হ্যালো টেকটিউনস কমিউনিটির সদস্যরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালোই আছেন আপনারা। এটা পবিত্র রমাজান মাস। এই মাসে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার ইবাদাত করার তৌফিক দান করুক এবং সেই সাথে জীবিকার জন্য কাজ করার ক্ষমতা ও দান করুক।
বরাবরের মতো আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সুন্দর একটা টিউন। আশাকরি ভালো লাগবে। আল্লাহ যেন সবার উপর রহমত, বরকত বর্ষণ করে ও আমাদের সকলকে ক্ষমা দান করে এই দোয়া কামনা করে শুরু করছি আজকের টিউন।
রক্ত প্রতিটি জীবের জন্য নিঃসন্ধেহে একটি উপকারী পদার্থ। প্রতিটি প্রানীতে এটি রয়েছে। এটি মানব শরীরে ও রয়েছে। ইহা সম্পর্কে যাবতীয় যত কথা তা জানবো আজকের এই টিউন এর মাধ্যমে। কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি।
মানুষের শরীরের রক্ত নালিকাগুলোর মাঝে দিয়ে নিরন্তন প্রবাহমান লাল বর্ণের, সামান্য ক্ষারীয়, চটচটে, লবণাক্ত, অসচ্ছ প্রকৃতির তরল যোজক টিস্যুকে রক্ত বলে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্ত সামান্য ক্ষারীয়। রক্তে নানা ধরনের অজৈব লবণ উপস্থিত থাকে যার ফলে এর স্বাদ নোনতা।
সেন্ট্রিফিউগাল নামক যন্ত্রে মিনিটে তিন হাজার বার করে ত্রিশ মিনিট ঘুরালে রক্ত দুটি প্রধান স্তরে বিভক্ত হয়ে পরে। হালকা হলুদ বর্ণের একটি অংশ থাকে যাকে রক্তরস বা প্লাজমা বলে। বাদবাকি গাঢ়তর অংশকে রক্তকণিকা বলে। রক্তে রক্তরস ও রক্ত কণিকার শতকরা পরিমাণ যথাক্রমে ৫৫% ও ৪৫%। সাধারণ ভাবে রক্তকণিকা গুলো রক্তরসে ভাসতে থাকে। রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বেশি পরিমাণে থাকার কারণে রক্ত লাল হয়ে যায়।
প্লাজমা বা রক্ত রস হচ্ছে রক্তের হালকা হলুদ অংশ। রক্ত রসে পানির পরিমাণ ৯০-৯২% এবং কঠিন পদার্থ রয়েছে ৮-১০%। রক্তরসে কঠিন পদার্থের জৈব ও অজৈব উপাদানের শতকরা পরিমাণ যথাক্রমে ৭-৯% এবং ০.৯%। কয়েক প্রকারের গ্যাস ও রক্তরসে পাওয়া যায়।
রক্তরস বা প্লাজমায় যেসব কোষ ভাসতে থাকে তাদেরকে রক্তকণিকা বলা হয়। ইহা তিন প্রকার। যথা- লোহিত রক্তকনিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা।
মানব দেহের পরিণত লোহিত রক্তকণিকা গোল, দ্বিঅবতল হয়ে থাকে। এতে নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে চাকতির মতো যার রং লাল।
পূর্ণবয়স্ক পুরুষের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে রক্ত কণিকার সংখ্যা ৫০ লাখ এবং স্ত্রী দেহে ৪৫ লাখ। ভ্রুণ দেহে ৮০-৯০ লাখ এবং শিশুদেহে ৬০-৭০ লাখ।
প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা ৫০ লাখ এর চেয়ে ২৫ শতাংশ কম হলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। কিন্তু এ সংখ্যা কোন কারণে ৬৫ লাখের বেশি হলে তাকে পলিসাইথেমিয়া বলে। হিমোগ্লোবিনের হিম গ্রুপের জন্যই রক্ত লাল দেখায়। অস্থি মজ্জায় অবস্থিত স্টেম কোষ থেকে লোহিত রক্ত কণিকার জন্ম হয়। এরা ৪ মাস পর্যন্ত বাঁচে। লোহিত রক্তকণিকা যকৃত ও প্লীহায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
মানুষের শরীরের পরিণত শ্বেত কণিকার হিমোগ্লোবিন থাকে না তবে নিউক্লিয়াস থাকে যা নিঃসন্দেহে অনিয়তাকার বড় কোষ। প্রকৃতপক্ষে শ্বেত রক্তকণিকা বর্ণহীন। তবে এতে কোন রঞ্জক পদার্থ থাকে না। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করতে পারদর্শী এই কণিকা। মানুষের শ্বেত রক্ত কণিকার নির্দিষ্ট আকার নেই। মানুষের শরীরের প্রতি ঘনমিলিমিটারে গড়ে ৭৫০০ শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। শিশু ও অসুস্থ মানুষের শরীরে ইহা বেড়ে যেতে পারে।
গঠনগতভাবে ও আকৃতিতে শ্বেত রক্তকণিকা দুই প্রকার। যথা- দানবিহীন বা অ্যাগ্রানুলোসাইট এবং দানাদার বা গ্রানুলোসাইট।
দানাবিহীন শ্বেত রক্তকণিকা আবার দু প্রকার। যথা-লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং কিছু অনুজীব ধ্বঃস করে। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে রোগ জীবাণু ভক্ষন করে।
দানাদার শ্বেত রক্তকণিকাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-ন নিউট্রোফিল, ইউসিনোফিল এবং বেসোফিল।
থ্রম্বোসাইট বা অনুচক্রিকা অন্যান্য রক্তকণিকার তুলনায় ক্ষুদ্রতম। দেখতে গোল, ডিম্বাকার রডের মতো দানাদার কিন্তু নিউক্লিয়াস বিহীন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তের থ্রম্বোসাইট এর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ। অসুস্থ শরীরে অনুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণে সেফালির নামক ফসফোলিপিড থাকে। কিছু বিজ্ঞানীর মতে লাল অস্থি মজ্জার বড় মেগাক্যারিওসাইট থেকে অনুচক্রিকার উৎপত্তি আবার কিছু বিজ্ঞানী মতে শ্বেত রক্তকণিকা থেকে থ্রম্বোসাইট সৃষ্টি। অনুচক্রিকা সাধারণত পাঁচ থেকে দশ দিন বাঁচে। আয়ু শেষ হলে এন্ডোথেলিয়াল কোষে বিনষ্ট হয়।
মুমূর্ষু রোগির জন্য বা আশঙ্কাজনক রোগীর জন্য রক্তের গ্রুপ জানা একান্ত জরুরী। আসলে এই রক্তের গ্রুপ বা ব্লাড গ্রুপ কি?
অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে লোহিত রক্ত কণিকায় A এবং B নামক দুই ধরনের এন্টিজেন থাকে এবং রক্তরসে a ও b এর দুই ধরনের এন্টিবডি থাকে। এই এন্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্তকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হয়। আর একেই ব্লাড গ্রুপ বলে। বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০১ সালে মানুষের রক্তের শ্রেণীবিন্যাস করেন। A, B, AB ও O এই চারটি গ্রুপে তিনি রক্তের গ্রুপের নামকরণ করেন।
যার রক্তের লোহিত কণিকায় A অ্যান্টিজেন থাকে ও রক্তরসে b অ্যান্টিবডি থাকে তার রক্তকে A রক্তের গ্রুপ বলে। আর যার রক্তের লোহিত কনিকায় B অ্যান্টিজেন থাকে ও রক্তরসে a অ্যান্টিবডি থাকে তার রক্তকে B রক্তের গ্রুপ বলে। আর যার রক্তে A ও B দুটি অ্যান্টিজেনই থাকে কিন্তু কোন অ্যান্টিবডি থাকে না তার রক্তের গ্রুপকে AB রক্তের গ্রুপ বলে। আর যার রক্তে দুটো অ্যান্টিজেনের একটাও থাকে না তবে দুটো অ্যান্টিবডিই থাকে তবে তার রক্তের গ্রুপকে O রক্তের গ্রুপ বলে।
সাধারণভাবে কোনো মানুষের রক্তের গ্রুপ জীবনেও পরিবর্তন হয় না। ভুল রক্ত মানুষের শরীরে প্রবেশ করালে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। তাই সঠিক রক্ত কিভাবে দিতে হয় তা জানব ইনশাআল্লাহ।
A রক্তের গ্রুপ A ও AB গ্রুপকে রক্ত দান করতে পারবে এবং A ও O গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে।
B রক্তের গ্রুপ B ও AB গ্রুপকে রক্ত দান করতে পারবে এবং B ও O গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে।
AB রক্তের গ্রুপ AB গ্রুপকে রক্ত দান করতে পারবে এবং A, B, AB ও O গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে। তাই এ গ্রুপকে সর্বজনীন রক্ত গ্রহীতা গ্রুপ বলা হয়।
O রক্তের গ্রুপ A, B, AB ও O গ্রুপকে রক্ত দান করতে পারবে এবং O গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে। তাই O গ্রুপ কে সর্বজনীন রক্তদাতা হিসেবে পরিচিত দেওয়া হয়।
কিছু কিছু মানুষের রক্তে আরও একটা অ্যান্টিজেন থাকতে পারে যার নাম হচ্ছে রেসাস (Rh) ফ্যাক্টর। কারো রক্তে এই ফ্যাক্টর উপস্থিত থাকলে তাকে বলে পজেটিভ আর না থাকলে বলে নেগেটিভ। একথা বলার কারণ হচ্ছে, পজেটিভ গ্রুপের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপেকে দেওয়া যাবে না কিন্তু নেগেটিভ রক্ত পজেটিভ গ্রুপেকে দেয়া যাবে। অর্থাৎ স্পষ্ট কথা হচ্ছে রক্তের গ্রুপের অ্যান্টিজেন মিলে গেলে অথবা যে রক্তের গ্রুপে অ্যান্টিজেন নেই তা যে কোনো অ্যান্টিজেন ওয়ালা রক্তের গ্রুপে দেওয়া যাবে।
মানুষের রক্ত শুধু মানুষের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেয় না। এই রক্ত মানুষের আচারণ গত বৈশিষ্ট্যের ও কথা বলে। মানুষের কি কি দোষ গুন আছে তা রক্তের গ্রুপ বলে দেয়। এসব গুনাগুন বিজ্ঞানের গবেষণার ফসল। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। জাপান এবং দক্ষিন কোরিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে মানুষের স্বভাব সম্পর্কে জানতে তার রক্তের গ্রুপ জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া হয়। তো বন্ধুরা চলুন জেনে নিই কোন রক্তের গ্রুপের মানুষের কি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।
রক্ততঞ্চনের ইংরেজি শব্দ Blood Clotting। শরীরের কোন অংশে কেটে গেলে যেভাবে রক্ত জমাট বাধে তার পুরো প্রক্রিয়াকে রক্ত তঞ্চন বলে। যে পদ্ধতিতে আঘাত প্রাপ্ত জায়গা থেকে বের হওয়া রক্তের রক্তরস থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ক্ষতস্থানে ফাইব্রিনের জালক সৃষ্টি করে রক্ত বের হওয়া বন্ধ করে এবং রক্তের বাদবাকি অংশ পিন্ডে পরিনত হয় তাকে রক্ত তঞ্চন বলে।
রক্ত বাহিকার ভিতরে জমাট বাধতে পারে না কারণ সেখানে হেপারিন থাকে। কিন্তু যেখানে কেটে যায় সেখানে অনুচক্রিকা বাতাসের সংস্পর্শে ভেঙ্গে যায় এবং ক্ষতের মুখে রক্ত জমাট বাধায় এবং রক্ত বের হওয়া বন্ধ হয়। প্লাজমায় থাকা ১৩ টি ক্লটিং ফেক্টর রক্ত জমাট বাধতে অংশ গ্রহন করে। এর মধ্যে ৪ টি ক্লটিং ফেক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথা- ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, থ্রম্বোপ্লাস্টিন ও Ca+ +। এসবের ধারাবাহিক কাজে ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাধে।
ক্ষতস্থানে বাতাসের সসংস্পর্শে অণুচক্রিকা ভেঙ্গে যায় এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক ক্লটিং ফেক্টর উৎপন্ন হয়। থ্রম্বোপ্লাস্টিন রক্তে থাকা হেপারিন কে অকেজো বানায়। রক্তরসের ক্যালসিয়াম আয়ন প্রথ্রম্বিন কে সক্রিয় থ্রম্বিন এনজাইম উৎপন্ন করে।
থ্রম্বিন রক্তের ফাইব্রিনোজেনের সাথে মিলিত হয়ে ফাইব্রিনের সুতা তৈরি করে যা মিলিত হয়ে জালক সৃষ্টি করে। আর এ জালক এতটাই সুক্ষ হয় যে এতে লোহিত কণিকা আটকে যায় ফলে রক্ত পরা বন্ধ হয়। তারপর যে রস বের হয় তাকে সিরাম বলে এবং এটা মুলত রক্তরস তবে এতে কিছু কিছু উপাদান থাকেনা।
কেমন লাগল আজকেই এই টিউনটি তা অবশ্যই জানাবেন। এই টিউন পড়ে আপনার কি মনে হয় তা অবশ্যই টিউমেন্টে আমাকে জানবেন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত সুস্থ থাকুন। আমাদের বর্তমান সময়ে যে করোণার ঝুকি বেশি তাই এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন। কারণ আপনার আমার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।