
টেকপ্রেমিদের অহর্নিশ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাজারে আসে সনির এক্সপেরিয়া জেড। ১.৫গিগা হার্জ কোয়াডকোর প্রসেসর, ২ গিগাবাইট র্যাম, ১৩.১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ৪জি সেলফোন কানেক্টিভিটি, ১৬ গিগাবাইট বিল্ট-ইন স্টোরেজ; সেই সাথে মাইক্রো এসডি কার্ড। অসামান্য এইসব অনুসঙ্গ গুলো সুরক্ষিত করতে আছে এমন একটি মোড়ক যা এক মিটার পানিতে ৩০ মিনিট ডুবে থাকলেও বাঁচিয়ে রাখবে ফোনটির প্রাণভোমরাকে। শুধু পানি নয়, নাগরিক জীবনের নিত্য সঙ্গি ধূলবালি প্রতিরোধক হিসেবেও কেসটি সমান সক্ষম। এন্ড্রয়েড ফোনের ক্রমবর্ধিষ্ণু বাজারে সনি এক্সপেরিয়া তাই এক বহুল আদৃত নাম। আমাদের দেশেও এর ক্রেজ লক্ষ্য করার মত। চলুন কথা না বাড়িয়ে চলে যাই মূল রিভিউতে।
ডিজাইন আর ডিসপ্লেঃ
প্রথমেই দর্শনবিচারে ফোনটি নজর কাড়ে। সনির অন্যান্য ফোনের ডিজাইনে যে বাঁক বা গোলাকার কিনারার প্রাধান্য দেখা যেত, এই ফোনটিতে তার ছিঁটেফোটা নেই। নতুন এই ফোনটি যেন ২০০১ স্পেস ওডেসি সিনেমার থেকে বেরিয়ে আসা একটা ফোন। ফোনটির একহারা গড়ন গ্যাজেটামোদি এবং সাধারণ ক্রেতা-উভয়কেই হাতছানি দিয়ে ডাকে। আইফোন ফোর-এস কিংবা নেক্সাস ৪ এর মতই, এতেও আছে ঝকঝকে শ্যাটারপ্রুফ গ্লাসের আবরণ। তাই আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। মাত্র ৭.৯ মিলিমিটার পুরুত্বের ফোনটির আবেদন যেমন অগ্রাহ্য করার মত নয়; ১৪৬ গ্রাম ওজনও আপনার প্যাণ্টের পকেটের জন্য তেমন কোন বিরাট কিছু নয়। কিনারাগুলোতে চকচকে প্লাস্টিকের মোড়ক, এর চিক্কন চাহনিকে করেছে আরো মোহনীয়। প্রতিটা পোর্টের চারপাশে ফ্ল্যাপের ব্যাবহারের ফলে পানি কিংবা ধূলোর অত্যাচারের সাথে ফোনটি লড়াই করে টিকে থাকবে বহুদিন।সনি এক্সপেরিয়া যি-র ৫ ইঞ্চি ১৯২০X১০৮০ পিক্সেল

‘রিয়েলিটি ডিসপ্লে’ জুড়ে রয়েছে বর্ণময় বৈচিত্রের ঘনঘটা। এর ৪৪৩-পিপি আই পিক্সেল ডেনসিটির সামনে আইফোনের ৩৩৬-পিপি আই মুখ থুবড়ে পড়ে। ১০৮০ পিক্সেল এর সুবাদে এর সাহায্যে তোলা প্রতিটা ছবিতে রয়েছে সেই পরিচ্ছন্নতা যা কেবল টেলিভিশনে পাওয়া সম্ভব।কিছু কিছু এন্ড্রয়েড আপ্স আইকন তৈরির সময় এমন স্বচ্ছতার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি বিধায়, অনেক ফোনেই সেগুলো ঘোলাটে দেখায়; এক্সপেরিয়াতে সেই ঝামেলা নেই বললেই চলে। ভিউইয়িং এঙ্গেল এর সামান্য তারতম্যের ঝামেলা ছাড়া, এক্সপেরিয়ার স্ক্রীন মানেই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

প্রসেসিং পাওয়ার ও সফটওয়্যার
দেরিতে হলেও সনি এই এক্সপেরিয়া জেড এর মাধ্যমে কোয়াডকোর ক্লাব এ প্রবেশ করল। ফোনটির ছিপছিপে সেই শরীরে লুকিয়ে আছে ১.৫ গিগা হার্জের স্ন্যাপড্রাগন প্রো চিপ আর তাকে সহায়তা করছে ২ গিগাবাইটের একটি র্যাম। দুইয়ে মিলে এক্সপেরিয়া জেড এর সমসাময়িক অন্য যে কোন এন্ড্রয়েড ফোনের চেয়ে দ্রুতগামি। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন মানদন্ডের বিচারেও এই ফোনটি অনায়াসে উতরে যায়। AnTuTu বেঞ্চমার্কের হিসেবে স্যামসাং গালাক্সি যেখানে পায় ১২,৪৬৭ পয়েন্ট; এক্সপেরিয়া সেখানে পেয়েছে ২০০৩১ পয়েন্ট। Quadrant স্ট্যান্ডার্ডের হিসেবে এক্সপেরিয়ার ঘরে উঠেছে ৭৯৯৫ আর এইচটিসি ওয়ান এক্স এর ঘরে ৪৯০৪। এখানেই শেষ নয়, জিএল বেঞ্চমার্ক ২.৫.১ এর ইজিপ্ট এইচডি অনস্ক্রিন টেস্টে এক্সপেরিয়া জেড পেয়েছে প্রতি সেকেণ্ডে ৩০ ফ্রেম এই হিসেবে ৩৯৯৯ স্কোর। ভেলামো ওয়েব পারফরম্যান্স টেস্টেও এক্সপেরিয়া পেয়েছে ২১৮৫, যেখানে স্যামসাং এর কপালে জুটেছে ১৫৮০ আর এইচটিসি ওয়ান এক্স এর কপালে ১৬২৫। তবে সিটাডেল বেঞ্চমার্ক এর হাই পারফরম্যান্স টেস্টে এক্সপেরিয়ার স্কোর প্রতি সেকেণ্ডে ৫৬.৬ ফ্রেম আর হাই কোয়ালিটি টেস্টে তা ৫৭.৭, যা এই বাজারে প্রায় দুর্লভ। এত সবকিছুর পরও ফোনটির একটি দুর্বলতা হল কালে ভদ্রে হঠাত করে লয় হারিয়ে থেমে যাওয়া মানে হ্যাং হয়ে যায়। গুগল নেক্সাসের রেশম মসৃন ওএস প্ল্যাটফর্ম বিবেচনায়, এক্সপেরিয়ার এই সামান্য দোষ আসলে অনেকের কাছেই ক্ষমার অযোগ্য মনে হতে পারে।

ফোনটিতে রয়েছে এন্ড্রয়েড ৪.১, যদিও সনির দাবি শীঘ্রই ৪.২ র দেখা মিলবে। গুগল ওএস আর সনির নিজস্বতার মেলবন্ধনে ফোনটিতে আছে দারুণ কিছু অনুসঙ্গ। লক স্ক্রিন এর কথাই ধরা যাক। দেখে মনে হবে যেন একগুচ্ছ ঝালর-আঙ্গুলের ছোঁয়াতে সেগুলো কেঁপে কেঁপে উঠবে, যেন অনুরনণ ছড়িয়ে পরছে চারিদিকে। মিউজিক সিস্টেম আর ক্যামেরার নাগাল পাওয়া যাবে লক স্ক্রিন থেকেই। যদিও ক্যামেরার স্পীড (খোলা) গুগল নেক্সাসের তুলনায় অনেক ধীরগতিসম্পন্ন। এই ফোনটিতে সনি অযাচিত সব তথাকথিত স্যোশাল আগ্রিগ্রেটরগুলকে বিদায় জানিয়েছে। এক্সপেরিয়া টি-তে যে স্মার্ট আপ্স সিস্টেমের সূচনা সনি করেছিল সেটা এখানেও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। ফলে আপনি সহজেই এন্ড্রয়েড মাল্টিটাস্কিং মেনু থেকে ভয়েস রেকর্ডার ও ক্যাল্কুলেটর জাতীয় এপগুলো ব্যাবহার করতে পারবেন। আপনি ইচ্ছা করলে গুগল প্লেমার্কেট থেকে আরো আপ্স ডাউনলোড করে নি্তে পারেন।
এনএফসি ও কানেক্টিভিটি
সনির এক্সপেরিয়া জেড-র এনএফসির প্রশংসা না করে পারা যায় না। শুধুমাত্র সনি টেলিভিশনে ছোঁয়ানো মাত্র আপনি দেখতে পাবেন আপনার তোলা ১৩.৬ মেগাপিক্সলের এক দৈত্যাকার ছবি। এটাই প্রমাণ করে যে অন্যদের মত সনিও ধীরে ধীরে ভবিষ্যতের দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সুবিধা উপভোগ করার জন্য অবশ্য আপনাকে সেইরকম দামি একটা স্মার্ট টিভি কিনতে হবে। ফোনটি ৪জি কানেক্টিভিটি উপযোগি হলেও অনেক ক্রেতাই সুবিধাটি ভোগ করতে পারবেন না কারণ ৪জি সুবিধাটি আমাদের দেশে এখনও আসেনি।
ক্যামেরা ও ভিডিও রেকর্ডিং
এক্সপেরিয়া জেড-র ফটো মানেই পিক্সেলের ছড়াছড়ি। একই সাথে আলোর স্বল্পতাতেও ফোনটি দারুণ সব ছবি তুলতে সক্ষম। অন্যান্য এন্ড্রয়েড ফোনের ক্যামেরার সব সুবিধাই এখানে বিদ্যমান। ‘স্যুপেরিওর অটো’ মোড নির্বাচন করলে ক্যামেরা নিজেই সেরা শটটি বেছে নেবে ও ফ্রেমবন্দি করবে।এইচডি থাকায় ভিডিও রেকর্ডিং এর অভিজ্ঞতাও সেই রকম।
ব্যাটারি লাইফ এবং অন্যান্য
এক্সপেরিয়া জেড-র ব্যাটারিকে দোষ দেয়া যায় না বিশেষত অমন একটা প্রসেসর আর ক্যামেরা সামলানোর পর ব্যাটারি মহাশয়ের দুর্বল হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। ফোনটিকে খুব বেশি জ্বালাতন করলে (ধরুন, সব সময় হাই-ব্রাইটনেস লেভেল এ কাজ করছেন) মাত্র ৪-৫ ঘন্টা ব্যাটারিটি সাপোর্ট দেবে। একথা মাথায় রেখেই সনির এই ফোনটিতে রয়েছে ‘স্ট্যামিনা মোড’ যা ব্যাটারির দুর্বল মুহুর্তগুলোতে মোবাইলের অন্যান্য ডাটা

সংক্রান্ত কার্যকলাপ বন্ধ করে শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করবে। বিশেষ করে রাতের বেলা, আপনি ঘুমিয়ে পড়লে ফোনের ‘স্ট্যামিনা মোড’ জেগে থেকে ব্যাটারির শক্তি কম অথবা একেবারেই খরচ না করার জন্য কাজ করে যাবে।সনির এক্সপেরিয়া ঘরানার অন্য যে ফোনগুলো আছে সেগুলোর কোনটি নিয়েই আহামরি গপ্পো করবার মত তেমন কোন বিষয় নেই। তবে এক্সপেরিয়া জেড-র আগমন যেন নিন্দুকদের মুখে ছাই লেপে দিল। এরকম একটি ফোন বাজারে ছেড়ে সনি যে একটা কাজের কাজ করেছে তা বলাই বাহুল্য।
আর ও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন mobileprice.com.bd
আমি সবুজ আলী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
hm…vai set ta valo amio use kori tobe low light e pic ta arektu clear hole khub valo hoto……….