আপওয়ার্কের ৩০ দিন সংক্রান্ত নতুন নিয়ম এবং কিছু কথা।

আপওয়ার্কের নতুন সিস্টেম “৩০ দিনের বেশি অ্যাকাউন্টে কোনো আয় না হলে প্রোফাইল প্রাইভেট হয়ে যাবে।” আর এই সিস্টেম কার্যকর হয়েছে ১ জুন থেকে। ৩০ জুন বা ১ জুলাই থেকে নয়। বিস্তারিত একটু পরে বলছি।

আগে জানতে হবে পাবলিক এবং প্রাইভেট এর মানে কি?

পাবলিক:

আপনি সকল জবে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। যে কোনো ক্লাইন্ট আপনাকে ইনভাইট করতে পারবে অথবা আপনাকে সরাসরি অফার করতে পারবে। অর্থাৎ অ্যাপ্লাই না করলেও ক্লাইন্ট আপনার প্রোফাইল সার্চ করে বের করতে পারবে। তাই অ্যাপ্লাই না করেও জব পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অনেক ফ্রিল্যান্সার ই আছেন, যাদের প্রোফাইল নিজেরা প্রাইভেট করে রাখেন, আপনি চাইলেও করতে পারেন। সেটিং এ গিয়ে। এটা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন কাজের খুব প্রেশার থাকে তখন অনেকেই এমন করে থাকেন, যাতে কোনো ইনভাইটেশন না আসে।

আপওয়ার্কের নতুন সিস্টেম:

আপনি যদি ৩০ দিনের বেশি আয় না করেন তাহলে আপনার প্রোফাইল নিজে থেকেই প্রাইভেট হয়ে যাবে। এর ফলে আপনি কোনো ইনভাইটেশন পাবেন না। যদি কোনো ক্লাইন্ট ইনভাইটেশন সেন্ড করার জন্য ফ্রিল্যান্সার সার্চ দেয় তখন সে আপনাকে খুঁজে পাবে না। যাদের রেগুলার আয় আছে অর্থাৎ যারা অ্যাক্টিভ শুধু তারাই ইনভাইটেশন পাবে।

আর এই গণনাটা হবে প্রতিদিন। প্রতি মাসের ১ তারিখ এ এমন না। ধরুন আপনার শেষ আয় হলো এই মাসের ১০ তারিখ। তারপর আর কোনো আয় হলো না, ৩০ দিন পেরিয়ে গেল। তাহলে পরবর্তী মাসের ১১ তারিখ আপনার প্রোফাইল অটোমেটিক ভাবে প্রাইভেট হয়ে যাবে।

১লা জুন। ওইদিনের পর থেকে পরবর্তী ৩০ দিন অর্থাৎ জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে যাদের অ্যাকাউন্টে কোনো আয় আসবে না তাদের প্রোফাইল ১লা জুলাই প্রাইভেট হয়ে যাবে। অর্থাৎ সিস্টেমটা অলরেডি চালু হয়ে গেছে।

কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই, আপনি যেকোনো সময় যেকোন জবে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। এবং যেদিন আপনার আবার আয় হবে সেদিন প্রোফাইল পাবলিক করার অপশন আনলক হয়ে যাবে। বিষয়টা কিছুটা কম্পিউটারের স্লীপ মুডের মত। ৩০ মিনিট সেট করা থাকলে ৩০ মিনিট কম্পিউটারে কোনো কাজ না করলে, স্ক্রীন স্লীপ মুডে চলে যায়। মাউস ধরে নাড়াচাড়া দিলে আবার অন হয়। অর্থাৎ বিষয়টাকে মাউস ধরে নাড়াচাড়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আশা করি বিষয়টা ক্লিয়ার।

প্রোফাইল সব সময় পাবলিক রাখার উপায়:

আপওয়ার্কের প্লাস মেম্বারশিপ সব সময়ের জন্য পাবলিক। তাই যাদের এটা করা আছে তাদের কোনো চিন্তা নাই। আর যাদের করা নেই, তারা চাইলে করে নিতে পারেন। তাহলে সব সময় পাবলিক থাকবে, আয় থাকুক আর না থাকুক। (প্রতি মাসে $10 চার্জ প্রোযোজ্য)

পুরতান ক্লাইন্টদের মেসেজ দিয়ে কাজ চাইতে পারেন। সব সময় কম বেশি লেনদেন থাকলে প্রোফাইল প্রাইভেট হবে না।অ্যাপ্লাইয়ের মাধ্যমে নতুন কাজ পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। একটি কাজ পেয়ে গেলে এবং পেমেন্ট পেলে প্রোফাইল আবার পাবলিক করতে পারবেন।

ইমার্জেন্সি কোনো কারনে ৩০ দিনের মধ্যে আপনার অ্যাকটিভিটি না থাকলে, যেমন গুরুতর অসুস্থ্য, ট্রাভেলিং, অ্যাকাডেমিক টেস্ট/এক্সাম। এক্ষেত্রে আপনি যথাযথ প্রমান সহ সাপোর্টে যোগাযোগ করলে আপনার প্রোফাইল পাবলিক করা যেতে পারে।

এই নিয়ম প্রযোজ্য নয় কাদের জন্য:

  • > প্লাস মেম্বারশিপ এ যারা আছেন।
  • > একদম নতুন যারা, অর্থাৎ যাদের এখন পর্যন্ত কোনো আয় হয়নি।
একদম নতুন যারা, তাদের জন্য আবার একটু প্যাঁচ আছে। নতুনদের ক্যারিয়ার বিল্ডাপ করার জন্য আপওয়ার্ক ৫০ দিন সময় দেয়। আর এটা যথেষ্ট সময়। ওই ৫০ দিনের মধ্যে আপনাকে কাজ পেতে হবে এবং আয় শুরু করতে হবে। ৫০ দিনের মধ্যে কাজ পেলেও ৫০ দিন অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই নিয়ম আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে। আর আয় না থাকলেও ৫০ দিন পর এই নিয়ম কার্যকর হবে অথবা ৫০ দিনে অতিরিক্ত বিড (60+) করলে আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড ও হতে পারে। এটা থেকে একটু ক্লিয়ার হওয়া উচিত যে নতুনদের অ্যাকাউন্ট কেন সাসপেন্ড হয়। কারন আপনি “পাওয়ারপ্লে” কাজে লাগাতে পারেননি। তাই বুঝে শুনে বল দেখে খেলুন। বল দেখলেই ছক্কা হাকাতে যাবেন না। ক্যাচ আউট বা বোল্ডও হয়ে যেতে পারেন। (বিঃদ্রঃ আমি ক্রিকেট খেলা খুব একটা দেখি না, নিজে খেলা তো দূরের কথা।)

আপওয়ার্ক এমন সিস্টেম কেন করেছে?

তিনটি কারনে এমন সিস্টেম করেছে:

  • ১। অনেকেই হায়ার্ড হওয়ার কিছুদিন পর পেমেন্ট বাইরে থেকে নেয়া শুরু করে। আপওয়ার্কে তাদের অ্যাকটিভিটি তেমন একটা থাকে না। তাই তাদেরকে বাইরে নয় আপওয়ার্কে অ্যাকটিভ রাখার জন্যই মূলত এমন সিস্টেমের প্রচলন করা হয়েছে এবং তাদেরকে আপওয়ার্কের মাধ্যমেই পেমেন্ট নেয়ায় বাধ্য করাই এই সিস্টেমের একটি উদ্দেশ্য।
  • ২। ক্লাইন্টরা সার্চ দিয়ে সবসময় যেন অ্যাকটিভ ফ্রিল্যান্সারদের খুঁজে পায়। অর্থাৎ ক্লাইন্টরা ফ্রিল্যান্সার এবং মার্কেটপ্লেস উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে পারে তার জন্যই এই সিস্টেম করা।
  • ৩। যারা রেগুলার কাজ পায় না তারা যাতে আস্তে আস্তে প্লাস মেম্বারশীপ নেয়া শুরু করে তার জন্য (এটা অলিখিত কারণ)।

আমার মতামত:

অনেকেই আপওয়ার্কের এই নিয়মটায় খুশি নন। বিশেষ করে যারা নতুন। কিন্তু মজার বিষয় হলো একদম নতুনদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয় যা আমি একটু আগে বলেছি। তবে হ্যা, যারা কেবল ক্যারিয়ার গড়তে শুরু করেছেন, অর্থাৎ মাঝে মাঝে কাজ পাচ্ছেন, তারা একটু দুঃশ্চিন্তায় আছেন। দুঃশ্চিন্তার কোনো কারন নাই। ৩০ দিন অনেক সময় (৪ সপ্তাহ)। এই সময়ের মধ্যে আপনি অন্তত একটি কাজও বা এক ডলারও আয় করতে পারবেন না? আমার মনে হয় পাওয়া উচিত। আর যদি না পান, তাহলে আপনার কমিউনিকেশন বা বিড করার সিস্টেম এ কিছুটা ঘাটতি আছে। কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে সেটা খুঁজে বের করুন।

শেষ কথা:

প্রত্যেকটি কঠিন নিয়মই ভাল কিছু বহন করে। যার ফলাফল ওই সময়ে না পেলেও ভবিষ্যতে পাওয়া যায়। আপওয়ার্ক আপনার বা আমার বা ক্লাইন্টের কারোরই খারাপ চায় না। কারন এখানে যত কাজের আদান প্রদান হবে ওদের ততই লাভ। তাই মার্কেট পরিস্কার এবং ঠিক রাখার জন্য এবং প্রফেশনালিজমের হার বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার আপওয়ার্ক তাই তাই করবে। এবং সেটা আমাদের জন্যই ভাল হবে, যদি আমরা ভাল হই।

আমরা কি সত্যিই ভাল?

আমাদের দেশে ১ লাখ ১৩ হাজার আপওয়ার্ক ইউজার। যাদের মধ্যে ১ লাখই আনপ্রফেশনাল (হুজুগে ফ্রিল্যান্সার)। মনগড়া কথা না। পরিসংখ্যান বলছে। আমি পরিসংখ্যানেরটা উল্লেখ করলাম মাত্র। আর এই হুজুগে ফ্রিল্যান্সার যত বাড়বে, আপওয়ার্কের আইন কানুন তত কঠিন হবে।
Thanks

Level 0

আমি মোছাদ্দেক হোসেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস