কেন ভাঙা ডিসপ্লে বদলানো নতুন ফোন কেনার চেয়ে বেশি ভালো?

প্রায় সব স্মার্টফোন ইউজারই জীবনে একবার হলেও ফোনের স্ক্রিন ফেটে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়েছেন। এই রকম হলেই আমরা সবাই ভাবি নতুন ফোন কিনতে হবে। কিন্তু সব সময় এটা ঠিক সিদ্ধান্ত না। অনেক সময় শুধু স্ক্রিনটা বদলে নিলেই কাজ হয়ে যায়। আর এটা অনেক বেশি লাভজনক, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশের জন্যও ভালো।

আজকে এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের বলব কেন নতুন ফোন না কিনে শুধু ডিসপ্লে বদলানোটাই বেটার অপশন।

ডিসপ্লে কেন এত জরুরি?

আজকের দিনে স্মার্টফোনের ডিসপ্লে মানে শুধু একটা স্ক্রিন না, এটা পুরো ফোনের প্রাণ বলতে পারেন। আপনি যা দেখেন, যে কমান্ড দেন সব এই ডিসপ্লে দিয়েই হয়। ডিসপ্লে ছাড়া তো ফোনকে স্মার্টফোনই বলা যায় না।

ডিসপ্লের কিছু মূল কাজ হলো:

  • টাচ কতটা ভালো কাজ করছে
  • রঙ কেমন দেখাচ্ছে
  • কতটা উজ্জ্বল আর পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে
  • ডিসপ্লের ভিতরের সেন্সরগুলো
  • ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার

যখন ডিসপ্লে ফেটে যায় বা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন মনে হয় পুরো ফোনটাই অচল হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে আপনার বাকি সব কিছু যেমন প্রসেসর, ব্যাটারি, ক্যামেরা, স্টোরেজ সব ঠিকঠাক আছে। তাই শুধু স্ক্রিন নষ্ট হলেই পুরো ফোন বদলে ফেলাটা একদমই বুদ্ধিমানের কাজ না।

মেরামত করবেন নাকি নতুন কিনবেন?

এই প্রশ্নের উত্তর সব সময় সহজ না। তবে কিছু বিষয় দেখলেই বুঝতে পারবেন কোনটা করা ঠিক হবে:

  • খরচ কেমন পড়বে
  • ফোনটা কত পুরনো
  • কতটা নষ্ট হয়েছে
  • ফোনের বাকি অবস্থা কেমন

খরচের হিসাব

মেরামতের খরচ যদি আপনার ফোনের দামের ২০-৪০% হয়, তাহলে মেরামত করাই ভালো। কিন্তু খরচ যদি ৫০% এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে নতুন ফোন কিনে ফেলাই বেটার।

ফোনটা কত পুরনো

ফোন যদি ২ বছরের কম পুরনো হয়, মেরামত করান। কিন্তু ৩ বছরের বেশি পুরনো হলে নতুন কিনে নেওয়াই ভালো। কারণ পুরনো ফোনে আর নতুন আপডেট আসে না, ব্যাটারি দুর্বল হয়ে যায়, স্লো হয়ে যায়।

কতটা নষ্ট হয়েছে

ছোটখাটো ফাটল হলে সস্তায় মেরামত করিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু একদম ভেঙে গেলে বা খরচ অনেক বেশি পড়লে নতুন কিনুন।

ফোনের বাকি অবস্থা

ফোনে যদি আরও সমস্যা থাকে যেমন ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়, ক্যামেরা ঠিক নেই, স্লো হয়ে গেছে তাহলে নতুন ফোন কিনে ফেলাই ভালো।

ডিসপ্লে বদলালে পরিবেশের কী লাভ?

ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-ওয়েস্ট এখন বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীতে বিরাট সমস্যা। শুধু স্ক্রিন ভাঙার কারণে লক্ষ লক্ষ ফোন ফেলে দেওয়া হয় প্রতি বছর।

গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটর ২০২৪ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর পৃথিবীতে ৬০ মিলিয়ন টনের বেশি ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়। এর মধ্যে মাত্র ২৫% রিসাইকেল করা হয়।

আর দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে যে বাংলাদেশ ঠিকমতো ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করলে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাঁচাতে পারে।

আপনি যখন ডিসপ্লে বদলান তখন:

  • ই-ওয়েস্ট এবং কার্বন কমাতে সাহায্য করেন
  • লিথিয়াম, গ্লাস, কপারের মতো দুর্লভ জিনিস বাঁচান
  • ফোনের আয়ু ১ থেকে ৩ বছর বাড়িয়ে দেন
  • নিজের পকেটের অনেক টাকা বাঁচে

ডেটা সিকিউরিটি আর প্রাইভেস

নতুন ফোন কিনলে সব ডেটা ফটো, ভিডিও, পাসওয়ার্ড, ব্যাংক ডিটেইলস সব নতুন ফোনে নিতে হয়। এটা সময় লাগে আর অনেক সময় রিস্কিও।

ডিসপ্লে বদলালে:

  • আপনার ডেটা সেফ থাকে
  • নতুন ফোন সেট আপের ঝামেলা নেই
  • পুরনো ফোন বেচলে বা রিসাইকেল করলে ডেটা লিক হওয়ার ভয় নেই

সব ডিসপ্লে কি একই রকম?

না, সব ডিসপ্লে এক না। বাংলাদেশের মার্কেটে তিন ধরনের ডিসপ্লে পাওয়া যায়: অরিজিনাল, রিফার্বিশড আর কপি।

অরিজিনাল বা OEM ডিসপ্লে

  • আসল কোম্পানির তৈরি
  • রঙ, উজ্জ্বলতা, টাচ সব একদম পারফেক্ট
  • দাম বেশি, ফ্ল্যাগশিপ ফোনের জন্য বেস্ট

অরিজিনাল পুল / রিফার্বিশড

  • পুরনো ফোন থেকে খুলে নেওয়া, কোয়ালিটি বেশ ভালো
  • অরিজিনালের চেয়ে সস্তা, কোয়ালিটিও ভালো

কপি ডিসপ্লে

  • অন্য কোম্পানির বানানো
  • সবচেয়ে সস্তা, বাজেট ফোনের জন্য চলে
  • কোয়ালিটি আলাদা হতে পারে, তাই বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনবেন

অনলাইনে কিনলে ভালো করে চেক করবেন ডিসপ্লে কোন টাইপের। Samsung, Vivo, Oppo, Xiaomi, iPhone — এসব ব্র্যান্ডের জন্য বিশ্বস্ত সাপ্লায়ার থেকে কিনবেন।

নিজে নিজে কি বদলানো যায়?

একদম না। ইউটিউবে দেখে সহজ মনে হলেও আসলে স্মার্টফোন অনেক জটিল। একটু ভুল হলেই ডিসপ্লের চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যেতে পারে।

যেসব জিনিসে সাবধান থাকতে হয়:

  • ফ্লেক্স কেবল
  • টাচ আইসি কন্ট্রোলার
  • ডিসপ্লের ভিতরের সেন্সর
  • আঠার লেয়ার

ভুল করে মাদারবোর্ড বা ক্যামেরা নষ্ট করে ফেললে খরচ আরও বেড়ে যাবে।

তাই সবসময় ভালো টেকনিশিয়ান দিয়ে করান। তাদের কাছে সব টুলস থাকে, তারা:

  • নতুন স্ক্রিন ঠিকমতো লাগাতে পারে
  • টাচ ঠিক করে দিতে পারে
  • ওয়াটারপ্রুফ থাকলে সেটাও ঠিক রাখার চেষ্টা করে

তাই সার্টিফাইড রিপেয়ার শপেই যান।

বাংলাদেশে ডিসপ্লে বদলাতে কত খরচ?

ব্র্যান্ড আর মডেল অনুযায়ী স্মার্টফোনের দাম আলাদা হয়। বাংলাদেশে:

  • বাজেট ফোন: ২, ০০০ থেকে ৪, ৫০০ টাকা
  • মিড-রেঞ্জ ফোন: ৫, ০০০ থেকে ৯, ০০০ টাকা
  • ফ্ল্যাগশিপ ফোন: ১০, ০০০ থেকে ২৫, ০০০ টাকা

আর নতুন ফোন কিনলে:

  • মিড-রেঞ্জ: ২৫, ০০০ থেকে ৪০, ০০০ টাকা
  • ফ্ল্যাগশিপ: ৮০, ০০০ থেকে দেড় লাখ+ টাকা

দেখুন তো কত টাকা বাঁচানো যাচ্ছে!

শেষ কথা

ফোনের ডিসপ্লে নষ্ট হলেই নতুন ফোন কেনার দরকার নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু ডিসপ্লে বদলে নিলেই চলে যায়। এটা সস্তা, স্মার্ট আর পরিবেশবান্ধব।

ডিসপ্লে বদলালে:

  • নতুন ফোনের খরচের ৭৫% পর্যন্ত বাঁচে
  • আপনার সব ডেটা সেফ থাকে
  • ই-ওয়েস্ট কমাতে সাহায্য হয়
  • প্রিয় ফোনটা আরও কিছুদিন ব্যবহার করতে পারেন

অরিজিনাল ডিসপ্লে, ব্যাটারি আর অন্যান্য পার্টসের জন্য সবসময় ভালো দোকান খুঁজে নেবেন। মনে রাখবেন, ছোট্ট একটা মেরামতই অনেক বড় পার্থক্য করতে পারে।

Level 0

আমি ফররুখ আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 মাস 1 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস