ফটো এডিটিং করার জন্য কোন কোন বিষয়ে জানা প্রয়োজন?

প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 3
৩য় সেমিস্টার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাভার

সাদা কাগজের ক্যানভাস কিভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠে? রঙের ছোঁয়া, আলোর ঝলক… এসব কি শুধুই ক্যামেরার কৃতিত্ব, নাকি ঢাকা পড়ে থাকা একটা জাদুকরী দক্ষতা? অবশ্যই এটা এক জাদুকরী দক্ষতা! কারণ, প্রতিটি ছবির পেছনে রয়েছে এক গুপ্তহাত, এক ফটো এডিটিং মাস্টারমাইন্ডের নিপুণ ছোঁয়া।

কিন্তু সেই মাস্টারমাইন্ড হওয়া কী সহজ? মোটেই না। ফটো এডিটিং শুধু কিছু টুল এর নাম জানা নয়, এটা একটা চোখ, একটা শিল্প। ছবির গল্পকে উন্মোচিত করার জন্য আলো এবং রঙের ঝলমলানি, অপ্রয়োজনীয় বিসয়কে মুছে ফেলা… এই সবকিছুই মিলেই ফটো এডিটিং।

তাহলে, কোথা থেকে শুরু করবেন এই জাদুকরী পথচলা? ঠিক কোন বিষয়ে জানা দরকার, কোন টুল আয়ত্ত করা জরুরি? চিন্তা নেই, এই টিউনটি আপনাকে ধরে ধরে নিয়ে যাবো ফটো এডিটিং-এর মোহময় পৃথিবীতে। আজ আমি প্রকাশ করবো অজানা টুল, গোপন কৌশল, এবং ফটো এডিটিং এর সৃষ্টিশীল ধারণা। তৈরি করবো আপনাকে একজন ফটো এডিটিং মাস্টারমাইন্ড!

তাহলে চলুন! আর দেরি না করে ফটো এডিটিং রহস্যময় পথে পা বাড়ায় আজকের এই টিউনের মাধ্যমে!

ফটো এডিটিং কি এবং কেন ফটো এডিট করবেন?

ফটো এডিটিং হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি ছবির রঙ, আলো, টেক্সচার, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে ছবিকে আরও সুন্দর, আকর্ষণীয়, বা সঠিক করে তোলা হয়। ফটো এডিটিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফটোশপ।

অনেক মানুষ শখের বশে ফটোগ্রাফি ও ফটো এডিটিং করেন। এছাড়াও, ফটো এডিটিং বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পেশাও হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে অনেক মানুষ ফটোগ্রাফি ও ফটো এডিটিং এর মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন।

ফটো এডিটিং

ফটো এডিটিং শেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কোর্স, বই, ম্যাগাজিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন ফটোগ্রাফি ও ফটো এডিটিং ফোরাম ও কমিউনিটিতে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে শিখতে পারেন।

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ফটো এডিটিং এর মাস্টার কোর্স করায়, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলঃ 10 মিনিট স্কুল, ক্রিয়েটিভ আইটি, জেএল আউটসোর্সিং এবং ঘুরি লার্নিং এর মত প্রতিষ্ঠান। তবে আপনার ভেতর যদি শেখার গভির আগ্রহ এবং রিসোর্চ করার হ্মমতা থাকে তাহলে সব থেকে ভাল হয় google রিসার্চ অথবা youtube এর কোন ভাল চ্যানেল দেখে শেখা। কারন বর্তমান পৃথিবীর সব থেকে বড় শিক্ষক হল ইউটিউব চ্যানেল এবং গুগল। এখন আসুন জেনে নেই ফটো এডিটিং করার জন্য কোন বিষয়ে জানা সবথেকে বেশি প্রয়োজন?

ফটোগ্রাফির মূল বিষয়াবলী:

ফটো এডিটিংয়ের আগেই, ফটো তোলার সময় মনোযোগী হয়ে কিছু মূল বিষয়ে সচেতন থাকলে, আপনার ছবিগুলো আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। আসুন, ফটোগ্রাফির পাঁচটি মূল উপাদানের মায়াজাল ঘুরে আসি, যা আপনার ছবিগুলোকে শিল্পকর্মে রূপান্তর করতে পারে:

১. লাইটিং: লাইটিং হলো ফটোগ্রাফির চালিকাশক্তি। নরম সকালের আলো, রহস্যময় সন্ধ্যার গোধূলি, অথবা কঠোর দুপুরের সূর্যকিরণ - প্রতিটি আলোকবিন্যাস ছবিতে ভিন্ন মুড তৈরি করে। আলোর দিক, তীব্রতা, এবং কন্ট্রাস্ট নিয়ে পরীক্ষা করুন। ছায়াগুলোকেও কাজে লাগান; কিছু অংশ আলোকিত রেখে কিছু অংশে গভীর ছায়া ফেলে ছবিতে গভীরতা আনুন।

২. কম্পোজিশন: কম্পোজিশন হলো ছবির বিন্যাস। রুল অফ থার্ডস এর মতে কিছু মৌলিক নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন, কিন্তু তা সবসময় নয়। অপ্রত্যাশিত কোণ থেকে ছবি তুলে, নেতিবাচক স্পেস কাজে লাগিয়ে, বা লাইন এবং শেপের দিকে মনোযোগ দিয়ে আপনার নিজের তোলা ছবিতে প্রাণ নিয়ে আসুন।

৩. ফোকাস: ফোকাস ছবির প্রাণকেন্দ্র। কোন বিষয়কে তীক্ষ্ণ রেখে পটভূমিকে ব্লার করে গভীরতা তৈরি করুন, অথবা সবকিছুকে তীক্ষ্ণ রেখে একটি জীবন্ত দৃশ্য উপস্থাপন করুন। ফোকাসের মাধ্যমে দর্শকের চোখকে গাইড করুন এবং ছবির গল্পটি বলুন।

৪. অঙ্গভঙ্গির: ছবি তোলার সময় সাবজেক্টের অঙ্গভঙ্গি ছবির মর্মকে তুলে ধরে। ছবি তোলার স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক অঙ্গভঙ্গি সবসময় কার্যকরী। শরীরের ভাষা ব্যবহার করে আবেগ, গতি, বা অ্যাকশন প্রকাশ করুন।

৫. ব্যাকগ্রাউন্ড: ব্যাকগ্রাউন্ড ছবির বিষয়কে ফ্রেম করে এবং মুড তৈরি করে। সাবজেক্টের সাথে তাল রেখে বা বিপরীতে ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডকে কাজে লাগান। বিশৃঙ্খল ব্যাকগ্রাউন্ড এড়িয়ে সহজ, পরিষ্কার ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করে সাবজেক্টের আরও ফোকাসে আনুন।

এই পাঁচটি মৌলিক উপাদানকে মনে রেখে, প্রতিটি ফটো ক্লিকের সময় সচেতন থাকুন। ফটো এডিটিং করার জন্য কোন বিষয়ে জানা প্রয়োজন? এই প্রশ্নের উত্তর আসলে ফটোগ্রাফির মূলতত্ত্বগুলোতেই লুকিয়ে রয়েছে। আবার চলুন ফিরে যাই ফটো এডিটিং এর মূল আলচনায় আর জেনে নেই ফটো এডিটিং এর বিভিন্ন টেকনিক

ফটো এডিটিং এর বিভিন্ন টেকনিক:

ফটো এডিটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি ছবির রঙ, আলো, টেক্সচার, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে ছবিকে আরও সুন্দর, আকর্ষণীয়, বা সঠিক করে তোলা হয়। ফটো এডিটিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। আসুন একে একে জেনে নেই ফটো এডিটিং এর বিভিন্ন টেকনিক।

ফটো এডিটিং

ফটো এডিটিং এর বিভিন্ন টেকনিক নিম্নরূপ:

  • ব্রাইটনেস, কন্ট্রাস্ট, সাটিন, কালার ইত্যাদির পরিবর্তন: এই টেকনিকগুলির মাধ্যমে ছবির আলো, ছায়া, রঙ, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ব্রাইটনেস দ্বারা ছবির উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কন্ট্রাস্ট দ্বারা ছবির আলো-ছায়ার পার্থক্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাটিন দ্বারা ছবির রঙের মসৃণতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কালার দ্বারা ছবির রঙের তীব্রতা ও স্যাচুরেশন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • ক্রপিং, রিটাচিং, টিন্টিং ইত্যাদি: এই টেকনিকগুলির মাধ্যমে ছবির আকার, রূপ, ও রঙ পরিবর্তন করা হয়। ক্রপিং দ্বারা ছবির আকার বা আকৃতি পরিবর্তন করা হয়। রিটাচিং দ্বারা ছবির দাগ, ঝাপসাভাব, ইত্যাদি ত্রুটি দূর করা হয়। টিন্টিং দ্বারা ছবির রঙ পরিবর্তন করা হয়।
  • ফিল্টার, এফেক্ট ইত্যাদির ব্যবহার: এই টেকনিকগুলির মাধ্যমে ছবিতে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিকাল ইফেক্ট যোগ করা হয়। ফিল্টার ব্যবহার করে ছবির রঙ, আলো, ইত্যাদিতে পরিবর্তন আনা হয়। এফেক্ট ব্যবহার করে ছবিতে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিকাল ইফেক্ট যোগ করা হয়।

ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের ব্যবহার:

ফটো এডিটিং-এ আপনার মূল হাতিয়ার ফটো এডিটিং সফটওয়্যার। এই পর্বে আমি ঝলক দেখবো এমন কিছু সফটওয়্যারের, যা আপনার ছবির গল্পকে আরো মুখরো করে তুলবে।

১. Photoshop: অ্যাডোবি ফটোশপের নাম না তুললে ফটো এডিটিং-ই যেন অসম্পূর্ণ। এই সফটওয়্যারের অপার ক্ষমতা রয়েছে, ছবির রূপ বদল থেকে সম্পূর্ণ নতুন দৃশ্য সৃষ্টি পর্যন্ত সবকিছুই সম্ভব এখানে। তবে, এর জটিল ইন্টারফেস নতুনদের কিছুটা আটকে দেয়।

ফটো এডিটিং

২. Lightroom: এই সফটওয়্যারটিকে ফটোশপের ছোট বোন বলতে পারেন, অ্যাডোবি লাইটরুম, বিশেষত ফটোগ্রাফারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি কাঁচা ছবিগুলোকে ঝকঝক করে তোলে, এক্সপোজার ঠিক করে, এবং কমপোজিশনকে নিখুঁত করে।

৩. GIMP: GIMP-এর নাম না তুললে ফটো এডিটিং এর ফ্রি জগত অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। এই ওপেন-সোর্স সফটওয়্যারটি ফটোশপের অনেক ফিচারই অফার করে, তাও সম্পূর্ণ ফ্রিতে! তবে, এর ইন্টারফেস একটু আলাদা, একটু অভ্যাস লাগতে পারে।

৪. Picsart: ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে এডিটও করতে চান? তাহলে মোবাইলের ম্যাজিক খ্যাত Picsart সফটওয়্যারটি আপনার জন্য। এই অ্যাপটিতে ফিল্টার থেকে ফটো ম্যানিপুলেশন পর্যন্ত সবকিছুই আছে, সবই আপনার হাতের তালুতে।

এই কয়েকটি সফটওয়্যার আপনার ফটো এডিটিং এর অভিযান শুরু করতে পারফেক্ট। তবে মনে রাখবেন, সফটওয়্যারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনার ক্রিয়েটিভিটি। তাই, এক্সপেরিমেন্ট করুন, নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন, এবং আপনার ছবিগুলোকে নিজের মতো করে কথা বলতে দিন! আসুন এই টিউনটি শেষ করার আগে জেনে নেই ফটো এডিটিং এর সৃজনশীলতা সম্পর্কে।

ফটো এডিটিং এর সৃজনশীলতা

ফটো এডিটিং কেবল একটি ছবি ঠিকঠাক করার প্রক্রিয়া নয়, এ এক আলোকচিত্রের ক্যানভাসে কল্পনার রঙ ছোঁয়া দেয়ার শিল্প। এখানে আলোকছায়ার রচনা হয় একটি গল্প এবং সৃতি।

একটি সাধারণ ছবির মধ্যে থেকে অসাধারণের সন্ধানই ফটো এডিটিং এর মূলমন্ত্র। হয়তো আপনি কোনো পরিত্যক্ত রাস্তার ধারে ঝরা পাতায় পড়া রোদের আলোকে ক্যামেরা বন্দী করতে পারেনি, সেখানে বুশ আঁচড়ে আলোকবীজ ছড়িয়ে দেয়াই হল ফটো এডিটিং।

তাই, ফটো এডিটিং শেখা মানে শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, এ এক সৃষ্টিশীল অনুসন্ধান। আলোকচিত্রের জগতে নিজের স্বাক্ষর রেখে যেতে, কল্পনার রঙে ছবি রাঙাতে, বুঝে সুনে প্রস্তুত হন এই মায়াময় সফরের জন্য।

আমি জানিনা ফটো এডিটিং সম্পর্কে এই টিউনটি আমি কততুকু ভাল লিখতে পেরেছি। তবে আমি ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে চেষ্টা করেছি ফটো এডিটিং করার জন্য প্রয়োজনীয়ও বিষয়বস্তু আপনাদের মাঝে তুলে ধরার। আমার জ্ঞানের সল্পতার অপর কাবু রেখে আজকের টিউন এখানেই শেষ করছি! ধন্যবাদ!

Level 3

আমি এম আর শাকিল। ৩য় সেমিস্টার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাভার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।

প্রযুক্তির নতুন নতুন বিষয়াদি জানতে ও শিখতে আমার ভালো লাগে। যেটুকু শিখতে পারি তা অন্যদের সাথে শেয়ার করতেও ভালো লাগে। তাই আমি নিয়মিত প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগ টেকটিউনসে লেখালেখি করি। আমার লেখালেখির উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও জ্ঞান বৃদ্ধি করা। আশা করি আমার লেখাগুলো আপনাদের প্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন কিছু...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস