মোবাইল ফোন কেনার জন্য কয়েকটি জরুরী টিপস

স্মার্টফোনকে আমরা দৈনিক একাধিক কাজে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের চলার পথে ইন্টারনেট জগতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে যেমন ভুমিকা রাখে ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় মুহুর্ত ক্যামেরাবন্দী করতে সাহায্য করে। এটা যেমন প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনি সখের একটি বস্তু। আবার অনেকের কাছে নতুন মডেলের মোবাইল ফোন কেনাটা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।   দুদিন পর পর মোবাইল ফোন পরিবর্তন করাটা যেন নেশা।

বাজারের এখন প্রায় সকল ব্রান্ডের ফোনেই প্রসেসর রাখা হয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫। কিন্তু বাজারে হাজার হাজার স্মার্ট ফোনের ভীরে কোন ফোনটা আমরা বেছে নেব তা নিয়ে নানা রকম ঝামেলায় পরে যাই। আর না জেনে মোবাইলের মার্কেটে গিয়ে ফোন কেনা মানে চরম বোকামি এবং অর্থের অপব্যয় ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাছাড়া বাজারে ভুয়া স্মার্ট ফোনের ছড়াছড়ি। কারণ দোকানদার শুধু তার নিজের লাভের আশায় আপনাকে যেকোন মোবাইল কেনার জন্য উৎসাহিত করবে। আমাদের মাঝে  কেউ কেউ গেম খেলতে খুব পছন্দ করে, কেউ ভিডিও দেখতে আবার কারো কারো সেলফি তোলায় নেশা। ছোট একটা উদাহরন দেই, আপনি গেম খেলতে খুব পছন্দ করেন, নতুন একটা গেম বাজারে এলো অথচ গেমটা আপনার পুরাতন ফোনে কিছুতেই খেলতে পারছেন না, তাই আপনি উদ্যোগ নিলেন টাকা যোগার করে নতুন স্মার্ট ফোন কেনার। চট জলদি বাজারে গেলেন আর যেকোনো একটা মোবাইল ফোন কিনে বাসায় আসলেন কিন্তু সেই একই অবস্থা গেমটা ইন্সটল হোল ঠিকই কিন্তু খেলতে পারছেন না।

এমন সব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে আজ স্মার্ট ফোন  কেনার আগে যে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা নিয়ে আমি আলোচনা করবো।

অধিক কার্যক্ষম প্রসেসরঃ

mobile processor
স্মার্ট ফোন কেনার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে প্রসেসর এর দিকে।   এটাকে স্মার্ট ফোনের ব্রেইন বলা হয়। কারন একটা ফোনের স্পিড এবং ফোনটি কতটা ভাল বা খারাপ হবে তা নির্ভর করে প্রসেসরের উপর। সকল সময় ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে লেটেস্ট প্রসেসর ব্যবহার করতে হয় আর এর জন্য প্রয়োজন বেশি বাজেটের।   সাধারণত ৪ রকমের প্রসেসর পাওয়া যায় তা হলঃ ডুয়াল কোর, কোয়াড কোর, হেক্সা কোর এবং অক্টা কোর। একটা কথা না বললেই নয়, যেই প্রসেসরে কোরের সংখ্যা বেশি সেই ফোনের কাজ করার শক্তিও বেশি হবে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিজেদের স্মার্টফোনের জন্য চিপসেট তৈরি করে। যেমনঃ ইন্টেল, কোয়ালকম, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অ্যাপল, মিডিয়াটেক আরও এমন অনেক।   ভালো স্মার্টফোনের জন্য স্কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ ; স্যামসাং এর এক্সিনস ৯৮১০, মিডিয়াটেক হেইলো পি৭০, এক্স৩০ এসবের যে কোন একটি থাকা চাই, এগুলো ভালো মানের প্রসেসর। মোবাইল কেনার সময় মাথায় রাখতে হবে আপনার প্রসেসরের স্পীড যেন ৫GHz এর বেশি হয় তবে ২ GHz হলেও স্পীড ভালো পাওয়া যাবে।

ডিসপ্লের গুনগত মানঃ

সব দিক বিবেচনা করে মোবাইল কিনতে গেলে প্রতিটা জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আর ডিসপ্লের ক্ষেত্রে আপোষ তো কখনই না। বাজারের সেরা দুটি ডিসপ্লে -  একটি হল অ্যামোলেড বা সুপার অ্যামোলেড এবং অন্যটি হল আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে। এই দুটির মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। অ্যামোলেড ডিসপ্লে স্ক্রিনের প্রত্যেকটি পিক্সেল আলাদা আলাদা ভাবে আলোকিত করে।   আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে  যা পোলারাইজড আলোকরশ্মিকে একটি কালার ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে প্রভাহিত করে। এখন কথা হল কোন ধরনের ডিসপ্লে আপনি বেছে নিবেন? সবচেয়ে সহজ উপায় হল দুটি  ডিসপ্লে পাশাপাশি রেখে যেটি বেশি আকর্ষণীয় সেটাই বেছে নিন।

ভাল ক্যামেরা বাছাইঃ

মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে এখন সবাই ঝুঁকেছে ক্যামারার দিকে তাই ছবি দেখেই আকর্ষিত হয়ে মোবাইল কিনে নেয়  অনেকে। আর এটার ফায়দা নিতে কোম্পানিগুলো যুক্ত করছে উন্নত ক্যামেরা। ক্যামেরা ভাল পেতে চাইলে অনেকগুলো বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে  লেন্স এর দিকে। আধুনিক ফোনগুলোতে যুক্ত হচ্ছে ডুয়াল লেন্স, ট্রিপল লেন্স এবং শক্তিশালী ইম্যাজ প্রসেসর। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল স্লো মোশন ফিচার, যা স্মার্ট ফোনগুলোতে যুক্ত করা হচ্ছে। সেন্সরের মান ভাল কি খারাপ তা নির্ভর করে তার আকারের উপর। সেন্সর ১ ইঞ্চির ও হয়ে থাকে। এরপর হল মেগাপিক্সেল। যদি সেন্সর ভাল হয় তবে কম মেগা পিক্সেল দিয়েও ভাল ছবি তোলা যায়। এবার যেটার কথা বলবো সেটা হল অ্যাপারচার। এটি  বেশি মানেই যে ক্যামেরা ভাল, তা মটেও না। অল্প আলোতে উজ্জ্বল ছবি তোলার জন্য অ্যাপারচার কমই ভাল। আই ও এস এর মান দিয়ে সহজেই বুঝতে পারবেন ক্যামারার আলোকসংবেদী তা। আই ও এস যত বেশি হবে আলোকসংবেদী তা তত বেশি। আরও রয়েছে শাটার স্পিড, এইচডিআর, ডুয়াল-টোন ফ্ল্যাশ, ফেজ ডিটেকশন ও লেজার অটোফোকাস, ডুয়াল সেন্সর বা ডুয়াল ক্যামেরা। অপটিকাল-ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন নিয়ে কথা বলতে গেলে নকিয়া লুমিয়া ৯২০ মডেলের কথা বলতে হয় কারণ তারাই এটার প্রচলন করেন। এলজি জি২, লুমিয়া ৯২৫, এইচটিসি ওয়ান, লুমিয়া ১০২০ ও স্মার্টফোনেও এখন এই  প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে।

বেশি  র‍্যামের গুরুত্ব:

মোবাইলে র‍্যাম এর পরিমাণ  একটু বেশি নিলেই ভাল হয়। কারন আপনি যখন গেম খেলেন বা কোন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন  অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তখন আপনার কাজের উপর নির্ভর করে র‍্যাম তার কিছু অংশ ব্যবহার করে। যদি র‍্যামের পরিমাণ কম হয় তবে আপনার মোবাইল স্লো এবং তার কার্যকারিতা কমে যায়। যখন এমন সমস্যায় পরেন তখন ভাবুনতো মেজাজটা কি পরিমান গরম হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন  ৩ বা ৪ জিবি র‍্যাম ব্যবহার করতে এটা আমারও ব্যক্তিগত মতামত। এখন বেশ কিছু মোবাইল কোম্পানি ৬জিবি পর্যন্ত র‍্যাম সংযুক্ত করেছে। এটা ভালো তবে দামের দিকেও তো নজর দিতে হবে।

মোবাইল ফাস্ট এবং আপনি যেমনটি চান তেমনভাবে চালাতে একটু বেশি পরিমানে র‍্যাম হলেই চলবে কিন্তু মাথায় রাখবেন সেটা যেন  ১ বা ২ জিবি না হয় তাহলে কয়েকদিন পর আপনার মোবাইলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে।

স্টোরেজ বা রমঃ

মোবাইল, পিসি কিংবা এধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে দুই ধরনের স্টোরেজ বা মেমোরি থাকে এগুলো হল রম এবং র‍্যাম। রম যাতে আপনি অ্যাপ, ছবি, ভিডিও, ফাইল  ইত্যাদি জমা রাখতে পারবেন। আমার মনে হয় ১৬ জিবির নিচে রম না নেওয়াই ভাল। এখনতো অনেক মোবাইলে ২৫৬ জিবি এবং তারও বেশি রম পাওয়া যাচ্ছে।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারিঃ


আমরা অনেকে মোবাইল ফোন কিনতে গেলে প্রথম যেটা জিজ্ঞাসা করি সেটা হল ভাই ব্যাটারির চার্জ কেমন থাকে? আমি প্রশ্নটার সাথে একমত, কারণ ব্যাটারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেটা ছাড়া মোবাইল একেবারে অচল। ব্যাটারির ক্ষেত্রে  mAh যত বেশি হবে আপনি তত বেশি চার্জ ব্যাকআপ পাবেন। সবসময় খেয়াল রাখবেন ৪০০০ এম এ এইচ এর বেশি পাওয়ার এর ব্যাটারির মোবাইল কেনার।

পরিশেষে বলব এত টাকা দিয়ে মোবাইল কিনবেন একটু বেশি কিছু আশা করাটাই স্বাভাবিক। ফেস আন লক, ফিঙার প্রিন্ট আনলক,   অ্যাপ ক্লোন, অ্যান্ড্রয়েড এর সংস্করন নতুন কিনা এবং দোকানিকে জিজ্ঞাসা করবেন কোন অফার আছে কি না?

অপারেটিং সিস্টেমঃ

মোবাইল ফোন কেনার  ক্ষেত্রে অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি ফোন কেনার ক্ষেত্রে  কোন অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচন করবেন তা আরও জরুরী। কারন গোটা ফোনের সফটওয়্যার এর কার্যক্ষমতা নির্ভর করে  অপারেটিং সিস্টেমের উপর। বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত ৩ টি অপারেটিং সিস্টেম হলঃ অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ ফোন, এবং আইওএস। এখন প্রশ্ন হল কোন অপারেটিং সিস্টেম আপনি ব্যবহার করবেন? এক বাক্যে বলবো এটা আপনার বাজেট এর উপর নির্ভর। আপনার বাজেট এবং সহজবোধ্যতার  দিকে নজর দিলে আমি নিঃসন্দেহে বলবো আপনার ফোনের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটাই বেস্ট হবে। আর যদি বাজেট যথেষ্ট থাকে তবে চোখ বন্ধ করে আইওএস বা অ্যাপেল ফোনটি কিনুন।

বাজেটের দিকে নজরঃ

আপনার বাজেট কেমন? খুব বেশি নাকি কম তার উপরেই নির্ভর করবে আপনার স্মার্ট ফোনটি। কম হলে তো বুঝতেই পারছেন সস্তার বার অবস্থা। কম বাজেটের স্মার্ট ফোনে লেটেস্ট সব টেকনোলজি এবং ফিচার থাকবে না, এটাই সত্যি। সেই ক্ষেত্রে একটু কষ্ট করে আপনার বাজেটের মধ্যে  বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্ট ফোনগুলো নিয়ে ঘাটতে হবে। এটার জন্য আপনি বিভিন্ন অনলাইন শপ খোঁজ করতে পারেন অথবা আপনার বিশেষ সুবিধার্থে দাম জানুন নামক ওয়েব সাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

Level 2

আমি আহমেদ তানভীর স্মরণ। , Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 25 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস