আজকে আপনাদের জন্য ছোট্ট করে নিয়ে এসেছি এইচটিসি প্রতিষ্ঠানটির এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ htc desire 610 ডিভাইসটির রিভিউ। সলিড পারফর্মেন্সের এই ডিভাইসটির নানাবিধ দিক সম্পর্কে আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো, চলুন শুরু করা যাক। প্রথমেই, সংক্ষেপে ডিভাইসটির ভালো এবং খারাপ দিকগুলো দিয়েই শুরু করি, কি বলেন?
ডিভাইসটির ভালো দিক সমূহ:
ডিভাইসটির মন্দ দিক সমূহ:
মূল ফিচার সমূহ:
প্রথমেই বলছি, যদি আপনার বড় আকারের স্মার্টফোন পছন্দ হয়ে থাকে তবে আপনার এই ডিভাইসটি পছন্দ নাও হতে পারে। এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটি টু-টোন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এবং আপনি বাজারে এটি পাবেন তিনটি রঙে – লাল, সাদা এবং গাড় নীল। স্মার্টফোনটির পেছনের দিক যথেষ্ট শাইনি এবং ডিউরেবল এবং বেশ স্ক্র্যাচ রেসিস্টিং, ফলে চমৎকার সাইনের পাশাপাশি আপনি স্ক্র্যাচপ্রুফ ব্যাকের একটি স্মার্টফোন হিসেবে এটিকে ধরে নিতে পারেন। যদিও স্মার্টফোনটির নীল রঙের সংস্করণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক্ষ্য করা হয়েছিলো। যেহেতু এটিকে বাজেট ফোনের ক্যাটাগরিতেই সম্ভবত ফেললে ভালো হবে তাই এতে হায়ার এন্ড আইফোন ৫সি বা হায়ার এন্ড লুমিয়ার ফোনের মত প্রিমিয়াম ফিল পাওয়া যায়না, তবে স্মার্টফোনটি হাতে নিলে অবশ্যই আপনি চমৎকার সলিড একটি ফিল পাবেন।
স্মার্টফোনটির সামনে এবং দুপাশে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাট প্লাস্টিক যার ফলে স্মার্টফোনটি দিয়ে থাকে চমৎকার গ্রিপ, তাই স্মার্টফোনটি অপারেট করার সময় ডিভাইসটির আপনার হাত থেকে পরে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। এছাড়াও, টু-টোন ডিজাইন ডিভাইসটিতে যোগ করে আলাদা সৌন্দর্য।
ডিভাইসটির স্ক্রিন ৪.৭ ইঞ্চি এবং ব্যাটারি ২০৪০ মিলি অ্যাম্পিয়ার হওয়া সত্ত্বেও ডিভাইসটির আকার বেশ বড় (১৫৩.১ x ৭০.৫ x ৯.৬ মিলি মিটার) যা খাতা কলমের হিসেব অনুযায়ী স্যামসাংয়ের ৫.১ ইঞ্চি ডিসপ্লে সমৃদ্ধ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ থেকেও প্রায় এক মিলিমিটার লম্বা এবং ১.৫ মিলিমিটার পুরু।
এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটির সামনের অংশে উপরে এবং নিচের দিকে দুটি স্পিকার ব্যবহার করা হয়েছে ভালো মানের স্টেরিও সেপারেশনের জন্য, আর এজন্যেই হয়তো কিছুটা ওজন এবং কিছুটা লম্বা হয়েছে স্মার্টফোনটি।
এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ স্মার্টফোনটি বড় হওয়া সত্ত্বেও ডিভাইসটি হাতে ধরার ক্ষেত্রে সহজ এবং ইজি হোল্ড ডিভাইস এবং আকারে বড় হবার কারণেও অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহারের পরেও আপনার কাছে বিরক্তিকর মনে হবেনা। ডিজাইনের দিকে থেকে হয়তো এটি সবচাইতে ডেলিকেট স্মার্টফোন নয় তবে গঠনের দিক থেকে ডিভাইসটি একটি সলিড-বিল্ড ডিভাইস স্বীকার করতেই হবে।
আগেই লিখেছি যে এইচটিসি ডিজায়ার স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৪.৭ ইঞ্চি আকারে একটি স্ক্রিন যার রেজ্যুলেশন হচ্ছে ৯৬০ x ৫৪০ পিক্সেল। আপনার যদি মনে হয় যে এই আকারের স্ক্রিনের জন্য এই রেজ্যুলেশন কিছুটা কম তবে আমার মতে আপনি ঠিক। যাই হোক, ডিসপ্লে ইউনিটটির প্রতিটি ইঞ্চিতে রয়েছে প্রায় ২৩৬টি পিক্সেল (পিপিআই), এই স্পেকটাও কম। কিন্তু, ডিভাইসটির ডিসপ্লে ইউনিটটিতে রয়েছে চমৎকার কালার অ্যাকুরেসি এবং ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল। ডিভাইসটির কালার অ্যাকুরেসি এতটাই চমৎকার যার ফলে আপনি ডিভাইসটিতে ভিডিও বা ইমেজ দেখার সময় শক্তিশালী কনট্রাস্ট দেখতে পাবেন যার ফলে কোন একটি ভিডিওে অন্ধকার দৃশ্যেও আপনি ভালো ডিটেইল পাবেন। আর সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে এই ডিভাইসটিতে আপনি ওভারস্যাচুরেটেড কালার দেখতে পাবেন না।
ডিভাইসটির ব্রাইটনেস লেভেল আউটস্ট্যান্ডিং না হলেও ভালোই। সরাসরি সূর্যের আলোতে ডিভাইসটির ফুল ব্রাইটনেস সেটিংসে ডিসপ্লে দেখতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না! এমনকি, সূর্যের আলোতেও ডিভাইসটির ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল বেশ ভালোই।
এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ স্মার্টফোনটিতে কিছুটা শার্পনেসের ল্যাক রয়েছে। আগেই বলেছি, এই আকারে ডিসপ্লে অনুযায়ী স্মার্টফোনটির রেজ্যুলেশন আহামরি কিছুই নয় – এবং এটি আপনি সাধারণ একটি টেক্সটও ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন।
এই দামের ডিভাইস অনুযায়ী ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যথেষ্টই বলে আমি মনে করি! অন্তত, এই ক্যামেরা ইউনিটটি সহজেই মটোরোলার মটো জি ডিভাইসটির ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ইউনিটকে পিছে ফেলতে সক্ষম।
উজ্জ্বল দিনে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ডিভাইসটির ক্যামেরা আপনাকে হতাশ করবেন মোটেই। দিনের বেলার ছবিতে ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটি দিয়ে তোলা ছবিতে বেশ ভালো ডিটেইল পাওয়া গিয়েছে। নিচে ডিভাইসটি দিয়ে তোলা একটি ছবি দেয়া হলো। ডিটেইল ভালো হলেও জুম ইন করার পর অবজেক্টের এজ কিছুটা ফাজি মনে হয় তবে সেজন্য আপনাকে বেশ ভালো ভাবেই জুম করতে হবে।
যেহেতু মটো জি ডিভাইসটির ক্যামেরার সাথে তুলনা করলামই, চলুন আপনাদের ভিজ্যুয়াল পার্থক্যটাই দেখিয়ে দেয়া যাক। নিচের ছবি দুটি একই স্থান থেকে দুটি ডিভাইস থেকে তোলা হয়েছিলো, দেখতেই পাচ্ছেন। ফলাফল আপনার সামনে। মটো জি’র ক্যামেরায় তোলা ছবিটিতে ডিটেইলসের পরিমাণ বেশ কম, সাথে কালার অ্যাকুরেসিতেও রয়েছে কিছুটা পার্থক্য
ডিভাইসটি দিয়ে ক্লোজ আপ ছবি তুলতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে, এবং ফলাফলও ল্যান্ডস্কেপের মত ভালো আসেনি। আপনাদের জন্য নিচে যুক্ত করে দিলাম এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইস দিয়ে তোলার একটি ফুলের ক্লোজ আপ ছবি।
এইচটিসি ডিভাইসের ক্যামেরা অ্যাপলিকেশনটিও ব্যবহার করা অনেক সহজ কেননা এর ফিচারগুলো খুব সিম্পল ভাবে ডিজাইন করা এবং অন্যান্য ডিভাইস যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ এর ক্যামেরা অ্যাপলিকেশনের চাইতেও সহজ এর ক্যামেরা অ্যাপের ইউআইটি।
আপনি এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটি দিয়ে ফুল-এইচডি ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন এবং ভিডিওর আউটপুটও বেশ ভালো।
এছাড়াও ডিভাইসটিতে রাখা হয়েছে ১.২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা যা উজ্জ্বল আলোয় বেশ ভালোই আউটপুট দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ভিডিও কলিং এবং সেলফির জন্যেও তেমন একটা খারাপ নয় ডিভাইসটির ফ্রন্ট ক্যামেরাটি। এমনকি, ফ্রন্ট ক্যামেরায় আপনি পাবেন একটি টাইমার ফিচার যার মাধ্যমে আপনি আপনার সেলফি তুলতে পারবেন আরও নিখুঁত(!) করে। এখন যেহেতু সেলফির যুগ তাই স্মার্টফোনগুলো সম্ভবত রেয়ার ক্যামেরা বাদ দিয়ে নতুন নতুন সব প্রযুক্তি বা সুবিধা ফ্রন্ট ক্যামেরায় যুক্ত করে দিচ্ছে।
এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটিতে রয়েছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৪০০ প্রসেসরটি যার গতি হচ্ছে ১.২ গিগাহার্জ এবং এটি একটি কোয়াড কোর প্রসেসর। এটি মূলত স্ন্যাপড্রাগন ৪০০ এর নতুন একটি ভার্সন যার প্রতিটি কোর একই সাথে ১.২ গিগাহার্জ গতিতে চলতে সক্ষম যেখানে এর পূর্বের ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে কাছাকাছি মূল্যের স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ মিনি ডিভাইসটিতে যা মূলত একটি ডুয়েল কোর প্রসেসরের স্মার্টফোন। এছাড়াও, ডিভাইসটিতে দেয়া হয়েছে ১ গিগাবাইট র্যাম।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ মিনি এবং এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটির মধ্যেকার পারফর্মেন্স বেঞ্চমার্ক করলে গিকবেঞ্চ ৩-এ দেখা যায় যে এস৪ মিনির পারফর্মেন্স এইচটিসি ডিজায়ার থেকে সামান্য বেশি হলেও এইচটিসি মিনি থ্রিডি গেমিং-এ এস৪ মিনি থেকে এগিয়ে রয়েছে।
অনেকেই স্মার্টফোনে গেম খেলে থাকেন আর তাই তাদের জন্য বলছি, আপনি যদি স্মার্টফোন গেম পাগল হয়ে থাকেন তবে ডিভাইসটি আপনার জন্য নয়। মোটামুটি কিছু গেম খেলতে পারলেও হাই গ্রাফিক্সের বড় বড় থ্রিডি গেমগুলো খেলতে আপনার ভালো লাগবেনা এই ডিভাইসটিতে। কেননা, এই ডিভাইসে ডেড ট্রিগার ২, অ্যাসফাল্ট ৮ খেলার সময় কিছুটা ল্যাগ পাওয়া গিয়েছে যা আপনাকে খারাপ অ্যান্ড্রয়েড গেমিং এক্সপেরিয়েন্সই দেবে। তবে, এর চাইতে নিম্নমানের সকল গেম আপনি কোন রকম সমস্যা ছাড়াই ডিভাইসটিতে খেলতে পারবেন।
ডিভাইসটি ব্যবহার করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ন্যানো সিমের। শুরুতেই লিখেছিলাম যে ডিভাইসটি ৪জি কানেকশন সাপোর্ট করে তাই এক্ষেত্রে আপনি ভবিষ্যতে বেশ ভালো সুবিধাই পাবেন বলে আশা করছি। এছাড়াও ডিভাইসটিতে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াই-ফাই এবং এনএফসি সুবিধা।
ডিভাইসটির অনবোর্ড মেমরি মাত্র ৮ গিগাবাইট হলেও এটি সাপোর্ট করে ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড সুবিধা যা আমার মতে আমাদের মত এভারেজ ব্যবহারকারীর জন্য শুধু যথেষ্টই নয়, বরং অনেক দিক দিয়ে অতিরিক্ত। ডিভাইসটিতে একটি মাত্র পোর্ট রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি ডিভাইসটি চার্জ করতে পারবেন এবং ডাটা আদান প্রদান করতে পারবেন। পোর্টটি ইউএসবি ২.০ এবং এমএইচএল কম্প্যাশিবল নয়।
এইচটিসির এই ডিভাইসটিতে দেয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন ৪.৪.২ কিটক্যাট এবং এইচটিসি সেন্স ৬ ইউআই। সেন্স ৬ মূলত এইচটিসির লেটেস্ট ইউআই যা মূলত মূল অ্যান্ড্রয়েডের উপরে একটি আলাদা লেয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীর চোখে ধরা দিয়ে থাকে।
এইচটিসি ডিজায়ার ৬১০ ডিভাইসটিতে কোন রকম ল্যাগ পাওয়া যায়নি। সিস্টেম অনেক বেশি লাইট এবং ল্যাগফ্রি। সেন্স ৬ ইউআইটি যে কোন ব্যবহারকারীর পছন্দ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। এছাড়াও এতে রয়েছে এইচটিসির চমৎকার একটি সুবিধা ‘কিড মোড এবং প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ অ্যাপ যার মাধ্যমে বাবা-মা’রা বাচ্চাদের জন্য আলাদা একটি প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারবে যাতে করে বাচ্চারা বড়দের ফাইলগুলো এক্সেস করতে না পারে।
মিড রেঞ্জের এই ডিভাইসটি সম্পর্কে আমার ঝুড়িতে যা ছিল আমি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চেষ্টা করলাম। মিডরেঞ্জের এই ডিভাইসটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে মোটামুটি ১৯৫০০ থেকে ২১০০০ হাজারের মধ্যে। যদিও, আমি দাম সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত নই। যাই হোক, আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে রিভিউটি। আগামীতে আরও রিভিউ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। ভালো থাকুন, যুগটেকের সাথেই থাকুন।
Zugtech.com থেকে সংগ্রহীত
আমি অর্ক রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।