গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার

গ্রাফিক্স ডিজাইনকে বলা হয় আর্ট অফ কমিউনিকেশন।
লোগো, ব্র্যান্ডিং, পাবলিকেশন, ম্যাগাজিন, পত্রিকা, বই, থেকে শুরু করে পোস্টার, বিলবোর্ড, ওয়েবসাইট গ্রাফিক্স, সাইন, প্রোডাক্ট প্যাকেজিং পর্যন্ত কোথায় নেই গ্রাফিক্সের ব্যবহার! তুলনামূলকভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ইতিহাস খুব বেশিদিনের না হলেও এই টার্মটি সর্বপ্রথম ১৯২২ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়, উদ্ভাবকের নাম উইলিয়াম অ্যাডিসন উইগিংস। আর অ্যাডভার্টাইজিং এর জন্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ফাইন আর্টসের ব্যবহার শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল পণ্য এবং বিভিন্ন সেবার বাজারকরণ কিংবা মার্কেটিং। সেই তখন থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের, নিত্যনতুন আইডিয়া আর ডিজাইন নিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন এগিয়ে এসেছে বহু পথ। কাজকে আরো সহজ করার জন্যে তৈরী হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি আর সফটওয়্যার, সেই সাথে কাজের ধারারও পরিবর্তন আসছে অনেক। গ্রাফিক্সের পরোক্ষ ব্যবহারে বাড়ছে বিক্রয়ের পরিমাণ, সম্প্রসারিত হচ্ছে ব্যবসাক্ষেত্র। সেই সাথে তাল দিয়ে বাড়ছে ডিজাইনারদের চাহিদাও।

একজন ডিজাইনার হতে চাইলে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন ডিজাইনারের লক্ষ্য এবং কাজ কি সেটা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নেয়া। তবে সত্যি বলতে একজন ডিজাইনারের লক্ষ্য কি সেটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। অনেকে দেখা যায় গ্রাফিক ডিজাইন আর ডেস্কটপ পাবলিশিংকে এক করে ফেলেন। তাই চলুন আগে দেখে নিই,

গ্রাফিক ডিজাইনার ও ডেস্কটপ পাবলিশার এর মাঝে পার্থক্য কি?
একজন গ্রাফিক ডিজাইনার ও ডেস্কটপ পাবলিশাররের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল ক্রিয়েটিভ প্রসেস এ। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের আসল কাজ হচ্ছে প্রজেক্টের জন্য নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করা, ব্রেইন স্ট্রমিং, ডিজাইন এবং আর্টওয়ার্ক তৈরি করা যা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা হতে পারে। মূলত ডিজাইনাররা তাদের ক্লায়েন্ট বুঝে আর্টওয়ার্ক বা ডিজাইনের মুড, ইমোশন এবং ওভারঅল ভিজুয়াল নিয়ে কাজ করে।
অন্যদিকে ডেস্কটপ পাবলিশার সেই ডিজাইনটাকে প্রোডাকশন বা ব্যবহারের জন্য তৈরি করেন। একটি ব্রোশিওরকেই উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক। ব্রোশিওরের কোথায় কি বসবে, কম্পোজিশন কেমন হবে কোথায় কি ফন্ট ব্যবহার হবে, সাইজ কত হবে, সেটি নির্ধারণ করে প্রয়োজন মত গ্রাফিক্স তৈরি করবে একজন ডিজাইনার। পাবলিশারের কাজ হল কম্পোজিশন অনুযায়ী গ্রাফিক্সগুলো বসানো, টাইপোগ্রাফি অনুযায়ী আসল টেক্সট কনটেন্টগুলো বসানো।

এক কথায় বলতে গেলে সব অ্যালিমেন্টগুলোকে এক জায়গায় এনে পুরো ডিজাইনটাকে প্রিন্ট করার জন্য তৈরি করা অথবা ডিজাইনারের করা ডিজাইন থেকে ফাইনাল ডিজাইন তৈরি করাই হল একজন পাবলিশারের কাজ। একজন পাবলিশারের সব কাজ ক্রিয়েটিভ প্রসেস-এর মধ্যে না পড়লেও, একজন ডিজাইনারের গুরুত্ব যতটুকু একজন পাবলিশারের গুরুত্বও ঠিক ততটুকুই।

একজন সফল ডিজাইনারের গুনাগুণ

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একজন ডিজাইনারকে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিভ হলেই চলে না, তাকে একইসাথে প্রুফরিডার, কপিরাইটার, প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং ডেস্কটপ পাবলিশারেরে কাজও করতে হয়। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট সফটওয়্যার অপারেশন শেখা কখনোই একজন ক্রিয়েটিভ ডিজাইনারের লক্ষ্য না। একজন ব্যস্ত ডিজাইনারকে হয়ত একই দিনে কোন সাথে ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে হয়, অন্যান্য ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হয়, একই সাথে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কয়েকটি ডিজাইন প্রজেক্ট-এ কাজ করতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে একজন সফল ডিজাইনার হতে হলে কমিউনিকেশন স্কিল, ক্রিয়েটিভিটি, ব্যবসায়িক জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকতে হবে।

কি ভাবছেন? কমিউনিকেশন স্কিল আছে বা না থাকলেও অর্জন করে নেয়া যাবে। কিন্তু নিজের মাঝে ক্রিয়েটিভিটিকে কিভাবে জাগিয়ে তুলবেন? অনেকেই মনে করেন ক্রিয়েটিভিটি হল মানুষের জন্মগত প্রাপ্তি, এটি শেখার কিছু নেই। বিশ্বাস করুন, ধারণাটি একেবারেই ভুল। যেভাবে অংক, ইংরেজি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্য শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যায়, ঠিক সেভাবেই সঠিক প্রশিক্ষণ এবং চর্চার মাধ্যমে ক্রিয়েটিভিটিকেও জাগ্রত করা যায়।

গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আয় এবং সম্ভাবনা

প্রতি মাসে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আয় কত হতে পারে? এ সম্পর্কে ডিজাইনারদের বেতন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ডিজাইনার স্যালারিজ-এর মতে, একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার প্রতি বছরে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করে ১ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। বাংলাদেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনে ডিপ্লোমাধারীর বেতন মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে ব্যাচেলর ফাইন আর্টসে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীদের বেতন মাসিক ৪০ হাজার টাকা থেকে ২লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি একটি লগো ডিজাইন করলে ৫০ থেকে শুরু করে ২ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এটি ৫ থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্তও হতে পারে। একটি ওয়েবসাইটটের প্রথম পেজ ডিজাইন করার ক্ষেত্রে ৫০ ডলার থেকে শুরু করে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন। পূর্ণাঙ্গ একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন করে পাওয়া যায় ২শ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত। ব্র্যান্ড অপটিমাইজেশন এবং ব্রশিউর তৈরির প্রজেক্টগুলোও ৩০০ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে মোট কাজের প্রায় ১৪% হল গ্রাফিক্স এবং মাল্টিমিডিয়ার কাজ, গতবছরে আয় বৃদ্ধির হার ছিল ৪৪%। ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র ইল্যান্সেই গ্রাফিক্স রিলেটেড জব পোষ্ট হয়েছে ৯ লাখ ১৩হাজারেরও উপরে, এর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৫ শত ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাই ফ্রিল্যান্সার হতে চাওয়া তরুণ-তরুণীদের জন্যে অন্যতম পছন্দ হতে পারে এ ক্ষেত্রটি।

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা:

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা মূল বিষয় না। তবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাফিক্স ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা কিংবা ফাইন আর্টসে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী কর্মী চেয়ে থাকেন। তবে ডিগ্রি কোন ব্যাপারই নয়, আপনি যদি কাজটি ভালোভাবে জানেন এবং সৃজনশীল হয়ে থাকেন। এই যেমন আমি একজন ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। এজন্য আমার ফাইন আর্টস কিংবা গ্রাফিক্স বিষয়ে লেখাপড়া করতে হয়নি।

মোটকথা, ইংরেজি এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বেসিক জানেন তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা শুরু করে করতে পারেন। সহজ কিছু কাজ আছে যা মাত্র কয়েক মাসের ট্রেনিং নিয়েই এ ধরণের কাজ করা সম্ভব। আর চর্চা করতে করতেই প্রফেশনাল হিসেবে ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।

ন্টারনেট থেকেই গ্রাফিক্স সংক্রান্ত অনেক রিসোর্স পাওয়া যায়, তবে এর সঙ্গে যেহেতু অনেক কারিগরি বিষয় জড়িত তাই একটু বেশি সময় ব্যয় হয়। অল্প সময়ের মধ্যে শিখতে চাইলে কোন প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে পারেন। আর এক্ষেত্রে ডেভসটিম ইনস্টিটিউটের যে "ক্রিয়েটিভ গ্রাফিক্স ডিজাইন" প্রশিক্ষণ রয়েছে সেটি অবশ্যই মানসম্মত। বর্তমানে আমি নিজে এই প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করছি এবং এটি বাংলাদেশে প্রথম ক্রিয়েটিভ গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রশিক্ষণ।

তাহলে আর দেরি কেন, আজ থেকেই শুরু করুন। আমরা আপনার সফলতার গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক: বাহারুল আলম নয়ন

Level New

আমি DevsTeam Institute। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 41 টি টিউন ও 63 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level New

পোস্টের জন্য আপনাকে অনেক মুবারকবাদ। গ্র্যাফিক্স ডিজাইন করার জন্য কপি রাইট মুক্ত ফ্রি ডাউনলোড লিংক চাই। প্রক্সি লিংক দেবেন না। ভাল থাকুন।

Level New

পোস্টের জন্য আপনাকে অনেক মুবারকবাদ। গ্র্যাফিক্স ডিজাইন করার জন্য adobe illustrator and adobe photoshop er কপি রাইট মুক্ত ফ্রি ডাউনলোড লিংক চাই। প্রক্সি লিংক দেবেন না। ভাল থাকুন।

    @taher bahari:
    কপিরাইটমুক্ত ৩০ টি ওয়েবসাইটের ঠিকানা এখানে পাবেন:
    http://on.fb.me/1llgVdp
    আশা করি আপনার কাজে আসবে।

Level New

আপনারা যদি চট্টগ্রামে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কোর্স করাতে পারেন তাহলে আমি খুবই ইচ্ছুক। …. যদি সেরকম কোনো প্লান থাকে তাহলে জানাবেন কারণ চট্টগ্রামে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখার জন্যে আজ পর্যন্ত কোনো ভালো প্রতিষ্টান পেলামনা। ..