ফ্রিল্যান্সিং ও আজকের প্রজন্ম

”Freelancing করলেই আয় হবে লাখ লাখ টাকা”-এই কথাটি শুনে নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই অনেকেই মনে করে, শুধুমাত্র ইন্টারনেট আর কম্পিউটার থাকলেই আয় হবে লক্ষ লক্ষ টাকা। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর বাস্তবতা কি এমন? সত্যি কি এভাবে অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্ভব? 

না, কখনই এভাবে টাকা আয় করা সম্ভব না। যদি এমনটা হতো, তাহলে পৃথিবীতে কোটি কোটি বেকার মানুষ থাকতো না। আসলে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। কিন্তু আমরা অনেকেই অনলাইন থেকে লাখ লাখ ডলার লাভের মোহে পড়ে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ছি।

এই ডলার কামাই করার মোহ ব্যাপকভাবে গ্রাস করেছে তরুনদের মধ্যে। তারাও নিজের মনে ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে এদিক ওদিক ছুটছে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য। তারা কি আদৌ ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সিং করে সফলতা অর্জন করতে পারছে? 

এই আর্টিকেলে কি কি জানতে পারবেন?

  1. ফ্রিল্যন্সিং ও বাস্তবতা
  2. কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শেখা উচিত
  3. ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করবেন

স্বপ্ন যখন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার

মানুষের মনে বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন থাকে। হয়তবা কেউ ডাক্তার হতে চায় আবার অনেক মানুষ শিক্ষক হতে চায়। তবে আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চায়। কারণ তারা জানে, ফ্রিল্যান্সিং করে সত্যি সত্যি লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। আর এই স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে অনেকেই নিজের মতো করে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখা শুরু করে দেয়। 

কিন্তুু তার মধ্যে গুটিকয়েক মানুষ Freelancing করে সফলতা অর্জন করতে পাড়ে। তবে যারা অসফল হয় তারা নিজের সময় ও শ্রমকে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়। তবে প্রশ্ন হলো, সবাই কেন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারেনা? 

অসফল হওয়ার মূল কারণ হলো অজ্ঞতা। কারন তাদের চোখে ভাসছে শুধু হাজার হাজার ডলার আয় করার স্বপ্ন। আর এমন স্বপ্ন বুকে চেপে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান তরুন সমাজের অনেকটা অংশ। 

তাহলে কি ফ্রিল্যান্সিং করার স্বপ্ন দেখা ভুল?

ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখা মোটেও ভুল কাজ নয়। তবে যারা কোনো দক্ষতা অর্জন না করেই টাকা আয় করতে চান তাদের এমন স্বপ্ন দেখা সম্পূর্ণ ভুল। কারন, বাস্তবিক জীবনে আপনি যেমন শারীরিক শ্রম দিয়ে টাকা আয় করেন। তেমনি ভাবে ফ্রিল্যান্সিং আয় করার জন্য আপনাকে মেধার শ্রম দিতে হবে।

যে মেধা দিয়ে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি কাজে দক্ষ হতে হবে। তারপর আপনি সেই দক্ষতার বিনিময়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোতে সার্ভিস দিবেন। সেই সার্ভিসের বিনিময়ে আপনি অর্থ উপার্জন করবেন। কিন্তুু সমস্যা হলো, আমরা অনেকেই এই ধাপে সবচেয়ে ভুল কাজ করি। ভুল কাজটা হলো, আমরা অনেক মানুষ পূর্ণাঙ্গভাবে কোনো কাজ না শিখেই ঝাপিয়ে পড়ি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য। 

এবার একটু ভাবুন আপনার বাড়িতে আপনি কোন ধরনের কাজের লোক রাখবেন? 

  1. কাজ জানে এমন লোক?
  2. কাজ জানেনা এমন লোক?

আপনি নিশ্চই তাদের বেতন দিবেন যারা কাজ জানে এবং আপনার কাজ করবে তাইনা? এখন ভেবে দেখুন, আপনি যখন একজন ফ্রিল্যান্সার হবেন তখন আপনিও কারো আন্ডারে কাজ করবেন। আর তারা আপনাকে তখনি কাজ করতে দিবে যখন আপনি সেই কাজে দক্ষ হবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগে কি কি জানা উচিত?

আপনারা যারা সম্পূর্ণ নতুন করে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান তারা নিজেই নিজেকে ০৩ টি প্রশ্ন করুন। সেই প্রশ্ন গুলো হলো,

  1. আপনার কাছে পর্যাপ্ত সময় আছে কি?
  2. আপনি কি মন থেকে ফ্রিল্যান্সিং করতে চায়?
  3. আপনার নিকট কম্পিউটার/ল্যাপটপ আছে?

যদি এই প্রশ্নের উত্তর গুলো হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শেখা শুরু করে দিতে পারেন। তবে এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য এসবের কি প্রয়োজন তাইতো? তাহলে শুনুন…….

আপনার মূল্যবান সময় আছে কি?

যদি আপনি এই ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে কাজ করতে চান তাহলে আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকতে হবে। কারণ, একবারে নতুন করে শুরু করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখা, ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য অনেক সময়ের দরকার হয়। তাই যদি আপনার সময় থাকে তাহলে তো ভালোই। কিন্তুু যদি সময় না থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আরেকবার ভেবে নিবেন। 

ফ্রিল্যান্সিং কি মন থেকে করতে চান?

দেখুন নেশা ও পেশার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা মনে করেন তাহলে আপনার মাঝপথে গিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তুু যারা নেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তারা অধিকাংশ সময়েই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফল হতে পারে। তাই নিজেকে বারবার প্রশ্ন করুন, সত্যি কি আপনি মন থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান কিনা।

কারন ফ্রিল্যান্সিং শেখার সময় আপনাকে নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হতে হবে। আর এই দক্ষতা অর্জন করার জন্য প্রয়োজন হয় নিজের তীব্র মনোবল। আর নতুন মানুষের জন্য এই বিষয়টি ভেবে দেখা অত্যন্ত জরুরী।  

আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে?

যদি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে তাহলেই আপনি উচ্চপদস্থ চাকরি করার সুযোগ পাবেন। তেমনি ভাবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ডিভাইস থাকতে হবে। সেটা হতে পারে আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। যার সাহায্য আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ গুলো করতে পারবেন। তবে ডিভাইস এর সাথে একটি ভালো ইন্টারনেট কানেকশন তো অবশ্যই থাকতে হবে।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা ভালো?

ধরে নিলাম উপরের সব যোগ্যতা গুলো আপনার মধ্যে আছে। এখন আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখার সিন্ধান্ত নিতে হবে। তাই এখন আপনাকে জানতে হবে আপনার আসলে কোন ফ্রিল্যান্সিং কাজ শেখা উচিত। কারণ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। 

ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কাজ শেখা উচিত

আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে বিভিন্ন ধরনের জব দেখতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে নিজে থেকেই এমন একটি কাজ শেখার সিন্ধান্ত নিতে হবে যে কাজ গুলো সহজে শিখতে পারবেন। কারণ নিজের পছন্দের কাজ না করলে একটা সময় তার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। আর মাঝপথে গিয়ে উক্ত স্থান থেকে ছিটকে পড়তে হয়। 

তবে বর্তমান সময়ে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সিং জব আছে যেগুলো অনেক ডিমান্ডেবল। আর সেই চাহিদা সম্পন্ন ফ্রিল্যান্সিং জব গুলো হলো,  

  1. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: যেমন PHP, Python, JavaScript
  2. গ্রাফিক্স ডিজাইন: লোগো, ব্রোশার, ওয়েবসাইট ডিজাইন ইত্যাদি।
  3. ডিজিটাল মার্কেটিং: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবার প্রচারণা।
  4. কন্টেন্ট রাইটিং: বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের জন্য কন্টেন্ট লেখা।
  5. ট্রান্সলেটর: বিভিন্ন ভাষা থেকে অনুবাদ।
  6. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট: ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কাজে সহায়তা করা।
  7. এডিটর: ভিডিও, অডিও, ফটো এডিট করার কাজ।

উপরের তালিকায় উল্লেখ করা ফ্রিল্যান্সিং কাজ গুলো অনেক ডিমান্ডেবল। যে গুলো করে মার্কেটপ্লেসে অনেক বেশি ডলার উপার্জন করা সম্ভব। তবে শুধুমাত্র ডলার দেখ নয় বরং আপনার অবশ্যই সেই কাজটি শেখা উচিত যে কাজে আপনার আগ্রহ আছে।

কোথায় ফ্রিল্যান্সিং শিখবেন?

এটি হলো ফ্রিল্যান্সিং শেখার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। কারন আপনাকে এমন কারো কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হবে যারা সত্যিকার অর্থে আপনাকে একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ে তুলতে পারবে। এখন আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। কারন এখন অফলাইন ও অনলাইন সবখানে ফ্রিল্যান্সিং শেখার ব্যবস্থা আছে। যেমন,  

  1. ইউটিউব ভিডিও দেখে
  2. ব্লগ বা ই-বুক পড়ে
  3. কোর্স করে
  4. আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে

তবে আমার দৃষ্টিকোন থেকে আপনি এমন কারো কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখবেন যারা এখনও সেই কাজে যুক্ত আছে। যেমন ধরুন আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে দীর্ঘদিন ফ্রিল্যান্সিং করছি। এখন আমার যে অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে তা দিয়ে আমি আপনাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ গুলো খুব সুক্ষভাবে শিখিয়ে দিতে পারবো। 

কিন্তু আপনি যদি এমন কাউকে খুঁজে না পান তাহলে অন্যভাবেও শিখতে পারেন। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবেন, বর্তমানে প্রতারকের অভাব নেই। ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের বিজ্ঞাপণে অনেকেই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং শেখার আশ্বাস দিবে। তারপর আপনার কাছ থেকে কোর্স কেনার কথা বলে টাকা নিয়ে আপনাকে হয়রানি করাবে। 

তাই ফ্রিল্যান্সিং যার কাছে শিখতে চান তার সম্পর্কে যথেষ্ট জানার চেস্টা করবেন। যদি আপনি সেই কোর্স/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিকে সলিড মনে হয় তাহলে নিশ্চিন্তে শেখা শুরু করে দিবেন।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন? 

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কোনো কাজ শিখবেন তখন আপনি নিজেই জানতে পারবেন আপনার কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত। কারন ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে ভিন্ন কাজ করার সুযোগ আছে। যেমন আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখেন তাহলে আপনি Upwork, Fiverr, Freelancer, 99designs ইত্যাদি সাইটে কাজ করতে পারবেন। 

ঠিক একইভাবে আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে অনেক ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম দেখতে পারবেন। যেখানে আপনার দক্ষতার বিনিময়ে সার্ভিস প্রদান করে নির্ধারিত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। কারন যখন আপনার দক্ষতা থাকবে তখন আপনার কাজের অভাব হবেনা।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

প্রিয় পাঠক, যারা নতুন হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান তারা অবশ্যই আজকের লেখাটি পড়বেন। কারন, আপনার জন্য আজকে এমন কিছু তথ্য শেয়ার করা হয়েছে যেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি আপনার মনে অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচে টিউমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Level 0

আমি নিরঞ্জন রায়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 মাস 3 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস