আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আমরা কথা বলব ইতিহাসের বেস্ট সেলিং গেমিং কনসোল গুলো নিয়ে।
গেমিং এর ইতিহাস অনেক পুরনো। গেমিং এর সাথে সাথে গেমিং এর সাথে রিলেটেড যন্ত্রাংশের ইতিহাসও পুরনো। সেই ১৯৮৩ সাল থেকে গেমাররা গেমিং কনসোলের সাথে পরিচিত। গেমিং কনসোল এর ব্যবহার আগে থেকে শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি এখন বেশ সমৃদ্ধ।
আমরা যখন গেমিং প্রোডাক্টের কথা বলি তখন এক সাথে অনেক গুলো প্রোডাক্ট আমাদের মাথায় আসে যেমন বড় টিভি স্ক্রিন, গেমিং চেয়ার, গেমিং কনসোল এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বিশ্ব জুড়ে বড় বড় কোম্পানি বিভিন্ন ফিচার অফার করে গেমিং প্রোডাক্ট সরবারহ করে থাকে। গেমিং প্রোডাক্টের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোডাক্ট হচ্ছে গেমিং কনসোল।
বিভিন্ন কারণে গেমিং কনসোল এখন মার্কেটে জনপ্রিয়। তাছাড়া মার্কেট জুড়ে সকল কোম্পানির গেমিং কনসোল এর চাহিদাই ব্যাপক কিন্তু সেই তুলনায় সাপ্লাই নেই। তো আজকে আমরা বাজারের সেরা কিছু গেমিং কনসোল নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুলনা করার চেষ্টা করব বিভিন্ন কোম্পানির গেমিং কনসোল এর। কম্পারিজনের উদ্দেশ্য থাকবে যেন আপনি ফিচার অনুযায়ী আপনার সেরাটি বাছাই করতে পারেন। গেমিং কনসোল বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্ডিকেশন হচ্ছে লাইফ সাইকেল। অনেক গেমিং কনসোল আছে যেগুলো আপডেট ভার্সন আসলে আগের ভার্সন গুলো ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। সুতরাং গেমিং কনসোল কেনার আগে এর লাইফ সাইকেল বিবেচনা করা উচিৎ এবং কম্পারিজনের ক্ষেত্রে খেয়াল করা উচিৎ কত বছর এটি মার্কেটে ছিল।
যাই হোক চলুন দেখে নেয়া যাক কোন গেমিং কনসোল গুলো বিভিন্ন সময় সবচেয়ে বেশি ডিমান্ডেবল ছিল এবং কেন ছিল?
কোন দ্বিমত ছাড়াই এই লিস্টের প্রথমে থাকবে PlayStation 2। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১৫৭.৬৪ মিলিয়ন ইউনিট শিপ করেছে। এটি বাজারে আসে ২০০০ সালে এবং ২০০৬ পর্যন্ত ছিল। গেমিং কনসোল গুলোর মধ্যে এর লাইফ সাইকেল ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ।
এই গেমিং কনসোলটি অনন্য হবার পেছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে। সেই সময় Sony ছিল মার্কেট লিডার যার ফলে ডেভেলপারদের কাছ থেকে এটি ভাল সাপোর্ট পেয়েছিল। তাছাড়া DVD প্লেয়ার হওয়াতে অনেক মানুষ এটি মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস হিসেবেও কিনেছিল।
“Emotion Engine” নামের প্রসেসরের জন্য সেই সময় এটি ডেভেলপার এবং প্লেয়ারদের মন জয় করে নিয়েছিল। এটি দিয়ে ইউজাররা শুধুমাত্র পুরনো গেমই নয়, God of War, Jak & Daxter, Ratchet & Clank, এর মত নতুন টাইটেল গুলোও খেলতে পেরেছিল।
এখানে মেনশন করা উচিৎ এই কনসোলটি প্রথম Xbox এবং GameCube কেও চ্যালেঞ্জ করেছিল। তখন Xbox শিপ হয় ২৪.৬৫ মিলিয়ন এবং GameCube শিপ হয় ২১.৭১ মিলিয়ন। তারা কেউই Playstation 2 কে পেছনে ফেলতে পারে নি।
তবে জাপানে Playstation 2 থেকেও এগিয়ে ছিল, Switch। সেখানে Playstation 2 শিপ হয়েছিল ২৩.১৮ মিলিয়ন এবং PS2 শিপ হয়েছিল ২৪.৮৪ মিলিয়ন। তারপরেও ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে Playstation 2 ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম কনসোল। ইউরোপে তাদের শিপমেন্ট ছিল ৫৫.২৮ মিলিয়ন এবং আমেরিকায় ছিল ৫৩.৬৫ মিলিয়ন।
এই লিস্টে একাধিক বার Sony এর কনসোল দেখে অবাক হবার কিছু নেই। আসলেই তারা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিল আর এই জন্যই কনসোল গুলো লিস্টের কয়েকটা জায়গা দখল করে আছে। এই লিস্টের দ্বিতীয় অবস্থানে আমরা রাখব PlayStation 4 কে। ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত এটি বিশ্বব্যাপী ১১৭ মিলিয়নেরও উপরে ইউনিক সেল করেছে।
এই গেম কনসোলের সফলতার পেছনে অন্যতম প্রভাব ফেলেছে Xbox One কনসোল লঞ্চ। তাছাড়া PS3 কাস্টমারদের কনফিডেন্সও বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ যার ফলে ইউজাররা আবার PlayStation 4 এ মুভ করে।
PlayStation 4 এর সফলতার আরেকটা কারণ হচ্ছে এর কনফিগারেশন। চমৎকার গেম প্লে, মনোমুগ্ধকর গেমিং ওয়ার্ল্ড এবং আকর্ষণীয় স্টোরি এই কনসোলটির জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
VGchartz, এর মতে এই বিশ্বব্যাপী কনসোলটি Switch কে ছাড়িয়ে যায়, PS4 শিপ হয় ৪৮.৭৪ মিলিয়ন এবং Switch শিপ হয় ২৮.৩০ মিলিয়ন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩৯.৪৯ মিলিয়ন অন্যদিকে PS4 শিপ করে ৩৮.৬৯ মিলিয়ন। জাপানের মার্কেটে সব সময় Switch সব সময় এগিয়ে ছিল। সেখানে PS4 সেল হয় ৯.৪০ মিলিয়ন এবং Switch সেল হয় ২৪.৮৪ মিলিয়ন।
Nintendo এর গেম কনসোল বাজারে আসে ২০১৭ সালে। এর পর থেকে কোম্পানি ১০৭.৬৫ মিলিয়নেরও বেশি কনসোল সেল করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা চিন্তা করলে নাম্বারটি চমৎকার।
Wii বাজারে ব্যর্থ হবার পর এই সফলতা অবিশ্বাস্য ছিল। কিন্তু এই জাপানি কোম্পানি ছোট খাট বিপ্লব নিয়ে আসে আগের সব কাস্টমারদের ফিরিয়ে আনে। যদিও Switch প্রথম স্থান দখল করার জন্য লঞ্চ করা হয় নি তবুও এটি অন্যান্য মডেলের সাথে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বী করেছে।
গত বছরের শেষ দিকে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট Shintaro Furukawa জানিয়েছেন Switch এখন তার লাইফ সাইকেলের মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। সুতরাং ধরে নেয়া যায় এখনো কাস্টমাররা এই কনসোলটি কিনতে পারে। তাছাড়া এই কনসোলে খেলা যাবে Zelda, Metroid Prime 4, এবং Bayonetta 3 এর মত গেম গুলো।
প্রথম প্রজন্মের PlayStation রিলিজ করা হয় ১৯৯৪ সালে এবং এটি ২০০০ সাল পর্যন্ত মার্কেটে ছিল। এই সময় কালে এটি ১০২.৪ মিলিয়নেরও বেশি ইউনিট সেল করেছে।
Sony গেমিং মার্কেটে প্রবেশ করেছিল PSX দিয়ে। যা ছিল 32-bit এর একটি কনসোল যাতে ব্ল্যাক CD ঢুকিয়ে চমৎকার সব গেম খেলা যেতো।
তখনকার সময় এই কনসোলটি দিয়ে একসাথে ৮ জন প্লেয়ার খেলতে পারতো। যদিও এর জন্য বাড়তি এক্সারসোরিজের দরকার পড়তো। এটা ছিল সেই সময় যখন ডেভেলপাররা 3D গেম ডেভেলপ করছিল। আর তখন থেকেই Sony তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা শুরু করে কিভাবে এই সেক্টরে রাজত্ব করা যায়।
যদিও আমরা Wii কে ব্যর্থ প্রোডাক্ট বলেছি তারপরেও এটি ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ১০১.৬৩ মিলিয়নেরও বেশি ইউনিট সেল করেছে। সেই সময় কিভাবে এই কনসোলটি Xbox 360 এবং PlayStation 3 সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং টিকে ছিল এটা এখনো সবাইকে অবাক করে। যেখানে এর প্রতিদ্বন্দ্বীরা HD গেমিং ডিভাইস ছিল সেখানে এটি HD না হয়েও যথেষ্ট ভাল করেছে।
খুব সম্ভবত এর সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল Motion Control। এটা তখনকার সেরা উদ্ভাবন ছিল এবং বেশ গ্রাহক ধরতে পেরেছিল। Dead Space: Extraction অথবা the Resident Evil 4 ছিল বেশ আকর্ষণীয় গেম।
Wii যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানে, ১২.৭৭ মিলিয়ন এবং ৪৫.৫১ মিলিয়ন শিপ করে PS3 কে বিট করেছিল। অন্যদিকে ইউরোপে এটি ৩৩.৮৮ মিলিয়ন ইউনিট সেল করেছিল।
উপরে উল্লেখিত পাঁচটি মডেল তাদের লাইফ সাইকেলে ১০০ মিলিয়নের উপরে শিপ হয়। বাকিরাও ভাল করেছে তবে ১০০ মিলিয়ন ইউনিটে উঠতে পারে নি।
PlayStation 3 রিলিজ হয়েছিল ২০০৬ সালে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটি ৮৭.৪ মিলিয়ন ইউনিট সেল করেছে। এটি, Xbox 360 থেকেও সাশ্রয়ী ছিল কিন্তু Cell প্রসেসরের কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী করা কঠিন হচ্ছিল। দ্রুতই তারা ভুল বুঝতে পারে এবং The Last of Us, Metal Gear Solid IV: Guns of the Patriots, God of War 3, Uncharted 2: Among Thieves, Killzone 2, এর মত এক্সক্লুসিভ গেম গুলো নিয়ে আসে।
Xbox 360 বাজারে আসে ২০০৫ সালে এবং ২০১৩ পর্যন্ত ছিল। এই সময়ে কোম্পানি ৮৮.৫৪ মিলিয়ন ইউনিট সেল করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে মাইক্রোসফট ৪৯.১১ মিলিয়ন ইউনিট সেল করেছিল যেখানে Sony শিফট করেছিল ২৯.৯২ মিলিয়ন PS3 ইউনিট। অন্যদিকে জাপানে Xbox 360 সেল হয়েছিল ১.৬
মিলিয়ন ইউনিট।
Nintendo Entertainment System (NES) আছে এই লিস্টের ৮ নাম্বারে। এটি বেশ পুরনো একটি গেম কনসোল যা বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে এবং এটি ১৯৯০ সালের শেষ পর্যন্ত বাজারে ছিল। এই সময়ে তারা ৬১.৯১ মিলিয়ন ইউনিট সেল করেছিল। এটি ছিল Famicom এর মত একটি ডিভাইস। তারা জাপানে শিপ করেছি ১৯.৩৫ মিলিয়ন ইউনিট এবং ইউরোপে ৮.৩০ মিলিয়ন ইউনিট।
এই লিস্টের নয় নাম্বার পজিশনে আছে Xbox One। এটি বাজারে আসে ২০১৩ সালে এবং ২০২০ পর্যন্ত এর লাইফ সাইকেল ছিল। এটি টুটাল ৫০.৫৭ মিলিয়ন ইউনিট সেল করেছিল। এটি পুরো ফ্যামিলি মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস হিসেবে বাজারে এসেছিল তবে এটা কাস্টমারদের মধ্যে আলাদা কোন ভ্যালু তৈরি করতে পারে নি।
Xbox জাপানের মার্কেটে তেমন জায়গা করে নিতে পারে নি। বলা যায় তারা সবচেয়ে ব্যর্থ হয় এই বাজারে। তারা সেখানে মাত্র ১১৪৮৩১ টি কনসোল বিক্রি করতে পেরেছিল। জাপানে তাদের অবস্থান ছিল এমন যেখানে PS4 পৌঁছেছিল ৯.৪ মিলিয়নে এবং Switch ২৪.৮৪ মিলিয়নে। তবে লোকাল মার্কেটে ১৪২, ০২৪ ইউনিট সেল হয়ে এটা বর্তমান Xbox Series X / S কে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এই লিস্টের শেষ এবং ১০ নাম্বারে যে কনসোলটি আছে সেটা হল Super Nintendo Entertainment System (SNES) যা ৪৯.১০ মিলিয়ন ইউনিট শিপ করেছিল যা ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাজারে ছিল।
SNES যা জাপানে Super Famicom নামে পরিচিত ছিল, বলা হয় ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় গেম কনসোল। এডভান্সড হার্ডওয়্যার এর ১৬ বিটের এই কনসোল শুধু মাত্র চমৎকার অডিও ভিজ্যুয়ালই দেয় নি বরং মনোমুগ্ধকর গেম ডিজাইন দিয়েছিল। এছাড়া ডেভেলপাররা হার্ডওয়্যার লিমিট গুলোও বেশ দক্ষতার সাথে ওভারকাম করেছে।
SNES এর সেল দারুণ ভাবে বাধা গ্রস্ত হয় যখন বাজারে 16 বিট এর Sega Mega Drive কনসোল চলে আসে যা Genesys নামেও পরিচিত।
জাপানে ১৭.১৭ মিলিয়ন SNES সেল হয় যুক্তরাষ্ট্রে সেল হয় ২২.৮৮ মিলিয়ন এবং ইউরোপে ৮.১৫ মিলিয়ন।
দেখা যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে গেম কনসোল গুলোর সেল বেড়েছে। এবং ২০০০ এর দশকের কনসোল গুলোর দিকে তাকালে সহজে বুঝা যায় কোম্পানি ভাল কনসোল বানালে এর বিক্রয়ও ভাল হয়। আমরা আরও দেখতে পেয়েছি গেম কনসোল এর সবচেয়ে বড় মার্কেট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ। Sony এই সেক্টরে এগিয়ে থাকলেও মাইক্রোসফটও পাশাপাশি ভাল পারফর্ম করেছে।
আজকে আমাদের এই লিস্টে বাজারের সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী গুলো নিয়ে তুলনা করার চেষ্টা করলাম। সেরা গেম কনসোলের দিকে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল Sony এর পর জাপানের বাজারে সব সময়ের মত এগিয়ে ছিল Switch।
তো আজকে এই পর্যন্তই আশা করছি এই টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। কোন মতামত থাকলে টিউমেন্ট করুন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 584 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।