বাংলাদেশে ফরেক্স বা ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট

টিউন বিভাগ ফ্রিল্যান্সিং
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

বাংলাদেশে দিন যত যাচ্ছে, ফরেক্স ট্রেডিং তত বেশি পরিচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, অনলাইনে আয় সম্পর্কে যারা ঘাটাঘাটি করে, তাদের বেশিরভাগই ঝুঁকছেন ফরেক্স ট্রেডিংয়ের দিকে। অনেকে আবার অনেক আগে থেকেই পরিচিত ফরেক্স ট্রেডিংয়ের সাথে। তবে নতুন ভাবে যারা ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে চান, অথবা একটি সাইড বিজনেস পরিচালনা করতে চান, তাদের সবারই কিছু প্রশ্ন থাকে। বাংলাদেশ থেকে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করা যায় কিনা এসম্পর্কিত। ফরেক্স ট্রেডিং থেকে আয় করা, কোনো দেশ ভেদে হয়না। যেহেতু এটি একটি গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট, সেক্ষেত্রে ফরেক্স ট্রেডিংয়ে বাংলাদেশ থেকে আয় করাটা কঠিন কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাজার, ফরেক্স ট্রেডিংয়ে বাংলাদেশে উপযুক্ত বিধিনিষেধ, এবং আরো অন্যান্য কিছু তথ্য জেনেই ফরেক্স ট্রেডিংয়ে বাংলাদেশে মাঠে নামাটা উচিত।

ফরেক্স ট্রেডিং কি?

ফরেক্স ট্রেডিং মূলত এমন একটি মাধ্যম যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা আন্তর্জাতিক ভাবে কেনা বেচা হয়। ফরেক্স শব্দটা ফরেইন এক্সচেঞ্জের ছোট রূপ। এটি একটি মুদ্রাকে অন্য একটি মুদ্রায় রুপান্তরিত করার মাধ্যম। আর এই প্রক্রিয়াটি হতে পারে বাণিজ্যিক কোনো কারনে, পর্যটন অথবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে আরো সহজতর করার লক্ষ্যে।

ফরেক্স মার্কেটে সপ্তাহে পাঁচদিন, ২৪ ঘন্টাই কারেন্সি ক্রয় বিক্রয় করার সুযোগ থাকে। এবং মার্কেটটিতে বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ী, সকলেই ট্রেড করে।

বাংলাদেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের পুরোনো দিন

ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্তে মুদ্রা বিনিময় করার অনুমতি দেয়৷ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাজারের বিবর্তন, দেশের বিনিময় হার ব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কার্যত কোনো বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ছিলোনা। সরকারী এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক "বাংলাদেশ ব্যাংক" ই ছিলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার একমাত্র পরিচালনাকারী। আর এই ব্যাংকটি সরকারী ভাবে নির্ধারিত বিনিময় হারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা এবং সরবরাহকে ভারসাম্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু যখন থেকে পৃথিবী কারেন্ট একাউন্ট কনভার্টিবিলিটি সিস্টেমের সাথে পরিচিত হতে থাকে, তখন থেকে এই প্রথাগত নিয়মটি উঠে যেতে শুরু করে।

স্বাধীনতার ঠিক পরে বাংলাদেশী মুদ্রার যুদ্ধটা ছিলো পাউন্ড অথবা স্টার্লিংয়ের সাথে, কিন্তু শেষমেশ আমরা অবস্থান করতে পারি, ভারতের রূপির কাছাকাছি। সে সময় অল্প সময়ের মধ্যেই টাকার মান বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে কমতে শুরু করে, ১৯৭৫ সালের মে মাসে এর যথেষ্ট অবমূল্যায়ন হয়।

তারপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আরো একটি ভাসমান পদ্ধতি অবলম্বন করে, যেটা চলতে থাকে ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত। নতুন কারেন্সি ওয়েটেড বাস্কেট মেথডের সাথে পরিচিত হওয়ার পরই এই পরিবর্তনটি সাধিত হয়। ১৯৮৩ সালে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নীতি ট্রেড ওয়েটেড বাস্কেট পদ্ধতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। যখন আমেরিকান ডলারকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি মুদ্রা হিসেবে ধরা হয়। এর মাঝেই জন্ম হয় সেকেন্ডারি এক্সচেঞ্জ মার্কেট বা এসইএমের। এই মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ রেটে বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, এবং এটি একটি নিয়ন্ত্রিত বাজারের জন্ম দেয়।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমটা মূলত "রিয়াল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট" অথবা আরএফইআরের মাধ্যমে অনেকগুলো মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান নির্নয়ের পদ্ধতিতে অবলম্বন করা হয়৷ যেটা কিনা মুদ্রার এক্সচেঞ্জ রেট টা সব সময় ভারসাম্যের মাধ্যমে রাখার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অনুমোদিত ডিলার এবং গ্রাহক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট  দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের জন্যে বাংলাদেশি ব্যাংক ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি একাজটি করেনা। এর পরিবর্তে তারা নিয়মিতভাবে বাজার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ করে। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাজারে অংশগ্রহণকারীদের জন্যে দেশের অর্থনৈতিক নীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিসার্ভ পজিশন, এবং সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থান বিবেচনায় বিভিন্ন নীয়ম নীতি প্রণয়ন করে থাকে। এবং নিয়ম নীতি গুলো মূলত বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হওয়া এক্সচেঞ্জ কন্ট্রোল ম্যানুয়ালে প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা অনুমোদিত ডিলারই শুধু প্রথাগত ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটে লেনদেন করতে পারবে৷ দেশে এবং বিদেশে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত কিছু ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার রয়েছে।

আর তাই স্বাধীন ট্রেডার হিসেবে ট্রেডিং করতে ইচ্ছুক যারা, তাদের জন্যে বাংলাদেশের প্রথাগত বৈদেশিক মুদ্রা বাজার থেকে বের হয়ে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের দিকে ধাবিত হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।

বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিং বৈধ কিনা

বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিং বৈধ কিনা, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। বাংলাদেশ ব্যাংক এক সময় ফরেক্স ট্রেডিং কে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলো। যাতে বলা হয়েছিলো, ইন্টারনেটে ফরেক্স ট্রেডিং বা ডিলিং থেকে বড় মাত্রায় লাভের আশা দেখিয়ে যারা বিজ্ঞাপণ প্রচার করছে, তাদের বিজ্ঞাপণে আকৃষ্ট হয়ে যেনো মানুষজন ক্ষতির সম্মুখীন না হন। এই বিজ্ঞপ্তিটিতে সরাসরি ফরেক্স ট্রেডিং বা অনলাইন ট্রেডিং গুলোকে অবৈধ বলা না হলেও, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈধ মানি ট্রান্সফারের সহায়তার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু শংকাটা আসলে সেখানেই। বাংলাদেশে বৈধ মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমটা শুধুমাত্র হাতে ধরা যায় এমন মুদ্রার লেনদেনের কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে অনলাইনে ইন্টারনেটে কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ফরেক্স ব্রোকার একাউন্টে ডলার ডিপোজিট করার সুযোগ এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে নেই। তাই যারাই ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করছে, অন্য কোনো থার্ড পার্টির মাধ্যমে তারা তাদের একাউন্টে ডলার ডিপোজিট করছে।

তবে ধারণা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পেপাল অথবা অন্য যেকোনো ভার্চুয়াল কারেন্সি অনুমোদন পাবে। তখন এই ডলার ডিপোজিট নিয়ে গ্রাহককে ভুগতে হবে না। এই কার্ডগুলো ব্যবহার করে যে কেউ যেকোনো মার্কেটে ডলার ডিপোজিট করতে পারবে।

বাংলাদেশে ফরেন এক্সচেঞ্জের নিয়মনীতি মেনে ট্রেডিং করলেই সেটিকে বৈধ ট্রেডিং বলে গণ্য করা হবে। তবে এখনো যে পেপাল বা নেটেলার ডলার কেনা-বেচা হচ্ছে না এমন নয়। এখনো অনেক ব্যক্তিই এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেডিং করে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশ থেকে কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করা যায়ঃ

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, বাংলাদেশ থেকে ফরেক্স ট্রেডিং কিভাবে করা সম্ভব। উপায় অবশ্যই আছে। প্রথমেই আপনাকে ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ, এই ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মূল ভিত্তিটিই আসলে অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। তাই অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার জানা না থাকলে, এই মার্কেটে খুব বেশি লাভবান আপনি হতে পারবেন না। তাছাড়া, ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ছাড়াও এই মার্কেট থেকে আয় করা সম্ভব নয়৷

আপনার যদি ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সত্যিই আগ্রহ থাকে, তাহলে যেকোনো একটি ফরেক্স ব্রোকারে একাউন্ট খুলে আপনার বাহিরের দেশের কোনো বন্ধু বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আপনার নেটেলার অথবা পেপাল একাউন্টে ডলার ট্রান্সফার করবেন। এবং সেই ডলারগুলো ব্রোকার একাউন্টে ডিপোজিট করবেন।

তারপর মার্কেট এনালাইসিস করে সঠিক সময়ে মার্কেটে এন্ট্রি নিয়ে যখন আপনার প্রফিট হবে, তখন সেই প্রফিটের অংশটি আপনি আপনার পেপাল অথবা নেটেলার একাউন্টে ট্রান্সফার করে আপনার বন্ধু অথবা পরিচিত যেকারো একাউন্টে পাঠিয়ে দেবেন, এবং তাকে বলবেন, সে যেনো এই অর্থটি আপনাকে রেমিট্যান্স হিসেবে ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। ব্যস, হয়ে গেলো সমাধান।

দেশে থেকে বৈধভাবে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের এর থেকে ভালো সমাধান আর কি হতে পারে।

শেষকথা

ফরেক্স ট্রেডিং মার্কেটটি এমন কোনো মার্কেট নয়, যেখানে আপনি আসলেন, হুট করেই লাভ করে চলে গেলেন। এখানে প্রয়োজন হবে অধ্যাবসায় এবং ধৈর্যের। যার ধৈর্য যত বেশি, সে তত বেশি এই মার্কেটের জন্যে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। বর্তমান বাংলাদেশে অন্যান্য অনেক দিকে সময় দেওয়ার চেয়েও ভালো যদি আপনি ফরেক্স ট্রেডিং শিখতে পারেন। সঠিক উপায়ে ফরেক্স ট্রেডিং শিখতে পারলে আপনি আপনার ধারনার চেয়েও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আর তাই রিস্ক ফ্যাক্টর ইভালুয়েশন এবং মানি ম্যানেজমেন্ট ঠিক রেখে আপনি চাইলেই হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ফরেক্স ট্রেডার। বাংলাদেশে বসে থেকেই।

Level 1

আমি শাওন সাহা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস