আমরা দিন দিন ইন্টারনেট এর সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি। এখন ইন্টারনেট যেন ঠিক অক্সিজেন এর মতো। প্রতিদিন ইউটিউব, ফেসবুক, অনলাইন গেম ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট সহ আরো নানা মাধ্যমে বিচরণই যেন আমাদের জীবন। অর্থাৎ, ইন্টারনেট থেকে প্রায় সব জিনিসই আমরা আহরণ করি বা অন্বেষণ করে থাকি।
কিন্তু, আপনি কী জানেন, আমরা প্রতিদিন যতটুকু ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, তা মোট ইন্টারনেট এর মাত্র ৪-১০%? আপনি কী কখনো ডার্ক ওয়েব শব্দটি শুনেছেন? ডিপ ওয়েব কী বলতে পারবেন?
আমার মনে হয় না ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আপনার সুস্পষ্ট ধারণা আছে। ডিপ ওয়েব কী তাও হয়তো বলতে পারবেন না। খুব অল্প সংখ্যক লোক এসব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তাও আবার খুবই সীমিত। অর্থাৎ, ডার্ক নেট বা ডিপ ওয়েব সম্পর্কে জানে, এমন লোকের সংখ্যা সম্ভবত অনেক অল্প।
আসলে আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তা, মোট ইন্টারনেটের খুব অল্প অংশই। অর্থাৎ, আমাদের সামনে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিন গুলো, মাত্র ৪-১০% ওয়েবসাইট বা তথ্য উপস্থাপন করতে পারে। আর, বাদবাকি ৯০% ইন্টারনেট বা তথ্য বা ওয়েবসাইট যাই বলুন না কেন তা, ইন্টারনেটের অনেক গভীরে লুকায়িত থাকে। আর এই ৯০% অংশ নিয়ে গঠিত ইন্টারনেটই হচ্ছে ডিপ ওয়েব।
আর এই ডিপ ওয়েবেরই একটা বিশেষ অংশ হলো ডার্ক ওয়েব বা ডার্ক ইন্টারনেট বা ডার্ক নেট। আর এটা হলো ইন্টারনেটের এমন এক অন্ধকার জগৎ যেখানে যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। আর এখানে লুকায়িত আছে হাজারো রহস্য। আর এখানে রয়েছে পদে পদে বিপদ। সাইবার ক্রিমিনালস রা এখানে ভীড় জমায়। তাই এটি থেকে সাবধান। এই টিউনে উপরিউক্ত প্রশ্ন গুলোর স্পষ্ট আলোচনা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
সমস্ত সাইবার জগতকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম হলো সারফেস ওয়েব, দ্বিতীয় হলো ডিপ ওয়েব এবং তৃতীয় হলো ডার্ক ওয়েব। সারফেস ওয়েবে আমরা ইন্টারনেট এর যেকোন ডেটা কে সরাসরি অর্থাৎ প্রচলিত যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করতে পারি। আর এসব ইনফরমেশন বা ওয়েবসাইট এর URL ও সহজলভ্য। ডেটা পড়তে বা দেখার জন্য কোন রকম পাসওয়ার্ড বা অ্যাকাউন্ট তৈরির প্রয়োজন পরে না। আমরা সহজেই যে কোন ব্রাউজার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সারফেস অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারি। প্রয়োজনীয় টুলস বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে পারি।
দ্বিতীয় অংশটিকে বলা হয়ে থাকে ডিপ ওয়েব যা ইন্টারনেট এর বড় অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এখানে সাধারণ কোন ওয়েব ব্রাউজার বা সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে অ্যাক্সেস পাওয়া যায় না। ডিপ ওয়েবের ওয়েব পেইজ গুলোতে অ্যাক্সেস পেতে নির্দিষ্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড লাগে। এখানে ব্যক্তিগত, কোম্পানিগত ও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঞ্চয় থাকে।
এখানে আপনি খুব সহজেই অ্যাক্সেস নিতে পারবেন, যদি আপনার কাছে নির্দিষ্ট অ্যাক্সেস লিংক, নির্দিষ্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড থেকে থাকে। যেমন- আমার গুগল ড্রাইভে আমি আমার ছবি রেখেছি এবং এটাকে শুধু আমিই দেখতে পারবো, কেননা নির্দিষ্ট জিমেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড একমাত্র আমার কাছেই আছে। কিন্তু আমি যদি চাই তবে, আমার অ্যাক্সেস লিংকটা অন্যের কাছে শেয়ার দিতে পারব। ফলে, যার কাছে শেয়ার দেব সেও দেখতে পারবে ছবিটা। যাই হোক, এটা একদম ভিন্ন একটা টপিক।
আমরা যখন কোন কিছু গুগল সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধান করি তখন, আমরা কেবল মাত্র ইন্টারনেট এর সারফেস অঞ্চলের ইনফরমেশন বা ডেটা গুলো দেখতে পাই। অর্থাৎ সারফেস অঞ্চলে যতটুকু তথ্য দেওয়া আছে আমরা শুধু ততোটুকুরই অ্যাক্সেস করতে পারি। বাদবাকি অংশ আমাদের নাগালের অনেক বাহিরে থাকে।
অনুসন্ধানের জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিনে একটি বিশেষ সফটওয়্যার কাজ করে, যাকে ওয়েব ক্রলার সফটওয়্যার বলে। একে অনেক সময় স্পাইডারসও বলে। এটা সার্চ কৃত কীওয়ার্ড গুলো কে, গুগলের বিভিন্ন ওয়েব পেইজের সাথে মিলিয়ে নেয়। কীওয়ার্ড গুলো যে ওয়েবপেইজ গুলোর সাথে মিলে যায়, সেগুলো ধারবাহিক ভাবে সাজিয়ে গুগল একটি সূচীপত্র প্রদর্শন করে। এখানে অবশ্যই ওয়েব স্ক্রলার ইন্টারনেটের সারফেস অঞ্চল স্ক্যান করে এবং সাজানো গোছানো সুচীপত্র দিয়ে থাকে।
এই সফটওয়্যার প্রথমে কীওয়ার্ড গুলোকে ওয়েবপেইজ এ খোঁজে এবং তারপর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং পরিশেষে ওয়েবপেইজ এ প্রদর্শিত লিংক গুলোর ওয়েব পৃষ্ঠা গুলোকেও স্ক্যান করে। এ প্রক্রিয়া সুন্দর ফলাফল বা ক্যাটালগ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। তো যাই হোক, মূল কথা হচ্ছে ক্রলার সফটওয়্যার ডিপ ওয়েবের জায়গা গুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারে না। কারণ সবার কাছে নির্দিষ্ট অ্যাক্সেস লিংক, আইডি ও পাসওয়ার্ড থাকে না।
প্রশ্ন- আমি যদি আমার বন্ধু রাচিত এর গুগল ড্রাইভের ফটো গুলো দেখতে চাই এবং গুগল সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে সার্চ করি যে, "রাচিতের গুগল ড্রাইভের ফটোগুলো দেখাও" তাহলে কী আমি তার গুগল ড্রাইভের ফটো গুলো দেখতে পারব?
উত্তর আমরা সবাই জানি, তা হলো অবশ্যই না। কারণ, আমার কাছে রাচিতের জিমেইল আইডি নেই, এবং পাসওয়ার্ড ও নেই এবং সেই সাথে নির্দিষ্ট অ্যাক্সেস লিংক ও নেই। এখানে রাচিতের গুগল ড্রাইভের ফটো গুলো ডিপ ওয়েব এর অন্তর্ভুক্ত। শুধু রাচিতের জন্য না এটা সবার ক্ষেত্রেই। পার্সোনাল ডেটাগুলো ইন্টারনেটে সঞ্চিত হলে সেগুলো ডিপ ওয়েবের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এবার তাহলে নিশ্চয় বুঝেছেন যে, কেন ইন্টারনেটের ৯০% জগতই ডিপ ওয়েবের আওতাভুক্ত। আমরা প্রত্যেকেই প্রতিদিন ডিপ ওয়েব ব্যবহার করছি। কারণ আমাদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে, প্রবেশ করতে নির্দিষ্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড লাগে। আর এসব আইডি ও পাসওয়ার্ড ডিপ ওয়েবের সার্ভারে সঞ্চিত হয়।
আর, ইন্টারনেট জগতের তৃতীয় অংশ হলো ডার্ক ওয়েব যা মূলত ডিপ ওয়েবেরই একটা ক্ষুদ্র অংশ। আর এটাই মূলত ইন্টারনেটের এর অবৈধ অংশ। কারণ, এখানে সব কাজ অবৈধ ভাবে হয়ে থাকে। এখানে আপনি আপনার নরমাল ওয়েব ব্রাউজার দ্বারা অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। আর এখানে প্রবেশের জন্য আপনার নির্দিষ্ট URL লাগবে যা খুঁজে পাওয়া একটু টাফ।
তাহলে আপনি কী জানেন যে, ইন্টারনেট এর এই গভীর অংশে মূলত কী আছে? এখানে কী মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়? এখানে কী অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়? মার্ডার কী এখানে থেকে মানুষ ভাড়া করে করা হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে, টিউনের সঙ্গে থাকুন।
মার্ডার, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য এগুলো কে আপত্তিকর শোনালেও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে এগুলোও করা সম্ভব। duckduckgo onion forbidden ব্রাউজারে মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস নিয়ে এসব কাজ সহজেই করা যায়। মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় ও খুন করার জন্য হিটম্যান ভাড়া করা ইত্যাদি ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে করা হয়। আর ডার্ক ওয়েব মূলত ডিপ ওয়েবেরই একটা ক্ষুদ্র অংশ।
ডিপ ওয়েবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সহ সমস্থ ব্যক্তিগত তথ্য ও উপাত্ত সঞ্চিত থাকে। ডিপ ওয়েব মূলত এক ধরনের ডাটাবেইজ চালিত ওয়েব সাইট এবং লগ-ইন পৃষ্ঠার পূর্বের ওয়েব পেইজ গুলোও ডিপ ওয়েবের অংশ। কোন সার্চ কৃত কীওয়ার্ড এর ফলাফল হিসেবে ডিপ ওয়েবের তথ্য প্রকাশিত হয় না।
সারফেস ওয়েব থেকে তথ্য বা ওয়েব পেইজ গুলো সূচীবদ্ধ হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত SEO (Search Engine Optimizers) ব্যবহার করা হয় না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আপনার সকল ব্যক্তিগত ডেটা, যা অনালাইনের বিভিন্ন জায়গায় সঞ্চিত, তা আপনি সত্যিই সিকিউর ভাবতে পারেন। কারণ এটা অ্যাক্সেস করার জন্য আপনার কাছে একটি আইডি ও একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড রয়েছে। যদি এটি অন্য কেউ অ্যাক্সেস করতে চায় তবে তা, তার জন্যে সত্যিই অনেক কঠিন হবে। আর এসব ব্যক্তিগত সমস্ত তত্ত্ব ডিপ ওয়েবের আওতাভুক্ত।
ডার্ক ওয়েবের সূচনা হয় আনুমানিক ভাবে ইন্টারনেট এর সৃষ্টির সময়কালে। অর্থাৎ ডার্ক ওয়েব অনেকটাই প্রাচীন সময়ের। তবে এই ডার্ক ওয়েব জনপ্রিয়তা অর্জন করে বর্তমান সময়ে। ১৯৬৯ সালে আমেরিকার DOD (Department of Defence) বাহিনী যখন ARPANET ডেভেলপ করে, তখনই ডার্ক ওয়েবের ভিত্তি গঠিত হয়।
ARPANET এর পূর্ণরূপ হলো Advanced Research Projects Agency Network। এটা এমন একটা নেটওয়ার্ক যা পরবর্তীতে ইন্টারনেট এর মেরুদন্ডে পরিণত হয়। তবে, ARPANET কিন্তু ডার্ক ওয়েব নয়। কিন্তু এর কনসেপ্ট ডার্ক ওয়েবের কনসেপ্ট এর সাথে হুবুহু মিলে যায়, আর তা হলো, লোকেদের ইনফরমেশন গুলোকে গোপন করা।
ডিপ ওয়েবের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ হলো ডার্ক ওয়েব যেখানে ব্যবহার কারী বেনামী ভাবে বিচরণ করে। এখানে আপনি চাইলেই যেকোন ব্রাউজার দ্বারা অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। তবে এক্ষেত্রে আপনি duckduckgo onion forbidden সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করতে পারেন, যদি আপনি অ্যাক্সেস নিতে চান।
ডিপ ওয়েব খুব ভালোভাবেই সিকিউর করা ইন্টারনেট এর জগত এবং এখানে প্রবেশ করতে আপনার বেশ কিছু সময় লাগতে পারে। কারণ এখানে আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার এর বিষয় রয়েছে।
লতবে, ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে চাইলে আমদেরকে Tor ব্যবহার করতে হবে। কারণ এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ সহজ এবং এটি সম্পুর্ণ বিনামুল্যে পরিষেবা প্রদান করে। Tor এ ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিনের নাম হলো duckduckgo onion forbidden। Tor একজন ব্যবহারকারীকে বেনামী রেখে ওয়েবসাইট গুলোলে অ্যাক্সেস করে থাকে।
একজন ইউজার যেভাবে নিজেকে বেনামী রাখে-
ডার্ক ওয়েবে সম্পর্কে এতোকিছু শোনার পর আমাদের অনেকেরই ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের ইচ্ছা জাগে। ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস নেওয়া খুবই সহজ। তবে, আমি আপনাদেরকে এখানে প্রবেশের জন্য সুপারিশ করবো না।
কেননা, এখানে মাদক দ্রব কেনা বেচা, অবৈধ অস্ত্র, মার্ডার ও শিশু পর্ণগ্রাফীর মতো নানা ধরনের অবৈধ কার্যক্রম গুলো সর্বদা চলছে। তো যেকোন মূহুর্তে যেকোনো বিপদে আপনিও পরতে পারেন। (আমি এবং টেকটিউনস কারো কার্যক্রম এর জন্য দ্বায় ভার নিবো না এবং এটি শুধুমাত্র শিক্ষাগত ও তথ্যগত উদ্দেশ্যে)
ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে চাইলে, প্রথমেই আপনাকে Tor ব্রাউজার ডাউনলোড করতে হবে। এটি খুব সহজেই প্লে স্টোর এ পেয়ে যাবেন। কম্পিউটারের জন্য হলে ওয়েব ব্রাউজার থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন। টর ব্রাউজারও Microsoft edge ও গুগলের মতো ব্রাউজিং পরিষেবা প্রদান করে। তবে এটি এর সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে duckduckgo onion forbidden ব্যবহার করে। আমরা যখন গুগলে কোন কিছু সার্চ করি তখন সাধারণত.com, .org, .tech, .bd, .in ইত্যাদি ডোমেইন নেইম দ্বারা ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস হয়।
কিন্তু, যদি Tor ব্রাউজার ব্যবহার করি সেক্ষেত্রে ডোমেইন নেইম.onion হয়। যেমন - facebook.onion, youtube.onion ইত্যাদি। আর এই ডোমেইন নেইম এর ওয়েবসাইট গুলো আপনি অন্য কোন ব্রাউজার যেমন- ক্রোম, ওপেরা, ফায়ারফক্স ইত্যাদি দ্বারা অ্যাক্সেস করতে পারবেন না।
আপনি চাইলে ডার্ক ওয়েব একটা ওয়েবসাইট ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নিতে পারবেন। তবে তা সেখানে হ্যাকারদের কারণে বা সাইবার অপরাধীদের কারণে আপনার ওয়েবসাইট কতক্ষন ভালো থাকবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। হয়তো ঘন্টা খানেকের মধ্যেই হ্যাকিং এর স্বীকার হবেন। এবং কোন না কোন হ্যাকার হ্যাক করে আপনাকে বিপদে ফেলবে।
Tor ডাউনলোড এর পরে কৌতুহলী ব্যবহার কারীরা অন্যান্য ডার্ক ওয়েবসাইট লিংক খুঁজে পেতে Hidden wiki ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ব্যবহার কারী নিজেকে বেনামী রাখে এবং ধর্মীও ভাবে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করে। স্পষ্ট ভাবে বলতে চাইলে, ডার্ক ওয়েব সাইটের অধিকাংশ লিংক Hidden wiki তে সূচীবদ্ধ থাকে। ফলে বিশেষ বিশেষ ডার্ক ওয়েব সাইট এর নির্দিষ্ট লিংক আর কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হয় না।
Tor আসলে একটি ওয়েব ব্রাউজার যার সার্চ ইঞ্জিন মূলত duckduckgo onion forbidden। এবং এটিকে বর্তমানে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের প্রবেশেদ্বার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়।
Tor মূলত বিভিন্ন ধরনের ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে, কিন্ত এই সেবা গুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ব্যবহার কারীর জন্য। ইন্টারনেট এ ব্লাক মার্কেট এর মতো এমন কিছু পরিষেবা আছে, যেখানে প্রতিনিয়ত মাদকদ্রব্য কেনা বেচা, অবৈধ অস্ত্র কেনা বেচা, মার্ডার করার জন্য ব্যক্তি হায়ার করা, কিডন্যাপিং ও দেহ ব্যবসা ইত্যাদি নানা কার্যক্রম চলছে। এরকম একটি ব্লাক মার্কেট এর উদাহরণ হিসেবে "সিল্ক রোড'' এর কথা বলা যায়।
সিল্ক রোড থেকে আপনি হ্যাকার বা সরাইবার ক্রিমিনালও ভাড়া করতে পারবেন অবৈধ কাজ করার জন্য। এখানে মাদকদ্রব্য কেনা বেচা হয়। অবৈধ অস্ত্র ও কেনা বেচা হয়। এমনকি যারা মানুষের মাংস খায় তারা, কিভাবে মানুষকে কাঁটবে এবং কোন অংশ কিভাবে রান্না করবে তা সরাসরি দেখানো হতো এই ওয়েব সাইটে। তাহলে ভাবুন কতোটা ভয়াবহ এই ডার্ক ওয়েব।
FBI এর কার্যক্রমে, এই সিল্ক রোড নামক অবৈধ বাজারটি বন্ধ হয়ে যায় কিছু দিন পূর্বে। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সিল্ক রোড এর বিকল্প হিসেবে আরো বেশ কয়টি বাজার তৈরি হয়েছে।
এই ডার্ক ওয়েবে আরেকটি ভয়াবহ জায়গা হলো Red Rooms। এখানে লাইভ Show দেখানো হতো। আর এসব Show তে কোন মেয়েকে কিডন্যাপ করে টাকার বিনিময়ে তাকে টর্চার করা হয়। যারা Show দেখতো তারা টাকা দিতো এবং বলতো মেয়েটির আঙুল কেটে দাও। আর লোকটি তাই করতো।
টাকা দিতো আর বলতো মেয়েটির তলপেটে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করো। লোকটি তাই করতো। আর আগে থেকেই মেয়েটির ভোকাল বের করে নেয়া থাকে। ফলে মেয়েটি চিৎকার ও করতে পারে না। এবং সবশেষে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়। তারপর আবার নতুন কোন মেয়ে বা নতুন কোন ব্যক্তি, আর এভাবে শুরু হয় পরবর্তী Show। তাহলে ভাবুন একজন মানুষকে কতটা নির্মম অত্যাচার করা যেতে পারে। অর্থাৎ এটা মূলত সাইকোদের আনন্দের উৎস। ভাবুন, কতটা মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলে মানুষ এরকম পর্যায়ে যায়?
যাদেরকে সেখানে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয়, তারা হয়তো আমাদেরই মাঝে থেকে হাড়িয়ে যাওয়া নিখোঁজ কেউ।
ডার্ক নেট এ অর্থনৈতিক লেনদেন এর জন্য তারা "বিটকয়েন'' ব্যবহার করে। বিট কয়েন ধরা যায় না ছোয়া যায় না। তবে এটি এখন খুবই দামী, অথচ অনেক আগে এর একটা টাকা মুল্যও ছিলো না। পরিষ্কার ভাবে বলতে চাইলে এটি একটি ওপেন সোর্স ক্রিপ্টো-কারেন্সি। এই ডিজিটাল টাকা বা অর্থের উপর কোন সেন্ট্রাল ব্যাংক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
এই ডিজিটাল মানি কোন চার্জ ছাড়াই এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক একাউন্ট এ ট্রান্সফার হয়। আর এ বিট কয়েন লেনদেনের সময় কোন প্রামাণ্য থাকে না অর্থাৎ এখানে ব্যক্তি পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। এ কারণেই বিটকয়েন অবৈধ লেনদেনের একমাত্র উপায়। ব্যাংক এ লেনদেনে তো পরিচয় প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।
সুতরাং, বিটকয়েন হলো ডিজিটাল মুদ্রা বা ইন্টারনেটের মুদ্রা যা ধরা যায় না ছোয়া যায় না। তবে কাজে লাগানো যায়। বর্তমানে এক বিট কয়েন মানে ২ লক্ষ টাকা (প্রায়)। বিট কয়েন মূলত ভার্চুয়াল মানি যা ডার্ক ওয়েবে কেনা-বেচা বা অবৈধ কার্যক্রম চালানোর রাস্তা খুলে দিয়েছে। বিট কয়েন আর Tor ব্রাউজার Dark web এর প্রশস্ততা বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা যায় এগুলো ডার্ক ওয়েবের এক একটা ডানা।
Tor বর্তমানে ডার্ক নেট জগতে প্রবেশের একটা দরজা মাত্র। এখানে ক্রিমিনালসরা বেশি প্রবেশ করে থাকে। Tor একটি অবৈধ কার্যকলাপের প্রবেশদ্বার হওয়ার সত্ত্বেও, প্রাইভেসি দেয় এমন প্রবক্তারা Tor এর মতো প্রোগ্রামকে স্বীকৃতি দিয়েছে অর্থাৎ ডিপ ওয়েবে টরকে সু-স্বাগতম জানিয়েছে। টরকে ডিপ ওয়েবের আওতাভুক্ত রাখতে সরকারি সংস্থা NSA (National Security Agency) সম্মতি জানিয়েছে। এখন আপনারা হয়তো এবার নিশ্চয়ই বুঝেছেন যে, ডার্ক ওয়েব মূলত সরকারের ইশারাতেই চলে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডিপ ওয়েব বা ডার্ক নেট এ প্রবেশ করে এবং সেখানে ব্যবসা করে। আবার কিছু কিছু দেশ সেখানে প্রবেশ করে না কিন্তু ব্যাবসা করে। যেমন - পাকিস্তান। অর্থাৎ, এসব ক্ষেত্রে দেশ গুলো নিজেকে লুকিয়ে রাখে বা বেনামী রাখে। অর্থাৎ, তারা সেখানে নিজেদের প্রকাশ ঘটায় না কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই অবৈধ কাজ করে যায়। আর এভাবে তারা নিজেরা নিজেদের সিকিউরিটি বজায় রাখে বা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আবার কিছু কিছু দেশ এসব থেকে একেবারেই দূরে।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে অবশ্যই একটা জোসস দিবেন। আর মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। দেখা হচ্ছে পরবর্তী টিউনে। আল্লাহ হাফেজ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।