যে ৬ টি কারণে ডার্ক ওয়েব আপনার এড়িয়ে চলা উচিত

টিউন বিভাগ ইন্টারনেট
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 7
২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা

ইতোমধ্যে আমরা হয়তো ডার্ক ওয়েব শব্দটির সাথে পরিচিত হয়েছি। কারণ আমি এর আগের টিউনটিতে ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা উল্লেখ করেছিলাম। তো, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে এত কিছু শোনার পর, আমাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো এই ওয়েবসাইটটিতে ঘুরে আসার কৌতূহল জাগছে। কিন্তু যেমনটা আমি আপনাদেরকে বলেছিলাম যে, ডার্ক ওয়েব হল ডিপ ওয়েবের সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা বা বিপজ্জনক জায়গা।

তো, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন ওয়েব পেইজে বিচরণ করা উচিত নয়। কারণ এখানে সর্বদাই অপরাধ মূলক কার্যক্রম চলতে থাকে। যেকোনো সময় কারো না কারো শিকারে পরিণত হতে পারেন। আজ আমি আমার এই টিউনটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি যে, কেন আমাদের ডার্ক ওয়েব এড়িয়ে চলা উচিত?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন গুলোর একটা বড় সোর্স হচ্ছে ডার্ক ওয়েব। ইন্টারনেটের সারফেস অঞ্চলে অর্থাৎ আমাদের নিয়মিত ইন্টারনেটে যে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন গুলো পাওয়া যায় না, এমন ইনফরমেশন গুলোও ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়।

কিন্তু, শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন এর খাতিরে আমরা ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস নিতে পারিনা। কারণ ডার্ক ওয়েবে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন এর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য অবাঞ্ছিত বিষয়, যা আপনাকে নিমিষেই বিপদে ফেলতে পারে।

সুতরাং বিপদ এড়াতে ডার্ক ওয়েব এড়িয়ে চলা অপরিহার্য। মোট কথা হচ্ছে, ডার্ক ওয়েবে রয়েছে অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর কন্টেন্ট যা অত্যন্ত অবৈধ এবং বিপদ এড়াতে ইহা এড়িয়ে চলাই উত্তম। সাবধান করা সত্ত্বেও যদি আপনি ডার্কওয়েবে বিচরণ করতে চান, তাহলে কী কী ভয়াবহ ঘটনা আপনার সাথে ঘটতে পারে, তা স্পষ্ট ভাবে জেনে নিই এই টিউনটির মাধ্যমে।

১. ক্রিপ্টো স্ক্যামস

আমরা হয়তো অনেকেই বিটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে জানি। আর এটাও জানি যে এসব মুদ্রা ধরা বা ছোঁয়া যায় না শুধুমাত্র লেনদেন করা যায়। তো এসব ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো গুলোর ক্ষেত্রে স্ক্যাম করাই মূলত ক্রিপ্টো স্ক্যামস। অর্থাৎ এসব ইন্টারনেট মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে ধোঁকা দেওয়াই মূলত ক্রিপ্টো স্ক্যামস।

ক্রিপ্টো কারেন্সি গুলো ডার্ক ওয়েবে জনপ্রিয় হওয়ার একমাত্র কারণ ইহা লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন ডিটেইলস প্রদান করে না। এবং যাদের মধ্যে লেনদেন হচ্ছে তাদের পরিচয় ও প্রকাশ পায় না। ফলে এক্ষেত্রে ধোঁকা দেওয়া সহজ হয়। আর যেহেতু বেশির ভাগ অবৈধ কাজের জন্য ক্রিপ্টোতে লেনদেন হয়, তাই আইনি সেবা নেয়ার ও সুযোগ নেই।

আপনি যদি একজন নিউজ পাঠক বা নিউজ শ্রোতা হয়ে থাকেন, অর্থাৎ প্রতিদিনের খবরাখবর গুলো দেখে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে ক্রিপ্টো স্ক্যামের ঘটনাগুলো আমাদের রেগুলার ইন্টারনেটেও ছড়িয়ে পরেছে। তো এসব ক্রিপ্টো স্ক্যামের ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায়, ফেসবুক ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ক্রিপ্টো রিলেটেড অ্যাড গুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে, বেশ কিছুদিন ক্রিপ্টো অ্যাড গুলোর উপর ব্যান থাকলেও, বর্তমানে ফেসবুক ক্রিপ্টো অ্যাড গুলোর উপর থেকে ব্যান আংশিকভাবে তুলে নিয়েছে।

তো, আমাদের রেগুলার ইন্টারনেটে ক্রিপ্টো স্ক্যামের ঘটনা যদি এমন হয়, তাহলে ডার্ক ওয়েবে ক্রিপ্টো স্ক্যামের ঘটনা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা আপনিই এবার বুঝে নিন। সাধারণত স্ক্যামাররা বেশ কিছু কলা কৌশল অবলম্বন করে ক্রিপ্টো স্ক্যাম করে থাকে। আর এ ক্রিপ্টো স্ক্যামের পরিমাণ রেগুলার ইন্টারনেটের তুলনায় ডার্ক ওয়েবে অনেকটাই বেশি।

কারণ ডার্ক ওয়েবে ব্যক্তি অ্যানোনিমাস ভাবে স্ক্যাম করে থাকে। আর, যেহেতু ডার্ক ওয়েবে আইপি অ্যাড্রেস জানা সহজ নয়, ফলে তাদের ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর রেগুলার ইন্টারনেটে স্ক্যাম করলে ব্যান খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই রেগুলার ইন্টারনেটে ক্রিপ্টো স্ক্যাম এর ঘটনা গুলো একটু কম দেখা যায়।

২. এক্সিট স্ক্যামস

ডার্ক ওয়েব থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে, যখন একজন বিক্রেতা প্রডাক্ট দেয়া বন্ধ করে দেয় কিন্তু অর্ডার এবং টাকা নিতে থাকে, তখন তাকে এক্সিট স্ক্যাম বলে। যেহেতু ডার্ক ওয়েবে সেল হওয়া আইটেমগুলো (যেমন- বন্দুক, মাদকদ্রব্য) সর্বদাই অবৈধ হয়ে থাকে এবং এখানে বিটকয়েন বা বিট কয়েনের মতো অন্যান্য ক্রিপ্টো-কারেন্সিতে লেনদেন হয়, তাই ক্রেতার পক্ষে প্রোডাক্ট গুলো পাওয়া বা টাকা ব্যাক নেয়া সম্ভব হয় না।

আর যেহেতু এখানে ক্রেতা বিক্রেতা এবং প্রোডাক্ট সবই অবৈধ, তাই তারা আইনের সহযোগিতাও নিতে পারে না। ডার্ক ওয়েবে বেশ কিছু বিখ্যাত এক্সিট স্ক্যামের নজির রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালের অলিম্পাস মার্কেট এবং এম্পায়ার এবং ২০১৫ সালের ইভোলিউশন ডার্কনেট মার্কেট এর ঘটনা।

নেক্সট ট্রেড লিমিটেড কোম্পানির অধীনের একটি মার্কেট হলো অলিম্পাস মার্কেট। এটি বুলগেরিয়ার সদর দপ্তরে অবস্থিত। এটি নতুন ওয়েবসাইট ব্যবসায়ীদের জন্য চিত্তাকর্ষক সার্ভিস প্রদান করতো। কিছুদিন হলো এই ওয়েবসাইটের মালিকরা একটি স্ক্যাম করে এবং ব্যবসায়ীদের অর্থ চুরি করে এবং ওয়েবসাইট থেকে প্রস্থান করে অর্থাৎ অফলাইনে চলে যায়।

ইভোলিউশন ছিলো একটি ডার্কনেট মার্কেট যা টর নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিলো। ভার্টো নামক একজন ব্যক্তি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বাজারটিকে অনলাইনে অর্থাৎ ওয়েবসাইটে নিয়ে আসে। বিভিন্ন আইনি ঝামেলার কারণে, বাজারটি কিছুদিন পর অফলাইনে চলে যায়। যাবার সময় মালিকরা ১২ মিলিয়ন ডলার এর সমপরিমাণ বিটকয়েন Escrow থেকে নিয়ে যায়। এ রকম এক্সিট স্ক্যাম এর ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। আর এসব থামানোর প্রচেষ্টা এক এর পর এক ব্যর্থ হচ্ছে।

৩. ডার্ক ওয়েব এ প্রতারণা

আমরা হয়তো ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে থাকব যে, ডার্ক ওয়েব মানে যত প্রকারের অবৈধ কার্যক্রম। আসলে ডার্ক ওয়েব প্রতারণায় পরিপূর্ণ একটি ইন্টারনেট জগত। এই ওয়েবসাইটের সবাই আপনাকে ঠকিয়ে টাকা বা অর্থ নিতে চায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল যে, কিভাবে আপনাকে কোন কিছু না দিয়ে, আপনার কাছ থেকে আপনার সমস্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়।

এখানে ক্রিয়েটিভ মানুষের অভাব নেই এবং তারা প্রতারণা করার জন্য বেশ কয়েকটি ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। আর এসব ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি গুলোর কোনটি কখন কার উপড়ে এসে পড়বে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।

আপনি কী কখনো Red Room শব্দটি শুনেছেন? এই Red-room সম্পর্কে জানলে, দুনিয়াতে কত রকমের নিকৃষ্ট চিন্তাধারার মানুষ রয়েছে তা জানতে পারবেন। এখানে কিছু Psycho ক্রিমিনাল রয়েছে যারা আসলে ওয়েবেসাইটে Live Show প্রদর্শন করে। এবং কিছু Psycho দর্শকও রয়েছে, যারা টাকা দিয়ে এসব নিকৃষ্টতম Show গুলো দেখে থাকে। এসব Live Show তে প্রতিদিন কোন না কোন প্রাণী অথবা মানুষকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। যেমন- কোন Psycho দর্শক যদি ১ লক্ষ টাকা দিয়ে বলে যে, এই লোকটির চোখ দুটো তুলে নাও, তাহলে তাই লাইভ দেখানো হয় এই লাইভ Show গুলোতে।

প্রতিদিনের লাইভ Show তে ইউনিক ও নিকৃষ্টতম দৃশ্য দেখানো হয়। যেমন- কোন কোন দিন এখানে লাইভ ধর্ষণের চিত্র দেখানো হয় বা কোন কোন দিন এখানে লাইভ খুন করার দৃশ্য দেখানো হয়। তাহলে একবার ভাবুন কতটা ভয়াবহ আসলে এই রেড রুম। কী লেভেলের নিকৃষ্ট চিন্তা ধারার মানুষ এই Show-তে অংশগ্রহণ করে আর কতোটা মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলে এ রকম Show পরিবেশন করা যায়, তা ভেবে ঠিক করা যায় না।

আর ডার্ক ওয়েবের এসব তথ্য গুলো কোনটিই ফেইক নয়। তবে এসব নিয়ে আমরা ভুল করেও গবেষণা করতে যাব না। কারণ যে কোন মুহূর্তে বিপদে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যারা ডার্ক ওয়েবের নিয়মিত ইউজার তাদের হিসাবটা একটু আলাদা। ডার্ক ওয়েবে দক্ষরা সর্বোত্তম উপায়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় অর্থাৎ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য সর্বদা সহজ পথ বেছে নেয়।

আগস্ট ২০১৫ সালের একটা বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে একটু বলি। সেখানে ৭ জন ISIS কে বন্দী করা হয়। এবং তাদের নির্যাতন করার লাইভ Show দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। দর্শকরাও একটা ইন্টার-অ্যাক্টিভ চ্যাট এর মাধ্যমে Show টি দেখবে। Reddit ও 4chan এর চারপাশে বেশ আলোচনা চলছিলো। Show টি শুরু হবার তিন মিনিট পূর্বে ওয়েবসাইটি কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এবং প্রায় আধঘণ্টা পরে কানেকশন দেয় এবং দর্শকদের অংশ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানায়।

যখন ওয়েবসাইটে সোর্স ফুটেজ আপলোড করা হয় তখন, প্রতিবার অত্যাচারের পূর্বে মানুষের পাশাপাশি ক্যামেরাও নিস্তব্ধ হয়ে যায়। FBI আজো এসব সন্দেহভাজন অপরাধীদের পিছনে বোকার মতো ঘুরছে, কিন্তু আসল অপরাধীকে খুঁজে পাওয়ার কোন সুত্র তারা এখনো খুঁজে পায় নি।

ডার্ক ওয়েবের সাইবার অপরাধীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যেমন -কেউ যদি ডার্ক ওয়েবে একজন হিটম্যান ভাড়া করতে চায় খুন করার জন্য অথবা অবৈধ অস্ত্র কিনতে চায় বা অবৈধ মাদকদ্রব্য কিনতে চায় তাহলে সে ডার্ক ওয়েবে যায়। যখনই সে কোন ক্রিমিনাল কে নক দেয়, তখনই সে আসলে নিজেই ফেঁসে যায়।

অর্থাৎ হিটম্যান, অবৈধ অস্ত্র, মাদক দ্রব্য ইত্যাদি পাওয়া তো দূরের কথা, ফাঁদে পা দিয়ে নিজের পকেট খালি করে ফেলে এবং ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হয়। কিন্তু ব্যক্তিটি যদি অভিজ্ঞ হয়ে থাকে বা নিজেও একজন ভয়ানক সাইবার ক্রিমিনাল হয়ে থাকে তবে, সেক্ষেত্রে সেটা অন্য বিষয়। আপনি যদি কখনো এরকম কোন অবৈধ সুযোগের উদ্দেশ্য নিয়ে ডার্ক ওয়েবে যান, তাহলে আপনারও পকেট ফাঁকা হতে সময় লাগবে না। আর কী লেভেল এর ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন যে হবেন, তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।

৪. সন্ত্রাসবাদ

ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় সন্ত্রাসরাও প্রযুক্তি কে কাজে লাগাচ্ছে। বর্তমান সময়ে তারা ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েবে ভীর জমিয়েছে। অর্থাৎ, ডার্ক ওয়েবে সন্ত্রাসবাদ এর বিস্তৃতি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সন্ত্রাসবাদ দমনের উদ্দেশ্যে এখানে সন্ত্রাস বিরোধী টিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সন্ত্রাসীদের নিকৃষ্টতম কার্যক্রম গুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সন্ত্রাস গোষ্ঠীগুলো যাতে করে তাদের নিকৃষ্টতম কার্যক্রম গুলো সংযত করে, সেজন্য সন্ত্রাস-বিরোধী টিম বেশ কয়টি উদাহরণ দাড় করিয়েছে।

ডার্ক ওয়েবের কিছু ওয়েবসাইট অরিজিনাল আবার কিছু কিছু ওয়েবসাইট ফেইক। আবার কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো প্রতারণায় পূর্ণ এবং ISIS কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এগুলোর মধ্যে অপারেশন অ্যানিমোউস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এমন একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে, আমরা এটা জানতে পারি যে আল-হায়াত নামক একটি মিডিয়া সেন্টার রয়েছে যা ISIS এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। এর ফলে তারা একটা নতুন ডার্ক সাইট তৈরি করে। এবং সেই সাথে তারা রেগুলার ইন্টারনেটেও একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে। এবং এই রেগুলার ওয়েবসাইটটিতে কিভাবে ঐ ডার্ক সাইটে অ্যাক্সেস নিতে হয় তার স্পষ্ট নির্দেশনা গুলো দেওয়া হচ্ছিলো।

Rawti Shax হল কুর্দিশ জিহাদি গোষ্ঠী যা মূলত আনসার আল-ইসলামের একটি শাখা মাত্র। ২০১৫ সালের অক্টোবরে এদের উপস্থিতি একটি ডার্ক ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।

সময়কাল ২০১৫ এর দিকে, অর্থাৎ প্যারিসে আক্রমণের পর পরই, একদল বেনামী হ্যাক্টিভিস্ট ISIS এর একটি ওয়েবসাইটে কন্ট্রোল নিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে একটি প্রোজ্যাক বিজ্ঞাপণ দিয়ে সাইটটিকে প্রতিস্থাপন করে তারা। এখানে প্রোজ্যাক এক ধরনের মেডিসিন এর নাম।

৫. অবৈধ পর্নোগ্রাফি

ডার্ক ওয়েবে অপরাধ মূলক কার্যক্রম গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অবৈধ কার্যক্রম হল অবৈধ পর্নোগ্রাফি। বর্তমান সময়ে ডার্ক ওয়েবে অবৈধ পর্নোগ্রাফির পরিধি বিশাল। দিন যত যাচ্ছে পর্ণ চিত্রের পরিমাণ ডার্ক ওয়েবসাইটে বা রেগুলার ওয়েবসাইটে তত বাড়ছে। কিন্তু সবচেয়ে আলোচিত এবং বিভ্রান্তিকর একটা ঘটনা, যেটাকে বলা হচ্ছে শিশু পর্নোগ্রাফি বা শিশু নির্যাতন।

আর এটা ডার্ক ওয়েবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়তই। শিশু পর্নোগ্রাফি বর্তমান সময়ে এক ধরনের গুরুতর অপরাধ। এবং অনেক দেশেই এই অপরাধ করার জন্য শাস্তির আইন তৈরি করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে শিশুদের উপর মানসিকভাবে খুব খারাপ প্রভাব পরে।

একটা অপরিণত মেয়েকে রেফ করা, বোঝাই যাচ্ছে এটা কতটা নিকৃষ্টতম কাজ। যারা এ ধরনের পর্ণ তৈরি করে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা তো চলছে অনেক আগে থেকেই। বিভিন্ন ধরনের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং সরকার এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করছে।

যারা আসলে ইন্টারনেট বেনামী ভাবে ব্যবহার করে অর্থাৎ যাদের আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া যায় না এমন কোন ব্যক্তি, ডার্ক ওয়েবসাইটে এসব পর্নোচিত্র গুলো আপলোড করে। যেহেতু তাদের মনে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি পাওয়ার ভয় নেই, তাই এ কাজের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সময়কাল ২০১৫ এর দিকে FBI ম্যালওয়্যার, এক্সপ্লোইট ইন অ্যাডোবি ফ্লাশ এবং নানা ধরনের হ্যাকিং কৌশল ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েব সাইটের একটি বিশাল শিশু পর্ণ সাইট বন্ধ করে দেয়।

তারা মূলত ক্যারোলিনা সার্ভার হ্যাক করে এবং পর্যবেক্ষণ করে এবং এটি বন্ধ করার আগে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে এবং শেষ পর্যন্ত প্রায় এক হাজারের ও বেশি সংখ্যক কম্পিউটারের সাথে কম্প্রোমাইজ মাইজ করে এবং তিন জনকে গ্রেপ্তার করে।

FBI তাদের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা যেভাবে আদালতে দাখিল করেছেঃ

তাদের বর্ণনা অনুসারে, ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ ২০১৫ এর মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি একজন ইউজার হিসেবে, যখনই তার নাম ও পাসওয়ার্ড লিখে ওয়েবসাইট A তে লগইন করবে, তখনই FBI এর NIT টুলটি ইউজারের কম্পিউটারে এক বা একাধিক ম্যাসেজ পাঠাবে। এখানে NIT এর পূর্ণরূপ Network Investigative Tool। অর্থাৎ এটি নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে তদন্ত করে থাকে বা নেটওয়ার্ক সিস্টেমে তদন্ত করে।

কম্পিউটারে গুলোর কমিউনিকেশন এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছিলো যে, সকল গ্রহীতা কম্পিউটারকে এমন একটি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে যে কম্পিউটারে সরকারি বিভিন্ন ডেটা রয়েছে। এবং এই কম্পিউটার, ওয়েবসাইট A তে লগইন কারী ইউজার কম্পিউটার গুলোর অবস্থান, কম্পিউটার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও ওয়েবসাইট A তে অ্যাক্সেস কারী ইউজারকে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে।

এই কমিউনিকেশনের আওতাভুক্ত কম্পিউটার গুলোর IP অ্যাড্রেস, ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেসের তারিখ ও সময় NIT টুলস এর মাধ্যমে জেনে নেয়া যাবে। NIT এর মাধ্যমে কম্পিউটারের বিভিন্ন ইউনিক সংখ্যা, অক্ষর অথবা অন্যান্য কম্পিউটারে কী ধরনের ডেটা রয়েছে, কম্পিউটারে কোন অপারেটিং সিস্টেম রান করছে এবং কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেমের ভার্সন কী ইত্যাদিও সহজেই জানা যাবে।

NIT তদন্তের মাধ্যমে, কম্পিউটারটিতে ইতোপূর্বে NIT দেওয়া হয়েছে কিনা তাও জানা যাবে। কম্পিউটারের হোস্ট এর নাম জেনে নেওয়া যাবে এবং কম্পিউটারে কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে তাও জানতে পারা যাবে। এছাড়াও ঐ কম্পিউটারের MAC অ্যাড্রেসও খুঁজে বের করা যাবে।

কিন্তু বর্তমানে শুধু শিশু পর্নোগ্রাফিই একমাত্র সমস্যা নয়। আরেকটা বিশেষ ধরনের ধরনের পর্নোগ্রাফি রয়েছে যা বর্তমান সময়ে অনেক বড় একটি সমস্যা। এটাকে বলা হচ্ছে রিভেঞ্জ পর্নোগ্রাফি।

যেকোনো ক্ষতির প্রতিশোধ হিসেবে, মেয়েদের কিডন্যাপ করে রেফ এবং সেই সাথে ভিডিও চিত্র ধারণ করে এ ধরনের পর্ণ-চিত্র তৈরি করা হয়। তাদের সম্মতি ছাড়াই এসব আবার বিভিন্ন বেনামী ওয়েবসাইটে হোস্ট করা হয়। এটিও বর্তমান সময়ে বিশাল একটি সমস্যা। এ ধরনের পর্ণ থামানোর জন্য, পর্ণ তৈরি করে যারা তাদের সাথে প্রতিনিয়তই লড়াই চলছে।

৬. ফিশিং স্ক্যামস

আপনারা কী ফিশিং সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন? ফিশিং কী? কিভাবে ফিশিং আক্রমণ করা হয়? টেনশনের কোন দরকার নাই। আমি আজ আপনাদেরকে জানাবো ফিশিং কী, কীভানে ফিশিং আক্রমণ গুলো করা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফিশিং হল এক ধরনের সাইবার আক্রমণ যা হ্যাকার বা সাইবার ক্রিমিনালদের অন্যতম একটি হাতিয়ার। আমাদের কাছে প্রতিনিয়তই কোন না কোন ট্রাস্টে-ড ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন ইমেইল আসে বা লিংক আসে। যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, জিমেইল ও ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি। যেসব লিংক আমরা সবাই সবসময় অ্যাক্সেস করে আমাদের কাজটি সম্পন্ন করি।

ফিশিং প্রক্রিয়ায়, এরকমই কোন না কোন ট্রাস্টে-ড ওয়েবসাইট থেকে ইমেইল বা লিংক আসবে। কিন্তু এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটি ট্রাস্টে-ড ওয়েবসাইটের কপি বা নকল ওয়েবসাইট অর্থাৎ প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৈরি ওয়েবসাইট। একজন নরমাল ইউজার হিসেবে আপনি লিংকটিতে ক্লিক করবেন এবং তারপর লগি-ইন করবেন। তারপর আর কী? আপনার সমস্ত ইনফরমেশন হ্যাকারের হাতে। তো, এটাই হচ্ছে ফিশিং অ্যাটাক বা ফিশিং স্ক্যামস।

আমাদের রেগুলার ইন্টারনেটে ফিশিং এর পরিমাণ তুলনামূলক কম ডার্ক ইন্টারনেটের তুলনায়। কারণ আমরা সকলেই জানি যে, ডার্ক ওয়েব আসলে সাইবার ক্রিমিনাল বা হ্যাকারদের আবাসস্থল। রেগুলার ইন্টারনেটে ফিশিং স্ক্যাম কীভাবে হয় তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। আর এ ব্যাপারটা নিশ্চিত যে, আপনি যদি টেকনোলজি সম্পর্কে কম অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন অর্থাৎ কম জেনে থাকেন তাহলে ফিশিং স্ক্যাম নামক ফাঁদে আপনার পা পড়বেই।

ডার্ক ওয়েবে অনেক দক্ষ হ্যাকার থাকার কারণে, সেখানে খুবই জটিল প্রকৃতির ফিশিং লিংক তৈরি করা হয়। ফলে সেখানে একজন সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, একজন অভিজ্ঞ মানুষও সেই ফিশিং আক্রমণের শিকার হয়। উদাহরণ হিসাবে Duckduckgo ফিশিং স্ক্যাম ২০১৬ এর উদাহরণ টি দেয়া যায়।

অরিজিনাল ওয়েবসাইটের.onion ডোমেন দেখতে যেমন ছিলোঃ

http://3g2upl4pq6kufc4m.onion/

ফেইক ওয়েবসাইটের.onion ফিশিং ডোমেন দেখতে যেমন ছিলোঃ

http://3g2up5afx6n5miu4.onion/

যখন আপনি ব্রাউজ করছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে কোনটি আসল লিংক এবং কোনটি নকল লিংক তা বেছে নিতে পারবেন কী? আমার দৃঢ় বিশ্বাস উত্তর অবশ্যই না হবে। আর আসল-নকল চিনে নিতে না পারার মানেই ফিশিং এর শিকার হওয়া।

ফিশিং ওয়েবসাইট গুলো, কেবল মাত্র অরিজিনাল ওয়েবসাইটের নকলই তৈরি করছে না, বরং তারা অরিজিনাল ওয়েবসাইটকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করছে। আর এসব ফিশিং আক্রমণের ফলে ফেইক সাইটের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করছে অথবা তথ্য গুলো পরিবর্তন করে নষ্ট করছে। আর এভাবেই তারা ওয়েবসাইট এর ভিতরে Man in the Middle আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

ডার্ক ওয়েবের সব জায়গা খারাপ নয়

ডার্ক ওয়েবে প্রতিনিয়ত যেমন বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বা অপরাধ মূলক কার্যক্রম চলছে, ঠিক তেমনি সেখান থেকে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন গুলো নিতে পারি। অর্থাৎ যে ডেটা গুলো আসলে রেগুলার ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না, সেসব এই ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়।

বর্তমানে পৃথিবীতে ডার্ক ওয়েব ভয়ঙ্কর ভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই টিউনের উপরিউক্ত আলোচনা গুলো পড়ে ডার্ক ওয়েব যে কতটুকু খ্যাতি অর্জন করেছে তা নিশ্চয়ই বুঝেছেন। অনলাইন একাউন্ট গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই বিষয় গুলো সম্পর্কে বেশি বেশি আর্টিকেল লেখা উচিত। মূল কথা হচ্ছে, ডার্ক ওয়েবে খারাপ জিনিস গুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ভালো ওয়েবসাইট ও রয়েছে এবং সেগুলো সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে।

অর্থাৎ, জানতে হবে যে এসব কোথায় এবং কীভাবে খুঁজতে হয়। ডার্ক ওয়েবের ভালো সাইট বা মজাদার সাইটগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের টেকটিউনস এর আর্টিকেল গুলো পড়তে থাকুন। ডার্ক ওয়েবে ব্রাউজ করার জন্য, সেরা ব্রাউজার সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমি আপনাদেরকে জানিয়েছি। সুতরাং আগামীতে ডার্ক ওয়েবের মজাদার ওয়েবসাইট গুলো নিয়ে শীঘ্রই টিউন নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।

তো বন্ধুরা, এই ছিলো আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। আজকের মতো এ পর্যন্তই। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এক টিউনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Level 7

আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস