ব্যাপারগুলো আসলে বেশ জটিল। আপনি সব রকমের আকর্ষণীয় ফিচার যুক্ত করলেন আপনার ফোনে। অথচ সে অনুযায়ী ব্যাটারি দিতে পারলেন না। গ্রাহক আপনার কোম্পানির ফোন কিনবে না। বরং আরো সমালোচনা করবে। উদাহরণস্বরুপ, আই ও এস ১১ যখন আলোচনায় এলো, তখন সবার মুখে এর গুণগাণ। কিন্তু মূল রিভিউটা তো প্রকাশ পায় ডিভাইস ব্যবহারের পর। আইফোনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
আই ও এস ১১-এর ব্যাটারি নিয়ে লোকজন মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এমনকি সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে ৭০ শতাংশের মতো আই ও এস ব্যবহারকারী এর স্বল্প ব্যাটারি লাইফ সম্পর্কে অভিযোগ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে সাধারণত রিলিজের কয়েক সপ্তাহ পর ব্যাটারিগুলো তাদের স্বাভাবিক ব্যাটারি -লাইফ প্রদান করে থাকে। কিন্তু কিছু বিষয় লক্ষ না করে চললে আপনি শত শত বছর পার করলেও আপনার ব্যাটারি-লাইফ কম হবে। আজ কথা বলবো সেসব বিষয় নিয়েই। কথা বলবো সেইসব বিষয় নিয়ে যাতে করে আপনি আপনার ব্যাটারি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেবা পেতে পারেন।
নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আপনি আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত চালাতে পারবেন। তো চলুন বন্ধুরা শুরু করা যাক।
প্রথমেই Settings > Battery-তে যাবেন। তাহলে দেখতে পাবেন কোন্ কোন্ অ্যাপ কতখানি ব্যাটারি খেয়ে থাকে। আপনি সব অ্যাপের একটা তালিকা দেখতে পাবেন যার ডান পাশে শতাংশ হারে প্রত্যেকটা অ্যাপের ব্যাটারি ব্যবহারের হার দেখাবে। আপনি যেসব অ্যাপ ব্যবহার করেন না সেগুলো বন্ধ করে দিতে পারেন। আর চেষ্টা করুন চার্জ কম থাকা অবস্থায় যেসব অ্যাপ বেশি ব্যাটারি খেয়ে থাকে সেগুলো না চালাতে। তাহলে আপনার ব্যাটারি থেকে বেশ দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আপনি চার্জ ধরে রাখতে পারবেন।
এই সেটিং-য়ে আরো একটি অপশন পাবেন। আর সেটি হলো লো পাওয়ার মোড। এটি পাবেন
Settings > Battery > Low Power Mode-য়ে।
সাধারণত ফোনের চার্জ যখন ২০% এর নিচে তখন এটি চালু করবেন। এটি স্বয়ংক্রীয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো বন্ধ করে দিয়ে ব্যাটারি-লাইফকে সুদীর্ঘ করে। এভাবেও আপনি আপনার ব্যাটারি দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করতে পারেন।
স্ক্রিন চালু থাকলে ফোন ব্যাটারি খাবেই। আইফোনের ক্ষেত্রেও বাক্যটি সত্য। তাই লক্ষ রাখুন যাতে খুব কম সময়ের জন্য আপনার ফোনের স্ক্রিনটি চালু থাকে। এজন্য অটোলকের সময়সীমা কমিয়ে আনতে পারেন। যাতে করে স্ক্রিন চালু থাকার সময়টা কমে আসে। এভাবে আপনি বেশ সুদীর্ঘ ব্যাটারি-লাইফ উপভোগ করতে পারেন। আর এটা করার জন্য আপনার ফোনের-
Settings > Display & Brightness > Auto-Lock-তে যান।
কিছু অ্যাপ আছে যেগুলো চালুর জন্য সবসময়ই লোকেশান দরকার হয়। এমনকি যখন সেগুলো ব্যবহার করছেন না, তখনও সেগুলো চালু থাকে। যে কারণে আপনার ব্যাটারি-লাইফও কমে যায়। তাই লক্ষ রাখুন প্রয়োজন ছাড়া লোকেশান সার্ভিস যাতে বন্ধ থাকে। এজন্য আপনি আপনার ফোনের-
Settings > Privacy > Location Services-তে যান আর "While Using" অপশনটি সিলেক্ট করুন।
আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্টে নতুন কোনো মেইল এলে সেটা আপনি সাধারণত দুইভাবে গ্রহণ করতে পারেন। একটা পুশ নোটিফিকেশানের মাধ্যমে যেটা মেইল আসামাত্র আপনাকে জানাবে। আরেকটা হলো ফেচ-এর মাধ্যমে। ফেচ-এর মাধ্যমে ইমেইল গ্রহণ করলে তা ব্যাটারি কম খায়। কারণ, ফেচ-য়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর (যেমন ১০ মিনিট বা ২০ মিনিট) মেইলগুলো আপডেট করা হয়। আর সেটি চালু করতে আপনাকে আপনার ফোনের-
Settings > Accounts and Passwords > Fetch New Data এবং এরপর "Fetch" সিলেক্ট করতে হবে। আর তা প্রত্যেক অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদাভাবে। আর যদি আপনার ইমেইল খুব কম প্রয়োজন হয় বা আপনি আপনার সময় সম্পর্কে সচেতন থাকেন তাহলে আপনি "Manual" অপশনটি সিলেক্ট করতে পারেন। তাতে করে আপনাকে নিজ থেকে রিফ্রেশ করে দেখতে হবে নতুন কোনো মেইল এসেছে কিনা।
আপনি রুমে বা অন্ধকারে থাকলে আপনার ফোনের ব্রাইটনেস কম লাগে। আবার রোদে বা রাস্তায় থাকলে ব্রাইটনেস বেশি লাগে। তাই যখন আপনি রুমে আছেন তখন আপনার ব্রাইটনেস বেশি থাকলে তা আপনার ব্যাটারি দ্রুত শেষ করবে। তাই অটো ব্রাইটনেস অপশনটি চালু রাখুন। এতে করে আপনার ফোন ঘরে আছে নাকি বাইরে আছে তার উপর নির্ভর করবে ফোনের ব্রাইটনেস কেমন হবে। আর এজন্য আপনার ফোনের-
Settings > General > Accessibility > Display Accommodations -তে যান এবং "Auto-Brightness" করুন।
সেলুলার ডাটা মানে ফোন কোম্পানির কাছ থেকে কেনা ডাটাগুলো শুধু দামীই না, এগুলো ব্যাটারিও অনেক বেশি খেয়ে থাকে। তাই ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় লক্ষ রাখুন যাতে সেলুলার ডাটা অফ থাকে। একইভাবে যখন সেলুলার ডাটা অন থাকবে খেয়াল রাখবেন যেন ওয়াইফাই সার্ভিস অফ থাকে। এভাবে আপনি আপনার ব্যাটারি থেকে দীর্ঘক্ষণ সেবা পেতে পারেন।
কিছু অ্যাপ আছে যেগুলো তাৎক্ষণিক সিঙ্ক-এর মাধ্যমে অটো রিফ্রেশ করে তাদের কন্টেন্ট আপডেট করে। এমনকি যখন আপনি সেগুলো ব্যবহার করছেন না তখনও। যার কারণে আপনার ব্যাটারি হুড়হুড় করে খেয়ে থাকে। এটা বন্ধ করতে আপনার ফোনের-
Settings > General > Background App Refresh- তে যান এবং "Background App Refresh" অফ করে দিন।
এমন কিছু এলাকায় আমাদের মাঝে মাঝে গমন করতে হয় যেখানে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সেসব জায়গায় আপনার ফোন সিগনাল পাবার জন্য বেশ বেশি পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে ব্যাটারি দ্রতই শেষ হয়ে যায়। যদি আপনার সেল সার্ভিস প্রয়োজন না থাকে তাহলে আপনি এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করতে পারেন। তাতে করে আপনার ব্যাটারি আর দীর্ঘায়িত হবে।
যদি আপনি আপনার ফোনটি কম্পিউটারে লাগিয়ে চার্জ দিয়ে থাকেন তাহলে লক্ষ রাখবেন যাতে কম্পিউটারটি চালু থাকে। কারণ, আপনি স্ক্রিনের সামনে না থাকলে বা আপনি হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলে কম্পিউটারটি স্লিপ মোড অথবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে করে ঐ সময় আপনার ফোনে চার্জ হবে না। তাই লক্ষ রাখুন ফোন চার্জ করার সময় কম্পিউটার যাতে চালু থাকে বা কম্পিউটারের পাওয়ার সেভিং মোড চালু না থাকে।
পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম। প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।