ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমাদের সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ ও সমস্যাগুলো

freelancing

কোন সন্দেহ নেই যে আমাদের বর্তমান যুগটা হল তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, আর সামনে যে যুগটি আসছে সেটাকে ধরা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। প্রোগ্রামিং বা কোডিং এর বিকাশের ফলে একদিকে যেমন গতানুগতিক কাজের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে আসছে, ঠিক অন্যদিকে অনলাইন-ভিত্তিক কাজের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।

এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে স্বাধীনভাবে, ঘরে বসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। ফ্রিল্যান্সিংয়ে একদিকে যেমন রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা। আয়ের দিক থেকেও এখানে আছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। যারা এসকল কাজে খুবই দক্ষ, তাদের অনেকের মাসিক আয় কয়েক হাজার ডলার।

ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেয়। এদের মধ্যে অন্যতম সাইটগুলো হল upwork.com, fiverr.com, freelancer.com, peopleperhour.com, guru.com99designs.com। এসব মার্কেটপ্লেসে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে। এসব জায়গায় প্রোগ্রামিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন, গেম তৈরি, অ্যানিমেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ব্লগ ও আর্টিকেল রাইটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ নানা বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই পেশার সাথে যুক্ত। তবে এই সেক্টর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ধারণার অভাব, অন্যদিকে যারা কাজ করতে আগ্রহী তারাও ভুগেন সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে। অনেকেই এই সেক্টরকে অনলাইন-ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতারণার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। এদের মধ্যে অন্যতম হল পিপিসি বা পিটিসি সাইটগুলো। এই জাতীয় যত সাইট আছে সবই মুটামুটি ভুয়া। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ পিটিসি সাইট আছে যেগুলো ক্লিক করলেই ডলার আয়ের লোভনীয় অফার দিয়ে ইন্টারনেট জগতে প্রতারনা করে আসছে। আসল কথা হল কোন পিটিসি সাইটই টাকা দেয় না।

আরেকটি বড় প্রতারণা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর নামে এমএলএম। ফ্রিল্যান্সিং মানেই হচ্ছে মুক্ত পেশা, আর এমএলএম হল দায়বদ্ধতার পেশা। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি একটা নিদিষ্ট কাজ কোন ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠানের সাথে করে তার বিনিময়ে টাকা পাবেন, আর এমএলএম হল মানুষের কাছ থেকে টাকা এনে অন্যের পকেটে তা জমা রেখে মানুষের পেছনে পেছনে ঘুরা। সুতরাং এই দুই জগত কখনো এক হতে পারে না।

ইদানীং কালে নতুন আরেকটি জিনিস যোগ হয়েছে যার নাম ফরেক্স ট্রেডিং। অনেকেই হয়তবা অবাক হবেন এর নাম উল্লেখ করাই, তবে এটা শেয়ার বাজার থেকেও জঘন্য একটা ব্যবসা, পুরোপুরি একটা জুয়া। আমার জানামতে আজ পর্যন্ত কাউকে পাইনি যে বলতে পারবে এই কাজ করে দুই টাকা বাড়ি নিয়ে এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন-ভিত্তিক বেটিং সাইট এবং বিটকয়েন আর্নিং ও বেচাকেনাসহ অনান্য অনেক মাধ্যমে সময় ও টাকা বিনিয়োগ করে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। এধরণে সকল কাজকে এক শ্রেনীর অসাধুচক্র ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং বলে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছেন। আসলে এগুলোর কোনটিই আউটসোর্সিং জাতীয় কাজ নয়।

তবে আমি মনে করি বর্তমানে সবচাইতে বড় প্রতারণার জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারগুলো। হাজার হাজার ডলার আয়ের অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ এখন খুবই লাভজনক একটা প্রতারণা ব্যবসায় শুরু করে দিয়েছে। এরা হালে আরও পানি পেয়েছে সরকারের কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই খাতে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট দেয়ায়! সেই সাথে আমাদের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকাও কম নয়। লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এসব নিম্নমানের ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে আসলে কিছুই শিখছে না উল্টো তাদের বাবামায়ের কষ্টের টাকা নষ্ট করছে। এর ফলাফল হল কোর্স শেষে তারা টেকনিক্যালি তেমন কিছুই শিখতে পারছে না, আর যা শিখছে তা হল কীভাবে মার্কেট-প্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় ― বড়জোর কিছু স্পামিং মার্কা ইন্টারনেট মার্কেটিং।

এসকল কারণে আউটসোর্সিংয়ে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে আছি। যেখানে ইন্ডিয়া ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিংকে একটা মেইনস্ট্রীম পেশার মর্যাদা দেয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে এখনও আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে সবাইকে দশবার ভাবতে হয়। যেহেতু পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং এখনও বাংলাদেশে একটি স্বীকৃত পেশা না, আমার মত অনেক ফ্রিল্যান্সারদের নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করতে হয়। এর আসল কারণ হল, তার কাজ বা কাজের প্রক্রিয়া অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ধারণার অভাব।

এই সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে আমরা ঈশ্বরদীতে ৫ দিন-ব্যাপী একটি ফ্রি আউটসোর্সিং কর্মশালার আয়োজন করেছি। এই কর্মশালার ১ম দিনটিতে একটি ফ্রি সেমিনার হবে, যেটি সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে ওই দিন ব্যতিত, বাকি সব কটি দিনের জন্য আসন সংখ্যা সীমিত! সেই কারণে, ফর্ম পূরণের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবলমাত্র প্রথম ৩০ জনকে এই ফ্রি কর্মশালাতে সুযোগ দেওয়া হবে৷ কম্পিউটারে মৌলিক ধারনা সম্পন্ন যে কেউ এই কর্মশালায় অংশ নিতে পারবে। যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন কিন্তু সঠিক গাইডলাইন পাচ্ছেন না, অথবা এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ধারণা নেই, তাদের কথা চিন্তা করেই কর্মশালাটি ফ্রি করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আমাদের ইভেন্টের পেজে (https://www.facebook.com/events/254687511679085/) অথবা যোগযোগ করুন ০১৭৩৭২৪৪৭৭২ নাম্বারে।

Level 1

আমি ইমতিয়াজ ইবনে আলম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 8 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

A freelance medical writer with a knack for making complex medical or scientific literature understandable. Enjoys writing medical contents of different types, including regulatory and research-related contents, disease or drug-related literature, publication articles like journal manuscripts and abstracts, and content for websites, health-related magazines or newspapers.


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অনেক তথ্যবহুল টিউন, ধন্যবাদ ইমতিয়াজ ইবনে আলম ভাই।

khub sundor post vai

প্রিয় ইমতিয়াজ ইবনে আলম,

আমি টেকটিউনস কমিউনিটি ম্যানেজার, শোয়াইব,

টেকটিউনস থেকে আপনার সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করতে চাচ্ছি। টেকটিউনস থেকে আপনার সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করার জন্য http://techtun.es/2obSQxE লিংকটিতে ক্লিক করে আপনার সাথে যোগাযোগের প্রয়োজনীয় তথ্য সাবমিট করে আমাদের সাহায্য করবেন আশা করছি।

ছদ্ম ছবি, নাম, ইমেইল, ফোন, ঠিকানা ও সৌশল Contact পরিহার করে আপনার প্রকৃত/আসল ছবি, নাম, ইমেইল, ফোন, ঠিকানা ও সৌশল Contact দিন। যেহেতু টেকটিউনস থেকে আপনার সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করা হবে।

সাবমিট করার পর আমাদের এই ম্যাসেজের রিপ্লাই আপনার কাছ থেকে আশা করছি।

বিশেষ নোট: আপনি যদি পূর্বে আমাদের এই ম্যাসেজ পেয়ে ফর্মটি সাবমিট করে থাকেন তবে আর পুনরায় সাবমিট করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি আপনি এখনও আমাদের এই ফর্মটি পেয়ে সাবমিট করে না থাকেন তবে অবশ্যই এখনই সাবমিট করুন এবং সাবমিট করার পর অবশ্যই আমাদের এই ম্যাসেজের রিপ্লাই দিন।

ধন্যবাদ আপনাকে।