামীতে কোন বড় জায়ান্ট PropTech কোম্পানী বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোটা হয়তো সময় সাপেক্ষ।
আমরা চাই, বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেস্ট ইন্ডাস্ট্রিতে প্রোপার্ট ক্রয় বিক্রয় যাতে আরো সহজ ও নির্ভরযোগ্য হয়, এব্যাপারে সরকার কাজ করুক।
আমি দেওয়ান সোহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।