ফ্রিলান্সার হতে চান? আগে কাজ শিখুন

২০১২ সালের প্রথম দিকের কথা। তখন আমি আমাদের জেলার সরকারি কলেজে অনার্স করছিলাম।  ছাত্র হিসেবে খারাপ না তাছাড়া ইংরেজি ভাষাটার প্রতি ছিল আমার অঘাট কৌতূহল ও শ্রদ্ধা। তাই পড়ছিলাম ইংরেজি বিষয়ের ওপরই। প্রথম বছরটা ভাল করে পার করে আমি তখন ২য় বর্ষে।

ইন্টারনেটের এই যুগে ফেসবুকের প্রভাবটা স্বাভাবিকভাবে আমার উপরেও পরেছিল। এর ফলে আমি আস্তে আস্তে জানতে পারি অনলাইনে নাকি টাকা আয় করা যায়। প্রথম দিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলেও পরে অনলাইনের মাধ্যমে দুর-দুরান্তের বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগের ফলে নিশ্চিন্ত হই যে ব্যপারটা সঠিক। এরপর আরও নিঃসন্দেহ হলাম যখন নিজ জেলার কিছু ফ্রিলান্সারদের সাথে পরিচিত হলাম। তাছাড়া অনলাইনে কাজ করে এমন ২/১ জনের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে (নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না)। বন্ধুরা আমাকে উৎসাহ দিতে থাকে যে শুধুমাত্র ইংরেজি গল্প লিখেও নাকি টাকা আয় করা যায়। শুনে তো ভালই লাগছে। ওরা ঢাকাতে থেকে কাজ করে কিন্তু গ্রামের বাড়ি আমাদের জেলাতেই। বিশ্বাস করেন তখনো জানতাম না আসলে কি হতে চলেছে!

একদিন/ দুইদিন এভাবে যেতে যেতে ফ্রিলান্সিং এর ব্যপারটা মাথায় চেপে বসে। চিন্তা করতে লাগলাম আমি কি পারবো না! ওরা পারলে আমি কেন না!!! খুব একটা সচ্ছল পরিবারের সন্তান না আমি। তাই ভাবলাম পড়াশুনার পাশাপাশি টুকটাক কাজ করলে ক্ষতি কি? বাড়িতে বলে কয়ে একটা কম্পিউটার কিনলাম। সত্যি কথা বলতে পূর্বে আমার কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন একটা ধারনা ছিল না। তাই ২/১ মাস এমনিই টাইপিং এর জন্য অনুশীলন করতে থাকি। সাথে চলে ইন্টারনেট ব্রাউজিং। কম্পিউটার তো হল এবার অনলাইনে কাজ করবো ক্যামনে! আগেই বলে রাখি যে আমার খালাতো ভাই ওয়েব ডেভেলপিং এর কাজ করে। ঢাকাতে থাকে পরিবার সহ। ভাইয়ার সাথে কথা হয় এই ব্যপারে। উনি আমাকে জানালেন এই কাজ করে ফ্রিলান্সিং করতে তোমাকে আগে কাজ শিখতে হবে এবং কাজ শিখতে অন্তত ৬/৭ মাস অনুশীলন করতে হবে। এদিকে শুনছি ঢাকার বন্ধুরা নাকি ৪০/৫০ হাজার টাকা করে ইনকাম করছে প্রতি মাসে। আমি ওদেরকে বললাম আমাকেও কাজ দাও, করবো। ওরা আমাকে ওদের সাথে কাজে নিতে রাজি হল। আমি জানতে চাইলাম তোমাদের এই শিখতে কতদিন লাগবে? ওরা বলল খুব ইজি কাজ। ৪/৫ দিন দেখলেই হয়ে যাবে। এবং কাজ করতে হলে নাকি ঢাকাতে থাকতে হবে। তারপর বললাম কেমন আয় হবে আমার? ওরা জানালো যেমন করবে তেমন পাবে। তবে আনুমানিক ১৫ হাজার টাকা ধরে রাখেন। শুনে আমি তো পুরাই “থ” হয়ে গেলাম।

বিশ্বাস করেন তখনও জানতাম না আসলেই কি হতে চলেছে! তাই এবার আমি পরলাম মহা-চিন্তায়। ওয়েব ডেভেলপিং এর কাজ শিখবো ৬/৭ মাস ধরে! নাকি বন্ধুদের সাথে কাজ করে চলতি আয় করবো প্রতি মাসে! কিন্তু ঢাকাতে গেলে তো পড়াশুনা হবে না। ফ্রিলান্সিং এর ভুত টা মনের মধ্যে এমন ভাবেই গেঁথে গেছে যে তখন মনে হচ্ছিল পড়াশুনা করে কি হবে আর? ওদিকে বন্ধুরা মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছে ম্যাট্রিক পাশ না করেও। আর আমার তো ইংরেজি জ্ঞান খারাপ না।

বাড়িতে জানালাম আমার পরিকল্পনা। বাবা-মা কেউই রাজি না। বলল যত কষ্টই হউক না কেন আগে অনার্স টা শেষ কর। আসলে তখনও বুঝতে পারিনি আসলেই কি হতে চলেছে! তাই পরিবারের সবাইকে নাম মাত্র বুঝিয়ে পারি দিলাম ঢাকার পথে। উদ্দেশ্য একটাই অনলানে টাকা আয় করবো, হাতে আমার একটা কাপড়চোপড়ের ব্যাগ আর একটা ল্যাপটপ। (ধৈর্যহারা হবেন না প্লিজ। আর আছে।)

আসলে অনলাইনে সাধারনত কি কি কাজ করা যায় জানা ছিল না আমার। ঢাকাতে গিয়েই আমার পরিচয় হয় ওডেস্ক এর সাথে। জানতে পারলাম এখান থেকে নাকি কাজ নিয়ে নিয়ে করতে হয়। তবে নতুনদের কাজ নিতে অনেক কষ্ট হয়। যাই হউক আমার এগুলো নিয়ে চিন্তা করার কোন মানে হয় না। কারন আমিতো করবো আমার বন্ধুদের দেয়া কাজ যা করলে আমি পাব প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৫০০০ টাকা। ভাবতেই অবাক লাগছে। ওখানে গিয়ে দেখি আমার সাথে আরও ৩/৪ জন যারা আমার মত কাজ করবে। পরে ৩/৪ দিন ধরে কাজ দেখিয়ে দিল কিভাবে করতে হয়। আমরা করতে থাকলাম। কারন তখনও জানতাম না আসলেই কি হতে চলেছে! শুধু এইটা জানতাম অনলাইনে নাকি সবাই এই ধরনের কাজই করে। যেমন ক্যাপচা এন্ট্রি, ক্রেইগগ্লিস্ট, ডাটা এন্ট্রি, আর্টিকেল রাইটিং। তো আমি ওখানে গিয়ে মূলত ক্রেইগগ্লিস্ট এর কাজ করতে থাকি।

পরে আস্তে আস্তে কিছু সমস্যা দেখা দিতে থেকে। যেমনঃ ১। আজ কাজ করা যাবে না, সার্ভার ব্যস্ত। ২। আজ কাজ করা যাবে না, বায়ার নিষেধ করেছে। তাছাড়া মাস শেষে বলে কাজের রেট খুব কম। তাই এই মাসের বাড়ি ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া আনুসাঙ্গিক সব খরচ করে মাস শেষে কিছু থাকছে না। এভাবে চলতে থাকে ২/৩ মাস। এতে আমার মনে হচ্ছে কেন এলাম আমি এগুলো করতে? আসলে সবার কথা অমান্য করাটাই আমার ভুল হয়েছে। হয়তো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায় পড়ে থাকি আরও কয়েকটি মাস। এদিকে বাড়ি থেকে জানতে চায় আমার অবস্থা। আমি সবাইকে জানাই যে কাজ শিখতে অনেক সময় নিচ্ছে। পুরোপুরি ভাবে কাজ করতে আরও ২/১ মাস লাগবে।

কিন্তু আমার অবস্থার কোন ইতিবাচক পরিবর্তন না হওয়াতে সিদ্ধান্ত নিলাম যা হওয়ার হবে। বাড়ির একমাত্র ছেলে আমি। হয়তো আমার এ অন্যায় তারা ক্ষমা করে দিবে। অবশেষে ৬ মাস পর ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে আসি (অবশ্য ঢাকা থাকাকালীন এর মধ্যে ২ বার বাড়িতে এসেছিলাম)। এর মধ্যে আমার পড়াশুনাতে ১ বছর সময় নষ্ট হয়। তাতে কি আমি আমার শুরু করে দিলাম লেখা পড়া। আর অভিজ্ঞ ফ্রিলান্সার খালাতো ভাইয়ের পরামর্শে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ শেখা আরম্ভ করে দিই। এর মধ্যে বিভিন্ন ভিডিও / পিডিএফ বই সংগ্রহ করে এই চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শেখা শুরু করি। প্রতিদিন ৮+ ঘণ্টা করে অনুশীলন করে যাচ্ছি এখন পর্যন্ত। যার ফলে আমি এখন HTML, CSS, PHOTOSHOP, JAVACRIPT আয়ত্তে এনেছি। অনলাইনে খালাতো ভাই এবং বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ওয়েব সাইট এর সাহায্যে এখন আমি ওয়েব ডিজাইনিং এ অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজাইনিং এ ভাল করতে পারলে পরে ডেভেলপিং এর কাজে নজর দিব।

এখন মনে হচ্ছে আমি অনেকটাই সুস্থ পরিবেশে বাস করছি। নিজের ভুলে এবং আবেগের মোহে নিজের বিবেক বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে অনেকটা সময় নষ্ট করেছি। কারন আমি প্রথমবস্থায় সুনির্দিষ্ট ও ভালুয়েবল কোন কাজ না শিখেই ফ্রিলান্সিং করতে মাঠে নেমে পরেছিলাম। এবং যেই ধরনের কাজ আমি করতাম সেই কাজ গুলি এখন নাকি আর ওডেস্ক এ নেই। ভাবতেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়।

নিজের ভুল আমি নিজেই বুঝতে পেরেছি। তাই আমি চাই আমার মত ভুল যেন কেউ না করে। তাই আমি আপনাকে বলবো যে, আপনি যদি আউটসরসিং করতে চান তবে অবশই কাজ শিখুন। না হলে আপনার মূল্যবান সময়টুকুই নষ্ট হবে। এর বেশি কিছু না। এখন আমি পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ শিখছি ডেইলি রুটিন অনুযায়ী। ফ্রিলান্সিং এর বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস গুলো সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা হচ্ছে দিন দিন যা গত ৪ মাস আগেও ছিল না। আমি মনে করি এই ধরনের কাজের মূল্য সবখানে সবসময়ই আছে। এখানে নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ পায় অনায়াসেই। আমি বাপ্পি, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যাতে একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার হতে পারি এবং হতে পারি একজন সফল ফ্রিলান্সার।

আপনাদের জন্যও রইলো শুভ কামনা। 🙂

Level 2

আমি বাপ্পি চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 12 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাল লিখেছেন

Level 2

ভাইয়া। আমি শুধু আমার জিবনের কথা বলেছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা আর দোয়া রইল । আপনি চির সত্য একটা কথা বলেছেন । কাজ করতে হলে কাজ শিখতে হবে । আর ভাল মানের কাজ করতে হলে সময় দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে ভাল কাজ শিখতে হবে । আপনি এগিয়ে জান । সফলতা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে । অনেক অনেক দোয়া রইলো আপনার জন্য ।

Level 0

• বাপ্পি ভাইয়া, আপনার অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনেক ভালো লাগলো। আপনার জন্য দোয়া/শুভ কামনা রইলো। আমি নিজেও ডেভলপমেন্ত এর কাজ শিখছি। আপনার লিখা পরে অনেক সাহস পেলাম, খুব-ই হতাশ ছিলাম। আমার জন্য দোয়া করবেন- ভাইয়া। নিজে- নিজে কাজ গুলো শিখছি… তবে আপনার সহযোগিতা পেলে/ সরাসরি কথা বলতে পারলে সুবিধা হতো। ☼>> [email protected] সম্ভব হলে নাম্বার টা মেইল করুন !! ধন্নবাদ !!

Level 0

Can you help me about o-desk & elance freelancing. I want to talk to you. My condition as same as you before. Me Buppy Dutta (Rupu) <<>> [email protected]

আরে খালাতো ভাই তুমি এখানে !! তোমার সত্য জীবনি সবার সামনে তুলে ধরার জন্যে ধন্যবাদ । আর তোমার ডেপলপিং শেখার কতদুর কি একটু জানাইও ।।।

Level 0

vai ami 2 month dhore html,css,java script shikhchi .

asha kori koek shoptaho er modhe shash hoye jabe.

tarpor web development er kaj shikhbo .

shobai amar jonno doa korben…

আমার এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হলেই শুরু করব এসব বিষয়ে কোর্স!! না শিখে ফ্রিল্যান্সিং এ নামলে অবশ্যই ধরা খাইতে হবে! ইংরেজিতে একটা প্রবাদই আছে- Victory Loves Preparation 😀

Level 0

vai apni a gulo kon site theka sikha san.ami a jogat a notun.ami wapka.mobi te site korta pari.vai apni ki blog a kaj koran.vai apnara aktu amaka help koren ami blog theka ki kora income kobo.techtunes.io ai blog ar income ki kora hoy. kimba onno blog a.vai notun jonno bolam .khoma korben.

    @Sm Shohag: তাড়াহুড়ো করা ঠিক না! ধীরেসুস্থে কাজ করুন!কাজ শিখার জন্য ওয়েবসাইটের পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিন! আমি চিন্তা করছি এইচ এস সি’র পর ডেভসটিম এ প্রশিক্ষণ নিব!

পড়লাম, ভালো লাগলো।

আগায়ে জান । শুভ কামনা রইল ।

বাপ্পি ভাইয়া, আপনার অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনেক ভালো লাগলো। আপনার জন্য দোয়া/শুভ কামনা রইলো। আমি নিজেও ডেভলপমেন্ট এর কাজ শিখছি। আপনার লিখা পরে অনেক সাহস পেলাম, খুব-ই হতাশ ছিলাম। আমার জন্য দোয়া করবেন- ভাইয়া। নিজে- নিজে কাজ গুলো শিখছি… তবে আপনার সহযোগিতা পেলে/ সরাসরি কথা বলতে পারলে সুবিধা হতো। >>[email protected] সম্ভব হলে mobile/skype নাম্বার টা মেইল করুন !!ধন্যবাদ !

শুভ কামোনা রগিলো আপনার জন্য । premium Accounts

Level 0

Airokom ekta post er dorkar chilo. Bappy, tomar lekha valo hoyeche. Asole nijer experience theke lekha je kono kichu i valo hote baddho.

hope tomar ai lekha pore aro oneker chokh khule jabe. free lancing bepar ta je asole ki eta shobar jana uchit. kono specific side e expert na hoye ai line e asle tar life ondhokar, eta tumi bujhie diecho.

Dhonnobad.

    Level 2

    আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ। আমার এই বিচিত্রময় জিবনে তো আপনিই এনে দিতে যাচ্ছেন ইতিবাচক পরিবর্তন!

এখানে একটা টিউন থেকে জানলাম ব্লগিং করাটা ফ্রিল্যান্সিং থেকেও ভাল তাই চিন্তা করছি ব্লগিং করে আয় করব কিনা। 😉
আপনার টিউন থেকে অনুপ্রেরণা পেলাম। 😀

Level 0

ভাল লাগলো, আপনার কথা গুলু। Thanks a lot.

অভিজ্ঞ খালাত ভাই এর পরামর্শে আগেই কাজ শেখা শুরু করলে আরও ভাল করতেন।
আমিও শুনি অনেকেই নাকি বহু পয়সা কামাচ্ছে কিন্তু, সবার কথায় ভুলা ঠিক না।
এমনকি, ঢাকার অনেক ট্রেনিং সেন্টার এর উপর আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই।
তাই কষ্ট হলেও অনলাইন টিউটোরিয়াল , PDF আর lynda.com এর উপর আপাতত আস্থা রাখছি।
তাছাড়া, আমার বিষয়ও CSE. তাই, university এর ক্লাস গুল ভালভাবে করার চেষ্টা করি।

আরেকটা কথা, আমি আমার ২-১ জন বন্ধুকে দেখেছি bba করার পাশাপাশি ওয়েব ডেভেলপিং এর কাজ করছে।

যাই হোক আপনার জন্য শুভকামনা।
আশা করি একদিন অনেক বড় হবেন।

Level 0

khob sondur

Level 0

ভাল লাগল। আপনার সাথে যোগা যোগ করব কিভাবে?

Level 0

বাপ্পি ভাই, আমি প্রায় 5/6 বছর যাবৎ চেষ্টা করিছি যে কি শিখবো? তো ভাইয়া আমাকে কি কোন পরামর্শ দেয়া যাবে যে কোনটা শিখবো? আমি বর্তমানে সোহাগ পরিবহন প্রাঃ লিঃ এ জব করছি। দয়া করে কি জানাবেন। অনেক উপকৃত হবো।

Level 0

হউন সফল ফ্রীলান্সার :: সাথে বাংলা ভিডিও টিউটোরিয়া

আসসালামুআলাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে লিখতে বসলাম ফ্রীলান্সিং নিয়ে। ইদানিং এইটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া অতিরিক্ত কিছু টাকা আয়ের জন্য অনেক ভালো একটি উপায় হচ্ছে ফ্রীলান্সিং। কিন্তু এটি নিয়ে এখন ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে। চারদিকে নানা রকম কোর্স, নানা রকম ওয়েবসাইট। কি বিশ্বাস করবো, কাকে বিশ্বাস করবো, কোন ওয়েবসাইট বিশ্বাস করব? এই প্রশ্নের জবাব আমি আপনাকে দিয়েই দেওয়াবো! কিভাবে? তাহলে পুরো লেখাটি পড়ুন।
প্রথমে শুরু করি ওয়েবসাইট দিয়ে। আপনি কিভাবে বুঝবেন, আপনি যে ওয়েবসাইটে কাজ করছেন এটি আসল নাকি নকল? এটির জন্য নিচের ছবিটি দেখুন।

কি দেখলেন? একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক। এটি একটি সনদ বলা যায়। একটি ওয়েবসাইট কতটা আসল বা নকল তা নির্ভর করে এই সনদটির উপর। আমি বলতে চাচ্ছি, যে কোনো টাকা লেনদেনের ওয়েবসাইটে এই সনদটি অবশ্যই থাকবে। আর যদি না থাকে তাহলে বুঝবেন সেই ওয়েবসাইটে কোনো ঝামেলা আছে। তবে এই সনদ ছাড়া যে সব ওয়েবসাইটই নকল তা না, তবে ৯৫% ই নকল। তাই কোনো টাকা লেনদেনের ওয়েবসাইটকে বিশ্বাস করার আগে এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিন।
জনপ্রিয় ফ্রীলান্সিং ওয়েবসাইটের নাম সবারই জানা, তাই সেগুলো নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু আপনি কি কাজ করবেন? সেটি সম্পূর্ণ আপনার ভালো লাগা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। তবে মনে রাখবেন, যদি আপনি একদিনে কোটিপতি হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে থাকেন। তবে আমি বলবো ফ্রীলান্সিং বাদ দেন। তাহলে আপনি কোন কাজটি করতে পারেন? যদি আপনার হাতে খুব বেশি সময় না থাকে তবে এসইও এর কাজ শিখতে পারেন। এটি শিখতে খুব বেশি সময় লাগে না, কিন্তু কাজ করতে অনেক সময় প্রয়োজন। কারণ এসইও এক/দুই ঘন্টার কাজ না। আর ইদানিং বাংলাদেশে অনেকেই এসইও এর কাজ করছে। যার ফলে এই কাজের রেট দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইদানিং দেখি ওদেস্ক এর ক্লায়েন্টরা কাজের বর্ণনার মাঝেই লিখে দেয় $০.২/hr. বাকিটা আপনিই বুঝতেই পারছেন। এসইও শিখতে আপনার জন্য বাংলা ভিডিও টিউটোরিয়াল।
এছাড়া ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের রেট তুলনামূলক ভাবে বেশি। এই কাজ গুলো করতে এসইও এর থেকে কম সময় লাগে কিন্তু শিখতে অনেক সময় লাগে ও প্রচুর মাথা খাটাতে হয়। ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর বাংলা ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখতে চাইলে ফ্রী বাংলা টিউটোরিয়াল তো আছেই। এছাড়া আর্টিকেল লিখেও ভালো টাকা আয় করা সম্ভব, কিন্তু তাতে অবশ্যই ইংরেজীতে ভালো দখল থাকতে হবে।
ফ্রীলান্সিং এ সফল হওয়ার কিছু উপায়:

এটির জন্য অবশ্যই আপনাকে দক্ষ হতে হবে
সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে
আপনার একটি সুন্দর ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকা উচিত, যাতে আপনার দক্ষতার পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়
ক্লায়েন্টকে মুগ্ধ করার মত কভার লেটার লেখার যা অবশ্যই কাজের বর্ণনার সাথে মিল থাকতে হবে
ক্লায়েন্ট যে কাজটির জন্য জব পোস্ট করেছে, যদি সম্ভব হয় তবে সেই কাজের কিছু স্যাম্পল করে কভার লেটারে যুক্ত করে দিন
আপনার স্কাইপি, গুগলটক্, ইয়াহু মাসেন্জার, টীমভিউয়ার সবসময় একটিভ রাখুন
সবসময় ক্লায়েন্টের সাথে দ্রুত যোগাযোগের চেষ্টা করুন
যে কাজ পারবেন না শুধু শুধু ঐসব কাজে বিড দিবেন না
আর সকল ফ্রীলান্সারের কাছে আমার আকুল আবেদন, দয়া করে মনসম্মত রেটে বিড দিবেন। $০.২/hr রেটে কাজ করার থেকে রাস্তার মাঝে ভিক্ষা করেন, অনেক বেশি টাকা পাবেন। আমরা অনেকেই ফ্রীলান্সিং করতে আগ্রহী কিন্তু ঠিক মত প্রোফাইল তৈরি করতে পারি না বা সঠিক নিয়মে তা করি না। যার ফলে আমাদের কাজ পাওয়াটা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এই নিয়ে বাংলা ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখতে পারেন।
সবশেষে বলবো, কষ্ট করুন, দক্ষ হউন, সফলতা আপনার কাছে আসতে বাধ্য। আমার কোনো কথায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।