ইমুতে ছোট ব্যবসা শুরু করার নতুন নিয়ম – ২০২৫ গাইড

কেন ইমু ব্যবসার সুযোগ তৈরি করছে?

ইমু (IMO) মূলত একটি ফ্রি কল ও মেসেজিং অ্যাপ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আজকের দিনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ যেমন জনপ্রিয়, ইমুও তেমনি এক বড় প্ল্যাটফর্ম।

বাংলাদেশে ইমু এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো:

  • ফ্রি কলের সুযোগ
  • কম ডেটা খরচ
  • দুর্বল ইন্টারনেটেও ভালোভাবে কাজ করে
  • সহজ ইন্টারফেস

প্রায় প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজন ইমু ব্যবহারকারী আছেন। মানে এখানে কোটি কোটি সক্রিয় ইউজার প্রতিদিন লগইন করে। আর এত বড় সংখ্যক ব্যবহারকারী মানেই ব্যবসার সুযোগ বিশাল।

কেন এটা ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

  • সরাসরি যোগাযোগ: ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো নয়, এখানে আপনি কাস্টমারের সাথে সরাসরি চ্যাট বা ভিডিও কল করতে পারবেন। এতে গ্রাহকের আস্থা বাড়ে।
  • অল্প খরচে প্রচারণা: প্রচলিত মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপণে খরচ বেশি। ইমুতে কোনো টাকা খরচ ছাড়াই কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো যায়।
  • নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য উপযোগী: যারা নতুন শুরু করতে চান, তাদের জন্য ইমু একটি লো-রিস্ক প্ল্যাটফর্ম।
  • লোকাল মার্কেট টার্গেটিং: ইমুতে সাধারণত আপনার পরিচিত, বন্ধু, আত্মীয়, বা তাদের পরিচিতদের সাথেই সংযোগ থাকে। ফলে লোকাল কাস্টমার পাওয়া সহজ হয়।

উদাহরণ:

ধরুন, আপনি অনলাইনে কাপড় বিক্রি করতে চান। যদি ফেসবুকে শুরু করেন, সেখানে প্রচুর প্রতিযোগিতা পাবেন এবং বিজ্ঞাপণ খরচ করতে হবে। কিন্তু ইমুতে আপনি সরাসরি কন্টাক্ট লিস্টে প্রোডাক্ট শেয়ার করলে মানুষ দেখবে, প্রশ্ন করবে, এমনকি অর্ডারও করতে পারে।

অন্যদিকে, অনেক ছোট ব্যবসায়ী যেমন – অনলাইন রিচার্জ, ডিজিটাল কার্ড বিক্রি, সফটওয়্যার/অ্যাপ সাবস্ক্রিপশন, টিউটোরিয়াল কোর্স ইত্যাদি – এগুলোও ইমুর মাধ্যমে সহজে বিক্রি হচ্ছে।

অর্থাৎ, ইমুতে ব্যবসা মানে শুধু ফ্রি কল নয়, বরং এক নতুন দিগন্ত। যারা ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে চান, তাদের জন্য ইমু একেবারে আদর্শ প্ল্যাটফর্ম।

ইমুতে বিক্রি করার সুবিধা

ইমুতে ব্যবসা করার অনেক সুবিধা রয়েছে, যা অন্য কোনো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম বা মার্কেটপ্লেসের তুলনায় অনেক বেশি সহজ ও দ্রুত ফল দিতে পারে। বিশেষ করে যারা নতুন উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসায়ী, তাদের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম খুবই কার্যকর। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বিশদে আলোচনা করা হলো।

১. বিনামূল্যে প্রচারণা (Free Marketing)

ইমু ব্যবহার করে আপনি প্রায় কোনো খরচ ছাড়াই প্রচারণা করতে পারেন। ফেসবুক বা ইউটিউবের বিজ্ঞাপণ খরচ অনেক বেশি হতে পারে, আবার প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। কিন্তু ইমুতে আপনার কন্টাক্ট লিস্ট এবং গ্রুপের মাধ্যমে পণ্য বা সার্ভিসের তথ্য শেয়ার করলে কোনো টাকা খরচ করতে হয় না।

উদাহরণ:

ধরুন, আপনার কাছে ২০০ জন কন্টাক্ট আছে। আপনি প্রতিটি কন্টাক্টকে পণ্যের ছবি, দাম, এবং ছোট বিবরণ পাঠাতে পারেন। এতে কেবলমাত্র কয়েক মিনিটে প্রচার হয়ে যায়।

আপনি চাইলে এই মেসেজগুলো গ্রুপ টিউন বা চ্যানেল টিউন আকারে দিতে পারেন, যাতে একই বার্তা একসাথে অনেক মানুষ দেখবে।

২. সরাসরি যোগাযোগ (Direct Customer Interaction)

ইমুতে বিক্রি করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়। চ্যাট, ভয়েস কল বা ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনি কাস্টমারের সাথে পরিচিত হতে পারেন।

  • বিশ্বাস তৈরি করা: অনলাইন ব্যবসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাস্টমারের বিশ্বাস। সরাসরি কথা বললে গ্রাহক বুঝতে পারে যে আপনি বিশ্বাসযোগ্য।
  • দর-কষাকষি সহজ: গ্রাহক চাইলে দাম নিয়ে আলোচনা করতে পারে, আর আপনি তা সহজেই সমাধান করতে পারবেন।

৩. ব্যবহারকারী সংখ্যা অনেক বেশি (Massive User Base)

বাংলাদেশে ইমুর ব্যবহারকারী সংখ্যা কোটি কোটি। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের যেকোনো শহর বা গ্রামে কেউ ব্যবহার করে।

এর মানে হলো, আপনার পণ্য যদি লোকাল বা ন্যাশনাল হিসেবে টার্গেট করতে চান, ইমু আপনাকে সেই সুযোগ দিচ্ছে।

নতুন ব্যবসায়ী সহজেই নতুন কাস্টমার পেতে পারেন।

৪. ছোট ব্যবসার জন্য উপযোগী (Ideal for Small Businesses)

যারা নতুন শুরু করছেন বা বড় বাজেট নেই, তাদের জন্য ইমু একেবারে আদর্শ।

বড় ই-কমার্সে পণ্য লিস্ট করতে হলে কমপক্ষে বিজ্ঞাপণ, ডেলিভারি এবং স্টক ম্যানেজমেন্টের খরচ লাগে।

কিন্তু ইমুতে শুরুতে ছোট পরিসরে কাজ করা যায়। ধরুন, ২০–৩০টি প্রোডাক্ট দিয়ে শুরু করা যায়, যা নিয়মিত গ্রাহক ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।

৫. লোকাল মার্কেট টার্গেটিং সহজ (Local Market Targeting)

ইমু ব্যবহারকারীরা সাধারণত আপনার পরিচিত বা তারপরিচিতদের মধ্যেই থাকে। অর্থাৎ, আপনি স্থানীয় কাস্টমারদের সহজেই ধরতে পারেন।

উদাহরণ:

ঢাকায় একটি ছোট রিচার্জ বা গিফট কার্ড বিক্রি করতে চাইলে আপনি আপনার কন্টাক্ট লিস্টে থাকা বন্ধু, পরিবার, সহকর্মীদের মাধ্যমে সহজেই বিক্রি করতে পারেন।

এছাড়া, গ্রুপ বা চ্যানেল তৈরি করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে যুক্ত করতে পারেন।

৬. দ্রুত ফলাফল (Quick Results)

ইমুতে লেনদেন বা যোগাযোগ অনেক দ্রুত হয়।

  • টিউন দিলে কাস্টমার তৎক্ষণাৎ দেখতে পারে।
  • মেসেজে প্রশ্ন করলে সরাসরি উত্তর দিতে পারবেন।
  • ডেলিভারি ও পেমেন্ট ফলোআপ দ্রুত করা সম্ভব।

৭. লো-রিস্ক (Low Risk)

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো ঝুঁকি। ইমুতে ছোট পরিসরে শুরু করলে ঝুঁকি খুব কম থাকে।

  • স্টক সীমিত রাখলে বড় ক্ষতি হয় না।
  • অগ্রিম পেমেন্ট নিলে প্রতারণার সম্ভাবনা কমে।
  • গ্রাহকের সাথে সরাসরি লেনদেন হলে ভুল বোঝাবুঝি কম হয়।

ইমুতে ব্যবসা করার সুবিধাগুলো বিশেষভাবে নতুন উদ্যোক্তা ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক কার্যকর। বিনামূল্যে প্রচারণা, সরাসরি যোগাযোগ, বিশাল ইউজার বেস, স্থানীয় মার্কেট টার্গেটিং এবং কম ঝুঁকি – এগুলো মিলিয়ে ইমু হতে পারে এক নতুন ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম।

ব্যবসা শুরু করার আগে কী প্রস্তুতি নেবেন?

ইমুতে সফলভাবে বিক্রি শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া খুব জরুরি। অনেকেই হুট করে শুরু করে ব্যর্থ হয়, কারণ তারা গ্রাহক, পেমেন্ট বা ডেলিভারির সঠিক প্রস্তুতি নেয় না। এখানে ধাপে ধাপে দেখানো হলো কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

১. আলাদা ইমু অ্যাকাউন্ট খুলুন

  • ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক একাউন্ট আলাদা রাখুন।
  • ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের সাথে ব্যবসা মিশিয়ে দিলে গ্রাহক বিভ্রান্ত হতে পারে।
  • নতুন অ্যাকাউন্টে প্রোফাইল নাম, ছবি এবং বায়োতে ব্যবসার তথ্য স্পষ্টভাবে দিন।

প্রোফাইল পিকচার:

পণ্য বা ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করতে পারেন।

বায়োতে:

সংক্ষিপ্তভাবে কি বিক্রি করছেন এবং যোগাযোগের মাধ্যম লিখুন।

উদাহরণ:

  • নাম: “Rahim Electronics – Official”
  • বায়ো: “মোবাইল রিচার্জ ও গ্যাজেট বিক্রি। অর্ডার করতে মেসেজ করুন। ”

২. প্রোফাইল প্রফেশনাল করুন

ব্যবহারকারী যখন আপনার প্রোফাইল দেখবে, তাদের প্রথম ইম্প্রেশন গুরুত্বপূর্ণ।

  • প্রোফাইল ও কভার ফটোতে পেশাদার ছবি ব্যবহার করুন।
  • বায়োতে পরিষ্কারভাবে ব্যবসার তথ্য এবং কাজের সময় উল্লেখ করুন।

টিপস:

  • অকারণে স্প্যাম বা অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করবেন না।
  • প্রোফাইল ভেরিফিকেশন করলে কাস্টমারের আস্থা বাড়ে।

৩. চ্যানেল বা গ্রুপ তৈরি করুন

একটি আলাদা বিজনেস গ্রুপ বা চ্যানেল তৈরি করুন যেখানে আপনার সমস্ত পণ্য আপডেট থাকবে।

  • গ্রুপ/চ্যানেলের নাম যেন সহজে মনে থাকে এবং পণ্য সম্পর্কিত হয়।
  • এখানে নিয়মিত টিউন দিন, যাতে গ্রাহকরা সব সময় নতুন অফার ও প্রোডাক্ট দেখতে পায়।

উদাহরণ:

  • গ্রুপের নাম: “Dhaka Electronics – Deals & Offers”
  • চ্যানেল টিউন: নতুন মোবাইল রিচার্জ, ডিসকাউন্ট অফার, কাস্টমারের রিভিউ

৪. প্রোডাক্ট ক্যাটালগ তৈরি করুন

ইমুতে পণ্য দেখানোর জন্য ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করুন।

  • প্রতিটি প্রোডাক্টের জন্য ছোট বিবরণ, দাম, এবং ডেলিভারি অপশন দিন।
  • এক ধরনের পণ্য একবারে ৫–১০টি ছবিতে দেখানো যায়।

উদাহরণ:

  • প্রোডাক্ট: মোবাইল রিচার্জ
  • ছবি: স্ক্রিনশট বা গিফট কার্ডের ছবি
  • বিবরণ: ন্যাশনাল/গ্রাম অঞ্চলের জন্য অফার সহ

৫. যোগাযোগের প্রস্তুতি নিন

কাস্টমারের প্রশ্নের দ্রুত উত্তর দিতে নিয়মিত অনলাইন থাকুন।

  • চ্যাটে সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করুন।
  • দর-কষাকষি সহজভাবে করতে প্রস্তুত থাকুন।

টিপস:

  • FAQ (Frequently Asked Questions) তৈরি করুন।
  • সাধারণ প্রশ্ন যেমন ডেলিভারি চার্জ, পেমেন্ট অপশন, রিটার্ন পলিসি আগে থেকেই লিখে রাখুন।

৬. পেমেন্ট এবং লেনদেনের প্রস্তুতি

  • বিকাশ, নগদ বা রকেটের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা রাখুন।
  • অগ্রিম পেমেন্ট নিন (কমপক্ষে ৫০%)।
  • লেনদেনের প্রমাণ রাখুন (স্ক্রিনশট বা ট্রানজেকশন আইডি)।

উদাহরণ:

  • গ্রাহক অর্ডার করলে ৫০% অগ্রিম পাঠাবে।
  • বাকি টাকা পণ্য পৌঁছানোর পরে নিন।

৭. ডেলিভারি প্রস্তুতি

  • কুরিয়ার বা হোম ডেলিভারি ব্যবস্থা ঠিক করুন।
  • প্রয়োজন হলে স্থানীয় কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে চুক্তি করুন।
  • ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করুন, যাতে কাস্টমার জানে পণ্য কোথায়।

৮. ছোট থেকে শুরু করুন

প্রথমে কম প্রোডাক্ট দিয়ে শুরু করুন, যেন ঝুঁকি কম থাকে।

ধীরে ধীরে গ্রাহক বৃদ্ধি পেলে প্রোডাক্ট সংখ্যা বাড়ান।

উদাহরণ:

প্রথমে শুধু মোবাইল রিচার্জ এবং কিছু গ্যাজেট বিক্রি করুন।

পরবর্তীতে হেডফোন, পাওয়ার ব্যাংক, স্মার্টওয়াচ যুক্ত করুন।

সফল ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • প্রফেশনাল প্রোফাইল
  • আলাদা অ্যাকাউন্ট
  • গ্রুপ/চ্যানেল
  • প্রোডাক্ট ক্যাটালগ
  • যোগাযোগ ও পেমেন্ট প্রস্তুতি
  • ডেলিভারি ব্যবস্থা

এই ধাপগুলো মানলেই আপনি ইমুতে সহজেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন এবং ঝুঁকি কম থাকবে।

Level 2

আমি জান্নাতুল খাতুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 31 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি মোছা:জান্নাতুল খাতুন, চুয়াডাঙ্গা জেলার বাংলাদেশ থেকে। আমি একজন ফ্রিল্যান্স লেখক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ডিজিটাল কনটেন্ট, আর্টিকেল এবং সৃজনশীল লেখা তৈরি করতে পারদর্শী। আমি মানসম্পন্ন কাজ প্রদান করতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট রাখতে উৎসাহী।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস