স্বল্পমূল্যে অধিক ফিচার সংবলিত স্মার্টফোন আনার ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগণ্য দেশীয় স্মার্টফোন বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন সম্প্রতি বাজারে এনেছে Primo E4+ প্রিমো ই সিরিজের নতুন একটি স্মার্টফোন। স্পেসিফিকেশনের দিক থেকে এই ফোনটি অনেকটাই এর পূর্বসূরী Primo E4+ এর মতো। পার্থক্য বলতে Primo E4+এ ছিলো ৫১২ মেগাবাইটের র্যাম আর এতে ১ গিগাবাইটের র্যাম। ফলে যারা স্বল্পমূল্যে ১ গিগাবাইটের র্যাম সংবলিত ফোন কিনতে চান তাদের জন্য Primo E4+ থাকতে পারে পছন্দের শীর্ষতালিকায়। এই ফোনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর হালকা গড়ন ও আকর্ষণীয় ডিজাইন, ৯.৩ মিলিমিটার পুরুত্বের Primo E4 স্মার্টফোনটির ওজন মাত্র ১১৩ গ্রাম (ব্যাটারিসহ)। ৫,৯৯০ টাকা মূল্যের ডুয়েল সিম সুবিধাসম্পন্ন এই ফোনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর উভয় সিম স্লটেই থ্রিজি সুবিধা উপভোগ করা যাবে।
বাজারে আসা নিত্যনতুন সব স্মার্টফোনের হ্যান্ডস-অন রিভিউ পাঠকদের সামনে তুলে ধরার ধারাবাহিকতায় ওয়ালটনের এন্ট্রি লেভেলের স্মার্টফোন Primo E4+ এর ডিজাইন, ব্যাটারী ব্যাকআপ, গেমিং পারফরম্যান্স, বেঞ্চমার্ক স্কোর, ক্যামেরা পারফরম্যান্স প্রভৃতি বিশ্লেষণধর্মী তথ্য পাঠকদের জানাতে আজ থাকছে Walton Primo E4+ এর Exclusive Hands-on Review
প্রিয় পাঠক, চলুন তাহলে একনজরে Primo E4+ এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহ দেখে নেওয়া যাক –
এবারে তাহলে বিস্তারিত রিভিউয়ের দিকে যাওয়া যাক-
আনবক্সিং:
স্মার্টফোনটির বক্সে যা যা রয়েছে –
অপারেটিং সিস্টেম:
ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে খুব শীঘ্রই এই ফোনে ললিপপ আপডেট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ওয়ালটন।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন:
প্রিমো ই৪+ স্মার্টফোনটি বেশ আকর্ষণীয় ডিজাইনের। এই ফোনের উপরের অংশে রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট ও ইউএসবি ২.০ পোর্ট। এছাড়া ফোনটির একপার্শ্বের অংশে রয়েছে ভলিউম কী আর অপর পার্শ্বে পাওয়ার কী।
১১৯.৭ মিলিমিটার উচ্চতার এই ফোনটি প্রস্থে ৬২.৫ মিলিমিটার আর এর পুরুত্ব ৯.৩ মিলিমিটার। বেশ হালকা গড়নের এই ফোনের ওজন মাত্র ১১৩ গ্রাম (ব্যাটারীসহ)। প্রিমো ই৪+ স্মার্টফোনটির পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে রয়েছে স্পীকার। এছাড়া সম্মুখভাগে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর, স্পীকার প্রভৃতি তো রয়েছেই।
ডিসপ্লে:
এই ফোনে ৪ ইঞ্চির আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, আর এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন হলো ৪৮০x৮০০ পিক্সেলের।
ইউজার ইন্টারফেস:
ওয়ালটনের এই ফোনটিতে অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট ব্যবহৃত হয়েছে।
নোটিফিকেশন বার:
অ্যাপ ড্রয়ার:
সিপিউ:
সিপিউ হিসেবে এই ফোনে রয়েছে ১.৩ গিগাহার্টজ গতির কোয়াডকোর প্রসেসর, ফলে স্বল্পমূল্যের এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।
চিপসেট:
স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোনসমূহে সাধারণত মিডিয়াটেক চিপসেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে, ব্যতিক্রম ঘটেনি Walton Primo E4+ এর ক্ষেত্রেও। এই ফোনে মিডিয়াটেকের MT6582 চিপসেট ব্যবহৃত হয়েছে।
জিপিউ:
ওয়ালটন তাদের এই ফোনে মালি-৪০০ জিপিউ ব্যবহার করেছে। তবে মূল্য বিবেচনায় এন্ট্রি লেভেলের এই ফোনের গ্রাফিক্স কোয়ালিটি কিংবা গেমিং পারফরম্যান্স মন্দ নয়।
মেমোরী:
Primo E4+ স্মার্টফোনটিতে মাত্র ৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরী দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ০.৮৯ গিগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। তবে এতে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহার করে এর ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
র্যাম:
এই ফোনে মাত্র ১ গিগাবাইটের র্যাম ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৬৫ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অ্যাপস ইন্সটল করার পর র্যামের প্রায় অর্ধেক ফাঁকা থাকে।
ক্যামেরা:
Primo E4+ স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা।
দিনের আলোতে এই ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ
এছাড়া রয়েছে ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা।
মাল্টিমিডিয়া:
Primo E4+ এ রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাক। এর সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ড কোয়ালিটি মোটামুটি মানের, এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটিও বেশ সুন্দর।
আর এই ফোনে আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহৃত হওয়ায় এতে দারুণভাবে ভিডিও উপভোগ করা যায়। এই ফোনে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলে।
গেমিং পারফরম্যান্স:
স্বল্পবাজেটের এই ফোনটি সাধারণ গেমিংয়ের জন্য মন্দ নয়। ১ গিগাবাইট র্যাম ও কোয়াডকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। স্বল্পর্যামবিশিষ্ট এই ফোনে টেম্পল রান ওজেড, রিয়াল ক্রিকেট, টেম্পল রান ২ প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
কানেক্টিভিটি:
এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জিপিএস নেভিগেশন সুবিধাতো রয়েছেই।
সিম:
ওয়ালটনের অধিকাংশ স্মার্টফোনের ন্যায় প্রিমো ই৪+ এ-ও রয়েছে ২টি সিম ব্যবহারের সুবিধা। আর হ্যাঁ, এর উভয় সিমেই কিন্তু থ্রিজি সুবিধা উপভোগ করা যায়।
ব্যাটারী:
৪ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে সংবলিত Primo E4+ এ ১,৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারী ব্যবহার করা হয়েছে। এর ব্যাটারী ব্যাকআপ বেশ ভালোই। একবার ফুল চার্জ দিলে টানা ৫.৫ ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়। এছাড়া একবার ফুল চার্জে টানা প্রায় ৬ ঘন্টা এইচডি ভিডিও উপভোগ করা যায়।
সেন্সর:
ওয়ালটনের নতুন এই ফোনে সেন্সর হিসেবে রয়েছে অ্যাক্সিলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি ও লাইট সেন্সর।
বেঞ্চমার্ক:
কোন ডিভাইসের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সাধারণত বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাই করা হয়ে থাকে। Primo E4 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো। AnTuTu তে এর স্কোর এসেছে ১৯,৪৯৭।
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo E4+ এর স্কোর এসেছে ৫৫.৫
মূল্য:
ক্রেতাদের সাধ্যের কথা বিবেচনা করে আকর্ষণীয় ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় নানা ফিচারসংবলিত Primo E4+ স্মার্টফোনটির মূল্য ৫,৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
Primo E4+ এর ভালো লাগার দিকসমূহ:
Primo E4+ এর সীমাবদ্ধতা:
স্বল্পমূল্যের এই ফোনটির নিম্নোক্ত কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যদিও মূল্য বিবেচনায় এসব সীমবদ্ধতা ততোটা উল্লেখ করার মতো নয়।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত:
যারা স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় নানা ফিচার সংবলিত স্মার্টফোন কিনতে চান, সেই সাথে চান আকর্ষণীয় গড়ন, তাদের জন্য ওয়ালটনের এই ফোন থাকতে পারে পছন্দের শীর্ষ তালিকায়। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কনফিগারেশনের স্মার্টফোন এমন সুলভমূল্যে বাজারে আনবে ওয়ালটন – এমনটাই প্রত্যাশা।
যুগ পাঠক, আজ তাহলে এপর্যন্তই। Primo E4+ সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান প্রশ্ন কিংবা টিউমেন্ট লিখুন টিউমেন্টে। নতুন কোন স্মার্টফোনের হ্যান্ডস-অন রিভিউ নিয়ে আবারও দেখা হবে আপনাদের সাথে। সবাই ভালো থাকুন আর থাকুন যুগটেকের সাথে।
পূর্বে এখানে প্রকাশিত facebook
আমি অর্ক রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
হুবহু ইফ-2 এর মত