আপনি বছরখানিক আগে বেশ সখের বশে একটা পিসি কিনেছিলেন যেটা আপনাকে অনেক দিন পর্যন্ত সন্তুষ্ট করতে পেরেছে। কিন্তু বছর খানেক আগে আপনি যে চাহিদা নিয়ে পিসি কিনেছিলেন, বছরখানেক পরে আজকে সেই চাহিদাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আপনার কাজের পরিধি বেড়ে গেছে বা বর্তমানে আপনি আপনার পুরাতন পিসির পারফর্মেন্স নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। যদিও পারফর্মেন্স একটা আপেক্ষিক শব্দ! আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, যখন পেন্টিয়াম-টু প্রসেসর ব্যবহার করতাম তখন মনে হত পিসির পারফর্মেন্স আরো একটু বাড়লে মনে হয় সারাজীবন সুন্দরভাবে কাটানো যেত! কিন্তু মজার ব্যাপার, আজকের এই দিনে এসে ইন্টেলের "কোর আই-সেভেন" ব্যবহার করেও মনে শান্তি নাই! কেমন জানি এটার পারফর্মেন্সও আমাকে ইদানিং সন্তুষ্ট করতে পারছেনা! আসলে এটাই বাস্তবতা!
যেটাই কারণ হোক, ধরে নিলাম আপনি আপনার এই মুহূর্তে এমন একটা পিসি চাচ্ছেন, যেটা আপনার বর্তমানের পিসির চাইতে বেটার পারফর্ম করবে। এটার সমাধান হচ্ছে দুইটা। হয় আপনাকে নতুন পিসি কিনতে হবে, নতুবা আপনার বর্তমান পিসির কিছু কিছু হার্ডওয়্যারকে পরিবর্তন করে সেখানে নতুন মডেলের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করতে হবে! আর এটাকে সহজ কথায় বলে "পিসি আপগ্রেড"! যেহেতু নতুন পিসি কেনাটা বেশ ব্যয়বহুল, তাই আপনার জন্য সহজ সমাধান হচ্ছে পিসি আপগ্রেড করে পিসির পারফর্মেন্স বাড়ানো। তবে আপনার পিসি ৬/৭ বছরের পুরাতন হলে আপনাকে পরামর্শ দিব, বাজেট ফিক্সড করুন নতুন পিসি কেনার জন্য! এরকম পরার্মশ দেবার পেছনেও বেশ কিছু কারন আছে, যা আশা করছি আমার এই লেখায় সংক্ষিপ্ত ভাবে হলেও আলোচনা করব! 🙂
আপনার বাজেট যদি কম হয় বা আপনার নুতন একটা পিসি কেনার মত মনমানসিকতা না থাকে কিন্তু আপনার পুরাতন পিসিতে কিছু হার্ডওয়্যার মডিফিকেশনের মাধ্যমে তা থেকে বর্তমানের চাইতে আরো কিছু বেশী পারফর্মেন্স চান, তো আপনার বেস্ট অপশন হচ্ছে "পিসি আপগ্রেড!" তবে যারা ডাইনোসর যুগের পিসিকে ফেলে দিয়ে নতুন করে পিসি কিনতে চান, তাদের জন্য পিসি কেনার পরিপূর্ন গাইডলাইন নিয়ে একটা লেখা আমি কিছুদিন আগে লিখেছি। আপনারা চাইলে পড়তে পারেন।
মাসখানেক আগে পিসি কেনার গাইডলাইন নিয়ে যখন লিখেছিলাম, তখন মাথায় রেখেছিলাম পিসি আপগ্রেড করার গাইডলাইন নিয়েও কিছু লেখার কথা! আর তাই প্রায় মাসখানেক ধরে এই ব্যাপারে নেটে বিভিন্ন ফোরাম সাইটের ডিসকাশন, বস(!) পাবলিকদের আর্টিকেল, টুকিটাকি কয়েকটা পিডিএফ ফরম্যাটের বই আর আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে অবশেষে পিসি আপগ্রেড করার গাইডলাইন নিয়ে লিখতে বসলাম। আর আমার এই লেখায় আমি চেষ্টা করব পিসি আপগ্রেড করার গাইডলাইন সহজবোধ্য ভাষায় বর্ননা করার জন্য!
পিসি আপগ্রেড করা আপাতত দৃষ্টিতে বেশ ঝামেলার মনে হলেও একটু চিন্তা ভাবনা আর সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আপনি চাইলেই ন্যুনতম খরচে আপনার পুরাতন পিসিকে আপগ্রেড করে সেটা থেকে সবোর্চ্চ সুবিধা পেতে পারেন। তাহলে আশাকরি.।
বেশ চিন্তাভাবনা করেই প্রথমে এই হার্ডওয়্যার নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। অনেকেই হয়েতোবা আমার সাথে দ্বিমত পোষন করতে পারেন। কারন আমাদের দেশে বেশীর ভাগ মানুষই পিসি আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রসেসর আপগেড করার চিন্তাই প্রথমে মাথায় আনেন। যদিও একটা পিসির মেইন পার্ট হচ্ছে এই মাদারবোর্ড! যেটা পিসির অন্যান্য হার্ডওয়্যার কে নিয়ন্ত্রন করে। আপনার পিসি কতটুকু আপগ্রেড করতে পারবেন, এটা নির্ভর করবে আপনার মাদারবোর্ড কি কি হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করবে তার উপর! আর আপনার পিসি আপগ্রেড মূলত মাদারবোর্ডকে কেন্দ্র করেই নিয়ন্ত্রিত হয়। মাদারবোর্ডের লিমিটেশনের কারনে আপনি হয়তোবা অনেক হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করা থেকে বন্চিত হবে। কারন আপনার মাদারবোর্ডের উপর বসানো চিপসেটই আপনাকে বলে দিবে আপনার মাদারবোর্ড কি কি হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করবে! আপনার মাদারবোর্ড কি কি হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করে, তা জানার জন্য মাদারবোর্ডের সাথে দেওয়া ইউজার ম্যানুয়াল দেখুন! সেখানেই সব বিস্তারিত বলে দেওয়া আছে।
যদি দেখেন যে আপনি এমন সব হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে চান, যেগুলো আপনার পুরাতন মাদারবোর্ড সাপোর্ট করেনা। তাহলে ধরেই নিলাম আপনার পিসি বেশ পুরাতন এবং আপগ্রেড করার চাইতে আপনার জন্য বেটার সমাধান হচ্ছে নতুন একটা পিসি কেনা। কারন বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি নিশ্চিত হন যে আপনার পিসি আপগ্রেড করতে গেলে আপনাকে মাদারবোর্ড পরিবর্তন করতেই হবে, তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে আপনার পিসি আপগ্রেড করতে আপনার হার্ডওয়্যারে যে যে পরিবর্তন আনতে হবে, সেটা কিছুটা নতুন পিসি কেনারই সামিল।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, বেশীর ভাগ মানুষই মাদারবোর্ড আপগ্রেড করতে গেলে শুধু একটা ব্যাপারই মাথায় রাখে, আর তা হল- নতুন মাদারবোর্ড পুরাতন প্রসেসরকে সাপোর্ট দিবে কিনা! কিন্তু এটা বড় একটা ভুল! যেকোন মাদারবোর্ড কি শুধুই প্রসেসরকে নিয়ন্ত্রন করে?! কখনোই না! কারণ মাদারবোর্ডের সাথে প্রসেসর ছাড়াও আরো অন্যান্য হার্ডওয়্যার কানেক্টেড। আর তাই আপনাকে বলব আপনি যদি শুধুই প্রসেসর আপগ্রেড করার চিন্তা মাথায় নিয়ে মাদারবোর্ড আপগ্রেড করার চিন্তা করে থাকেন তো আপনাকে বলব- "একটু শান্ত হোন। ঠান্ডা মাথায় আরেকবার চিন্তা করুন!" ধরেই নিচ্ছি আপনি নতুন যে মাদারবোর্ডটা কেনার কথা ভাবছেন, সেটা আপনার প্রসেসরকে সাপোর্ট করবে। কিন্তু আপনার পিসির অন্যান্য পুরাতন হার্ডওয়্যার যেমনঃ RAM, হার্ডডিস্ক, গ্রাফিক্স কার্ড ইত্যাদি কে সাপোর্ট করবে কিনা- একবারও কি তা ভেবে দেখেছেন?! যাইহোক, এই লেখার পরের দিকে আশা করছি এই ব্যাপার গুলো নিয়েও আলোচনা করব।
পিসি আপগ্রেড করতে গেলে প্রতিটা হার্ডওয়্যারের সাথে মাদারবোর্ডের যে কানেক্টিভিটি, সেটা বিবেচনা করলে পিসি আপগ্রেড করার এই গাইড লাইনে অন্যান্য হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করার আলোচনা আসলে স্বাভাবিক ভাবেই এক হার্ডওয়্যারের প্রসঙ্গে অন্য একটা হার্ডওয়্যার এর প্রসঙ্গ চলে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। কারন একটা হার্ডওয়্যারের সাথে আরেকটা হার্ডওয়্যার অতপ্রোত ভাবে জড়িত। আশা করছি এই ব্যাপারটা আপনারা এই আলোচনাতেই বুঝতে পারবেন।
অবাক হয়ে গেলেন মনে হয়?! ভাবছেন, "এটা আবার কোন হার্ডওয়্যার?!" আসলে এটা কোন হার্ডওয়্যার নয়। এটা একটা ছোট্ট সফটওয়্যার যেটা মাদারবোর্ডের ক্ষুদ্র মেমরীতে বিল্টইন থাকে। যেটাতে ইনস্ট্রাকশন থাকে- আপনার মাদারবোর্ড কি কি হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করবে, পিসির অন্যান্য হার্ডওয়্যারকে কিভাবে চালনা করবে এবং কনফিগার করবে ইত্যাদি ইত্যাদি! আপনি চাইলে আপনার মাদারবোর্ডের এই ছোট্ট সফটওয়্যারকে আপডেট করে আপনার মাদারবোর্ডের হার্ডওয়্যার সাপোর্টিং ক্যাপাবিলিটি বাড়িয়ে নিতে পারেন। তবে কোন বিশেষজ্ঞ ছাড়া এই কাজটা করতে না যাওয়াই ভালো। কারন এটা আপডেট করতে গিয়ে কোন ঝামেলায় পড়লে আপনার সখের মাদারবোর্ডটা বিক্রয় করে মুড়ি-মুড়কি কিনে খাওয়া তেমন কোন উপায় নেই। অতএব সাবধান! তবে বর্তমানের লেটেস্ট মাদারবোর্ড গুলোতে BIOS রিকভারী করার অপশন আছে, যেটার মাধ্যমে BIOS আপডেট করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত কোন সমস্যা হলেও আপনি আবার আগের BIOS সেটিং এ ফিরে যেতে পারবেন। তবে খুবই অভিজ্ঞ না হলে এই কাজটা করতে যাবেন না!
ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, আমার ছোট ভাইয়ের পিসির মাদারবোর্ড সর্বোচ্চ ২ টেরাবাইট পর্যন্ত হার্ডডিস্ক সাপোর্ট করত। কিন্তু কিছুদিন আগে দেখি ঐ মাদারবোর্ড ম্যানুফ্যাকচারের ওয়েব সাইটে BIOS এর লেটেস্ট ভার্সন আপলোড করে দেওয়া। যেটার ফিচার দেখে বুঝলাম যে, মাদারবোর্ডের হার্ডওয়্যার সাপোটিং ক্যাপাবিলিটি বাড়ানো হয়েছে। আর তাই মাদারবোর্ডের বায়োস আপডেট করার ফলে দেখি ঐ মাদারবোর্ডটা এখন ৪ গিগা+ হার্ডডিস্ক সাপোর্ট করছে! যদিও এই মুহূর্তে ৪ গিগার উপরে হার্ডডিস্ক ব্যবহার করার দরকার নেই। তবুও ভবিষ্যতে দরকার পড়লে মাদারবোর্ড চেন্জ না করেই বড় স্পেসের হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা সম্ভব হবে। BIOS আপগ্রেড এর ফলে যে শুধুমাত্র বড় স্পেসের হার্ডডিস্কই মাদারবোর্ড সাপোর্ট করবে, তা নয় এটার ফলে আপনার মাদারবোর্ড এমন অনেক হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করবে, যেটার সাপোর্ট মাদারবোর্ড কেনার সময় ছিলনা।
তবে BIOS আপডেট এর ফলে আপনার পিসির মাদারবোর্ডের কি কি কর্মক্ষমতা বাড়বে, তা ঐ মাদারবোর্ডের ওয়েব সাইটেই বিস্তারিত ভাবে বলে দেওয়া থাকে। তবে আবারো বলছি, খুবই অভিজ্ঞ না হলে BIOS আপডেট করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। কারন BIOS আপডেট করতে গিয়ে বড়সড় কোন ঝামেলায় পড়লে, মাদারবোর্ড সের দরে বিক্রয় করে মুড়ি-মুড়কি কিনে খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর তারপরও যদি অনভিজ্ঞ হাতে এই কাজটা করতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়েন তো সেজন্য এই লেখার লেখক কোন ভাবেই দায়ী থাকবেন না! বায়োস আপডেট করার বিস্তারিত গাইডলাইন নিয়ে এখানে এক ভাইয়ের টিউন সংযুক্ত করে দিলাম!
অনেকেই মনে হয় নড়ে চড়ে বসেছেন, তাইনা? আসলে প্রসেসর আপগ্রেড এমন এক ধরনের আপগ্রেড, যেটার ফলে আপনার পিসির পারফর্মেন্স অনেক গুন বেড়ে যেতে বাধ্য। তবে আপনি কি ধরনের প্রসেসর ব্যবহার করছেন, এটাও একটা গুরত্বপূর্ন ব্যাপার। আপনার পিসি যদি মিনিমাম ৫ বছরের পুরোনো হয় তো জেনে রাখুন আপনি এই সময়ের লেটেস্ট কোন প্রসেসর ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে মাদারবোর্ড পরিবর্তন করতেই হবে। যদিও একটা ব্যাপার আগেই বলেছি যে, আপনার মাদারবোর্ড কি কি হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করে, সেটার উপর নির্ভর করেই আপনি নতুন হার্ডওয়্যার কিনে পিসি আপগ্রেড করবেন। তবে যদি আপনি খুবই পুরাতন পিসির মালিক হয়ে থাকেন তো আপনাকে বলব পিসি আপগ্রেড করতে যদি প্রসেসর কিনতে হয় তো আপনি আগে প্রসেসর এর মডেল পছন্দ করুন। এরপর প্রসেসরকে যে মডেলের মাদারবোর্ড সাপোর্ট করবে, সেটা কিনুন। এখনকার সময়ে প্রসেসর কিনতে গেলে একটু খেয়াল রাখুন আপনি যে প্রসেসরটা কিনছেন, সেটা কেমন সকেটের। যাতে করে মাদারবোর্ড চয়েস করতে সুবিধা হয়। সেই সাথে আপনার পিসির অন্যান্য পুরাতন হার্ডওয়্যার এর কথাও মাথায় রাখুন। কারণ নতুন মাদারবোর্ডের সাথে যদি পুরাতন পিসির পুরাতন হার্ডওয়্যার গুলো ম্যাচ না করে তো আপনার জন্য তখন বেশ সমস্যা হয়ে দাড়াবে!
আমার দৃষ্টিতে এটাই সবচেয়ে কমদামী একটা হার্ডওয়্যার যেটার আপগ্রেড আপনার পিসির পারফর্মেন্স বেশ বাড়িয়ে দিতে পারে! বর্তমানে RAM এর দাম তুলনামূলক অনেক কমে যাওয়ায়, যাদের বাজেট একবারেই কম কিন্তু পিসি আপগ্রেড করে পিসি থেকে কিছু এক্সট্রা পারফর্মেন্স পেতে চান তাদের জন্য এটা বেস্ট আপগ্রেড অপশন! তবে যেহেতু বর্তমানে অনেক বেশী বাস স্পিডের (১৬০০ মেগাহার্টজ থেকে ২০০০+ মেগাহার্টজ) ডিডিআর-থ্রি RAM পাওয়া যাচ্ছে। তাই আপনাকে বলব আপনার মাদারবোর্ড
কি টাইপের, কতটুকু এবং সর্বোচ্চ কত স্পিডের(মেগাহার্টজ) RAM সাপোর্ট করে- এটা বিবেচনা করে RAM আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিন। কারন খুবই পুরাতন মাদারবোর্ডে ডিডিআর-থ্রি RAM এর জন্য কোন সাপোর্ট নেই। যদি আপনার মাদারবোর্ডে ডিডিআর-থ্রি RAM এর সাপোর্ট থাকেও, তবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে সেটা সর্বোচ্চ বাস স্পিডের RAM সাপোর্ট করে। এসব দিক বিবেচনা করে বেশী বাস স্পিডের RAM কিনে পিসি আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খুবই পুরাতন পিসিতে খুব বেশী পরিমাণের RAM ব্যবহার করেও পারফর্মেন্স তেমন বাড়ানো যায়না। তখন
বেস্ট অপশন হচ্ছে মাদারবোর্ড পরিবর্তন করা। এর ফলে RAM এর পাশাপাশি পিসিতে অন্যান্য লেটেস্ট হার্ডওয়্যার ব্যবহার করার অপশনও খুলে যায়। তবে আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে আপনার মাদারবোর্ড সর্বোচ্চ পরিমানের সর্বোচ্চ বাস স্পিডের RAM সাপোর্ট করে তো RAM আপগ্রেডের সময় আপনার পুরাতন RAM এর সাথে ম্যাচ করেই নতুন RAM কিনুন। অর্থ্যাৎ আপনার পুরাতন RAM এর বাস স্পিডের সাথে ম্যাচ করে নতুন RAM কিনুন। তাহলে পিসির স্ট্যাবিলিটি অক্ষুন্ন থাকবে। আর যদি RAM এর বাস স্পিডের মাঝে মিস ম্যাচিং হয় তো জেনে রাখুন আপনার পিসিতে হ্যাং করার উৎসব শুরু হয়ে যাবে! বেশী পরিমানের আপডেটেড RAM লাগিয়েও তেমন কোন সুবিধা করতে পারবেননা।
আপনাকে স্বীকার করতেই হবে, আপনি যদি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ আপগ্রেড করার চিন্তা মাথায় এনেই থাকেন তো এর মূলে রয়েছে, আপনার পিসির পারমানেন্ট মেমরী স্পেস বাড়ানোর চিন্তা! বর্তমানে যে হারে ডাটার পরিমান এবং সেগুলোর আয়তন বাড়ছে, তাতে করে নতুন নতুন ডাটার জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার পিসির মেমরী স্পেস বাড়াতেই হবে। আর এক্ষেত্রে আপনার পিসিতে বেশী স্পেসের নতুন হার্ডডিস্ক ড্রাইভ লাগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটু সমস্যা আছে। আপনার পিসি যদি খুবই পুরাতন হয় তো দেখা যাবে পুরাতন মাদারবোর্ডে বর্তমানের নতুন সাটা ইন্টারফেসের হার্ডডিস্ক ড্রাইভকে কানেক্ট করার মত সাটা পোর্ট নাই। তারপরিবর্তে রয়েছে মান্ধাতা আমলের আইডিই পোর্ট! তাহলে আপনাকে বাধ্য হয়ে নতুন সাটা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ কানেক্ট করার জন্য সাটা পোর্ট যুক্ত মাদারবোর্ড কিনতে হবে। অথবা আপনার আইডিই পোর্টে লাগানোর জন্য বাজার থেকে খুঁজে খুঁজে আইডিই ইন্টারফেসের পুরাতন হার্ডডিস্ক কিনে পিসির ডাটা স্পেস বাড়াতে হবে। কিন্তু এর ফলে মনে হয়না পিসির তেমন কোন পারফর্মেন্স বাড়বে।
তবে আপনার মাদারবোর্ড যদি বর্তমানের লেটেস্ট ইন্টারফেসের (সাটা) মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে তো আপনাকে বলব নতুন যে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ টা কিনবেন সেটাকে পিসিতে প্রাইমারী হিসেবে ব্যবহার করুন অথ্যাৎ অপারেটিং সিস্টেম কে ঐ হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর কোন একটা ডাইভে ইনষ্টল করুন। এতে কম্পিউটার এর পারফর্মেন্স কিছুটা হলেও বাড়বে। সেই সাথে স্পেসও! আর হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর যে ড্রাইভে অপারেটিং সিস্টেম (যেমনঃ উইন্ডোজ) রাখবেন সেই ডাইভের সাইজটা একটা বড় রাখুন। এটার অনেক সুবিধা রয়েছে, যেটা আশা করছি পরে বুঝতে পারবেন! তবে আপনি যদি পিসির পারফর্মেন্স এর কথা খুব চিন্তা করেন তো আর বাজেট্ও অনেক, তাহলে আপনাকে বলব, এই সময়ের সবচেয়ে লেটেস্ট টেকনোলজি SSD(Solid-state drive) এর কথা মাথায় আনতে পারেন। তবে যেহেতু SSD(Solid-state drive) এখনো অতটা সহজলভ্য নয়, তাই এটার দাম তুলনামূলক অনেক বেশী। কিন্তু স্পেস এবং পারফর্মেন্স এর কথা চিন্তা করলে এই মুহূর্তে এটার চাইতে ভালো কিছু বের হয়নি। এক্ষেত্রে আপনার পিসির মাদারবোর্ড এটাকে সাপোর্ট করবে কিনা সেটাও ভেবে দেখবেন আশা করছি!
বর্তমানে অনেকেই এটাকে "এক্সপ্রেস কার্ড" বা "পিসিআই এক্সপ্রেস কার্ড" হিসেবে চেনে। আমি ধরেই নিচ্ছি আপনি যখন এটাকে আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারমানে আপনি একজন গেমার (হার্ডকোর না হলেও ক্যাজুয়াল) অথবা আপনি গ্রাফিক্স রিলেটেড এমন কোন কাজ করতে চান যেটাকে প্রচুর গ্রাফিকাল পাওয়া দরকার! আপনার কাজের পরিধি তেমন বিশাল না হলে আপনাকে বলব, বর্তমানের আপনার পিসির মাদারবোর্ডে বিল্টইন গ্রাফিক্স চিপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। টুকিটাকি কাজের জন্য বেশ চলনসই এটা। তবে আপনি যদি এটাকে আপগ্রেড করতেই চান তো আপনাকে বলব আপনি ২ টি ব্যাপার বিবেচনা করুন। প্রথমটি হল - আপনি যে মাদারবোর্ড ব্যবহার করছেন বা করতে চাচ্ছেন, সেটা কি আপনার নতুন গ্রাফিক্স কার্ড কে সাপোর্ট করবে কিনা! কারন ডাইনোসর যুগের মাদারবোর্ড গুলো এজিপি ইন্টারফেসের! কিন্তু বর্তমানে যেহেতু এজিপি ইন্টারফেসের গ্রাফিক্স কার্ড নেই, সবই পিসিআই এক্সপ্রেস ইন্টারফেসের। তাই বর্তমানের কোন গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করতে গেলে আপনার মাদারবোর্ডে পিসিআই এক্সপ্রেস স্লটের কথা মাথায় আনতে হবে। যদি আপনার মাদারবোর্ডে এই স্লটটা থাকে তো তারমানে আপনার মাদারবোর্ড এটাকে সাপোর্ট করে। দ্বিতীয়টি হল - যেহেতু বর্তমানের গ্রাফিক্স কার্ড গুলো বেশ পাওয়ার হাংরি, তাই আপনার পাওয়ার সাপ্লাই এটাকে এটার চাহিদা মত পাওয়া দিতে পারবে কিনা এটাও বিবেচনা করে গ্রাফিক্সকার্ড কেনার পাশাপাশি দরকার হলে নুতন একটা পাওয়ার সাপ্লাই কিনুন। আশা করছি এই ব্যাপারটা নিয়ে পরে আলোচনা করব!
বর্তমানের গ্রাফিক্স কার্ড গুলোর কুলিং সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন আনার ফলে সেগুলোর পুরুত্ব এবং সাইজ বেড়ে গেছে। আর এ কারনে গ্রাফিক্স কার্ডগুলো থিওরীক্যালি একটা স্লট ব্যবহার করলেও এদের সাইজের কারণে এরা মাদারবোর্ডের অন্য দুই একটা স্লটকে ঢেকে দেয়। যে কারনে সেই স্লটগুলো অব্যবহ্বত থেকে যায়। এই ব্যাপারটা বিবেচনা করে এমন একটা মাদারবোর্ড কিনুন যেটাতে বিভিন্ন স্লটগুলোর জন্য যথেষ্ট স্পেস আছে! আবার যদি এমন হয় যে আপনি আপনার মাদারবোর্ডে ডুয়েল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করতে চান তো, খেয়াল রাখুন আপনার মাদারবোর্ডে এক্সট্রা স্লট আছে কিনা বা ডুয়েল গ্রাফিক্স কার্ড সাপোর্ট করে কিনা!
বুঝলেন না এটা জিনিস? আপনারা কেসিং এ সাথে যে ডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করেন, সেটাকে সার্বিক ভাবে অপটিকাল ড্রাইভ বলে। তারমানে আপনি যে সিডি ড্রাইভ, ডিভিডি ড্রাইভ বা ডিভিডি রাইটার ব্যবহার করেন, এগুলোকেই বলে "অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ। " আপনি যদি খুবই পুরাতন পিসি ব্যবহার করেন তো আশা করছি আপনি এখনো ডিভিডি ড্রাইভেই আটকে আছেন। বর্তমানে যেখানে ব্লুরে ডিস্ক মার্কেটে পাকাপোক্ত ভাবে আসন নিতে যাচ্ছে, সেখানে কমসে কম একটি ডিভিডি রাইটার না থাকাটা কিছুটা প্রেসটিজিয়াস ইস্যু! 😳 আর তাই আপনি যদি চিন্তা করেন তো একটু আপডেটেড হবেন তো এই মুহূর্তে আপনি ডিভিডি রাইটার কিনতে পারেন।
তবে একটা ব্যাপার একটু মাথায় রাখবেন যে, আপনি যদি পিসিতে ডাইনোসর যুগের সিডি ড্রাইভ ব্যবহার করেন তো মনে হয় আপনার মাদারবোর্ডে বর্তমানের সাটা ইন্টারফেসের অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ কানেক্ট করার মত কোন সাটা পোর্ট নেই। ফলে আপনাকে বাধ্য হয়েই আইডিই টু সাটা কনভার্টার কেবল ব্যবহার করতে হবে। তবে এগুলো বেশ ঝামেলা করে! আর যদি আপনার মাদারবোর্ডে সাটা কানেক্টর থাকে এবং আপনি যদি বেশ সৌখিন হন, তো আপনাকে বলব এই মুহূর্তে একটা ব্লুরে ডাইভ কিনতে পারেন। এটার সাহায্যে আপনি অন্যান্য ডিস্ক চালানোর পাশাপাশি ব্লুরে ডিস্কও চালাতে পারবেন। তবে এগুলোর দাম তুলনামূলক অনেক বেশী। তবে আপনি যেটাই কিনুন না কেন সেটা যেন মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে, সে ব্যাপারে একটু খেয়াল করুন।
আমার দেখা মতে খুব কম মানুষই এটা আপগ্রেড করার কথা মাথায় আনেন। তবে আমি বলব আপনি যদি ভালো কোন গ্রাফিক্স কার্ড আর ব্লুরে ড্রাইভ কিনে থাকেন তো বাজেটে কুলালে মাদারবোর্ডের বিল্টইন সাউন্ড চিপকে এভয়েড করে ৪/৫ হাজার টাকার মধ্যে মোটামুটি মানের একটা সাউন্ড কার্ড কিনে ফেলুন। তবে ভালো কোন স্পিকার না থাকলে এরকম আলাদা সাউন্ডকার্ড কেনা মিছেমিছি টাকার শ্রাদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই নয়!
এটাকে অবহেলা করার মত বোকামী করবেন না আশা করছি। কারন আপনি যখনই আপনার পিসি আপগ্রেড করতে গিয়ে নতুন নতুন হার্ডওয়্যার সংযুক্ত করবেন, তখনই একটা প্রশ্ন সবার আগে চলে আসবে। আর তা হল - আপনার পুরাতন পাওয়ার সাপ্লাই কি আপনার নতুন হার্ডওয়্যার গুলোর চাহিদা মত যথেষ্ট পাওয়ার সাপোর্ট দিতে পারবে?! আপনি যদি নতুন মাদারবোর্ড কিনে থাকেন তো আপনার সেই মাদারবোর্ডকে পাওয়ার দিতে আপনার পাওয়ার সাপ্লাই যথেষ্ট ক্যাপাবল কিনা একটু ভেবে দেখুন। খুবই পুরাতন মাদারবোর্ড গুলো ২০ পিনের পাওয়ার কানেক্ট ব্যবহার করলেও বর্তমানের মাদারবোর্ড গুলো ২৪ পিনের পাওয়ার কানেক্টর ব্যবহার করে। আপনার পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সেরকম কানেক্টর না থাকলে আপনার জন্য নতুন একটা পাওয়ার সাপ্লাই কেনাটা মাষ্ট! তবে শুধু মাদারবোর্ডের কানেক্টর গুলোর কথা চিন্তা করলেই হবেনা। আপনার পিসির অন্যান্য হার্ডওয়্যার গুলো কেমন পাওয়া কানেক্টর ব্যবহার করে, কতটুকু পাওয়ার ব্যবহার- এসব কথাও একটু বিবেচনা করতে হবে। সেই সাথে আপনি ভবিষ্যতে কিছু নতুন হার্ডওয়্যার আপনার পিসিতে ব্যবহার করলে সেটার পাওয়ার রিকয়ারমেন্ট এর কথাও আগাম চিন্তা করে পাওয়া সাপ্লাই কেনার বা আপগ্রেড করার কথা মাথায় রাখুন।
খুবই অবাক হয়ে গেলেন তাইনা?! ভাবছেন পিসি আপগ্রেড এর সাথে এটার আবার কি সম্পর্ক! একটু বুঝিয়ে বললে বুঝবেন যে পিসি আপগ্রেড এর সাথে এটারও কিছুটা সম্পর্ক আছে। আপনার কেসিং যদি মান্ধাতা আমলের কিছু হয় তো ধরেই নিচ্ছি সেটা আপনার নতুন হার্ডওয়্যারের জন্য যথেষ্ট স্পেস দিতে পারবেনা। যেমন: বর্তমানের মাদাবোর্ড গুলোর সাইজে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। সেই সাথে পিসির বিভিন্ন কম্পোনেন্ট এর সাইজেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ স্বরুপ: বর্তমানের গ্রাফিক্স কার্ড গুলোর যে দানব সাইজ, তাকে সাপোর্ট দিতে গেলে অবশ্যই বড় আকারের কেসিং ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়াও নতুন হার্ডওয়্যার গুলোর যে স্পেস আর কুলিং সল্যুশনের এবং ভেন্টিলেশন প্রয়োজন, সেটা একমাত্র নতুন কেসিং গুলোই প্রোভাইড করতে পারে!
মাসখানেক আগে যখন পিসি কেনার গাইড লাইন নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম, তখন থেকেই আশা ছিল সেই লেখাটাকে কিছুটা হলেও পরিপূর্নতা দেবার জন্য পিসি আপগ্রেড করার গাইড লাইন নিয়ে কিছু লেখার! আর তাই তখন থেকেই এ ব্যাপারে টুকিটাকি পড়াশুনা করতে হয়েছে (ভাব নেবার জন্য কথাটা বলিনি কিন্তু)।
আমি সবসময়ই চেষ্টা করি টেকি টিউন গুলো যথেষ্ট সময় নিয়ে, নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করে লেখার জন্য! তারপরও এই লেখাটাতে ভুলত্রুটি থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। আপনাদের কাছে যদি কোন ভুলত্রুটি ধরা পড়ে তো, আশা করব আপনারা সেই ভুলত্রুটি গুলোকে শুধরিয়ে দিবেন।
আমি স্বপ্নবিলাসী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 71 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
I Am A Simple Boy & Believe In Simplicity........!!
আগেরটার মতোই অসাধারণ টিউন।
আপনার আগের টিউনের লিঙ্ক এই টিউনেও এড করে হাইলাইট করেন দিন। 🙂