করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি ব্যতিত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কি আসলেই রয়েছে?

Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি করে আছেন। বর্তমানে করোনা মহামারীর মধ্যে আপনারা সকলেই একটি ভাইরাসের কথা শুনতে পাচ্ছেন। আর সেটি হচ্ছে, Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।

ভারতে করোনা রোগী দিন দিন বেড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো বা জানিনা যে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি এবং এটি কেনই বা আমাদের এই সময়টিতে আক্রান্ত করছে। তাছাড়া এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কেনই বা এই সময়টিতে বেশি দেখা যাচ্ছে। চলুন আজকের এই টিউন এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক যে, Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে। এজন্য অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে।

কি এই Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এবং এর প্রভাবে কি হয়?

আপনারা যারা এই মুহূর্তে এই টিউনটি দেখছেন আমি নিশ্চিত যে, আপনারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, ফেসবুকে ও ইউটিউবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে জেনেছেন। সেখানে সবাই এটা বলাবলি করছে যে, বর্তমান এইতো একটি মহামারী আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। তার মধ্যে আবার এই নতুন রোগ আবির্ভাব হলো; আর এই রোগটি থেকে কিভাবে বাঁচা যাবে। বর্তমানে এসব চিন্তাগুলো আমাদেরকে অনেকটা ভেবে তুলেছে। অনেক মানুষ ভয় পাচ্ছে যে, তাদেরও কি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে।

সংবাদমাধ্যমে কিংবা ইউটিউবে আমরা যেসব প্রতিবেদনগুলো দেখেছি, সেখানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সমন্ধে আমাদের যে ধারণাটি হয়েছে, তা অনেক ভয়ানক। আর সেই কারণেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কে আমরা সকলেই ভয় করছি। যদি আপনাকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত করে, তবে কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কিনা এবং এটি হলে আপনার কি কি উপসর্গ হতে পারে চলুন সে বিষয়ে একটু জেনে নেই।

Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্বন্ধে জেনে নেবার জন্য আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে এটি নতুন কোন রোগ কিনা। এর উত্তর হলো না; এটি নতুন কোন রোগ নয়। বরং, এটি একটি ফাঙ্গাস এবং যেটিকে একটি ছত্রাক বলা হয়। যেমনভাবে আপনি কোন অবহেলিত ইটের দেওয়ালে দেখে থাকবেন; যদি বাড়িটি কিছুদিন পরে থাকে, তবে সেখানে কালো কালো কিছু দাগ পড়ে যায়। যেখানে এটিও এক ধরনের ফাঙ্গাস।

যদিও দেওয়ালে থাকা সেই কালো দাগ গুলো Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নয়, তবে এগুলো এক ধরনের ফাঙ্গাস। একইভাবে আপনি যদি কোন খাবার কে বেশি দিন রেখে দেন তবে সেটিতে ও কালো কালো বা সাদা সাদা দাগ পড়ে যায়। যেখানে খাবারে পড়া এসব দাগগুলো ও এক ধরনের ফাঙ্গাস। যেখানে খাবারে পড়া এসব ফাঙ্গাস কে Rhizopus Fungus বলা হয়ে থাকে। ঠিক একই রকম একটি ফাঙ্গাস হচ্ছে, Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।

এই ফাঙ্গাস কে আমরা আমাদের মুখের ভাষায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বললেও, এটি কিন্তু কালো হয়না। বরং, এই ফাঙ্গাস টির রং সাদা ই হয়। তবে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শরীরের যে সমস্ত জায়গায় আক্রান্ত করে সে সমস্ত জায়গা গুলোতে কালো কালো দাগ পড়ে যায়। আর এর কারণ হচ্ছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সে জায়গাতে আক্রান্ত করার ফলে সে জায়গার কোষগুলো মারা যায় এবং কোষ গুলো মারা যাবার কারনে সে জায়গাটি কালো হয়। আর এই কালো দাগ গুলো পড়ে যায় বলে এটিকে আমরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলি।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কোথায় থাকে বা কিভাবে ছড়ায়?

Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মাটিতে কিংবা বাতাসের থাকতে পারে। বর্তমানে আপনি যে জায়গায় বসে আছেন, সেখানেও বাতাসের মধ্যে অথবা মাটিতে ব্লাক ফাঙ্গাস থাকতে পারে। আর এখানেই একটি প্রশ্ন আসে যে, যদি আপনার আশেপাশেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কাছ থেকে থাকে, তবে আপনাকে এই ফাঙ্গাস আক্রান্ত করছে না কেন? যেখানে এই প্রশ্নটিই মাথায় চলে আসা কোন অমূলক বিষয় নয়। কেননা আমাদের চারপাশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রয়েছে, অথচ আমাদেরকে আক্রান্ত করছে না।

আপনাকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত না করার কারণ হচ্ছে, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। যার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি, তার শরীরে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত করতে পারবে না। তবে যদি কারো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ব্লাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত করতে পারে। আর এজন্য আমরা এটিকে Opportunistic Disease বা সুবিধাবাদী রোগ হিসেবে ধরে নিতে পারি। তবে শুধুমাত্র এই রোগের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সব রোগের ক্ষেত্রে এই রকম দেখা যায়।

যদি কোন কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তবে এমনিতেই অন্যান্য সকল রোগ শরীরে আরো আক্রান্ত করতে থাকে। শরীর দুর্বল হলে বা কোন একটি কারণে অসুস্থ হয়ে গেলে, তখন অন্যান্য রোগ গুলো সহজেই শরীরে আক্রান্ত করার ফলে শরীর আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে কোন একটি অসুস্থতার কারণে বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সেই শরীরকে আক্রান্ত করে। এক্ষেত্রে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শুধুমাত্র তখনই আপনার শরীরকে আক্রান্ত করতে পারে, যখন আপনার শরীর এটিকে আক্রান্ত করার সুযোগ দিবে। কিন্তু যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে, তবে কোনো ভাবেই আপনার শরীরে এই ফাঙ্গাস আক্রান্ত করতে পারবে না।

কাদের এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে?

আমাদেরকে এবার জানতে হবে যে কাদের এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস তে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা তাদের সবচাইতে বেশি, যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই অনেক কম। যেমন ধরুন, যাদের এইচআইভি বা এইডস রয়েছে, কোন ক্যান্সারের রোগী ইত্যাদি এসব মানুষের এমনিতেই Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ইদানিং ভারতের বেলায় হয়তোবা দেখছি যারা করণায় আক্রান্ত হচ্ছে তারা আবার পরবর্তীতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে ও আক্রান্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হোক বা না হোক, তবুও তার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

করোনাই আক্রান্ত ব্যক্তির যেহেতু এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল এবং যে কারণে তাকে ভাইরাসে আক্রান্ত করেছে, সেজন্য তাকে এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা ও অনেক বেশি। যদি সেই ব্যক্তির করোনা হয়ে যায়, তবে পরবর্তীতে তার শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আরও বেশি পরিমাণে হয়ে যায়। তবে এখানে একটি আশ্চর্য বিষয় হলো, বর্তমানে যারা এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৯৫% লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর নয়তো Steroids এর ঔষধ কে তারা ভুলভাল ভাবে ব্যবহার করেছে। এখানে এই দুটো জিনিস কে আপনাকে সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া দরকার।

যাদের আগে থেকে ডায়াবেটিস থেকে থাকে বা যাদের সুগার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে এবং সে সমস্ত রোগীর যদি করোনা হয়; এবং সেখানে যদি চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে Steroids এর ঔষধ দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তার পরবর্তীতে এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এবার আপনাদের মাথায় অনেকের প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই স্টেরয়েড (Steroids) আসলে কি? এজন্য বিষয়টিকে আমি আপনাদের জন্য নিচে একটু সহজ ভাবে আমি তুলে ধরছি।

স্টেরয়েড (Steroids) কি?

আমরা তো এটি সকলেই জানি যে, মানুষের শরীরের একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। মানুষের শরীরে যদি বাহিরে থেকে কোন রোগের জীবাণু প্রবেশ করে তখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা সেটিকে আটকানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। যখন বাহিরে থেকে কোন ভাইরাস বা পরজীবীর শরীরে সংক্রমণ করার চেষ্টা করে তখন শরীর সেই ভাইরাসকে ঠেকানোর জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে এবং এজন্য শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে যায়। তবে শরীরের এই ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যাবার একটি সীমা রয়েছে। যদি কোন কারনে শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য ইমিউন সিস্টেম অতি সক্রিয় হয়ে যায় তখনই বাধে বিপত্তি।

যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধে ইমিউন সিস্টেম অতি সক্রিয় হয়ে যায়, তখন রোগ প্রতিরোধে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ শুরু হয়ে যায়। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সেই ভাইরাস কে মেরে ফেলার পরিবর্তে, বরং উল্টো শরীরের অন্যান্য কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এতে করে সংক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে তার বিপরীতে শরীরের সুস্থ কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই বিষয়টি ঘটছে করোনা রোগীর ক্ষেত্রে। আর এতে করে অধিক সক্রিয় ইমিউন সিস্টেমের কারণে সাইটোকাইন স্টর্ম দেখা দিচ্ছে।

শরীরের অস্বাভাবিক এরকম ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য স্টেরয়েড (Steroids) ব্যবহার করা হয়। শরীরের সুস্থ কোষগুলোকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকেরা এই স্টেরয়েড ব্যবহার করে।

এবার চলে আসা যাক মূল আলোচ্য বিষয়েঃ

যারা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই স্টেরয়েড এর অপব্যবহার করেছে; অর্থাৎ, যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধ ব্যবহার করেছে, তাদের জন্য এই ইনফেকশন টি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ‌তবে এবার আরেকটি প্রশ্ন চলে আসতে পারে, এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের রোগী কেন বেশি দেখা যাচ্ছে? এর কারণ হচ্ছে, যখন কোন করোনা রোগীর ডায়াবেটিস থাকে এবং সে যখন করোনার জন্য স্টেরয়েড গ্রহণ করে, তার শরীরে সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। আর তখন সেই সমস্ত রোগীদের শরীর ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী হয়ে যায়।

এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হবার লক্ষণ এবং এটি থেকে বাঁচার উপায় কি?

যত তাড়াতাড়ি আপনি এই রোগটিকে ধরতে পারবেন, আপনার ততবেশি এই রোগ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার পর ৫০% সম্ভাবনা থাকে বাঁচার এবং ৫০% সম্ভাবনা থাকে মারা যাবার। এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার পর খুব দ্রুত জানতে পারলে, আপনি খুব দ্রুত চিকিৎসা নেবার কারণে আপনি ততোই ভালো থাকবেন। এজন্য আগে থেকে কিভাবে আমরা জেনে নিতে পারব, এটি জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরী।

এই রোগের লক্ষণঃ

প্রথমত ধরুন, আপনার করোনা হয়েছিল এবং করোনা থেকে সেরে ওঠার পর আপনার শরীর ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছিল। তবে এ সময় যদি আপনার মাথার একপাশে ব্যথা করে তবে আপনার আগে থেকে সাবধান হয়ে যাওয়া দরকার। কারণ এই রোগটা হলে প্রথম স্টেজে যদি আপনি কাউকে দেখেন, তাহলে সে একদম সাধারণ লাগবে। এক্ষেত্রে আপনি বুঝতেও পারবেন না যে, আপনার কিংবা আপনার পাশের জনের এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা। তাই এক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হওয়া উচিত।

এ ছাড়া এই রোগের লক্ষণ হিসেবে, আপনার মাথার বা মুখের এক পাশের অনুভূতি কম অনুভব হবে। তারমানে, আপনাকে স্পর্শ করলে কিংবা আপনি স্পর্শ করলে আপনি সাধারণ সময়ের তুলনায় কম অনুভব করতে পারবেন। এছাড়া আপনার মনে হতে পারে যে আপনার মুখের এক পাশের দাঁত ব্যথা করছে কিংবা এক পাশের দাঁত ঢিলে হয়ে গিয়েছে। এছাড়া এর উপসর্গ হিসেবে নিঃশ্বাস নেবার সময় নাকের ভেতর টা বন্ধ মনে হতে পারে এবং নাক থেকে কালো বা ব্রাউন কালারের পানি বের হতে পারে। এছাড়া এই সময় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হবে।

এছাড়া নাক থেকে রক্ত কিংবা রক্ত মিশ্রিত অন্য কোন তরল পদার্থ বের হতে পারে। এছাড়া মুখের এক দিক ফুলে যেতে পারে। রোগের লক্ষণ বা এই রোগটি প্রথমে নাক এবং মুখ থেকে শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এই রোগটি চোখকে আক্রান্ত করতে শুরু করবে। শেষমেষ যখন এটি ব্রেনে চলে যায় তখন সেই রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

যখন এটি চোখকে আক্রান্ত করবে তখন চোখ ফুলে যাবে এবং চোখের উপরের পাতা টি ঝুলে যাবে অথবা কোন বস্তুকে ডাবল ডাবল মনে হবে, এছাড়া চোখ জ্বালাপোড়া করবে, এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে এবং সে সময়ে আপনি যখন চোখ ঘোরাবেন, তখন মনে হবে চোখের মুভমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে না। এই সমস্ত লক্ষণগুলোর মধ্যে কোন একটি হলে তাৎক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই দেরি একদমই করবেন না। ‌কারণ এই ইনফেকশন টি অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে যায়। এমনকি একদিনে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার পর উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে, দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে যাওয়া, কফের সঙ্গে রক্ত চলে আসা, এমনকি রক্ত বমি হওয়া, এছাড়া এই Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর লক্ষন হিসেবে ঘাড়ে ব্যথা করা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো দাগ পড়ে যাওয়া।

আর এজন্য আপনি আপনার লক্ষণগুলোকে খেয়াল করুন এবং যদি এরকম টি হয়, তবে অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এখানে আপনাকে আরো একটি বিষয় বলে দেওয়া দরকার। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসার জন্য কোন একটি ছোট ক্লিনিকে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়। কেননা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে কাছে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে এটির প্রভাব পড়ে। যেখানে কোন একটি ছোট ক্লিনিকে বিভিন্ন অঙ্গের জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসক থাকা সম্ভব না।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করানোর জন্য একটি ডাক্তারের দল লাগে। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির জন্য চোখের ডাক্তার, নাক ও কানের ডাক্তার, একজন প্যাথলজিস্ট, একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট, একজন নিউরো সার্জেন্ট। এরকম ভাবে একজন পুরো দল লাগে কোন একজন ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করার জন্য। সুতরাং, ছোট একটি ক্লিনিকে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন।

করোনা পরবর্তী ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যেহেতু ডায়াবেটিস এর রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়, এজন্য আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার শরীরের সুগার লেভেল কে পরীক্ষা করুন। সেই সঙ্গে আপনি সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করে চলুন। এছাড়া ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার পর আপনার করনীয় কি হবে এবং আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি কি হবে, এটি একমাত্র চিকিৎসক ই বলতে পারবে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হবার পর আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি কি হবে, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না; যেহেতু আমি চিকিৎসা পদ্ধতি সমন্ধে জানিনা বা আমি কোন ডাক্তার না। তবে আমি আপনাকে শুধু এতটুকু বলতে পারব যে, দৈনন্দিন চলার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন।

আপনি আপনার লক্ষণগুলোকে দেখে নিবেন এবং সে অনুযায়ী আপনি ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিন। সেইসঙ্গে আমি বলব আপনি যদি এখনও করোনায় আক্রান্ত না হয়ে থাকেন, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ফেরা করার চেষ্টা করুন এবং সেইসঙ্গে এসব বিপদ থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। আপনার-আমার ভাগ্যে কি রয়েছে, এটি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ই বলতে পারে।

শেষ কথা

Mucormycosis বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মোটেও সাধারণ কোন ছত্রাক এর মত নয়। এটি মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং মানুষের জন্য মরণ ব্যাধি। এটি যদি কোনো সুস্থ মানুষ কে আক্রান্ত করে, তবে তার মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। তবে প্রথম থেকেই যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায় তবে হয়তোবা সেই রোগীকে বাঁচানো যাবে। এখানে বাঁচা এবং না বাঁচা সৃষ্টিকর্তার হাতে।

মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন কমে যায়, তখন এমনিতেই মানুষের শরীরের বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। তখন খুব সহজেই বিভিন্ন ভাইরাস রোগে আক্রান্ত করতে পারে। কেননা সেই সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাহিরে থেকে আগত এসব ভাইরাসকে ঠিকমতো মোকাবেলা করতে পারে না। আর যদি শরীরের ইমিউন সিস্টেম আবার অতি সক্রিয় হয়ে যায় তবুও বিপদ। কেননা এতে করে শরীরের সুস্থ কোষগুলোকে ও মেরে ফেলতে পারে।

আশা করছি আপনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার কাছে আজকের এই টিউনটি তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনাদের বন্ধুদের কে জানানোর জন্য তাদের কাছে শেয়ার করতে পারেন। ‌যাতে করে তারাও এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারে। সেইসঙ্গে আপনার কাছে টিউনটি ভাল লাগলে টিউনটিতে জোসস করতে পারেন। আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস