
আজকের দিনে স্মার্টফোন কেনার সময় আমরা সবাই স্পেসিফিকেশনের দিকে নজর রাখি। ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেল, প্রসেসর কতটা শক্তিশালী, আর অবশ্যই, চার্জিং স্পিড কেমন? একটা বিষয় খেয়াল করলে অবাক হতে হয়, একদিকে যখন Xiaomi, OnePlus বা Realme-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো তাদের ফোনে ১৫০ ওয়াট পর্যন্ত ফাস্ট চার্জার দিচ্ছে, সেখানে টেক দুনিয়ার দুই মহারথী Apple এবং Samsung তাদের প্রিমিয়াম ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোতে মাত্র ২০-২৫ ওয়াটের চার্জারেই আটকে আছে।
মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, যেখানে হাজার হাজার টাকা খরচ করে একটি iPhone বা Samsung-এর ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনা হয়, সেখানে কেন এই কোম্পানিগুলো চার্জিং স্পিডের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচারে পিছিয়ে থাকছে? এটা কি তাদের কারিগরি অক্ষমতা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো গভীর কারণ লুকিয়ে আছে? চলুন, আজ এই রহস্যটাই ভেদ করা যাক।
সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্ব। স্মার্টফোনের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক চার্জ সাইকেলের জন্য ডিজাইন করা হয়। যত দ্রুত গতিতে ব্যাটারি চার্জ করা হয়, এর ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়া তত দ্রুত হয় এবং তত বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। আর এই অতিরিক্ত তাপ ব্যাটারির স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু।
ফাস্ট চার্জিং মানেই হলো বেশি পাওয়ার এবং বেশি তাপ। ১৫০ ওয়াটের মতো অতি দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি ম্যানেজ করার জন্য ফোনের ভেতরে খুবই উন্নত কুলিং সিস্টেম এবং একাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। যদি কোনো কারণে এই সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে অতিরিক্ত তাপে ব্যাটারি ফুলে যাওয়া বা আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি থাকে।
Apple এবং Samsung-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডিভাইস বিক্রি করে। তাদের পক্ষে সামান্যতম নিরাপত্তার ঝুঁকি নেওয়াও সম্ভব নয়। তাই তারা একটি পরীক্ষিত, নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ চার্জিং স্পিড ব্যবহার করে যা তাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনে।
আরেকটি দিক হলো ব্যবসা। Apple এবং Samsung উভয়ই এখন ফোনের সাথে চার্জার দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব চার্জার এবং ক্যাবল আলাদাভাবে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ আয় করে।
যদি তারা অতি দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে আসে, তাহলে তাদের নিজস্ব নতুন চার্জার, ক্যাবল এবং পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট চিপ তৈরি করতে হবে, যা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি ব্যবহারকারীদেরও নতুন করে সেই ইকোসিস্টেমে বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমান সিস্টেমে তারা নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং নির্ভরযোগ্যতার উপর ভিত্তি করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
Xiaomi বা OnePlus-এর মতো কোম্পানিগুলো মূলত তরুণ এবং প্রযুক্তিপ্রেমী গ্রাহকদের টার্গেট করে। তাদের জন্য "ফাস্ট চার্জিং" একটি বিশাল মার্কেটিং পয়েন্ট। তারা এই প্রযুক্তিকে সম্ভব করার জন্য ডুয়াল-সেল ব্যাটারি (ব্যাটারিকে দুই ভাগে ভাগ করে একসাথে চার্জ করা) এবং উন্নত কুলিং সিস্টেমের মতো বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ব্যাটারিগুলোর স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে দ্রুত কমার একটি ঝুঁকি থেকেই যায়।
সুতরাং, iPhone এবং Samsung-এর ধীর চার্জিং স্পিড তাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা নয়, বরং এটি একটি ইচ্ছাকৃত কৌশলগত সিদ্ধান্ত। তারা গতির চেয়ে ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্ব, ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা এবং নিজেদের ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
দিন শেষে, এটি আসলে ব্র্যান্ডগুলোর ভিন্ন ভিন্ন দর্শন। কোনো ব্র্যান্ড আপনাকে মিনিটের মধ্যে দিনের অর্ধেক চার্জ দিয়ে দেবে, আর কোনো ব্র্যান্ড আপনাকে বছরের পর বছর ধরে একটি নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে। এখন কোনটি আপনার জন্য সঠিক, সেই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।
আমি ওমর ফারুক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ওমর ফারুক। আমি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে আগ্রহী এবং ইতিমধ্যে stlight(https://bdxroot.github.io/stlight/index.html) নামে একটি প্রোজেক্ট সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে আমি Barrister Sultan Ahmed Chowdhury Degree College-এ পড়াশোনা করছি।