মেমরিস্টর হল মেমরি রেজিস্টরের সংক্ষিপ্ত নাম। এটি ইলেক্ট্রনিক্সে ব্যবহৃত চতুর্থ মূল উপাদান। এর তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা জানেন ১৯৭১ সালে। কিন্তু ডিভাইসটি আবিষ্কার করতে লেগে গেল সুদীর্ঘ ৩৭ বছর। এটি এতই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার যা অতি দ্রুত বদলে দেবে আমাদের পরিচিত কম্পিউটারের চেহারা। পাঠপুস্তক লিখতে হবে নতুন করে।
ইলেক্ট্রনিক্সে ব্যবহৃত চারটি মৌলিক রাশি হলঃ ভোল্টেজ, কারেন্ট, চার্জ ও চৌম্বক ফ্লাক্স। এদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রাথমিক তিনটি উপাদান হলঃ রেজিস্ট্যান্স যা ভোল্টেজ ও কারেন্টের মাঝে, ক্যাপাসিট্যান্স যা ভোল্টেজ ও চার্জের মাঝে এবং ইন্ডাক্ট্যান্স যা কারেন্ট ও চৌম্বক ফ্লাক্সের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে। এখন চৌম্বক ফ্লাক্স ও চার্জের মাঝে সম্পর্ক সূচক চতুর্থ একটি উপাদানের অস্তিত্ত্বের কথা প্রথম ব্যক্ত করেন ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক “লিওন চুয়া” ১৯৭১ সালের IEEE এর একটি প্রবন্ধে। তিনিই এর নাম দেন মেমরিস্টর।
গত এপ্রিল মাসে HP –র ল্যাবে ভিন্নধর্মী মেমরিচিপ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অনেকটা আকস্মিকভাবে প্রথমবারের মত একটি বাস্তব মেমরিস্টর তৈরি হয়। এটি একটি ২ পিনযুক্ত কম্পোনেন্ট। এর বৈশিষ্ট্য হল, যখন একদিক থেকে বিদ্যুত প্রবাহিত হয় তখন এর রোধ কমতে থাকে। আবার বিপরীত দিক থেকে বিদ্যুত প্রবাহিত হলে রোধ বাড়তে থাকে। উচ্চরোধবিশিষ্ট অবস্থাকে আমরা লজিক্যাল ১ এবং নিম্নরোধবিশিষ্ট অবস্থাকে লজিক্যাল ০ ধরতে পারি। বিদ্যুত প্রবাহ বন্ধ হলেও এর অন্তিম অবস্থা অক্ষুন্ন থাকে। তার মানে এটি একটি প্রাকৃতিক ১ বিট মেমরি!
দিকপরিবর্তী তড়িত প্রবাহ দ্বারা এই মেমরি রিড করা হয়। ফলে সংরক্ষিত তথ্যে কোন পরিবর্তন ঘটে না। মেমরিস্টরের নিকটতম প্রতিদন্দ্বী Flash Memory – মাত্র ১ বর্গ সে.মি. জায়গায় ২৫৬ গিগাবিট ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট। যেখানে মেমরিস্টর দিয়ে বর্তমানে ১০০ গিগাবিটের মেমরিচিপ তৈরী করা হয়েছে সমপরিমান জায়গায় যা প্রায় DRAM- এর দশ ভাগের এক ভাগ গতিসম্পন্ন। আঁতুরঘরের প্রযুক্তি হিসেবে এটি আশাতীত সাফল্য।
মজার বাপার, DRAM অস্থায়ী হলেও মেমরিস্টর কিন্তু স্থায়ী। তার মানে মেমরিস্টর দিয়ে কম্পিউটার তৈরী হলে তা রিবুট করতে হবে না। বিদ্যুত চলে গেলেও আপনার কাজ সেভ হয়ে থাকবে। বিদ্যুত আসার পর যেখানে ছিলেন সেখান থেকেই সাথে সাথে পিসি চালু হবে, সিস্টেম বুট করতে আর অপেক্ষা করতে হবে না।
প্রশ্ন হল, মেমরিস্টর কিভাবে কাজ করে। HP - র ল্যাবে গবেষকবৃন্দ টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড এর একটি অতি পাতলা পাতে কিছু অক্সিজেন পরমাণু সরিয়ে তাকে তড়িৎ পরিবাহী করে তোলেন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “ডোপিং” এবং সৃষ্ট আনবিক ফাঁকা স্থানগুলোকে বলে “হোল”। চার্জ প্রবাহিত হলে হোলগুলো একপাশে সরে গিয়ে পুরো পাতের রোধ দেয় কমিয়ে। বিপরীত দিকে চার্জ প্রবাহিত করলে পাতটি আদি অবস্থায় ফিরে আসে। এভাবে একে বারবার অন বা অফ অবস্থায় রাখা যায়।
আমাদের মস্তিকের স্মৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি অনেকটা এরকম। আমরা যেসব স্মৃতি বেশি চর্চা করি নিউরনে সেই সিনাপ্সসগুলো ততবেশি মোটা বা শক্তিশালী হতে থাকে। তেমনি মেমরিস্টরে বেশি করে আয়ন জমা হতে থাকে। মেমরিস্টর অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস। ফলে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত সরাসরি মস্তিষ্কের সাথে মেমরিস্টর জুড়ে দেয়া যাবে।
বর্তমানে মাইক্রোপ্রসেসর নিমার্ণে প্রধান উপাদান ট্রানজিস্টর। সমস্যা হল ক্ষুদ্র পরিসরে এর উত্তাপ ও ক্ষয়জনিত কারণে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা আর বেশি বাড়ানো যাচ্ছে না। আর মেমরিস্টরের প্রধান সুবিধা হল একে যত বেশি ক্ষুদ্র করা যায়, তত ভাল কাজ করে।
ইন্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মূরের তত্ত্ব অনুযায়ী প্রতি ১৮ মাসে মাইক্রোপ্রসেসরের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুন হবে। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। মেমরিস্টর দিয়ে ট্রানজিস্টর তৈরি হলে তা দিয়ে তৈরি ডিভাইসে তুলনামূলকভাবে আকার হ্রাস পাবে অনেকটাই। আর তা অনেক কম শক্তি ব্যয় করবে। গর্ডন মূরের তত্ত্ব বোধহয় এবারও টিকে গেল।
আমি জীয়নতরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
এপার ভেঙ্গে ওপার গড়ে জীবন নদীর বাঁকে, জীয়ন তরী বাইছি শুধু ভাঙ্গা গড়ার ফাঁকে।
লেখা ভাল হয়েছে।তবে মেমরিস্টরের গঠন এর ব্যপারে আরও বিস্তারিত বললে ভাল হত।পিসি রিবুটের ব্যপারে যা বলা হল তা পুরোপুরি ঠিক নয়।শুধু আগের ডাটা সেইভ করে রাখলে পিসি বুট করার সময় টাইম লাগবে না এটা ঠিক নয়।
কোন কিছু টিউন করার আগে তা যদি অন্য কোন সূত্র থেকে পেয়ে থাকেন তাহলে তার কথা অবশ্যই লেখার শেষে দিয়ে দেওয়া উচিত। আপনি এই লেখাটি হুবহু কম্পিউটার সোর্সের নিউজ লেটার থেকে কপি করেছেন। সূত্র দেয়া উচিত ছিল
দারুন লিখেছেন। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন হল মেমরিস্টর ব্যবহার করে কী কোন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়েছে? মানে পরীক্ষামূলক ভাবে?