শুরুতেই আমার সালাম ও শুভেচ্ছা নিন।
অনেকদিন পর এই প্ল্যাটফর্মে! মনে হয় গ্যাপটা একটু বেশিই হয়ে গেছে! আসলে ব্যস্ততার কারনে টিউন করার সময় পাই না 🙁
আপনাদের জন্য এটা আমার ১০০ তম টিউন। ধন্যবাদ, আগ্রহ নিয়ে আর্টিকেলটা ভিজিট করার জন্য।
কি নিয়ে লিখছি বুঝেই ফেলেছেন! তো চলুন, শুরু করা যাক!
আচ্ছা আপনি তো স্বপ্ন দেখেন, তাইনা? আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মনের যে ইচ্ছেগুলো আমরা বাস্তবায়িত করতে পারি না তার অনেক কিছুই আমরা পেয়ে থাকি এ স্বপ্নের মাধ্যমে। স্বপ্নের মধ্যে মেসি-নেইমারের সাথে ফুটবল খেলি, বাংলাদেশে থেকেও কানাডার বরফ দিয়ে স্নোম্যান বানাই, মরুর উটের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াই-আরো কত কিছু! মাঝে মধ্যে মনে হয়, এগুলা বাস্তব হলে কতই না মজা হত! কিন্তু এইসব তো কেবল কল্পনা, বাস্তব আবার হয় নাকি!
হুম, এইসব কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়াই হল " ভার্চুয়াল রিয়েলিটি"। প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনার উদ্যোগকারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবের বাস্তবতা কিংবা কল্পবাস্তবতা বলে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটারনিয়ন্ত্রিত সিস্টেম, যাতে মডেলিং ও অনুকরণবিদ্যা প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্ধি করতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অনুকরণকৃত পরিবেশ হুবহু বাস্তব পৃথিবীর মতো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় অনুকরণকৃত বা সিম্যুলেটেড পরিবেশ বাস্তব থেকে আলাদা হতে পারে। যেমন: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস। এতে ত্রিমাত্রিক (3D) ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও করা সম্ভব হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহারকারী সম্পূর্ণরূপে একটি কম্পিউটারনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তথ্য আদান-প্রদানকারী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসসংবলিত হেড মাউন্ডেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লোভ, পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুইট ইত্যাদি পরিধান করার মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বাস্তবকে উপলব্ধি করা হয়। এর দ্বারা ইচ্ছেমতো বস্তু দিয়ে সাজানো, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি, নাচানাচি আবেগের গ্রাফিক্যাল প্রকাশ ইত্যাদি সম্ভব।
গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের কথা। মর্টন হিলিগ নামের এক সিনেমাটোগ্রাফার তার দর্শকদের জন্য এমন এক ধরনের সিনেমা-প্রযুক্তির কথা চিন্তা করলেন যা তাদের সিনেমা দেখার অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে, নিয়ে যাবে কাহিনীর আরও ভেতরে। এ স্বপ্ন থেকেই ১৯৫৭ সালের দিকে তিনি আবিষ্কার করেন 'Sensorama' নামক এক যন্ত্র।
হিলিগের এ যন্ত্রটি একইসঙ্গে সর্বোচ্চ চারজন ব্যবহার করতে পারত। এখানে থ্রি-ডি মোশন পিকচারের সঙ্গে তিনি ঘ্রাণ, স্টেরিও সাউন্ড, সিটের নড়াচড়া এবং বাতাসে চুল উড়তে থাকার মতো ব্যাপারগুলোর সমাবেশ ঘটাতেন। আর এভাবেই হিলিগ তার দর্শকদেরকে অন্য এক জগতের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিতেন যা কিনা বাস্তব হয়েও অবাস্তব! হিলিগের এ অসাধারণ আবিষ্কারের জন্য তাকে ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জনক’ বলা হয়ে থাকে। এরপর থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আজ তার ঈর্ষণীয় অবস্থানে আসতে পেরেছে।
অনেকক্ষন তো বকবক করলাম! কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ না থাকলে "গল্প" শুনে কি করব? 😕
তাই তো! বাস্তবে এর প্রয়োগ কি নাই?
আমাদের বর্তমান জগতে এ কৃত্রিম জগত কোথায় ভূমিকা রেখে চলেছে চলুন একটু দেখে আসি.
প্রথমেই আসা যাক শিক্ষাক্ষেত্রের কথায়। অনেক সময়ই দেখা যায় আমরা কোন কিছু নিয়ে পড়ছি আর সেই জিনিস বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কেমন আচরণ করছে তা আমরা হয় বই পড়ে মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছি অথবা ইন্টারনেট থেকে এর ভিডিও দেখে নিচ্ছি। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এ কাজটিই আমাদের জন্য আরও সহজ করে দিচ্ছে। সে আমাদেরকে এমন এক জগতে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে আমরা সেই একই জিনিসকে একেবারে সামনাসামনি দেখার অনুভূতি পাচ্ছি, ফলে জিনিসটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও পাকাপোক্ত হচ্ছে।
বিভিন্ন ভবন নির্মাণের বেলায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানকালে অনেক আর্কিটেক্টই তাদের বিল্ডিং প্ল্যানের ভার্চুয়াল মডেল বানিয়ে থাকেন। ক্লায়েন্টরা তখন সহজেই এসব বিল্ডিংয়ের ভেতর-বাহিরে ঘুরে দেখতে পারেন এবং প্রয়োজনে কোনকিছু পরিবর্তনের ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন। আর এসব করা হয়ে থাকে বিল্ডিং বানানোর আগেই!
খেলাধুলার জগতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির রয়েছে সদর্প পদচারণ। বিভিন্ন খেলা যেমন গলফ, অ্যাথলেটিক্স, সাইক্লিং ইত্যাদির ট্রেনিং এর জন্য এটি বহুল ব্যবহৃত। এছাড়া খেলাধুলায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ডিজাইন করতেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সফল প্রয়োগ রয়েছে; যেমন- রানিং স্যু।
সামরিক ক্ষেত্রেও আজকাল বেশ ভালভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের এ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটিকে। সেনাবাহিনীর জন্য কমব্যাট সিমুলেশন এবং আহত সৈন্যদের চিকিৎসার কৃত্রিম পরিবেশ তৈরিতে একে ব্যবহার করা হয়। এমনকি ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে সৈন্য নিয়োগেও তারা এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে। নৌবাহিনী ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে কাজে লাগিয়েছে সাবমেরিন সিমুলেটর তৈরির মাধ্যমে। আর বিমান বাহিনীতেও এ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফ্লায়িং স্কিল বাড়ানো, জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করা ইত্যাদি কাজে ফ্লাইট সিমুলেটরকে কাজে লাগানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন ভার্চুয়াল বন্ধুক, সশস্ত্র যুদ্ধযান, ভার্চুয়াল টর্পেডো সজ্জিত সাবমেরিন তৈরিতেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অবদান রয়েছে।
আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন এতটাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় যে এর সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। প্রথমেই আসা যাক চিকিৎসকদের কথায়। একজন চিকিৎসককে বিভিন্ন বিষয়ে আরো দক্ষ করে তোলার জন্য এখন সার্জারি সিমুলেশনের সাহায্য নেয়া হয়। এর ফলে একজন চিকিৎসক অনেক নতুন নতুন জিনিস জানতে পারছেন কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই! নার্সদের ট্রেনিং-এর জন্যও আছে অনুরূপ ব্যবস্থা। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এমন লোকদের জন্যও আছে এই প্রযুক্তির উপহার। ধরা যাক, একজন লোক কিছুদিন আগে এক দুর্ঘটনার জন্য এখন হুইল চেয়ার ব্যবহার করছেন। প্রথম প্রথম এটি ব্যবহারে তার সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এখানেই এগিয়ে আসছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। সে এই লোকটির জন্য কোন ব্যস্ত রাস্তা অথবা কোন মার্কেটের কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে যাতে করে তিনি বাস্তব জীবনে প্রয়োগের আগে এখানে অন্তত প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে একেবারে দুর্বিষহ করে তোলে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখানে নানা কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষটিকে তার ফোবিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে এমন আরও অনেক দিকই রয়েছে যেখানে এ প্রযুক্তিটি তার বিস্ময়কর অবদান রেখে চলেছে।
এসব ছাড়াও আমোদ-প্রমোদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, মিডিয়া, সিনেমা, টেলিকমিউনিকেশন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ফ্যাশন ডিজাইনিং ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এতক্ষণ তো আমাদের জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিভিন্ন ধরনের অবদানের কথা জানা গেল। কিন্তু কিভাবে আমরা কৃত্রিম এ জগতে প্রবেশ করব? আসলে ভার্চুয়াল সেই দুনিয়াতে ঘোরাফেরার জন্যও আছে অনেক ধরনের ডিভাইস। বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রোডাক্টের মাঝে আছে HMD (Head Mounted Display) ডিভাইস, মোশন ট্র্যাকার, হেড ট্র্যাকার, VR Domes, VR software/kits, VR simulator ইত্যাদি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো উন্নত ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা, কৃত্রিম এ পরিবেশের সঙ্গে বাস্তবের মিথষ্ক্রিয়া আরও বেশি বাস্তব করে তোলার মতো বিষয়গুলো। এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার জন্য এর সূচনালগ্ন থেকেই কয়েকটি কোম্পানি থাকলেও তাদের অনেক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি অনেক সময় একজন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডেভেলপারকে এমন কোনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় যার উদ্ভব আসলে অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য। আর কৃত্রিম একটি জগত তৈরি করা আসলেই বেশ পরিশ্রমের এবং সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। জগতটিকে যত বেশি বাস্তবসম্মত করে গড়ে তোলা হবে, সময় আর পরিশ্রমও তত বেশি হবে। তাই আপনি যত বেশি পরিশ্রমী আর ধৈর্যশীল হবেন, কৃত্রিম এ জগত নিয়ে আপনার সফলতা লাভের সম্ভাবনা ততই বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের বাস্তব জীবনে অধিকাংশ জিনিসেরই কম-বেশি ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। শৈশব থেকে অর্জিত শিক্ষাই বলে দেবে আমরা কোন পথ অবলম্বন করব। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিরও ভাল-মন্দ দিক রয়েছে।
যেসব ব্যক্তি এসব ভার্চুয়াল জগতে অনেক হিংস্র পরিবেশের মাঝে সময় কাটান তাদের বাস্তব জীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেকে আবার এর ফলে সাইবার অ্যাডিকশনেও আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
আরেকটি চিন্তার বিষয় হলো- খুন এবং যৌনতার মতো বিষয়গুলো আমাদের বাস্তব জগতে নানা আইনের বেড়াজালে বন্দী, কিন্তু কৃত্রিম জগতে? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম জগতে এসব পরিস্থিতিতে একজন মানুষ একেবারে বাস্তব জীবনের মতোই মানসিক ও শারীরিক অনুভূতির সম্মুখীন হন। ফলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি আসলে আমাদের মনুষ্যত্ববোধকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। আর তাই এ বিষয়টি নিয়ে এগোতে চাইলে যে কাউকেই এ সীমাবদ্ধতা আর সতর্কতার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সামনে এগোতে হবে।
আজকে এই পর্যন্তই না হয় থাক!
আরও জানতে চাইলে এইখানে ক্লিক করতে পারেন, বিস্তারিত জানতে পারবেন আশাকরি।
টিউনটি তৈরি করতে বিভিন্ন বই, ওয়েবসাইট, পেপার কাটিং'র সাহায্য নিয়েছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেইসব বই ও আর্টিকেল লেখকদের প্রতি।
ছবিগুলো Google Image থেকে নেওয়া।
আমাকে ফেসবুকে পাবেনঃ http://www.facebook.com/galib.shahriar.mallik
-আল্লাহ হাফেজ-
আমি মল্লিক গালিব শাহরিয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 103 টি টিউন ও 1799 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মল্লিক গালিব শাহরিয়ার, কম্পিউটার-প্রকৌশল বিভাগ, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।
হুমম,
টিউন টা দারুন হইছে।।