ভূমিকা
আজকের দিনে গেম খেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং তরুণদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মোবাইল, পিসি, কনসোল—সব প্ল্যাটফর্মেই এখন নানা ধরনের গেম খেলা হয়। তবে দীর্ঘ সময় গেম খেলার ফলে শরীর ও মনে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে এসব উপসর্গকে হালকাভাবে নেন, কিন্তু ধীরে ধীরে এগুলো বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। তাই গেম খেলার সময় কোন কোন সমস্যা দেখা দেয় এবং এর সমাধান কী হতে পারে, তা জানা খুব জরুরি।
-
⚠️ গেম খেলার সময় যে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়
১. চোখের সমস্যা
দীর্ঘ সময় পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা এমনকি দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেকেই "ডিজিটাল আই স্ট্রেইন" নামক সমস্যায় ভোগেন।
২. ঘাড় ও কোমরের ব্যথা
অনেক সময় মোবাইল বা ল্যাপটপে নিচু হয়ে বসে দীর্ঘক্ষণ খেলার ফলে ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হয়। ভুল ভঙ্গিতে বসে খেলার কারণে স্পাইনাল সমস্যাও হতে পারে।
৩. স্থূলতা ও শারীরিক দুর্বলতা
একটানা বসে থাকার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. ঘুমের সমস্যা
রাত জেগে গেম খেলার কারণে ঘুমের রুটিন নষ্ট হয়ে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে পরদিন ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
৫. মানসিক সমস্যা
গেম হারলে হতাশা, রাগ, অস্থিরতা এমনকি ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ কমে একাকীত্বও তৈরি হয়।
৬. হাত ও আঙুলে ব্যথা
একটানা মোবাইল বা গেম কন্ট্রোলার ব্যবহার করার ফলে হাত ও আঙুলে ব্যথা হয়। দীর্ঘ সময় গেম খেলা টেন্ডোনাইটিস বা কার্পাল টানেল সিনড্রোমের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
-
✅ স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের উপায়
১. নির্দিষ্ট সময় মেনে গেম খেলা
গেম খেলার জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। দিনে সর্বোচ্চ ১–২ ঘণ্টা খেলার চেষ্টা করা উচিত।
২. ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলা
প্রতি ২০ মিনিট গেম খেলার পর ২০ সেকেন্ডের জন্য অন্তত ২০ ফুট দূরের দিকে তাকাতে হবে। এতে চোখের চাপ কমে যাবে।
৩. সঠিক ভঙ্গিতে বসা
চেয়ারে সোজা হয়ে বসতে হবে এবং স্ক্রিন চোখের সমান উচ্চতায় রাখতে হবে। এতে ঘাড় ও কোমরের ব্যথা এড়ানো যায়।
৪. বিরতি নিয়ে শরীরচর্চা
প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৫ মিনিট বিরতি নিয়ে হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করলে শরীর সক্রিয় থাকে।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম
রাতে দেরি করে গেম না খেলে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে। ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
৬. নীল আলো কমানোর ব্যবস্থা
মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি অনেকাংশে কমে যায়।
৭. সামাজিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ
গেমের বাইরে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। এতে মানসিক চাপ কমে যায় এবং আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৮. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
ফাস্টফুড বাদ দিয়ে ভিটামিন ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এতে দীর্ঘক্ষণ গেম খেলার পরও শরীর সতেজ থাকে।
-
🌍 বাস্তব উদাহরণ
অনেক দেশে স্কুল ও কলেজে গেম আসক্তি ও স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সচেতনতা প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়াতে "গেম কারফিউ" আইন রয়েছে, যেখানে রাত ১২টার পর কিশোররা অনলাইন গেম খেলতে পারে না। এই উদ্যোগ তরুণদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও আসক্তি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
-
উপসংহার
গেম খেলা বিনোদনের জন্য ভালো, তবে স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না। দীর্ঘ সময় একটানা খেলা শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই গেম খেললেও তা সীমিত সময়ে, স্বাস্থ্যকর নিয়ম মেনে খেলতে হবে। মনে রাখতে হবে—গেম আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য, জীবন নষ্ট করার জন্য নয়।
-
আমি সেলিনা আকতার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস 1 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।