ফ্রি কোর্স নিবেন নাকি পেইড কোর্স? [পর্ব-০২] :: পেইড কোর্সের কয়েকটি সুবিধা

টিউন বিভাগ ফ্রিল্যান্সিং
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 3
৪র্থ সেমিস্টার, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

পোস্টটির প্রথম পর্ব কিছুদিন আগে আপলোড করেছিলাম। যারা টিউনের প্রথম পর্ব দেখেছিলেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ফ্রি কোর্স বা ফ্রি রিসোর্স আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রি কোর্স থেকে আপনি আপনি যতটা স্কিলফুল হতে পারবেন তা কখনই একটি পেইড কোর্স থেকে হতে পারবেন। এর সমস্ত কারণ আমি আপনাদের সাথে খুবই ভালোমত টিউনের প্রথম পর্বে লিখে বুঝিয়ে দিয়েছি।

আমার এই টিউনের প্রথম পর্ব যারা দেখেননি তারা যেয়ে দেখে আসতে পারেন। এতে আপানার সময় নষ্ট হবেন। বরং আপনি স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে খুবই ভালো একটি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এর পর আপনি আমার টিউনের দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ এই পর্বটিতে নজর দিন। তাহলে আপনি স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

অন্যথায় আপনি পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন ন। তো আমি আর কথা না বাড়িয়ে আমার আজকের টপিক নিয়ে কথাবলা শুরু করে দিচ্ছি। আজকে আমরা একটি পেইড কোর্স কতোটা গুরুত্বপূর্ন এবং একটি পেইড কোর্স কিনলে আপনি কি পরিমাণ লাভবান হবেন সেটা নিয়ে আজকের টিউন এ আমি আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করে দেই।

১. কোর্স গাইডলাইন

একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন পেইড কোর্স করলে আপনি আপনার ক্যারিয়ার বিল্ড আপ এর জন্য যথেষ্ট পরিমান গাইডলাইন পাবেন। এমনকি সেই গাইডলাইন অনুযায়ী চলার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা আপনি যেই প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করবেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে গাইডলাইন মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করে দিয়ে আপনি যেই কোর্স করবেন সেই কোর্স করে যেন আপনি সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন সেদিকে নজর রাখবে। অর্থাৎ আপনার কোর্স যদি কোয়ালিটি সম্পন্ন হয়, তাহলে সেই কোর্স শেষ করলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন, যেই গাইডলাইন মোতাবেক আপনার কোর্স শেষে ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য কোর্স শেষ করার পর পরবর্তী কার্যক্রম আপনাকে নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করে নিজের জন্য একটি সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন এমন একটি গাইডলাইন আপনাকে দেওয়া হবে।

আপনাকে সেই গাইডলাইন মোতাবেক গাইডলাইনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে এবং কার্যক্রম সম্পন্ন করার সময় যদি আপনি কোনো সমস্যায় পড়েন বা কাজে কোথাও আটকে যান তাহলে সেটা প্রতিষ্ঠান এর লোকদের জানালে তারা আপনার সমস্যাটি সমাধান করে দিবে। এক্ষেত্রে আপনাকে খুব ভালো একটি প্রতিষ্ঠান এবং ভালো একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন কোর্স ক্রয় করতে হবে। প্রতিষ্ঠান ভালো হলে প্রতিষ্ঠান এর লোকেরা নিজেরাই খোঁজ খবর নিয়ে আপনি সফল হতে পেরেছেন কি না সেটা জানার চেষ্টা করবে। এবং যদি আপনি কোনো সমস্যায় পড়ে আটকে যান তাহলে আপনাকে প্রয়োজনীয় যত রকমের করা দরকার তারা করবে।

তবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান আপনাকে খুঁজে বের করে নিতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের যেকোনো কোর্স এ এই ধরনের গাইডলাইন এবং সাপোর্ট দেওয়া হয় না। যদি আপনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে সক্ষম হন তবে তবে আপনি সময় এবং টাকা ম্যানেজ করে কোর্সটি কিনে ফেলুন। এবং এখন থেকেই পরিশ্রম করা শুরু করুন সফলতা মিলবেই। তো এখন চলে যাই দ্বিতীয় টপিকে।

২. স্ব-শৃঙ্খলা বজায় রাখা

আপনাকে স্ব-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। স্ব-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবেন তো? আপনি ফ্রি রিসোর্স থেকে ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই এই কাজটি করতে হবে। মানে হচ্ছে আপনাকে নিজ দায়িত্তে নিজের নিয়ম শৃঙ্খলা নিজেকেই তৈরি করতে হবে। এবং সে অনুযায়ী নিজের প্রতিদিনের কাজ আপনাকে নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হবে।

যে দায়িত্ব স্কুল কলেজে গুলোতে আপনার ইন্সট্রাকটর এর উপর সে দায়িত্ব আপনার নিজের কাধে নিতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে আপনার একজন ইন্সট্রাকটর থাকবে যে কি না আপনার প্রতিদিনের হোমওয়ার্ক ঠিকঠাক মতো করেছেন কি না সেটায় খেয়াল রাখবে। তাছাড়া আপনি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুন ঠিকমতো মানছেন কি না সেটাও খেয়াল রাখবে। কিন্তু ফ্রি কোর্সে তো আপনি কোনো ইন্সট্রাকটর পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে এই দিক দিয়ে আপনার নিজের ইন্সট্রাকটর নিজেকেই বানিয়ে নিজের নিয়ম-শৃঙ্খলা নিজেকেই গঠন করে কাজ করতে হবে।

ব্যাপারটা আসলে যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে এই ব্যাপারটা আসলে ততটাই কঠিন। আপনি। একবার চিন্তা করেই দেখুন না। আমাদের দেশে যদি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় না থাকতো তাহলে আমাদের দেশের অবস্থা কি হতো? কেউ নিজের ইচ্ছায় নিজ দায়িত্বে স্ব-শৃঙ্খলা বজায় রেখে লেখাপড়া করতে চাইতো?

কখনই আমাদের দেশে বলতে গেলে শতকরা ৫% মানুষই স্ব-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে। বাকিরা সবাই স্কুল কলেজ থেকে শৃঙ্খলা শিখে থাকে। তো আপনি যদি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেন তাহলে আপনার পেইড কোর্স এর কোনো প্রয়োজন নেই। আর যদি না পারেন তাহলে কোয়ালিটি সম্পন্ন একটি কোর্স করুন। এবং তারপরেও যদি আপনি দেখেন আপনি প্রতিষ্ঠান এর নিয়ম কানুন সঠিক ভাবে পালন করতে পারছেন না তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য নয়, আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই লাইন থেকে বেরিয়ে আসুন।

৩. টপিক এর সীমাবদ্ধতা

আমরা সকলেই জানি যে, ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পেশায় কাজ করা যায়। যেমন:- ডিজাইনার, ডেভেলপার, মার্কেটার, রাইটার, এডিটর, অপারেটর, প্রোগ্রামার, Content Creator ইত্যাদি। এবং এই প্রত্যেকটি পেশার মধ্যই আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ভাগ করা আছে। যেমন ধরেন ডিজাইন এর ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, থাম্বনেইল ডিজাইন, টেমপ্লেট ডিজাইন, ইউ আই ডিজাইন, ইউ এক্স ডিজাইন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি যেই ডিপার্টমেন্ট গুলোর নাম লেখলাম সেগুলো হচ্ছে শুধুমাত্র ডিজাইন এর ডিপার্টমেন্ট। আমি ডেভেলপার নিয়ে কথা বলতে গেলে এইরকম আরো ১০ টা ১২ টা ডিপার্টমেন্ট বেরিয়ে আসবে। শুধু তাই নয়, আমি মোট যতগুলো স্কিল এর নাম লিখেছি সবগুলো স্কিল এর মধ্যেই প্রায় ১০ টা ১২ টা করে ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। যদিও আপনারা বেশিরভাগ লোকেরাই এইসব ব্যপারে ভালোমত জানেন তবুও আমার টিউনটি আরও সহজলভ্য করার সুবিধার্থে আমাকে এইসব ব্যাপারেও মানে মার্কেটপ্লেস এর কাজের ধরন গুলোর ব্যাপারেও বলতে হচ্ছে।

তো আপনারা যেহুতু জেনেছেন প্রত্যেকটি পেশার আলাদা করে অনেক গুলো করে ডিপার্টমেন্ট রয়েছে সেহুতু জেনে রাখুন, এই স্কিল গুলো শুধুমাএ আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই ডিপার্টমেন্ট গুলোর মধ্যেও আবার আলাদা আলাদা ভাবে ১০ টা ১২ টা করে সাব ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। অর্থাৎ ফ্রীল্যান্সিং এ ছোটো ছোটো করে অনেক গুলো স্কিল রয়েছে। যেখান থেকে আপনাকে সবার প্রথমে যেকোনো একটি স্কিলে পুরোপুরি দক্ষ হতে হবে।

এর পর অন্য একটি স্কিল নিয়ে স্টাডি করতে যাবেন। তো অবশ্যই যেকোনো একটি স্কিল সম্পুর্ণ রূপে ডেভেলপ করতে বিভিন্ন রকম ল্যাঙ্গুয়েজ, বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার এর বেসিক অথবা স্পেসিফিক কিছু পার্ট সম্পর্কে স্টাডি করতে হবে। আপনি যদি একটি স্কিল অর্জন করতে চাইলে সে স্কিল টি অর্জন করার জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলোর সব কিছুরই ১০০% শিখতে চান তাহলে হয়তো আপনার সারা জীবন লেগে যাবে তারপরেও আপনার শেখার শেষ হবে না। জি, ফ্রীল্যান্সিং জগৎ টা কিছুটা এইরকমই। এখানে যদি আপনি কোনো রকমের ভুল পথের দিকে এগোতে থাকেন তাহলে হয়তোবা আপনার সারা জীবন সময়ও লেগে যাবে কিন্তু আপনার সেই পরিপূর্ণ স্কিল টা অর্জন করা শেষ হবে না।

তাই বলতে পারি যে আপনি বিভিন্ন সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, ল্যাঙ্গুয়েজ, ফ্রেমওয়ার্ক, ইত্যাদি এর বিষয়ের একটু একটু করে স্পেসিফিক কিছু একটা শিখে নিয়ে সব কিছু একসাথে মিলাতে যাবেন বা একটিতে সাথে আরো একটির সম্পর্ক খুঁজে বের করার বা সম্পর্ক যোগ করার চেষ্টা করার চেষ্টা করবেন। ঠিক তখনই আপনি কোনো একটি বিষয়ের উপর আপনি একটি পরিপূর্ণ স্কিল অর্জন করতে পারবেন। যেমন ধরেন একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনার এর যা যা শেখা প্রয়োজন হয়। Html Css এবং ওয়ার্ডপ্রেস। এখানে আপনাকে একজন পরিপূর্ণ ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনার হতে গেলে Html এবং Css এর বেসিক এবং ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টোমাইজেশনের ফুল ১০০% শিখে নিতে হবে। কিন্ত আপনি যদি Html, Css প্রয়োজন হবার কারণে যদি আপনি Html পুরো ১০০% শিখতে যান আবার সি এস এস পুরো ১০০% শিখতে তাহলে হয়তো আপনার অনেক বেশি সময় লেগে যাবে কিন্তু আপনি একজন পরিপূর্ণ ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনার হতে পারবেন না।

এবং একটা সময়ে আপনার মনে হবে যে, এই ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনিং এ অনেক বেশি লাগে এবং এই ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনিং আপনার জন্য নয়। ভাই সবকিছু নিয়ে স্কিল অর্জন করতে বেশি সময় লাগে না। অনেক অনেক স্কিল রয়েছে খুব অল্প সময়ে কাজ শেখা শেষ করে মার্কেটপ্লেস এ অ্যাপ্লাই করা যায়। এই ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইনিং এই বেশি একটা সময় লাগে না। আপনারা যদি বেশি বুঝে বেশি বেশি করে শিখতে যেয়ে সময় নষ্ট করে ফেলেন তাহলে তো আপনার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব হবে না।

আপনাকে কোন বিষয়ের উপর কতটুকু দক্ষতা অর্জন করতে হবে এটা সম্পুর্ণ আপনার নিজেকে নেট থেকে বের করে নিতে হবে। এবং নেট দেওয়া গাইডলাইনটি ভুল হলে সেটার দায় ভার আপনাকেই গ্রহণ করতে হবে। তবে যদি আপনি একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন পেইড এইসব কিছুরই ঝামেলা পোহাতে হবে না। এই কোয়ালিটি সম্পন্ন পেইড কোর্স এ আপনি আপনার স্কিল টি অর্জন করার জন্য যা যা শেখা দরকার সব কিছুই আপনি যেই কোর্স করবেন সেই কোর্সের আউটলাইনএ পেয়ে যাবেন।

অথবা আপনি যেই কোর্স করবেন সেই কোর্স আপনাকে স্কিলফুল হতে যেই যেই বিষয় সম্পর্কে যতটুকু শেখা প্রয়োজন আপনাকে ঠিক ততটুকুই শিখিয়ে আপনাকে কম সময়ে সঠিক পরিমাণে স্কিলফুল হতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ আপনি একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন পেইড কোর্স কিনতে পারলে আপনার খুব কম সময়ে কোনো কাজের সঠিক স্কিল অর্জন করার সুযোগ থাকবে। যেটা আপনি ফ্রি কোর্স করে পাবেন না।

শেষ কথা

তো কথা না বাড়িয়ে আজকের পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত করে দিচ্ছি। পোস্টটি লিখতে লিখতে অনকেটাই বড় হয়ে গেছে। যার কারণে এই টিউনের আরো একটি পর্ব লিখতে হচ্ছে। এই পর্বেই পোষ্টটি কমপ্লিট করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। আপনারা সকলেই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, আগামী পর্ব খুব দ্রুতই নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।

Level 3

আমি মো মারুফ শেখ। ৪র্থ সেমিস্টার, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 29 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস