রেডমি ফোনে যে সকল ছোটো খাটো সমস্যা আছে! আমি কেন রেডমি ফোন পছন্দ করি না?

টিউন বিভাগ মোবাইলীয়
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 3
৪র্থ সেমিস্টার, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

টাইটেল দেখেই হয়ত আপনারা বুঝতে পেরে গেছেন। আজকের পোস্টটি মূলত অনেক বেশি বিতর্কমূলক টিউন। কিন্তু যতই বেশি বিতর্ক হোক, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে, আজকের টিউন এ কোনো ভাবেই রেডমিকে কোনো দিক দিয়ে ছোট করা হবে না। আজকে আমি শুধু সেইসব বিষয় গুলো আলোচনা করব যেসকল ছোট খাটো ব্যাপার গুলো আমি নিজে ফেস করেছি। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করে দেই।

১. ক্যামেরা ভাল লাগে না

রেডমি ফোন গুলোর ক্যামেরা আমার একটুও ভাল লাগে না। বিশেষ করে বাজেট ফোন গুলো। রেডমির প্রতিটি ক্যামেরার কোনোটিই একটুও কাজে আসেনা। খুবই বাজে কোয়ালিটি। হোক সেটা 48 কিংবা 64 মেগাপিক্সেলের, রেডমির ক্যামেরা গুলো একেবারেই অকার্যকর।

বিশ্বাস না হলে আপনার রেডমি ফোন এর ফ্রন্ট ক্যামেরা কিছুটা কম লাইট এর মধ্য ওপেন করে দেখুন। আপনি নিজেও চিনতে পারবেন না যে, আপনি কোনো মানুষ নাকি জিন। আর নয়েজ এর পরিমানও খুব বেশি থাকে। এতটাই বেশি থাকে যে, মনে হয় যেন মাছি ভনভন করছ।

আপনাদের সকলের হাতে হাতে রেডমি ফোন থাকে বলে আপনারা রেডমি ফোন দিয়ে ছবি তুলতে বাধ্য। অন্যথায় রেডমির ক্যামেরা গুলো কাজে লাগার মত না। ছবি তুললেও ছবি খুব খারাপ লাগে। আপনার কাছে কেমন লাগে সেটা জানিনা। আমার কাছে তো খুবই খারাপ লাগে।

২. ক্যামেরা অ্যাপ ভালো না

রেডমির ক্যামেরার আরও একটি খারাপ দিক হচ্ছে রেডমির ক্যামেরা অ্যাপ। এটার মধ্যে এক্সট্রা কোনো ফিচারই নেই। এটি খুবই বাজে একটি ক্যামেরা অ্যাপ। ক্যামেরাতে না হয় সমস্যা থাকে হার্ডওয়্যার এর কারনে। কিন্ত ক্যমেরা অ্যাপ, যা একটি সফটওয়্যার।

ক্যামেরা অ্যাপ এর কোয়ালিটি কিভাবে খারাপ থাকে। তাছাড়া রেডমির সকল ফোনে ওই একই আবর্জনা অ্যাপ ব্যবহার হয়। সকল ফোনে একই ক্যামেরা অ্যাপ রাখার কী প্রয়োজন? অন্তত কিছু কিছু ফোনের জন্য তো ক্যামেরা অ্যাপ পরিবর্তন করতে পারত? তাছাড়া অন্তত কয়েকটি ফোনে তো নতুন কয়েকটি ফিচার এড করতে পারে?

তাদের কি মনে হয় না তাদের এই ক্যামেরা অ্যাপটি কিছুটা ডেভেলপ করা উচিৎ? এটাই হচ্ছে রেডমি সহ সকল চাইনিজ ফোনের কোম্পানির একটি খারাপ দিক। তারা এইসব ছোট খাটো প্রব্লেম গুলো একদমই অবহেলা করে। যেটা আমার মোটেও ভাল লাগেনা।

৩. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিফল্ট ভাবে দেওয়া থাকে

শুধু রেডমি নয়। সকল চাইনিজ ফোনে এখন অতিরিক্ত পরিমানে এমন সব সফটওয়্যার ডিফল্ট ভাবে দেওয়া থাকে, যেসব অ্যাপ আমাদের কোনো কাজেই আসে না। দেশের ৯০ শতাংশ লোক ব্যবহার করেনা এমন সব সফটওয়্যার আমরা পেয়ে থাকি। তাছাড়া এমন সব অ্যাপ দেওয়া থাকে যেগুলো আমাদের দেশের লোকেরা অনেক আগেই ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছে। আর এই সব অ্যাপস এর ভোগান্তি আমাদের খুব ভালো ভাবেই সহ্য করতে হয়।

এগুলো আমাদের ফোনের ডিফল্ট অ্যাপ হওয়ায় আমরা এই সমস্ত অ্যাপ গুলো বন্ধও করতে পারিনা। শুনুন অ্যান্ড্রয়েড খুবই ভাল একটি অপারেটিং সিস্টেম। এটাকে মোটেও কোনো খারাপ অপারেটিং সিস্টেম মনে করবেন না। কিন্ত আজকালকার অ্যান্ড্রয়েড ফোন এর কোম্পানি গুলো, বিশেষ করে চাইনিজ কোম্পানি গুলো এমন সব বাজে পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে এতে সকলের মনেই হয় যে, অ্যান্ড্রয়েড একটি খারাপ অপারেটিং সিস্টেম।

যদিও আপনারা বর্তমানে এইরকম অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম এর সাথে মানিয়ে নিয়েছেন। এইভাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোন এর ইউ আই ডিজাইন করা ফোন কোম্পানি গুলোর সময় এবং অর্থের অপচয় বলে আমি মনে করি। আমি বলি কি অ্যান্ড্রয়েড ফোন এর কোম্পানি গুলো যদি এতগুলো অ্যাপ ডিফল্ট ভাবে সেট না করে শুধুমাত্র জরুরী কয়েকটি অ্যাপ রেখে ফোনটি রিলিজ করে তাহলে মানুষেরা আগের থেকে আরও ১০ গুন বেশী পছন্দ করবে এন্ড্রয়েডকে। আপনি নিজেই বলুন তখন আপনার জন্য ফোন ব্যবহার করা আরও সহজ হয়ে যেত কি না?

৪. অতিরিক্ত পরিমানে এড আসে

রেডমির এই সমস্যাটি আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে। শুধু রেডমি নয়। চায়নার বেশিরভাগ ফোন কোম্পানি গুলোই এমন সব বিরক্তিকর এড, সাজেশন, নোটিফিকেশন দিয়ে আমাদের ফোন গুলোকে ভরিয়ে রাখে। একটি সফটওয়্যার ইন্সটল, আনইন্সটল, এর সময়ে চেকিং করা হয়। সেটার মধ্যেও এড দেওয়া থাকে।

হোম স্কিন এর সার্চ বারে অ্যাপ ইন্সটল এর রেকোমেন্ডেসন পাওয়া যায়। হোম স্কিন কে একটু লেফট অথবা রাইট এ স্লাইড করলেই বিভিন্ন ধরনের এড দেখা যায়। আর ব্রাউজার এর কথা তো বলাই যায় না। ব্রাউজার নয়ত যেন অ্যাপ সাজেশন করার অ্যালবাম। আমি ক্রোম ব্রাউজার এর কথা বলবো না।

রেডমির যেই এম আই ব্রাউজার রয়েছে সেটার কথায় আসেন। এই ব্রাউজারে যদি আপনি একবার ঢুকেন দেখবেন অ্যাপ সাজেশন এর বন্যা বয়ে গেছে। আর একবার যদি কোনো ওয়েব সাইট ব্রাউজ করেন তাহলে দেখবেন আপনার ফোন আর ফোন নেই। একেবারে একটা নোটিফিকেশন প্যানেল হয়ে গেছে। এত নোটিফিকেশন আসবে যে আপনি গুনেও শেষ করতে পারবেন না।

রাতে ফোন রেখে ঘুমালে সকালে উঠে দেখেন যে ফোন নোটিফিকেশন এ ভরে যায়। এবং সবগুলো নোটিফিকেশন দেখতে দেখতে আপনার দুপুর বেলা পেরিয়ে বিকাল হয়ে যাবে কিন্ত নোটিফিকেশন শেষ হবে না। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে আপনি কাজের নোটিফিকেশন একটাও পাবেন না। এই কোম্পানি গুলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে একেবারে দূষিত করে ফেলেছে। তাই এদের কারণে এখন বহু লোকজন এখন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে এতটাই ঘৃনা করা শুরু করেছে যে, এদের কাছে সবচেয়ে খারাপ মোবাইল ফোনই হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন।

৫. সফটওয়্যার ক্রাশ হয়

একটি রেডমি নতুন ফোন কিনার পর থেকে যত বেশি দিন যায় যত বেশি পুরাতন হতে থাকে রেডমির সফটওয়্যার গুলো তত বেশি ক্রাশ হতে থাকে। অনেক দিন ব্যবহার করার ফলে অনেক সফটওয়্যার এর মধ্যে বেশি পরিমানে ক্যাশ ডাটা জমে থাকে। ফলে সফটওয়্যার গুলো ক্রাশ করতে থাকে। কিন্তু কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো সারা বছরে এক বারও ব্যবহার করা হয় না। তবে রেডমির উ
ইউ আই এতটাই দুর্বল যে, সফটওয়্যার ক্রাশ করা শুরু করলে যেই অ্যাপ গুলো কখনও ব্যবহার করা হয় না সেই অ্যাপ গুলোও ক্রাশ করা শুরু করে।

শেষ কথা

এখন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এইসব বিজ্ঞাপণ, রেকোমেন্ডেডেসন, অতিরিক্ত অ্যাপ গুলো কেন আসে। এইসব বিষয়বস্তু আসারও যথেষ্ট কারন রয়েছে। ফোন কোম্পানী গুলো থেকে মানে মার্কেট থেকে আমরা যেই দামে একটি ফোন কিনে থাকি, বিশেষ করে যেসকল বাজেট ফোন গুলো আমরা কিনে থাকি। তার ঠিক ৫ শতাংশ লাভাংশই কোম্পানি গুলো পেয়ে থাকে। বাকি সমস্ত টাকা গোডাউন, খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছে, বিজ্ঞাপণ, উৎপাদন ইত্যাদি যেকোনো জায়গায় খরচ হয়ে থাকে।

তাই একটি বিশাল কোম্পানীর জন্য একটি পন্যের মাত্র ৫ শতাংশ লাভাংশ যথেষ্ট নয়। এজন্য কোম্পানী গুলো মোবাইল এর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপণ দিয়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু অ্যাপ আমাদের ফোনে আগের থেকেই দেওয়া থাকে কিন্ত আমরা সেটা আনইন্সটল করতে পারি। এসব অ্যাপ এর কোম্পানী গুলোকে তাদের অ্যাপ গুলো ডিফল্ট ভাবে সেট করে রাখার জন্য ফোন কোম্পানী গুলোকে প্রফিট দিয়ে থাকে। এরও খুব ভাল একটি কারন রয়েছে।

আমাদের আগেরকার সময়ের নোকিয়া ফোন গুলোর কথা মনে আছে। সেই ফোন গুলোর মেনুতে অনেক গুলো ফাংশন থাকত। যেগুলো ইন্সটল কিংবা আনইন্সটল করা যেত না। শুধু মাত্র ব্যবহার করা যেত। সেগুলো কোনো সফটওয়্যার ছিলো না।

তো এখনকার সময়েও এমন কিছু লোক আছে যারা অ্যান্ড্রয়েড ফোন এর মেনুর অ্যাপ গুলো কেও ফাংশন হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের ফোনে সফটওয়্যার বেশি থাকলে তারা দাবি করে যে, ফোনে ফাংশন বেশি আছে। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই মূলত কোম্পানি গুলো ফোনে অ্যাপ এর পরিমান বেশী রাখে।

আমার টিউন এখানেই শেষ। আজকে আর কিছু লিখছি না। ততক্ষণে সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। খোদা হাফেজ।

Level 3

আমি মো মারুফ শেখ। ৪র্থ সেমিস্টার, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 29 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাইয়া,আপনি কি টেক্টিউন্স থেকে টার পাইসেন?

না। যথেষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। যেগুলো সম্পন্ন হলে পেমেন্ট পাশ হবে।