সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি একটি আদর্শ কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের সমাহার নিয়ে আমার ধারাবাহিক টিউনের দ্বিতীয় পর্ব।
এর আগের পর্বে আমরা কম্পিউটার এবং ব্যক্তিগত ফাইল ফোল্ডারের সিকিউরিটি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে আপনাদের আগ্রহ আমাকে পরবর্তি টিউন করতে উৎসাহিত করেছে। আমি এই ধারাবাহিক টিউনের প্রত্যেকটি পর্ব সাজিয়েছি একঝাঁক ফ্রিওয়্যার সফটওয়্যার দিয়ে। পাইরেটেড সফটওয়্যারগুলোর ভিড়ে তলিয়ে যাওয়া জাতিকে সুন্দর কিছু ফ্রিওয়্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমার টিউনের অন্যতম উদ্দেশ্য। আজ আমরা বিভিন্ন ডকুমেন্টস ফরমেটিং, ফাইল ওপেনিং, দ্রুতগতিতে টাইপিং এবং অফিস অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করবো। টিউন শেষে বুঝতে পারবেন কয়েকশত ডলার মূল্যমানের প্রিমিয়াম সফটওয়্যারগুলোর চাইতে ফ্রি সফটওয়্যারগুলো কোন অংশে কম না। তো চলুন তাহলে শুরু করা যাক। তবে তার আগে এই সিরিজ এর প্রথম টিউনটি না দেখে থাকলে এখানে ক্লিক করে সেটি দেখে নিন।
আজকের তালিকায় শীর্ষে থাকা সফটওয়্যারটি বিষয়ে আমি এর আগেও একটি টিউন করেছি। তবে কিছু কিছু সফটওয়্যার থাকে যেগুলো সম্পর্কে মাঝে মাঝেই রিভিউ দেওয়া উচিৎ। কারন এই সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারনা থাকাটা আবশ্যক। Free Opener সফটওয়্যারটি সম্পর্কে যদি আপনাদের পূর্বে কোন ধারনা না থাকে তাহলে এর কাজের কথা শুনে হার্টবিট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারন এই একটিমাত্র সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমাদের পরিচিত প্রায় সব ধরনের ফাইল ফরমেট ওপেন করা যায়। অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে যদি শুধুমাত্র Free Opener সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা থাকে তাহলে আপনি এর সাহায্যে ফটোশপ ফাইল, যেকোন ধরনের ডকুমেন্ট, মিউজিক, ভিডিও, ইমেজ, HTML সহ প্রায় ৩৫০ ধরনের ফাইল ফরমেট ওপেন করতে পারবেন।
বুঝতেই পারছেন ছোটখাটো কাজের জন্য এখন আর গাদাগাদা সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে না। তবে এই সফটওয়্যার দিয়ে এতো এতো কাজ করা গেলেও এই কাজগুলোর কোয়ালিটি কিন্তু খারাপ হবে না। আশা করি আপনি মগ্ধ হবেনই। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আমার টিউনটি দেখতে পারেন। তাছাড়াও এর অফিশিয়াল সাইট হতেও সব কিছু জানতে পারবেন। তো সফটওয়্যারটি কেমন লাগলো অবশ্যই টিউমেন্ট সেকশনে জানাতে ভুলবেন না যেন।
যদিও আমরা মাইক্রোসফট অফিস বলতে প্রায় অজ্ঞান। কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা না করেই পিসিতে ধুমধাম মাইক্রোসফট অফিস ইনস্টল করে ফেলি এবং তারপর একে ওকে জিজ্ঞাসা করি, “ভাই আমারে একটা লাইসেন্স-কী দেওয়া যাবে? এক মাসের ট্রায়াল হিসাবে ব্যবহার করছি। ” আপনাদের এরকম সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি দিতে আজ পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি অন্যতম অফিস অ্যাপ্লিকেশন WPS Office এর সাথে। এটা ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং এর পরিচিত ইউজার ইন্টারফেইজ আপনাকে দিবে দ্রুত কাজ করার সুবিধা।
অফিস ডকুমেন্ট (ওয়ার্ড), প্রেজেন্টেশন (পাওয়ারপয়েন্ট), স্প্রেডশীট (এক্সেল) এর প্রায় সব ধরনের কাজ খুবই সহজ এবং সুন্দর ভাবে করতে পারবেন। এই সবগুলো ফাইল মাইক্রোসফট অফিস সাপোর্টেড হবে। সুতরাং ভিন্ন কম্পিউটারে ফাইল ওপেনিং এ কোন ঝামেলা হবে না। তবে সফটওয়্যার ফিচার সম্পর্কে একটা টিউন যথেষ্ঠ হবে না। কষ্ট করে অফিশিয়াল সাইট হতে আরও বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।
আপনার টাইপিং স্পিডকে দ্রুতগতির করার জন্য WordExpander সফটওয়্যারটি আজ উপস্থাপন করছি। এটা মূলত একটি ওয়ার্ড & ফ্রেইস অটো কমপ্লিট সফটওয়্যার। অর্থাৎ আপনি যখন কোন ওয়ার্ড বা ফ্রেইস টাইপিং শুরু করবেন তখন কয়েকটা অক্ষর লেখার পরেই আপনাকে সাজেশন দিবে যে এটি দ্বারা কোন ওয়ার্ড বা ফ্রেইস হতে চলেছে। আপনি শুধু সেগুলো সিলেক্ট করবেন। টিউনে উল্লেখিত ইমেজটি সম্ভবত আপনাদের আরও সুন্দরভাবে বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করবে।
ব্রাউজার এবং টেক্সট এডিটর সাপোর্টেড এই সফটওয়্যারটির জন্য রয়েছে বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য আলাদা কন্টেন্ট লাইব্রেরী। অর্থাৎ আপনি যদি হয়ে থাকেন কোন মেডিকেল ছাত্র, কেমিস্ট কিংবা বায়োকেমিস্ট তাহলে আপনার জন্য রয়েছে মেডিসিন এর নাম, ক্ষেত্র এবং এ সম্পর্কিত বিশেষ লাইব্রেরী। যেগুলো সফটওয়্যারটির লাইব্রেরী সেকশন থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করে দিতে পারবেন।
কেন জানি সফটওয়্যারটিকে দেখলে আমার গ্রাইন্ডার মেশিনের কথা মনে হয়। গ্রাইন্ডার মেশিনের ব্যবহার প্রথম দেখি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানায়। প্লাস্টিকের যতো পণ্য আছে সবগুলোকে মেশিনে ডুকিয়ে দেওয়া হয় আর মেশিন সেগুলোর গুড়া বের করে দেয়। doPDF সফটওয়্যারটিও প্রায় সেরকম। এর সাহায্যে ৪০০টিরও বেশি ফাইল ফরমেটকে আপনি পিডিএফ ফাইলে কনভার্ট করতে পারবেন। অর্থাৎ সফটওয়্যারটিতে যেকোন ফাইল ইনপুট করবেন আর পিডিএফ ফাইল আউটপুট হিসাবে বের হয়ে আসবে। অনেক মজার তাইনা? যাহোক, ফন্ট ইমবেড সুবিধা সম্পন্ন এই সফটওয়্যারটির সবগুলো ফিচার দেখে ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবেন এর অফিশিয়াল ওয়েব সাইট হতে।
এই টিউনে উল্লেখিত সফটওয়্যারগুলো মূলত আমাদের ব্যবহৃত পরিচিত সফটওয়্যারগুলোর বিকল্প। এ কারনে এই সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা নিস্প্রয়োজন। আপনারা সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করুন, নিজেদের কাজে দ্রুততা আনুন এবং ফ্রিওয়্যারকে স্বাগত জানানোর একটা অভ্যাস গড়ে তুলুন। টেকটিউনস CEO মেহেদী হাসান আরিফ ভাই কিন্তু ফ্রিওয়্যার সফটওয়্যার ছাড়া পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করেন না। মজার ব্যাপার হলো আমরাও যদি এরকম পণ করি তাহলে দেখা যাবে এমন সব ফ্রিওয়্যার সফটওয়্যারের দেখা পাওয়া যাবে যেগুলো প্রিমিয়াম কে টপকে যাবে। ফ্রিতেই যদি দারুন কিছু পাওয়া যায় তাহলে আর পাইরেসি কেন?
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
অসাধারণ