কোনো নতুন পিসি কিনতে গেলে বিশেষ করে ল্যাপটপ কেনার সময় এক্সপার্ট ইউজাররা যে বিষয়টি নিয়ে অলটাইম কনফিউশনের মধ্যে থাকেন সেটা হলো গ্রাফিক্স কার্ড নির্বাচন! কম্পিউটারের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স কার্ড কেনার সময় অত চিন্তা ভাবনা করা লাগে না কারণ মাদারবোর্ড সার্পোটেড যেকোনো গ্রাফিক্স কার্ড পরবর্তী সময়ে লাগিয়ে নেওয়া যায়।
কিন্তু ল্যাপটপ কেনার সময় ব্যাটারী ব্যাকআপ, ওজন, ডিসপ্লে সাইজ, র্যামের এর সাথে সাথে গ্রাফিক্স কার্ড এর ব্যাপারটিও গুরুর্ত্বের সাথে দেখতে হবে। কারণ ল্যাপটপে পরবর্তীতে আপনি এসব জিনিস পরিবর্তন করতে পারবেন না। ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ড কয়েক টাইপের থাকে যেগুলো আপনি ল্যাপটপ কেনার সময় প্রসপ্রেক্টাসে লেখা দেখতে পাবেন যেমন integrated, discrete, dedicated etc। এখানে কনফিউশন দূর করতে প্রথমেই একটি কথা বলে রাখি সেটা হলো Discrete এবং Dedicated এরা দুটোই একই অর্থ বহন করে।
তাই মূলত ল্যাপটপের গ্রাফিক্স কার্ড দুই রকমের হয়ে থাকে, একটি হলো Integrated এবং অপরটি হলো Dedicated গ্রাফিক্স কার্ড। আজকের এই ছোট টিউনে আমি আপনাদেরকে এই দুটি টাইপের গ্রাফিক্স কার্ডের পার্থক্যগুলো এবং দুটোরই বেটিফিট এবং সুযোগ সুবিধাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বিশেষ করে আপনি যদি গেমিং ল্যাপটপ কেনার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে গ্রাফিক্স কার্ডের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
তো চলুন ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনের মূল বিষয়বস্তুতে চলে যাই:
Integrated Graphics Processing Unit (GPU) নিয়ে প্রথমে কথা বলছি। ইন্টাগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো তাদের নিজেদের র্যাম ব্যবহার করে না, এরা মূলত আপনার সিস্টেম র্যামের উপর ভিক্তি করে তাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে থাকে। ধরুন আপনার পিসির ৪ গিগাবাইট র্যাম রয়েছে, এক্ষেত্রে এই ভিডিও কার্ডটি আপনার ফ্রি র্যামের ১ থেকে ৫ শতাংশ নিয়ে তার কাজ করবে। এই শতাংশগুলো আপনার কাজের উপর ভিক্তি করে অটোমেটিক্যালি নির্ধারিত হয়ে থাকে। যেমন ওর্য়াডে কাজ করার সময় কম ব্যবহৃত হবে অন্যদিকে গেমস খেলার সময় বা মাল্টিটাস্কিং করার ময় গ্রাফিক্সের দরকার হবে বেশি ইত্যাদি ভাবে এরা অটোমেটিক্যালি ব্যবহারের শতাংশটি নির্ধারণ করে থাকে।
ইন্টাগ্রেটেড গ্রাফিক্সের মূল সুবিধা হলো এটি দামে খুবই সস্তা! সস্তার ৩ অবস্থা আর কি! এছাড়াও অন্যান্য গ্রাফিক্সের তুলনায় ইন্টাগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড খুব কম হিট হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ ইউনিট খরচ করে। যেটা ল্যাপটপের দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফের জন্য পারফেক্ট। সাধারণত এই জাতীয় গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপগুলো সাধারণ কাজকর্ম যেমন ওর্য়াডে কাজ করা, নেট ব্রাউজ করা, মুভি দেখা কিংবা 2D গেমস খেলার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু মাল্টিটাস্কিং বা গেমিংয়ের জন্য এই গ্রাফিক্স কার্ডটি মোটেও উপযুক্ত নয়।
সাধারণত কমদামি ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারে আজকাল আমরা ইন্টাগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের ব্যবহার দেখতে পাই। ইন্টাগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ডযুক্ত কম্পিউটারগুলোকে দেখবেন গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে কোনো আলাদা ডিটেইলস লেখা থাকে না! অনেক সময় ল্যাপটপ কেনার সময় আমরা সেটার কনফিগারেশন লিস্টে গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে আলাদা কোনো লেখা দেখতে পাই না। কারণ সেখানে ইন্টাগ্রেটেড GPU থাকে তাই আলাদা করে কিছু লেখা থাকে না। অনেক সময় আমরা ভাবি ল্যাপটপে বুঝি GPU ই নেই! আসলে সেটা নয়!
ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলোতে তাদের নিজস্ব ভিডিও মেমোরি সিস্টেম দেওয়া থাকে। ল্যাপটপের ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো কম্পিউটারের গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর মতো হয়ে থাকে। এই গ্রাফিক্স কার্ড আপনার সিস্টেমের র্যামের উপর নির্ভর করে থাকে না। ধরুণ আপনার ল্যাপটপে ৮ গিগাবাইট র্যাম রয়েছে এবং একটি ২জিবির জিটিএক্স ৬৮০এম গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে। এখানে গ্রাফিক্স কার্ডটি তার ২ গিগাবাইট মেমোরি নিয়ে কাজ করবে, আপনার সিস্টেমের ৮ গিগারাইট র্যামটিকে ধরবে না। আপনি যদি প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে থাকেন বা সিরিয়াস টাইপের গেমার হয়ে থাকেন তাহলে ল্যাপটপ কেনার সময় এই ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডযুক্ত ল্যাপটপগুলোই আপনার জন্য পারফেক্ট হবে।
ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো ভালোভাবে পারফরমেন্স দেবার জন্য কয়েকটি বাহ্যিক জিনিসের উপর নির্ভর করে। প্রথমটি হচ্ছে পারফেক্ট ডিজাইন! ল্যাপটপের ডিজাইনের সাথে গ্রাফিক্সের ডিজাইন মিল থাকতে হবে। যেটার উপর আমাদের কোনো হাত নেই তাই এই ব্যাপারে আর কোনো কথা বাড়ালাম না। পরেরটি হচ্ছে ফ্যান! হ্যাঁ! এই ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড প্রচুর হিট খায় তাই ভালো মানের ফ্যান বা কুলিং সিস্টেম থাকতে হবে। বর্তমানের হাই এন্ড গ্রাফিক্স কার্ডগুলোতে ফ্যানের বদলে লিকুইড কুলিং সিস্টেম দেওয়া থাকে যেগুলো ফ্যানের থেকে নিশব্দে ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে। এছাড়াও আরেকটি বিষয়ে খেলার রাখতে হবে সেটি হলো এই ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো বেশ বিদ্যুৎ ইউনিট টেনে থাকে। তাই এই গ্রাফিক্স কার্ডযুক্ত ল্যাপটপগুলোতে চার্জ ব্যাকআপ আপনি ভালো পাবেন না তবে হাই এন্ড কনফিগারেশনের ল্যাপটপগুলোর কথা আলাদা। তো সবশেষে বলা যায় ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো মূলত দাম বেশিই হয়।
আপনি যদি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডযুক্ত মোটামুটি বাজেটের ল্যাপটপ নিতে চান তাহলে ল্যাপটপের ডিফল্ট কুলিং সিস্টেমের উপর নির্ভর থাকলে চলবে না। কমপক্ষে দুটি আলাদা ফ্যানের ব্যবস্থা করা সহ আলাদা ভেন্টযুক্ত কভার কিনে নিবেন। এবং হাই এন্ড ল্যাপটপ ছাড়া মিডিয়াম বা লো বাজেটের ল্যাপটপগুলোতে দরকার ছাড়া ব্যাটারিতে চালাবেন না। আর আপনি যদি ল্যাপটপে টাইপের কাজ বেশি করে থাকেন তাহলে আমি বলবো আপনি আলাদা একটি কিবোর্ড কিনে নিন। কারণ ল্যাপটপের কিবোর্ডে বেশিক্ষণ টাইপ করলে হাত ঘেমে ল্যাপটপ ভিজে যেতে পারে।
আজকাল কিছু কিছু হাইব্রিড ল্যাপটপও পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর গ্রাফিক্স কার্ড এই দুটি ধরণই সার্পোট করে। মানে যখন আপনি নরমাল কাজ করবেন তখন এটি Integrated মোডে থাকবে এবং যখন আপনি গেমস খেলবেন তখন এটি Dedicated মোডে কাজ করবে। আর এই সকল ডুয়াল মোডযুক্ত গ্রাফিক্স কার্ডওয়্যালা ল্যাপটপগুলোই এখনকার যুগে হাই এন্ড কনফিগারেশনের জন্যা আলাদা করে বানানো হচ্ছে। কারণ হাই এন্ড ল্যাপটপের ব্যাটারী লাইফ আর পারফরমেন্সের মধ্যে সমতা আনার জন্য এই জাতীয় ডুয়াল মোডওয়ালা গ্রাফিক্সেরই প্রয়োজন পড়ে।
তো আশা করবো আজকের বিষয়বস্তুটি আমি আপনাদেরকে কিছুটা হলেও বুঝাতে পেরেছি। হেভি কাজ করার জন্য ল্যাপটপ মোটেই কেনা উচিৎ নয়। হেভি গেমার বা গ্রাফিক্সের কাজ যারা করে তাদের জন্য ডেক্সটপের বিকল্প নেই। আজ তাহলে এ পর্যন্তই থাক। আগামীতে অন্যকোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সৌশল নেটওয়ার্ক টেকটিউনসে!
আর হ্যাঁ টিউন সম্পর্কে আপনি আপনার যেকোনো ধরনের মতামত নিচের টিউমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
All the best