
আজকের যুগে মোবাইল ফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং আয়ের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার। আগে যেখানে মানুষকে ব্যবসা বা চাকরি করার জন্য অনেক পুঁজি, দোকান বা দক্ষতার দরকার হতো, সেখানে এখন একটা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত কিংবা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে মোবাইল-ভিত্তিক আয়ের সুযোগ।
অনেকে ভাবে, ইনকাম মানেই অনেক কষ্টের কাজ, সময় ব্যয়, বা বিশেষ ট্যালেন্ট। কিন্তু সত্যি কথা হলো—কিছু কিছু পদ্ধতি আছে যেখানে প্রায় কোনো কাজ না করেও মোবাইল আর ওয়াইফাই ব্যবহার করে আয় করা সম্ভব। হয়তো সেই আয় প্রথমে ছোট হবে, কিন্তু সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেটা ধীরে ধীরে বড় আকার নিতে পারে।
এই টিউনে আমি দেখাবো, কিভাবে মোবাইল, ওয়াইফাই আর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার ব্যবহার করেই ছোটখাটো আয়ের পথ তৈরি করা যায়।
অনেকেই ভাবে “কোনো কাজ ছাড়াই ইনকাম” মানে হয়তো টাকা আকাশ থেকে পড়ে যাবে। বাস্তবে তেমনটা হয় না। তবে কিছু উপায় আছে যেখানে আপনাকে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না—শুধু মোবাইল, ওয়াইফাই আর একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থাকলেই আয় সম্ভব। আসুন সেই উপায়গুলো দেখি—
অনেক এলাকায় মানুষ নিজস্ব ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সুযোগ পায় না। সেখানে যদি আপনার ওয়াইফাই থাকে, আপনি তা শেয়ার করে মাসিক টাকা নিতে পারেন।
ধরুন, আপনার বাসায় ২০ এমবিপিএস ইন্টারনেট আছে।
👉 এখানে আপনার আলাদা কোনো কাজ নেই, শুধু সংযোগ দেওয়া আর টাকা নেওয়া।
আজকাল অনেক দোকান বা ছোট ব্যবসা তাদের গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। যদি আপনি কোনো ব্যবসায়ীকে সাপোর্ট দিতে পারেন, শুধু আপনার নাম্বার দিয়েই ইনকাম শুরু হবে।
উদাহরণ: একটি কসমেটিক্স দোকান আপনার হোয়াটসঅ্যাপে অর্ডার নেবে।
এখানে আলাদা কোনো জটিল কাজ নেই—শুধু মোবাইল আর নাম্বার ব্যবহার।
বিভিন্ন অ্যাপ (যেমন রাইডশেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, পেমেন্ট অ্যাপ) নতুন ইউজার আনলে রেফারেল বোনাস দেয়।
হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা মেসেঞ্জারে অনেকেই পেইড গ্রুপ চালায়।
যেমন: ক্রিকেট ম্যাচ আপডেট, লটারির তথ্য, অনলাইন কোর্স, ব্যবসার টিপস ইত্যাদি।
আপনি চাইলে একটি বিশেষ টপিক নিয়ে গ্রুপ খুলে সদস্যদের কাছ থেকে মাসিক ফি নিতে পারেন।
এখানে আপনার মূল কাজ শুধু গ্রুপ ম্যানেজ করা।
আপনার হোয়াটসঅ্যাপে যদি অনেক কন্ট্যাক্ট থাকে, আপনি অন্যের ব্যবসার বিজ্ঞাপণ শেয়ার করে টাকা আয় করতে পারেন।
👉 এতগুলো পথের মধ্যে দেখা যাচ্ছে—আসলেই কিছু ক্ষেত্রে কোনো বড় কাজ করতে হয় না, শুধু মোবাইল, ওয়াইফাই আর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারই যথেষ্ট।
শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তব জীবনেও অনেকেই মোবাইল আর ওয়াইফাই ব্যবহার করে ছোটখাটো আয়ের পথ তৈরি করেছে। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো—
রাজশাহীর এক কলেজ ছাত্র রাহাতের বাসায় ৩০ এমবিপিএস ইন্টারনেট কানেকশন ছিল। তার এলাকার বেশিরভাগ ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। রাহাত নিজের রাউটার দিয়ে পাড়ার আরও ৫ জনকে কানেকশন দেয় এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসে ৩০০ টাকা নেয়।
👉 মাস শেষে সে নিজের ইন্টারনেট খরচ মিটিয়ে বাড়তি ১০০০ টাকার মতো ইনকাম করে।
ঢাকার শ্যামলীতে শিউলি নামের এক গৃহিণী স্থানীয় কসমেটিক্স দোকানের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ অর্ডার নেন। গ্রাহকরা দোকানের প্রোডাক্ট লিস্ট দেখে তার নাম্বারে অর্ডার দেয়, আর শিউলি সেগুলো দোকানে পাঠিয়ে দেন।
👉 প্রতি অর্ডারে সে ১০-২০ টাকা কমিশন পায়। দিনে ১০-১৫ অর্ডার হলেই তার মাসে কয়েক হাজার টাকা ইনকাম হয়।
শাহীন নামের এক যুবক বিভিন্ন রাইডশেয়ারিং অ্যাপের রেফারেল লিংক বন্ধুদের দেয়। নতুন ইউজার তার কোড ব্যবহার করলে সে বোনাস পায়।
👉 কয়েক মাসে শুধু রেফারেল দিয়েই তার মোবাইল বিল আর কিছু অতিরিক্ত খরচ উঠে এসেছে।
চট্টগ্রামের তৌহিদ নামের এক ক্রিকেট প্রেমী ক্রিকেট টিপস ও ম্যাচ আপডেট দেওয়ার জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করে। সে গ্রুপে ঢুকতে মাসে ২০০ টাকা চার্জ করে।
👉 গ্রুপে প্রায় ৫০ জন সদস্য আছে। ফলে মাসে তার আয় হয় প্রায় ১০, ০০০ টাকা।
রুবিনা নামের এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপ কন্ট্যাক্টে স্থানীয় বুটিক শপের অফার শেয়ার করে। প্রতিটি মেসেজ শেয়ার করার জন্য দোকান তাকে টাকা দেয়।
👉 এতে তার পড়াশোনার খরচ উঠে আসে।
এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করে যে—মোবাইল, ওয়াইফাই আর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থাকলেই ছোটখাটো ইনকাম সম্ভব, যদিও খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
আমি একবার রেফারেল বোনাস দিয়ে ইনকাম করার চেষ্টা করেছিলাম। কয়েকটা নতুন অ্যাপ বাজারে আসছিল, যারা শুধু নাম্বার দিয়ে রেজিস্টার করলে টাকা বা ফ্রি ডেটা দিত। তখন আমি আমার কয়েকজন বন্ধুকে রেফার করেছিলাম।
👉 এতে প্রথম মাসেই প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা ইনকাম হয়েছিল, যা দিয়ে আমার ইন্টারনেট খরচ উঠে আসে।
আরেকবার আমি পরিচিত এক দোকানের অফার হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করতাম। দোকান মালিক প্রতিটি বিক্রির জন্য আমাকে ছোট কমিশন দিত। যদিও সেটা খুব বড় অঙ্ক ছিল না, তবে ছাত্রজীবনে নিজের খরচ মেটাতে এটা দারুণ কাজে লেগেছিল।
এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি—আসলেই কিছু কাজ না করেও ইনকাম সম্ভব, তবে সেটা ছোটখাটো আয়ই হয়। বড় ইনকামের জন্য সময়, দক্ষতা আর নিয়মিত কাজ প্রয়োজন।
আমি জান্নাতুল খাতুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 31 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোছা:জান্নাতুল খাতুন, চুয়াডাঙ্গা জেলার বাংলাদেশ থেকে। আমি একজন ফ্রিল্যান্স লেখক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ডিজিটাল কনটেন্ট, আর্টিকেল এবং সৃজনশীল লেখা তৈরি করতে পারদর্শী। আমি মানসম্পন্ন কাজ প্রদান করতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট রাখতে উৎসাহী।