
একসময় আমাদের দেশে গেম বলতে বোঝানো হতো বোর্ড গেম—লুডু, ক্যারাম, দাবা কিংবা ফুটবল ক্রিকেটের মতো আউটডoor খেলা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন একটি স্মার্টফোনেই মানুষ ঢুকে যায় এক ভিন্ন দুনিয়ায়—যেখানে আছে যুদ্ধক্ষেত্র, স্পিড রেসিং, বা মগজ ধোলাই করা কৌশলভিত্তিক খেলা।
বাংলাদেশে ২০১৫ সালের পর থেকে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের হার হু হু করে বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে মোবাইল গেমিং-এর জনপ্রিয়তা। বর্তমানে গেমিং শুধু বিনোদন নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ট্রেন্ড। ফ্রি টাইমে গেম খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে স্কোয়াড বানিয়ে ম্যাচে নামা, কিংবা গেম লাইভস্ট্রিম করা—এসব এখন তরুণদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
তবে সব গেম সমানভাবে ভাইরাল হয় না। কিছু গেম সবার ফোনে, সবার কথায়, সবার আড্ডায় জায়গা করে নেয়। নিচে এমনই ৫টি গেম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
২০১৭ সালে প্রকাশিত গেমটি শুরু থেকেই হালকা সাইজ আর সহজ ইন্টারফেসের কারণে জনপ্রিয়তা পায়। মাত্র ১০ মিনিটের ম্যাচে ৫০ জন প্লেয়ার নেমে আসে এক ব্যাটল আইল্যান্ডে। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা দল বা খেলোয়াড়ই জেতে।
২০১৮–২০১৯: PUBG তখন ভারি ফোনে সীমাবদ্ধ ছিল। Free Fire দুর্বল ফোনেও চলত, তাই এটি দ্রুত গ্রামে-শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
২০২০ (করোনাকাল): লকডাউনে তরুণরা ঘরে বসে স্কোয়াড তৈরি করে খেলা শুরু করে।
২০২১–২০২২: অনলাইন টুর্নামেন্ট, গিল্ড সিস্টেম ও সামাজিক মিডিয়ায় কনটেন্টের কারণে এটি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তায় পৌঁছায়।
স্কুলের বন্ধুদের আলাপের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে Free Fire।
অনেক তরুণ ইউটিউবে ফ্রি ফায়ার খেলে দর্শক টানছে।
তবে অতিরিক্ত খেলা শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে।
২০১৭ সালে PC ভার্সন আসার পর PUBG Mobile ২০১৮ সালে বাজার কাঁপায়। এটি ব্যাটল রোয়েলের আসল অনুভূতি দেয়—১০০ জন প্লেয়ার নামছে বিশাল একটি ম্যাপে। বাস্তবসম্মত গ্রাফিক্স ও ভয়েস চ্যাট সুবিধা একে আলাদা করেছে।
প্রথম ধাপ: হাই-এন্ড ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুরু।
পরবর্তী ধাপ: টুর্নামেন্ট ও স্ট্রিমিং কালচার তৈরি হওয়ায় জনপ্রিয়তা বিস্তার লাভ করে।
বর্তমান: মাঝে মাঝে নিষেধাজ্ঞা এলেও VPN বা বিকল্প উপায়ে তরুণরা এখনও খেলে।
অনেক টিম টুর্নামেন্ট খেলে উপার্জন করছে।
গেমাররা আন্তর্জাতিকভাবে নাম করছে।
আবার আসক্তি ও রাত জেগে খেলার কারণে নেতিবাচক প্রভাবও বাড়ছে।
লুডু আমাদের শৈশবের বোর্ড গেম। ডিজিটাল সংস্করণ “Ludo King” প্রকাশের পর এটি পরিবারে আড্ডার অংশ হয়ে গেছে। এখানে ২–৬ জন একসাথে খেলতে পারে, অনলাইন বা অফলাইন দুইভাবেই।
২০২০ সালের লকডাউন: ঘরে বসে পরিবারগুলো লুডু কিং খেলতে শুরু করে।
২০২১–২০২২: বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইন ম্যাচের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা স্থায়ী হয়।
প্রজন্মের ফাঁক কমিয়েছে।
পরিবারে একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যম হয়েছে।
২০১২ সালে Supercell গেমটি প্রকাশ করে। খেলোয়াড় এখানে গ্রাম বানায়, সেনা তৈরি করে, অন্য গ্রামে আক্রমণ করে এবং নিজের গ্রাম রক্ষা করে।
২০১৪–২০১৬: শহরের তরুণদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
বর্তমান: যদিও কিছুটা জনপ্রিয়তা কমেছে, তবু এখনও অনেক প্লেয়ার সক্রিয়।
ক্ল্যান তৈরি করে মানুষ নতুন বন্ধু বানিয়েছে।
টিমওয়ার্ক ও পরিকল্পনার মানসিকতা বেড়েছে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত Asphalt 9 গেমিং দুনিয়ায় রেসিংয়ের নতুন মান তৈরি করে। ৫০টির বেশি আসল ব্র্যান্ডেড গাড়ি, চমৎকার গ্রাফিক্স আর মাল্টিপ্লেয়ার সুবিধা একে আলাদা করেছে।
স্পিড আর গাড়ি প্রেমীদের কাছে এটি হিট হয়।
ইউটিউব গেমপ্লে ভিডিও দেখে অনেকেই খেলতে শুরু করে।
তরুণদের মধ্যে গাড়ি নিয়ে আগ্রহ বাড়িয়েছে।
প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি করছে।
বাংলাদেশের অনেক অভিভাবক গেমকে “সময় নষ্ট” মনে করেন। তবে সচেতন পরিবারগুলো বুঝতে পারছেন, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে গেম খেলা আসলে মন্দ নয়। তবে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
প্রশ্ন ১: গেম খেলে কি আসলেই আয় করা যায়?
👉 হ্যাঁ, স্ট্রিমিং, টুর্নামেন্ট এবং কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে আয় সম্ভব।
প্রশ্ন ২: শিশুদের জন্য কোন গেম নিরাপদ?
👉 লুডু কিং বা এডুকেশনাল গেম শিশুদের জন্য নিরাপদ। ব্যাটল রোয়েল গেম শিশুদের জন্য নয়।
প্রশ্ন ৩: কতক্ষণ গেম খেলা স্বাভাবিক?
👉 বিশেষজ্ঞরা বলেন দিনে ১–২ ঘণ্টার বেশি গেম না খেলাই উত্তম।
বাংলাদেশে এখন ভাইরাল হওয়া এই ৫টি গেম শুধু বিনোদন নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের জীবনধারা ও সংস্কৃতির অংশ। তবে সব কিছুর মতো গেমিংয়েরও সঠিক সীমা থাকা প্রয়োজন। সঠিক নিয়ন্ত্রণে খেলা হলে এগুলো আনন্দ, বন্ধুত্ব এবং ক্যারিয়ারের সুযোগ এনে দিতে পারে।
আমি জান্নাতুল খাতুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 31 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোছা:জান্নাতুল খাতুন, চুয়াডাঙ্গা জেলার বাংলাদেশ থেকে। আমি একজন ফ্রিল্যান্স লেখক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ডিজিটাল কনটেন্ট, আর্টিকেল এবং সৃজনশীল লেখা তৈরি করতে পারদর্শী। আমি মানসম্পন্ন কাজ প্রদান করতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট রাখতে উৎসাহী।