কেন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা ডাটা এন্ট্রি কাজে নিরুৎসাহিত করে? জেনে নিন ৫ টি কারণ

Level 4
শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর

যারা একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ডাটা এন্ট্রি সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ ডাটা এন্ট্রি কাজ তুলনামূলক অনেক তাড়াতাড়ি শেখা যায়। এই সেক্টরে কাজ শিখতে অর্থ ও শ্রম কম ব্যয় করতে হয়। তাই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ঢুকেই সকলের মনে হয় ডাটা এন্ট্রি একটি আদর্শ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর।

কিন্তু অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার যারা আছেন অর্থাৎ যারা দীর্ঘ সময় ধরে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার ডাটা এন্ট্রি কাজে নিরুৎসাহিত করেন। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদেরকে বার বার এই দিকনির্দেশনা দেয়া হয় যাতে কেউ ডাটা এন্ট্রি কাজের সাথে জড়িত না হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ফ্রিল্যান্সার হয়তো না জেনে বুঝে কাউকে এই ধরনের উপদেশ দেয় না। অবশ্যই এর পেছনে কারণ আছে।

কিন্তু আপনাদের প্রশ্ন হতে পারে, যেখানে পঁনেরো দিন কিংবা এক মাসের মধ্যে কাজ শিখেই একটা ভালো এমাউন্ট আয় করার সুযোগ আছে সেখানে কেন আমরা এই সেক্টরে কাজ করবো না? সেজন্যই আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো যে কেন আপনারা ডাটা এন্ট্রি কাজে যুক্ত হয়ে যাবেন না। অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা যে ৫ টি কারণে ডাটা এন্ট্রি কাজে নতুনদের নিরুৎসাহিত করে চলুন তা দেখে নেয়া যাক।

১. লং টাইম সাপোর্ট দিতে পারে না

ডাটা এন্ট্রি কাজ লং টাইম সাপোর্ট দিতে পারে না

ডাটা এন্ট্রি কাজ কখনোই আপনাকে একটি লম্বা সময় ধরে সাপোর্ট দিতে পারবে না। কেননা ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য আপনার বিশেষ কোনো স্কিল লাগবে না। শুধু কম্পিউটার এর ওপরে মোটামুটি আয়ত্ত থাকলেই হবে। বাকি কাজ আপনাকে আপনার ক্লায়েন্ট এক দিনের মধ্যেও শিখিয়ে দিতে পারবে। আর যেখানে আপনার স্কিল মুখ্য ভূমিকা পালন করে না সেখানে আপনার কাজের মেয়াদ কতোদিন থাকতে পারে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে।

ধরুন কোনো ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিল যে একটি JPG ফাইলের টেক্সট এক্সেল ফাইলে রূপান্তর করতে হবে। আর এই কাজের জন্য তো আপনার কনটেন্ট রাইটিং কিংবা কোডিং এর মতো দক্ষতার প্রয়োজন নেই। তাই এই প্রজেক্টের কাজ শেষ হলে ঐ ক্লায়েন্ট হয়তো আপনাকে আর কোনো কাজ না-ও দিতে পারে। হয়তো এমন কাউকে সে পেয়ে যাবে যাকে দিয়ে আপনার থেকে-ও কম খারচে কাজ করিয়ে নিতে পারবে। তাই ডাটা এন্ট্রি কাজ কতোদিন আপনাকে সাপোর্ট দিতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

অন্যদিকে আপনি যদি গ্রাফিকস ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, কোডিং কিংবা রাইটিং সেক্টরে প্রাকটিস করতে থাকেন তখন আপনার কাজের ভ্যালু দিন দিন বাড়তে থাকবে। কেননা এগুলো এক একটি স্কিল বা প্রতিভা যা শিখতে কিংবা আয়ত্তে আনতে আপনাকে বেশ পরিশ্রম করতে হবে। আর এই সকল সেক্টরে আপনার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হবে আপনার কাজের কোয়ালিটির ওপর ভিত্তি করে। আপনি কাজ অন্যদের তুলনায় ভালো করতে পারলে লং টাইম একই ক্লায়েন্টের কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।

কিন্তু ডাটা এন্ট্রি সেক্টরে একজন ক্লায়েন্টের কাজ কতোদিন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করবে ক্লায়েন্ট এর চাহিদা ও ইচ্ছা অনুযায়ী।

২. ডাটা এন্ট্রি কাজে শিক্ষনীয় কিছু নেই

ডাটা এন্ট্রি কাজে শিক্ষনীয় কিছু নেই

অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার দের মতে, যেই কাজ একটা ছোট বাচ্চাকে একদিন শিখিয়ে দিলে সে করতে পারবে সেই কাজ কখনও একটি বিশেষ স্কিল হতে পারে না। ডাটা এন্ট্রি কাজগুলো মূলত এরকম। অর্থাৎ যে কাউকে একদিন সময় নিয়ে বুঝিয়ে দিলেই সে করতে পারবে। তাহলে এটাকে একটি বিশেষ স্কিল বলে বিবেচনা করা যায় না। তাই বলা যায় ডাটা এন্ট্রি কাজে শিক্ষনীয় কিছু নেই।

ধরুন আপনার ক্লায়েন্ট বললো ঢাকা শহরের স্বনামধন্য ২০ টি রেস্টুরেন্ট এর তালিকা ও তাদের সাথে যোগাযোগের নম্বর এর লিস্ট তৈরি করতে হবে। অথবা বিশ্বের সেরা ৫০ টি দর্শনীয় স্থানোর তালিকা তৈরি করতে হবে। এখন এই কাজ করতে হয়তো আপনার সময় ব্যয় হবে ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর দক্ষতা থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারে না এমন লোক তো নেই বললেই চলে। সুতরাং এই কাজের মাধ্যমে আপনি বিশেষ কোনো স্কিল কিন্তু শিখতে পারছেন না।

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে এমন সব কাজ করা উচিত যেখানে কাজের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নিজের স্কিল ডেভেলপ করা যায়। ডাটা এন্ট্রি কাজ করে মূলত আপনি পারিশ্রমিক পাবেন কিন্তু নতুন কোনো স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন না। আর এই কারনেই অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা ডাটা এন্ট্রি কাজে নিরুৎসাহিত করে।

৩. ডাটা এন্ট্রি কাজে তুলনামূলক আয় কম

ডাটা এন্ট্রি কাজে তুলনামূলক আয় কম

যেহেতু ডাটা এন্ট্রি কাজে আপনার প্রতিভার মূল্যায়ন হয় না বরং সময়ের মূল্য দেয়া হয় তাই এই সেক্টরে আয় তুলনামূলক কম। একজন Skilled Person তার কাজের কোয়ালিটির ওপর ভিত্তি করে পারিশ্রমিক আদায় করে। দেখা যায় কোনো বিশেষ একটি কাজ সে তার প্রতিভা দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটে শেষ করতে পারে এবং সেই কাজের জন্য চার্জ করে ১০ ডলার। আর আপনি সারাদিন ডাটা এন্ট্রি করে আয় করেন ১০ ডলার। এক্ষেত্রে কিন্তু সময়ের থেকে প্রতিভার মূল্যায়ন তুলনামূলক বেশি।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন বিশেষ স্কিল প্রয়োজন এমন সব কাজের মূল্যায়ন বেশি। আর সেক্ষেত্রে আয় তো বেশি হবে-ই। অন্য দিকে ডাটা এন্ট্রি কাজে কোনো বিশেষ স্কিল প্রয়োজন নেই বলে এই সেক্টরে সময়ের মূল্যায়ন করে পেমেন্ট করা হয়। সেক্ষেত্রে আয় তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।

৪. ডাটা এন্ট্রি কাজের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় না

ডাটা এন্ট্রি কাজের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় না

সচরাচর আমরা ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে যে কাজ করি ঐ কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজের জন্য আবেদন করতে পারি। কেননা নতুন কোনো ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলে তারা কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চায়। কিন্তু ডাটা এন্ট্রি কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা ডাটা এন্ট্রি কাজগুলো এক এক সময় এক এক ধরনের হয়ে থাকে।

যেহেতু ডাটা এন্ট্রি কোনো বিশেষ স্কিল না তাই এই কাজকে একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে ক্লায়েন্ট এর সামনে তুলে ধরার কোনো মানে নেই। হয়তো আগের ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজে করেছেন পৃথিবীর বিশেষ বিশেষ দর্শনীয় স্থানের তথ্য সংগ্রহ বিষয়ক৷ কিন্তু বর্তমান ক্লায়েন্টের কাজ হলো একটি এক্সেল ফাইলের তথ্য পুনরায় অন্য একটি ফাইলে সাজানো। তাই এক্ষেত্রে আপনার আগের কাজের অভিজ্ঞতা এই ক্লায়েন্টের কাজ করার সময় কোনো প্রয়োজনে আসবে না।

মূলত ডাটা এন্ট্রি কাজ করে আপনি সাময়িক ভাবে পারিশ্রমিক পাবেন। কিন্তু এটা আপনার ভবিষ্যত সম্পদ হিসেবে কোনো কাজে আসবে না।

৫. কাজ সহজলভ্য নয়

কাজ সহজলভ্য নয়

যেহেতু ডাটা এন্ট্রি কাজ খুব সহজেই আয়ত্তে আনা যায় অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই এই কাজ করতে পারে তাই এই সেক্টরে প্রতিযোগী বেশি। দেখা যায় ক্লায়েন্ট এর তুলনায় ফ্রিল্যান্সার এর সংখ্যা বেশি। তাই কোনো কাজের অফার দেখলেই সকলে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ক্লায়েন্ট এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবথেকে কম মূল্যে কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই ডাটা এন্ট্রি কাজ খুব একটা সহজলভ্য হয় না বললেই চলে।

অন্যদিকে বিশেষ বিশেষ স্কিল সম্পন্ন কাজ করানোর জন্য ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পান না। পেলেও তাদের চাহিদা বা পারিশ্রমিক বেশি থাকে। ফলে ক্লায়েন্ট বাধ্য হয়ে তুলনামূলক বেশি পেমেন্ট করে কাজ করিয়ে নেয়। আর কাজ-ও পাওয়া যায় অহরহ। কেননা এই কাজ গুলো চাইলেই যে কেউ করতে পারে না তাই প্রতিযোগী কম থাকে।

আর ডাটা এন্ট্রি কাজে তুলনামূলক বেশি প্রতিযোগী থাকে বিধায় কাজ সহজলভ্য হয় না।

শেষকথা

যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে লং টাইম কাজ করতে চান তাদের জন্য ডাটা এন্ট্রি কাজ না। কিন্তু যাদের চিন্তাভাবনা অনলাইনে টুকটাক কাজ করে টাকা আয় করবো এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো চাকরিতে জয়েন হয়ে যাবো তারা এই ডাটা এন্ট্রি কাজ আপাতত করতে পারেন। এই কথাগুলো কিন্তু অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফ্রিল্যান্সার দের মতামত। নিতান্তই মনগড়া কোনো কথা নয়। তাই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফল ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে কোডিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, কনটেন্ট রাইটিং ইত্যাদি বিষয়ের যে কোনো একটির ওপরে ফোকাস করুন।

আশাকরি আজকের টিউনটি আপনাদের ভালো লেগেছে। টিউনটি ভালো লাগলে প্লিজ একটি জোসস করে দিন। অনলাইন ইনকাম ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক নতুন নতুন টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন৷ ধন্যবাদ।

Level 4

আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 26 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস