রিসেন্ট ক্লিয়ার করা উচিৎ নয় যে কারনে!! (আইওএস)

স্মার্টফোনে আমরা সবাই কমবেশি মাল্টিটাস্কিং করি। কিভাবে করি সেটা নিশ্চই আর বলে দিতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় আমরা অনেকেই জানি না যে এন্ড্রয়েড আর আইফোনের মাল্টিটাস্কিংয়ের পদ্ধতিগত মিল থাকলেও পুরো ব্যাপারটা আকাশ-পাতাল তফাত আছে। এটা জানানোই আমার আজকের টিউনের মূল বিষয়বস্তু। আমি নিজে প্রায় এক সপ্তাহ টেস্ট করার পরই টিউনটি লিখতে বসেছি। সুতরাং আমি আন্দাজে বলছি এমনটা ভাবার কোন কারন নেই।

 

[বিঃদ্রঃ এখানে এন্ড্রয়েড বা আইওএস কোনটাকেই ছোট করে দেখা হয়নাই। দুটোই ভিন্ন ধরনের জিনিস, তুলনা করার প্রশ্নই আসে না। টিউনটি যেহেতু আইওএস রিলেটেড তাই তার সম্পর্কেই বলা হয়েছে। বলে রাখা ভালো আমার রুট-রম-জেইলব্রেক সম্পর্কে ভালোই ধারনা আছে :P]

 

মাল্টিটাস্কিংকি এ সম্পর্কে বিস্তারিত নতুন করে বলার মত আর কিছু নাই। তবুও টিউনের পুর্নতার সার্থে কিছু কথা না বললেই নয়। আমরা সবাই জানি একসাথে একাধিক অ্যাপ/প্রসেস ব্যবহার করার নামই মাল্টিটাস্কিং। এন্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেমেই মাল্টিটাস্কিং করা যায়। অনেকেরই ধারনা শুধু একটিমাত্র উইন্ডোতে একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করলেই মাল্টিটাস্কিং হয়! আপনার ধারনা ভুল। খেয়াল করে দেখবেন হোম বাটন প্রেস কর কোন অ্যাপ স্ক্রিন থেকে চলে গেলেও ব্যাগ্রাউন্ডে রানিং অবস্থায় থাকে। এভাবে একাধিক এপ একসাথে ব্যবহার করা হলেই তাকে মাল্টিটাস্কিং বলা যায়।

 

স্মার্টফোন ব্যবহারকরি সবাই একটা কমন কাজ নিয়মিত করি যে ফোনটা ব্যবহারের পর আঙ্গুল উপরে সোয়াপ করে রিসেন্ট টাস্কগুলো ক্লিয়ার করি অথবা Clear All প্রেস করি। আমি নিশ্চিত এই কাজটা আপনি আপনার আত্নিয়-স্বজন, বন্ধুদের কাছে শিখেছেন এবং নিয়মিত করেনও। এটা করা অবশ্যই আমি সমর্থন করি যদি আপনি এন্ড্রয়েড ব্যবহার করেন। কিন্তু যদি আইফোন ব্যবহার করেন তাহলে এই টাস্ক ক্লিয়ার করার কাজটা শুধু সময় নস্ট ছাড়া আর কিছুই না।

 

stop recebt clearing

 

[এটুকু পড়ার পর আপনি এই মুহুর্তে আমাকে গালি দিচ্ছেন আর ট্যাবটা ক্লোজ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। গালিটা নাহয় কিছুক্ষনের জন্য মুলতবি রেখে পুরোটা পড়ে নিন]

 

জ্বী ঠিকই সুনেছেন সময় নস্ট ছাড়া আর কিছু না। এটা কেবলআমিই বলছি তাও না বড়ং এপল ডেভেলপাররাও তাই বলেন। আমি নিজে এপলের সাপোর্ট ফোরামে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েই এখানে টিউন করছি। আপনি যখন কোন অ্যাপ ওপেন করেন তখন সেটার কিছু অংশ র‍্যামে চলে আসে যাতে অ্যাপ টা স্মুথলি রান করতে পারে। এই র‍্যামে লোড হওয়ার সময়টায় প্রসেসর সবচেয়ে বেশি কাজ করে। আপনি যখন রিসেন্ট টাস্ক ক্লিয়ার করে দেন তখন র‍্যামে লোড হওয়া ডাটা মুছে যায়। ফলে পরেরবার আবার অ্যাপটা চালু করার সময় আবারো র‍্যামে লোড করতে প্রসেসরকে দ্বিগুন কাজ করতে হয়। সময়ও বেশি লাগে। তখনই ব্যাটারির অনেকটা অংশ খরচ হয়ে যায়। একটা অ্যাপ একবার লোড হতে চার্জ খরচের পরিমানটা এক পার্সেন্টের অনেক কম বলে এম্নিতে বুঝা যায় না। কিন্তু ততটুকু চার্জে অ্যাপটা অনেক্ষন ব্যবহার করা যেত। এভাবে প্রতিবার চালু করতে দ্বিগুন...তিনগুন...চারগুন...কাজ করতে হয়। বার বার লোড করার ফলাফল হিসেবে আপনার চার্জ দ্রুত ফুরাতে থাকে। কিন্ত যদি এমন হয় রিসেন্ট টাস্ক থেকে উপরে সোয়াপ না করেই লক বাটন টিপে ডিসপ্লে বন্ধ করে দেই তাহলে অনেকটা চার্জ শাস্রয় হবে। তার মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি আইফোনে ঘন ঘন রিসেন্ট ক্লিয়ার করলে অ্যাপ প্রতিবার ওপেন করতেই ব্যাটারির প্রচুর চার্জ খরচ হয়ে যায়। মোট পরিমানটা কত বেশি একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।

 

এখন অনেকেরই প্রশ্ন জাগতে পারে, র‍্যামে অ্যাপটা লোডেড অবস্থায় স্লিপ মুডে রাখলেও তো ব্যাগ্রাউন্ডে চালুই থাকলো। তাহলে লাভ হলো কি?!
** আপনার ধারনা ভুল। আইওএস ওপারেটিং সিস্টেম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেটা র‍্যাম/প্রসেসর অপ্টিমাইজেশনেও অনেক স্মার্ট। কোন এপ যখন র‍্যামে লোডেড অবস্থায় স্লিপ মুডে (ডিস্প্লে অফ অবস্থায়) থাকে তখন র‍্যামের কোন চার্জের প্রয়োজন হয় না। আর প্রসেসর তখন স্টেন্ডবাই মুডে থাকে (কিছু ব্যাতিক্রম আছে, পরে বলছি)। শুধু কোন রানিং টাস্ক যেমন ডাউনলোড/সেন্ডিং/নোটিফিকেশন এই টাইপের কাজগুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত কিছুক্ষন পর পর এক চোখ খুলে চেক করে আবার ঘুমিয়ে যায়। এই কাজটা এম্নিতেও রিসেন্ট ক্লিয়ার করে দিলেও সে করবেই।

 

আমি বুঝাতে চাইছি রিসেন্ট ক্লিয়ার করলেও যে যে চার্জ খরচ হতো- তা না করে সরাসরি ডিসপ্লে অফ করলেও একই চার্জ খরচ হবে। কিন্তু টাস্ক ক্লিয়ার করলে এটাই সমস্যা যে পরেরবার কোন অ্যাপ লোড করার সময়ই অনেকটা চার্জ সে হজম করে ফেলবে। সেক্ষেত্রে টাস্ক না ক্লিয়ার না করাই ভালো না?? এতে লোড হওয়ার চার্জটুকুও বেঁচে যাবে আবার অ্যাপটাও খুব দ্রুত চালু হবে।

 

এখন আরেকটা প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে, একটা অ্যাপ যখন র‍্যামে রেখে দেবো তখন আরেকটা বেশি র‍্যাম-হাঙরি অ্যাপ চালু করলে ফোন তো ল্যাগ করবে। এর খুব সহজ ব্যাখ্যা আগেই দিয়েছি। আইওএস আসলেই খুব স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম। তার যখন বেশি র‍্যাম প্রয়োজন হবে তখন সাইলেন্টলি র‍্যাম থেকে আগের টাস্কগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী খালি করে নেয়। একারনেই র‍্যাম কম হলেও এন্ড্রয়েডের চেয়ে আইওএসে হ্যাং/ল্যাগ সমস্যা নেই বললেই চলে। তবে কিছু ফল্টি অ্যাপ যেমন ফেসবুক/ম্যাসেঞ্জার এই এপগুলাতে খুব বেশি প্রায়োরিটি দেয়ার কারনে এই আপগুলাকে মাঝে মাঝে অপ্টিমাইজ করতে কস্ট হয়। ফেসবুক কতৃপক্ষ নিজেরাও স্বীকার করেছে এই বিষয়টা এবং এই বাগ দূর করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া জিপিএস (লোকেশন) অন থাকলেও ব্যাগ্রাউন্ডে অফ করতে পারে না। এটাকে সেটিং থেকে অফ করে দেয়াই ভালো

 

এতো অপ্টিমাইজেশন থাকা স্বত্তেও হাতে গোনা অল্প কয়েকটা এপ আছে এই নিয়মগুলা মানতে চায় না। এছাড়া নানা কারনে কখনো ল্যাগ করতেই পারে। সেক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি টাস্কটা ক্লিয়ার করে দেয়ার প্রয়োজন হতেই পারে। তবে নিয়মিত ঘন ঘন টাস্ক ক্লিয়ার করার অভ্যাস দূর করতে পারলে অনেকটা ব্যাটারী শাস্রয় হবে। নিজেরা চেষ্টা করেই আমার সাথে একমত হবেন বলে আমার বিশ্বাস...

 

এবার ছোট্ট একটা এসাইনমেন্ট দেই। নিজে করে দেখবেনঃ

*যে কোন অ্যাাপ ওপেন করুন।

*হোম বাটন প্রেস করে এভাবে আরো কয়েকটা অ্যাাপ ওপেন করুন। (টাস্ক ক্লিয়ার করবেন না)

*ফোনটা বন্ধ করে আবার চালু করুন।

*হোম বাটনে পরপর দুইবার প্রেস করুন

কিছু বুঝলেন????

 

 

বানানে ভুল এবং গুরুচন্ডালী দোষ থেকে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এছাড়া কোন জিজ্ঞাসা থাকলে নিচের টিউমেন্ট বক্স এবং ফেসবুক খোলা আছে

ফেসবুকে আমি : http://facebook.com/darkrotbd

Level 2

আমি তাল মিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 74 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আর এন্ড্রয়েড এর ক্ষেত্রে কি রিসেন্ট টাস্ট ক্লিয়ার করা উচিত সবসময় ?

    এন্ড্রয়েডে টাস্ক না ক্লিয়ার করলে ফোন একটু ফাস্ট কাজ করবে। তবে টাস্ক ক্লিয়ার করতে আপনি বাধ্য হবেন। ক্লিয়ার করে রাখলেও হ্যাং থেকে বাঁচা যায় না, না করা তো দূরের কথা। কারন হচ্ছেঃ

    গুগলের রিলিজ করা এন্ড্রয়েডকে ফোন ব্র্যান্ডগুলা নিজেদের মত কাস্টমাইজ করে নেয়। এত শত শত ব্র্যান্ডের শত শত মডেলের হার্ডওয়্যারের সাথে সফটওয়্যারের পারফেক্ট ম্যাচ হয় না। তাছাড়া এন্ড্রয়েড সবসময় ফোনের লুক আর ফিচারের দিকেই বেশি নজর দেয়। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে নতুন ভার্শন রিলিজ হলে ব্র্যান্ডগুলা রাতারাতি ফোন বের করার প্রবনতায় ভোগে