আপনার ব্লগ থেকে আয় করার চিন্তা করছেন? তাহলে আগে এটি পড়ুন!

ইন্টারনেটে ব্লগিং করা এখন কোটি কোটি মানুষের নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে এই লক্ষ-কোটি ব্লগারদের একেক জনের উদ্দেশ্য একেক রকম। এরা সবাই কিন্তু ব্লগিং করছেন। কেউ ওয়ার্ডপ্রেসে, কেউ ব্লগস্পটে, কেউ বা আবার জুমলায়। কেউ নিজস্ব হোস্টিং ও ডোমেইনে, কেউবা আবার ফ্রি-তেই সব মেরে দিচ্ছেন। সবার কাজ এক হলেও উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। আজ আমি আলোচনা করবো আপনার ব্লগের উদ্দেশ্য বা মোটিভেশন নিয়ে।

এমনও ব্লগার আছেন যারা ২৪ ঘণ্টার ২০ ঘণ্টাই ব্লগিংয়ের পেছনে ব্যয় করেন অথচ ব্লগ থেকে তাদের মাসিক আয় এক পয়সাও না। অন্যদিকে আরেক শ্রেণীর ব্লগার আছেন যারা চাকরীও করছেন আবার পার্ট টাইম ব্লগিংও করছেন। আর মাস শেষে ব্লগিংয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত টাকা গুনছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যতিক্রমটা কেন?

অনেকের ব্লগিং ভালো লাগে তাই ব্লগ করেন। অনেকে এ থেকে টাকা আয় করতে চান তাই ব্লগ লিখেন। আর অনেকে এক লাফে গাছে উঠতে চান, তাই কম্পিউটার আর ইন্টারনেট নিয়ে ব্লগ খুলেন।
এখন আমার প্রশ্ন হলো, আপনি কোন উপরের শ্রেণীতে পড়েন?

আমাদের দেশে “ঘরে বসে ইন্টারনেটে ডলার আয় করুন” নামের এক প্রকার রঙচটা বিজ্ঞাপনের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট আর ব্লগ থাকলেই কিন্তু আয় করা যায় না। আর দশটা আয়ের ধান্ধার মতোই ব্লগিংয়েও দিতে হয় প্রচুর সময়, শ্রম আর সাধনা। অন্যথায় আপনার ব্যর্থতার গ্যারান্টি দিতে পারি আমি।

এবারে আসুন মূল বিষয়ে আসি। আপনি ব্লগিং করে টাকা আয় করতে চান? তাহলে আমি প্রথমে একটি প্রশ্ন করবো আপনাকে। আপনি কি ব্লগ বা ব্লগিং ভালোবাসেন? (অবশ্যই আমি সামহোয়্যার ইন বা প্রথম আলো ব্লগের কথা বলছি না) যদি ব্লগিংয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য টাকা আয় করা হয়, তাহলে ব্যর্থতা আপনার জন্য সামনে অপেক্ষা করছে।

এবারে আসুন জেনে নেয়া যাক মূলমন্ত্রটি। সবাই সবকাজে ভালো করতে পারে না। আপনি যদি ব্লগিং করে টাকা আয় করার বদলে শুধু ব্লগিংকে ভালোবাসতে না পারেন, তাহলে এ পথ ছেড়ে দেয়াই আপনার জন্য উত্তম। শুধু শুধু শ্রমের অপচয় করে লাভ কী? তবে হ্যাঁ, আপনি যদি সত্যিকারের Passionate ব্লগার হয়ে থাকেন, ব্লগিংয়ের প্রতি, ব্লগের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার প্রতি আপনার যদি অশেষ আগ্রহ থাকে, তাহলে ব্লগিং করে টাকা আয়ের ধান্ধা করা আপনাকে সাজে।

পরিসংখ্যান করলে দেখতে পাবেন বাংলাদেশে মোট ব্লগারের সংখ্যার অনুপাতে সত্যিকারের সফল ব্লগার (যেমন জিন্নাত ভাই) এর সংখ্যা অত্যন্ত কম। এর কারণ কী জানেন? আমরা (বাঙালীরা) মজা করে সময় কাটাতে ভালোবাসি।

হ্যাঁ, আমি সামহোয়্যার ইন কিংবা প্রথম আলো ব্লগের কথাই বলছি। বাংলাদেশে কোনো ফুলটাইম ব্লগার নেই (আমার ধারণা)। সুতরাং, পড়ালেখা কিংবা চাকরী-বাকরীর ফাঁকেই আপনাকে ব্লগে সময় দিতে হয়। যদি সত্যি সত্যিই সাফল্যের মুখ দেখতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই ব্লগিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের সিংহভাগ “ইংরেজি ব্লগসমূহে” দিতে হবে। আমি বাংলা ব্লগিংয়ে নিরুৎসাহিত করছি না। অভ্যাস বদলে ফেলুন বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে, আপনাকে আরো অনেক অনেক অনেক বেশি সিরিয়াস হতে হবে ব্লগিংয়ে।

একটা কথা মনে রাখবেন। ব্লগিং হাজার হাজার মানুষের শখের কাজ হলেও যখন এর থেকে আপনি টাকা আয়ের চিন্তা-ভাবনা করবেন, তখন এটি আপনার ব্যবসা।

হ্যাঁ, ব্লগ একটি ব্যবসাকেন্দ্র; যার পেছনে আপনাকে দিতে হবে প্রচুর সময়, শ্রম, সাধনা, পরিকল্পনা এবং ধৈর্য্য। আজ ব্লগ খুলে তিন মাস পর যদি “টাকা আসে না কেন” এই প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনার ধৈর্য্য নেই। ব্লগিং আপনাকে দিয়ে হবে না।
তাহলে আসুন জেনে নিই এই ব্লগিং ব্যবসার পেছনে আপনাকে কোন কোন উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।

  • ব্লগকে সবসময় মাথায় রাখুন। আপনি যে বিষয়ের উপর ব্লগিং করছেন, সে বিষয়ের উপর যতবেশি সম্ভব স্টাডি করুন। চেষ্টা করুন আপনার ব্লগের পাঠকদের (যদি কেউ নাও থাকে, তবুও) নিত্যনতুন আপডেট উপহার দিতে।
  • ভুলেও নিজের একমাত্র ব্যক্তিগত ব্লগের উপর নির্ভরশীল হবেন না। আপনি কোনো সেলিব্রিটি নন যে মানুষ আপনার নিত্যদিনের ঘটনা পড়তে আগ্রহী হবে।
  • ব্লগ মার্কেটিংয়ে সর্বোচ্চ (utmost) ধৈর্য্যের পরিচয় দিন। যত বেশি সম্ভব প্রচার করুন আপনার ব্লগের। সোশাল মিডিয়া টুইটার এবং ফেসবুক এক্ষেত্রে আপনার বেশ উপকারে আসবে।
  • বাংলা ব্লগে প্রদত্ত সময় কমিয়ে ইংরেজি দুনিয়ায় প্রবেশ করুন। আমরা জোর করে বাংলা বাংলা বলে চিৎকার করলেও আপাতত কোনো লাভ হবে না। পৃথিবী এখনো ইংরেজির হাতেই। ইংরেজি দুনিয়া মানে আপনার ব্লগের নির্ধারিত টপিকের উপর অন্যান্য ব্লগগুলোও নিয়মিত পড়তে। এছাড়াও সেসব ব্লগারদের প্রতি ব্লগিং সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
  • যারা ইংরেজি ভালো জানেন না, তারা অবশ্যই ইংরেজি ব্লগ বেশি বেশি করে পড়ুন। তবে সর্বক্ষেত্রেই “ব্যক্তিগত ব্লগ” এড়িয়ে চলুন। কারণ, ব্যক্তিগত ব্লগে মানুষ যেভাবে খুশি সেভাবেই লিখে। নিয়ম-কানুনের পরোয়া করে না।
  • আর যদি ভালো ইংরেজি জেনেও থাকেন, তবুও ইংরেজি ব্লগগুলোতে বিচরণ (explore) করুন। মনে রাখবেন, ব্লগিং জগতেরও নিজস্ব কিছু ভাষা আছে। (বলতে পারবেন, btw বলতে কী বোঝায়?) এরকম অসংখ্য ব্লগিং ভাষার তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এগুলো বুঝলে আপনি আপনার লেখাকে অসাধারণ রূপ দিতে পারবেন। আর না বুঝলে আপনি হয়তো আপনার পাঠকের মন্তব্য বুঝতে ব্যর্থ হবেন। উদাহরণঃ আমার ব্লগের পাঠককে যদি আমি btw এর অর্থ জিজ্ঞেস করি, তিনি আমাকে একেবারে নতুন ব্লগার ভেবে  আর আমার ব্লগে আসতে উৎসাহ বোধ করবেন না।
  • একটা কথা মনে রাখবেন, সবাই আপনার ব্লগে আসবে নতুন কোনো তথ্যের জন্য। তাই মনে যা চাইলো তাই না লিখে পাঠকদের চাহিদার কথা মাথায় রাখুন।
  • লেখায় স্মার্টনেস এবং রসিকতা আনার চেষ্টা করুন। পাঠক যদি আপনার লেখায় উপকারী তথ্য পায়, তাহলে সে অবশ্যই আবার আসবে। আর যদি লেখা পড়ে একই সঙ্গে উপকৃত হয় আর মজাও পায়, তাহলে সে আপনার ব্লগের আরএসএস ফিডে নিশ্চিত সাবস্ক্রাইব করবে (নিয়মিত পাঠক হয়ে যাবে)।
  • আপনার ব্লগের একই টপিকের অন্যান্য ব্লগারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে আপনারই উপকার হবে। একই সঙ্গে অন্যের ব্লগে মন্তব্য করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

…এবং পড়ুন

যখন আপনি আন্তর্জাতিক ব্লগিং দুনিয়াতে প্রবেশ করেছেনই, আপনাকে এখন প্রচুর পড়তে হবে। ব্লগ ডিজাইন নিয়ে পড়তে হবে, ব্লগ কীভাবে আরো উন্নত ও জনপ্রিয় করা যায় এসব বিষয় জানতে হবে। আর এসবের জন্য বিখ্যাত সব রিসোর্স হলোঃ

আরো অসংখ্য রিসোর্সের খোঁজ পাবেন গুগলে সার্চ করলে। প্রথম প্রথম ইংরেজি পড়তে ভালো নাও লাগতে পারে। মনে রাখুন, আপনিও কিন্তু ইংরেজিতে ব্লগিং করছেন। বিখ্যাত সেসব ব্লগ পড়ার ফলে আপনি দু’দিক থেকে উপকৃত হচ্ছেন। এক, আপনি মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করা বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং এক নম্বর ব্লগারদের (Darren from ProBlogger, the world’s number one successful blog) দেয়া টিপস জানতে পারছেন। দুই, তাদের ইংরেজি লেখার ধরনও শিখতে পারছেন।

আশা করি উপরে বর্ণিত পরামর্শগুলো আপনাদের ব্লগিং ব্যবসায় কাজে লাগবে। কিছু কিছু কথা সোজাভাবে এবং খানিকটা উত্তেজিত ভাষায় বলার জন্য দুঃখিত। একটা ব্লগ খুলে বসলেই টাকা আসবে না। ব্লগ খুলবেন, আর ব্লগিং করবেন বাংলা কমিউনিটি ব্লগে, এমনটা হলে সাফল্যের আশা করা বৃথা। তাই নিজের অনলাইন বিহেভিয়রে পরিবর্তন আনুন। দেখবেন কীভাবে সবকিছু অনুকূলে চলে আসবে।
এভাবে বহুদিনের পরিশ্রম, সাধনা ও অধ্যবসায় আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। (তখন কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখবেন 🙂 )

সৌজন্যেঃ

ব্লগিং ওয়ার্ল্ড ২৪ (ব্লগিং এর নতুন দুনিয়া। আজকেই ভিজিট করুন আর আপনার প্রযুক্তির জ্ঞান বৃদ্ধি করুন)

ব্লগিং ওয়ার্ল্ড গ্রুপ (ব্লগ সম্পর্কিত যেকোনো হেল্প পাবেন এখানে। পাশাপাশি নিজের টিউন শেয়ার করে আপনার ব্লগ জনপ্রিয় করে তুলুন।)

ব্লগিং ওয়ার্ল্ড পেইজ (একটি লাইক দিয়েই ফেসবুকেই সমস্ত আপডেট পাবেন! এখনই লাইক দিন)

Level New

আমি প্রীতম চক্রবর্তী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 82 টি টিউন ও 155 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য ফ্রি লার্নিং প্ল্যাটফর্মঃ https://www.eduquarks.com


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

চমৎকার একটি টিউন।
My Blogger Lab এবং Blogger Yard ব্লগের কথা বাদ দিলে কিন্তু চলেনা। দুজন কিশোর অসাধারন এই দুটি ব্লগ চালাচ্ছে। ধন্যবাদ তথ্য সমৃদ্ধ এই টিউন উপহার দেয়ার জন্য।

dhonnobad onek sindor kore bolar jonno

Level 2

Cnet পড়লে হবে? অখানে অনেক ফ্রীল্যান্স ব্লগার আছে।

    @omi97: পড়তে পারেন। আপনি যেই বিষয়ের ওপরে ব্লগিং করতে চান সেই বিষয়ভিত্তিক ব্লগগুলো পড়েন। 🙂 ধন্নবাদ।

অসম্ভভ সুন্দর একটি টিউন।।আপনাকে অনেক ধন্ন্যবাদ।।