ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস এবং আপনার করনীয়

জকে আপনাদের সামনে তুলে ধরব - ফ্রিল্যান্সিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ,  যেসব দক্ষতা প্রয়োজন  ইত্যাদি নিয়ে ।

ফ্রিল্যান্সিং এবং কর্মসংস্থান

ফ্রিল্যান্সিং বেকারত্ব নিরসনে ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারে। আমাদের যে জনসংখ্যা এবং বেকারত্বের হার, তাতে করে আমাদের পক্ষে সবাইকে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিজের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। ফলে এর জন্য কোনো অফিস স্পেসের দরকার হয় না। শুধু দক্ষতা অর্জন করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব এই খাত থেকে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আকৃষ্ট করে অনেকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। আবার যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে কিছুটা সফল হয়েছেন, তারা টিম গঠনের মাধ্যমে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে পারেন।

বেসিস ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড

২০১১ থেকে বেসিস ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বার্ষিক একটি পুরস্কারের আয়োজন করে থাকে। এতে বাংলাদেশ থেকে যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করছেন বা সফল হয়েছেন, তাদেরকে সম্মাননা জানানো হয়। ২০১১ সালে সারা দেশ থেকে ১২ জনকে এ সম্মাননা জানানো হয়। ২০১২ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৫ জনকে এ সম্মাননা জানানো হয়। ক্যাটাগরিগুলো হলো : শিক্ষার্থী, ব্যক্তিগত ও কোম্পানি।

যেসব দক্ষতা প্রয়োজন 

কারিগরি : কারিগরি (technical) দক্ষতা অর্জন হলো ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। আপনাকে অবশ্যই কোনো না কোনো বিষয়ে দক্ষতা আর্জন করতে হবে। যদি বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে গিয়ে দেখেন, সেখানকার কাজ করার মতো কারিগরি দক্ষতা আপনার নেই তাহলে প্রথমেই আপনাকে সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জন না করে আপনি এই সেক্টরে তেমন কিছুই করতে পারবেন না। দক্ষতা অর্জন না করে বিকল্প রাস্তা খুঁজতে গেলে বরং আপনার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

যোগাযোগ : আপনাকে অবশ্যই যোগাযোগের (Communication) দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি কোনো বায়ারের কাছ থেকে কোনো কাজ পেতে চান, তাহলে তার সাথে কার্যকর উপায়ে যোগাযোগ করতে হবে। যেমন : কাজের ডেমো দেখানো, কোনো কনফিউশন থাকলে জিজ্ঞাসা করা। আপনাকে নিজেকে মার্কেটিং করার দক্ষতাও আর্জন করতে হবে যদি আপনি সফল হতে চান।

ব্যবস্থাপনা : আপনাকে বিভিন্ন কাজ সঠিকভাবে করার জন্য নিজের মধ্যে ব্যবস্থাপনার (Management) বিষয়টি আয়ত্ত করতে হবে। তা না হলে কিছুদিন পর যখন আপনি কাজ পেতে থাকবেন, তখন বিভিন্ন প্রজেক্টের বিভিন্ন কাজ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। ফলে বায়ার অসন্তুষ্ট হতে পারেন।

সময়ানুবর্তিতা : আপনাকে অবশ্যই সময়ানুবর্তী (Time management) হতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে সাবমিট করতে হবে। তা না হলে আপনি বায়ার ধরে রাখতে পারবেন না বা বাজে রেটিং পাবেন।

নৈতিক : সবসময় সততার পরিচয় দিতে হবে। নৈতিক (Ethical) বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। আপনি যদি কোনো কাজ না পারেন তাহলে সে কাজ নিতে যাবেন না। এতে আপনি কাজটি করতেও পারবেন না, আবার বাজে রেটিংও পাবেন।

ধৈর্য ও লেগে থাকার গুণ : প্রথমদিকে আপনাকে ধৈর্যের (Patience) পরিচয় দিতে হবে। প্রথম কাজটি পেতে অনেকের বেশ কয়েক মাস সময় লেগে যায়, আবার অনেকেই কয়েকটি বিডের পরই কাজ পেয়ে যান। তাই প্রথমদিকে লেগে থাকতে হবে ও ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে।

দক্ষতা অর্জনের জন্য কী কী রিসোর্স ইন্টারনেট থেকে পাবেন :

০১. ব্লগ http://freelancerstory.blogspot.com
০২. গ্রুপ : http://groups.google.com/group/bdosn_outsourcing
০৩. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বেসিক : http://www.w3schools.com
০৪. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভান্সড : http://net.tutsplus.com
০৫. গ্রাফিক্স ডিজাইন : http://psd.tutsplus.com

ফ্রিল্যান্সিং স্পাম/স্ক্যাম 

ইদানীং ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে বিভিন্ন সাইট মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মূল ধারণা হলো প্রথমে কোনো দক্ষতা অর্জন এবং সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করা। কিন্তু ইদানীং কিছু সাইট যেমন : Dolancer.com, skylancer.com ফ্রিল্যান্সিংয়ের নাম করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এ বিষয়ে কমপিউটার জগৎ-এর ফেব্রুয়ারি ২০১২ সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মহিলা ফ্রিল্যান্সার

ফ্রিল্যান্সিং জগতে মেয়েদের উপস্থিতি যদিও এখনো তেমন একটা সরব নয়, তবু অনেকেই কিন্তু এই পেশায় ভালো করছেন। অনেক মেয়ে আছেন যারা দিনের বড় একটা সময় ঘরে কাটান। ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে তাদের জন্য একটা ভালো আয়ের মাধ্যম। তাছাড়া গৃহিণীরা বাড়তি কিছু আয়ের মাধ্যমে সংসারে সাহায্যও করতে পারেন।

জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ভিওয়ার্কারে Girl.Team2009 নামে ৪ জন মেয়ের একটি গ্রুপ প্রায় ৪৫০টি কাজ করে। এখন এই সাইটে সারা পৃথিবীতে তাদের অবস্থান ৬৩৭। এরা মূলত ডাটা এন্ট্রি, ওয়েব রিসোর্স, ট্রান্সলেশন ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করে থাকেন।

প্রতিবদ্ধীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং

বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদেরকে নিয়ে কাজ করছে। শারীরিকভাবে বা কোনোভাবে অক্ষম হলেও বাকি সব বিষয়ে তারা সক্ষম। তাদের পক্ষে ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে অ্যাকাডেমি ফর ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্স তথা এএমএস ও বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) প্রশিক্ষণ পার্টনার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সেই অনুযায়ী দু’জন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা আরো বেগবান হবে।

শর্মী জন্মগতভাবে শারীরিক সমস্যার শিকার। ক্র্যাচ দিয়ে হাঁটতে পারলেও বেশ কষ্টই হয় তার। মাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে একাই লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি। বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে, নেই কোনো ভাই। একজন পরিচিত ব্যক্তির অফিসে গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের কাজ করছেন, ইচ্ছে ঘরে বসে আরো কিছু আয় করে সংসারে সচ্ছলতা আনা।

লোকাল হিরো

জনপ্রিয় আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস http://www.freelancer.com ১৫ নভেম্বর ২০১১ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত ÔExpose the Freelancer.comÕ শীর্ষক একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন দেশের ৪৪০ ফ্রিল্যান্সার অংশ নেন। প্রতিযোগিতার লক্ষ্য Freelancer.com সাইটের লোগোকে সৃজনশীল উপায়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। প্রতিযোগিতার ফলাফল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়। এতে ১০ হাজার ডলারের প্রথম পুরস্কার পান বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার, যিনি সাইটিতে Dataexpert01 নামে পরিচিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পান পাকিস্তান এবং নেপালের দু’জন ফ্রিল্যন্সার।

Dataexpert01 টিম প্রতিযোগিতার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে Freelancer.com -এর লোগো সংবলিত ২০০০ স্কয়ার ফুটের ব্যানার তৈরিসহ একটি বিশাল র‌্যালির আয়োজন করে, যাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সের ও বিভিন্ন পেশার ৩০০০ জন অংশ নেন। র‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালির পাশাপাশি উপস্থিত জনগণকে Freelancer.com সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং সাইট থেকে কিভাবে আয় করতে হয় সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

বিভিন্ন অর্জন

গার্টনার রিপোর্ট আনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩০টি আউটসোর্সিং জায়গার মধ্যে অন্যতম। তা ছাড়া বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশীরা খুবই ভালো করছেন। ওডেক্সে আমাদের অবস্থান এখন বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ। ওডেক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট কুপার ডিসেম্বরে ঢাকায় ই-এশিয়া প্রোগ্রামে এসে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সম্প্রতি ওডেক্সের ‘কন্ট্রাক্টর অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে’-এর ভেন্যু হিসেবে ঢাকাকে নির্বাচন করা হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিভিন্ন বাধা

ইন্টারনেটের ধীর গতি : ফ্রিল্যান্সিং যেহেতু ইন্টারনেটের মাধ্যমে করতে হয়, তাই ভালো ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট খুব জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া কোনোভাবেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে ভালো করা সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে বায়ারেরা ঠিকমতো যোগযোগ রাখতে না পারলে বিরক্ত হন।

উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট : নতুন একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রথম কাজটি পেতে অনেক সময় কিছুদিন সময় লাগে। কাজ ও পেমেন্ট পাওয়া পর্যন্ত কিন্তু তাকে ধৈর্য ধরে কাজটি করে যেতে হয়। এসব ক্ষেত্রে উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট একটি বড় বাধা।

কী করা যেতে পারে 

সহজলভ্য ইন্টারনেট : ইন্টারনেটকে অবশ্যই সহজলভ্য, নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। শক্তিশালী ইন্টারনেট অবকাঠামো ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং খাতকে কোনোভাবেই জনপ্রিয় ও কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাই সুলভে ইন্টারনেটকে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা : সবার মেধা বা কর্মোদ্দীপনা সমান নয়। বিপুলসংখ্যক মানুষকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত করতে চাইলে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে প্রথমদিকে তাদেরকে বিদেশ থেকে আনা টাকার ওপর ট্যাক্স মওকুফ করে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে।

ঢাকার বাইরে আউটসোর্সিং হাব : ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু কাজের স্থান নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং হাব গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে ঢাকার ওপর চাপ অনেকটাই কমানো সম্ভব এবং ঢাকার বাইরে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।

কয়েকজন মিলে একটি জায়গায় যদি কাজ করতে পারে : একার পক্ষে অনেক সময় ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করা যায় না বা বিজনেসকে বড় করা যায় না। সে ক্ষেত্রে কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার মিলে একটি গ্রুপ করে নেয়া যেতে পারে। অনেক সময় তা কোম্পানির আকারেও হতে পারে।

ল্যাপটপ সংগ্রহের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা : বাংলাদেশ সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ল্যাপটপ কেনার জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা আছে। ল্যাপটপ ঋণটিকে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে হবে।

Level 0

আমি কমজগৎ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 57 টি টিউন ও 17 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

Computer Jagat has been involved with the ICT movement here in Bangladesh for more than a period of two decades. During this period we have been able to create a set of records for which we feel proud of.


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস