প্রতিদিন প্রযুক্তি বাজারে দেখা মিলছে চমৎকার সব স্মার্টফোন ডিভাইসের। সামনে ঈদ উপলক্ষে আমরা সম্ভবত আরও বেশ কিছু নতুন বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি সম্পন্ন স্মার্টফোন দেখতে পাবো আর না হলে ঈদ উপলক্ষে পুরাতন মডেলগুলোয় ছাড়তো পাবোই। কেননা, অনেক ব্যবহারকারীই ঈদের আগে নতুন স্মার্টফোন নিয়ে থাকেন। আর বর্তমানে একটি স্মার্টফোন কেনার সময় স্মার্টফোনে সবাই ক্যামেরা বা র্যামের পেছনেই ছুটছে না বরং ব্যাটারি ক্ষমতাকেও অনেকেই মাথায় রাখছেন। কেননা, সবারই অভিযোগ এখনকার স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারি লাইফ সম্পর্কে। কিন্তু, মূল কথা হচ্ছে আমরা খুব দ্রুতই বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন কোন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস পাবো না। অন্তত লজিক তাই বলে। কেন? চলুন দেখা যাক।
বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোতে আপনি খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন হাই-রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লে ইউনিট ব্যবহার করা হচ্ছে। আর হাই রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লে বেশি ব্যাটারি ড্রেন করে থাকে। আপনি আপনার একটি কিউএইচডি ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন কমিয়ে যদি এইচডি রেজ্যুলেশন করেন তবে আপনি নিজেই ডিভাইসটিতে আগের চাইতে কম ব্যাটারি ড্রেন লক্ষ্য করবেন।
২০১৫ সালের শেষের দিকেই সম্ভবত সব মেজর ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোর জন্য কিউএইচডি ডিসপ্লে স্ট্যান্ডার্ড ধার্য করা হবে, আর মিড-রেঞ্জের ডিভাইসগুলোতে কিউএইচডি স্ট্যান্ডার্ড করতে সম্ভবত আরও বছর দুই সময় লাগবে। এবছর আবার বেশ কিছু ৪কে ডিসপ্লে সম্বলিত স্মার্টফোনের দেখাও আমরা পেতে পারি। যাই হোক, মূল কথা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করতে এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাতে স্মার্টফোনগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চ রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লে ইউনিট যা ব্যাটারি ড্রেন করছে। তাই আপনি যদি সর্বোচ্চ ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স চান তবে আপনাকে কিছুটা হলেও ব্যাটারি নিয়ে সাফার করতে হবে, আর যদি আপনি কম রেজ্যুলেশন বিশিষ্ট স্মার্টফোনেও সন্তুষ্ট থাকেন তবে অন্তত কিছুটা হলেও আপনি আপনার ডিভাইসে ব্যাটারি ব্যাক-আপ বেশি পাবেন।
ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসবেই যখন আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছি বর্তমানে তাই যুগের সাথে তাল মিলাতেই স্মার্টফোনের একটি হিডেন রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে এর স্লিকনেস। স্মার্টফোন কেনার সময় ক্রেতারা সবসময় এর ক্যামেরা, ডিসপ্লে, পারফর্মেন্স এর পাশাপাশি স্মার্টফোনটি পাতলা কি না, সুন্দর কি না এগুলোও লক্ষ্য করে থাকেনে। আর এর ফলেই আমরা বাজারে অনেক স্লিম ডিভাইসের দেখা পাচ্ছি। আমাদের দেশিও ব্র্যান্ড সিম্ফনিও বর্তমানে তাদের একটি স্মার্টফোন বাজারে এনেছে সিম্ফনি এক্সপ্লোরার জেড৬ মডেলের যার থিননেস মাত্র ৬.৮৫ মিলি মিটার, এবং সবচাইতে মজার বিষয় হচ্ছে এই ডিভাইসটি দিয়েই আমরা এই পয়েন্টটি চমৎকার করে ব্যাখ্যা করতে পারি। স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে, র্যাম, রম ইত্যাদি চমৎকার হলেও প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে ব্যবহারকারীরা এর ব্যাটারি নিয়ে অসন্তুষ্ট মনোভাব প্রকাশ করেছে। কেননা, স্মার্টফোনটির ওভার অল কনফিগারেশন আপ-টু-দ্যা মার্কস হলেও স্মার্টফোনটিতে দেয়া হয়েছে মাত্র ২০৫০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি। মন্তব্য পড়ে বোঝা গেল যে ব্যবহারকারীরা বেশি দাম দিয়ে হলেও বেশি ক্ষমতা যুক্ত স্মার্টফোন চায়, এবং অক্টাকোর প্রসেসর এবং অ্যামোলেড ডিসপ্লের বিপরীতে ২০৫০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি কতটুকুই বা সাপোর্ট দিবে বলে তারা সন্দিহান! কিন্তু ব্যবহারকারীরা ভুলে যাচ্ছেন যে প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোনটিকে আকর্ষণীয় করতে স্মার্টফোনটিকে করতে চেয়েছে বেশ পাতলা যার ফলে তাদের কিছুটা ছোট এবং পাতলা আকারের ব্যাটারি ব্যবহার করতে হয়েছে। তাই, যতদিন আমাদের ব্যাটারি প্রযুক্তি পরিবর্তন না হচ্ছে ততদিন যদি আপনি পাতলা আকারের স্মার্টফোন কিনতে চান তবে আপনাকে ব্যাটারি লাইফের দিকে ছাড় দিতেই হবে। এক প্রকার টেকনিক্যাল লিমিটেশনে বাঁধা পরে আছি আমরা আরকি!
এই পয়েন্টটি মূলত কিছুটা স্মার্টফোনের থিননেসের সাথেও যায়, তবুও! বর্তমানের স্মার্টফোনগুলো শুধু যে পাতলাই করা হচ্ছে তাই নয় বরং ডিভাইসগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে স্মার্টফোনগুলো ডিজাইনের দিক থেকে বেশ ইমপ্যাক্ট করা হচ্ছে। ডিভাইসগুলোতে যেন কোন জায়গা অকেজো না থাকে তার জন্য চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আপনি বর্তমানের স্মার্টফোনের স্পেসিফিকেশনগুলো চেক করলেই দেখতে পাবেন যে ডিসপ্লে ইউনিটে লেখা থাকে স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে বডি ৬৭ বা ৭০ শতাংশ স্থান দখল করেছে। অর্থ হচ্ছে, ডিসপ্লের দুই পাশে খালি স্পেস খুবই কম। এরকম ভাবেই ডিজাইনগুলো পারফেক্ট করার পেছনে দৌড়াচ্ছে স্মার্টফোন প্রতিষ্ঠানগুলো, কিন্তু ব্যাটারির আঁকার থাকছে সেই একই আকারে। কেননা, একে তো চমৎকার এই ডিজাইনগুলোতে বড় ব্যাটারি দেয়ার জায়গা হচ্ছেনা, আর বড় ব্যাটারি যুক্তি স্মার্টফোন নির্মাণ করতে গেলে স্মার্টফোনটি অন্তত দেখতে আর স্মার্ট লাগছে না। মজার বিষয় হচ্ছে ২০১৫ সালে এমন কিছু ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বাজারে বের হয়েছে যেগুলোতে ২০১৪ সালের ফ্লাগশিপ ডিভাইসগুলোর তুলনায় কম ক্ষমতার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বাস হলো না?
বিশ্বাস না করার কোন কারণ নেই, কেননা আমার ঝুলিতে আছে চমৎকার একটি উদাহরণ। একটি তুলনামূলক উদাহরণ। এই উদাহরণের জন্য আমরা একই প্রতিষ্ঠানের দুটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের মধ্যে তুলনা করে দেখবো। প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে স্যামসাং এবং ডিভাইস দুটি হচ্ছে গ্যালাক্সি এস৫ এবং গ্যালাক্সি এস৬। এবছরের গ্যালাক্সি এস৬ ডিভাইসটিতে দেয়া হয়েছে ২৫৫০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি যেখানে গতবছরের গ্যালাক্সি এস৫ ডিভাইসটিতে দেয়া হয়েছিলো ২৮০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি। যদিও স্যামসাং এর নতুন এই ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস গ্যালাক্সি এস৬-এ রয়েছে চমৎকার কিছু ব্যাটারি অপটিমাইজেশন ফিচার তবুও পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে গ্যালাক্সি এস৫ ডিভাইসটির ব্যাটারি ব্যাক-আপ বেশিক্ষণ থাকে। হয়তো, এর কারণ এটি আঁকারে বড় এবং এতে কিউএইচডি ডিসপ্লেও নেই।
আমরা বর্তমানে এমন একটি ব্যাটারি টেকনোলজিতে পড়ে আছি যা আমরা ব্যবহার করে আসছি গত কয়েক বছর ধরেই। যদিও বর্তমানের এই ব্যাটারি টেকনোলজিটি কষ্ট-ইফেক্টিভ, হাই ক্যাপাসিটি এবং অন্যান্য অপশনের চাইতে কিছুটা ভালো, তবুও এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে পর্যাপ্ত নয়।
আসলে টাইটেলে কিছুটা ভুলই লিখেছি এক দিক থেকে, কেননা অবশ্যই নতুন ব্যাটারি টেকনোলোজি নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে, কিন্তু যেহেতু আমরা বর্তমানে আউটপুট পাচ্ছিনা বা নতুন কোন ব্যাটারি প্রযুক্তির কোন খবর এমনকি গুজবও পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত তাই আমি বলতেই পারি যে আমরা থমকে আছি। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ব্যাটারি প্রযুক্তি এবং বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি প্রদানে সক্ষম না হলেও এই ব্যর্থতা ঢাকতে ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোতে যুক্ত করে দিচ্ছে কুইক চার্জের সুবিধা! আর পাশাপাশি পাওয়ার ব্যাংকগুলোও ভালোই ব্যবসা করে যাচ্ছে!
স্মার্টফোনগুলো আগের চাইতে এখন অনেক শক্তিশালী! এমনকি বর্তমানে স্মার্টফোনের জন্যেই বিলুপ্ত প্রায় হয়ে যাচ্ছে ডেডিকেটেড গেমিং ডিভাইস, এমপি থ্রি, এমপি ৪ প্লেয়ার এবং এমনকি ডিজিটাল ক্যামেরাও! বর্তমানে অনেকেই একটি ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার পরিবর্তে নতুন একটি ভালো স্মার্টফোন কিনে থাকে কেননা একটি চমৎকার ক্যামেরা ইউনিট সম্বলিত স্মার্টফোন বেশ ভালো মানের আউটপুট দিতে সক্ষম। ঠিক একই ভাবে কালের আবর্তে হারিয়ে গিয়েছে এমপি থ্রি প্লেয়ার এবং এমপি ৪ প্লেয়ার। স্মার্টফোনে যুক্ত করা হচ্ছে কোয়াড, অক্টা, ডেকাকোরের প্রসেসর যা স্মার্টফোনগুলোকে বানিয়ে তুলছে গেমিং বিস্টে! আর এর ফলে বাজারে অনেকটাই ডেডিকেটেড গেমিং ডিভাইস যেমন পিএস৪, এক্সবক্স কিছুটা হলেও ফল করেছে। হ্যাঁ, আপনি এই প্রসঙ্গে হেসে ওঠার আগেই বলছি সৌখিন বা গেম প্রেমীদের জন্য ডেডিকেটেড হার্ডওয়্যারের উপর কখনোই স্মার্টফোন ডিভাইস স্থান পাবেনা তবে যে হারে স্মার্টফোনগুলো দিনের পর দিন শক্তিশালী হচ্ছে তাতে হয়তো এরকম একদিন হতেও পারে।
যাই হোক, বর্তমানে আমরা যে হাই এন্ড গেমগুলো খেলে থাকি, যেমন ধরুন – অ্যাশফাল্ট ৮, মডার্ন ওয়ারফেয়ার ৫ টাইপের গেম গুলো, একই সাথে সেগুলো র্যাম রিসোর্স, প্রসেসর রিসোর্স দখল করে থাকে। এবং আপনি খেয়াল করবেন কিছুক্ষণ খেললেই আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি মিটারে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়।
শুধু যে গেমিং-ই তাই কিন্তু নয়, আমরা বর্তমানে স্মার্টফোনের সাহায্যে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কানেক্টেড থাকি অনলাইনে। সেটা প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে, কিন্তু যেহেতু ওয়াই ফাই, মোবাইল ডাটা অন থাকে তাই স্বাভাবিকের চাইতে বা স্ট্যান্ডবাই টাইমের চাইতে বা অফলাইনে ব্যবহারের চাইতেও তো সেক্ষেত্রে বেশি চার্জ ড্রেন হবেই, নাকি? এছাড়াও আমরা স্মার্টফোনগুলোতে যে সকল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপলিকেশনগুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময় অ্যাকটিভ থাকার জন্য র্যাম রিসোর্স ব্যবহার করতেই থাকে। আর একটি রিসোর্স ব্যবহার করা মানেই হচ্ছে ব্যাটারি ড্রেন হওয়া। হয়তো একটি মাত্র অ্যাপলিকেশনের জন্য আপনি সেই ড্রেনের পরিমাণ বুঝতে পারবেন না তবে বেশ কিছু অ্যাপলিকেশন একই সাথে ব্যাটারি ড্রেন করতে থাকলে আপনার ডিভাইসে কতক্ষণই বা চার্জ আশা করবেন আপনি?
স্মার্টফোনগুলো ধীরে ধীরে স্মার্ট থেকে সারটার হচ্ছে। আর এই স্মার্ট হবার প্রক্রিয়ার স্মার্টগুলো হচ্ছে স্লিম এবং এরই ফলে স্মার্টফোনগুলোতে যুক্ত করা যাচ্ছেনা বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি। আর এদিকে আমাদের চাহিদাও স্মার্টফোনের কাছে বেড়েই চলছে! আগে যে ডিভাইসটি শুধু মাত্র কথা বলা আর মেসেজিং-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো সেগুলো আজ আমরা প্রায় আমাদের সব প্রয়োজনেই ব্যবহার করে থাকি। আজকের একটি স্মার্টফোন একই সাথে গেমিং ডিভাইস, মিডিয়া প্লেয়ার, জিপিএস ডিভাইস – কত কিছুরই কাজ করে যাচ্ছে। এ যেন অল ইন ওয়ান। তাই, ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো হবে এমন স্মার্টফোন আমাদের পেতে কিছুটা দেরিই আছে। কেননা, যেহেতু স্মার্টফোন আমরা কম ব্যবহার করতে পারবোনা আর বড়-ভারী মোবাইলও কিনবো না তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নতুন কোন প্রযুক্তির। ততদিন পর্যন্ত, একটু কষ্ট করেই না হয় ব্যাটারি ম্যানেজমেন্টটা করা যাক।
পূর্বে যেডটিতে প্রকাশিত। টুইটার
আমি অর্ক রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Good