পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় কিছু না কিছু আবিস্কার করেই চলেছে। কখনও বিপদে কখনো বা কোন বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করতে। কেউ কেউ আবার আবিস্কার করেছেন খেলতে খেলতে। কেউ আবিস্কারের নেশায় উম্মত্ত হয়ে রক্তের খেলায় মেতেছে। কেউ পরীক্ষাগারে আবার কেউ আপেল গাছের নিচে, কেউ বা নগ্ন হয়ে মধ্য দুপুরে গোসল করার সময়। আবিস্কারের নির্দিস্ট কোন ঘরবাড়ি নেই।
আবিস্কারক যখনই প্রয়োজন মনে করেছেন তখনই সে তার কল্পনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এর আগে কয়েকটি টিউনে কিছু বিখ্যাত আবিস্কারকে টিউনার বন্ধুদের সামনে তুলে ধরেছি। আজও কিছু আবিস্কার আপনাদের সামনে তুলে ধরব। এই আবিস্কারগুলো আহামরি তেমন কিছু নয়। তবে যে বিষয়টি এই আবিস্কারগুলোকে ফেমাস করেছে তা হল, এদের আবিস্কৃত হওয়ার স্থান। এই আবিস্কারগুলো কোন ল্যাবে হয়নি। এই আবিস্কারগুলো কোন ল্যাবে হয়নি, হয়েছে জেলখানায় কিছু কয়েদীদের দ্বারা। জেলখানায় নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদ মেটাতেই তারা এই সমস্ত আবিস্কার করেছিল। আসুন দেখে নেয়া যাক কয়েকটি আবিস্কার –
আমাদের দেশে এমনকি পৃথিবীর মোটামুটি সব দেশেই জেলখানার কয়েদীদের কাছে সিগারেট একটি হটপট জিনিস। কোন ভিজিটর জেলখানায় আসলে সিগারেট নিয়ে যাওয়াটা যেন এখন রেওয়াজ হয়ে আছে। তবে জেলখানায় কয়েদীদের কাছে লাইটার বা দিয়াশলাই রাখার অনুমতি নাই। আমাদের দেশের কয়েদীরা সাধারণত সেন্ট্রির কাছ থেকে ম্যাচ ধার নিয়ে সিগারেট ধরায়। কিন্তু আমেরিকার এক কয়েদী ঘটিয়েছে আশ্চর্য ঘটনা। সে দুটি এ সাইজের ব্যাটারি ছবির মত করে পেচিয়ে একটি তার পজিটিভ টু নেগেটিভ কানেকশানে বিদ্যুত প্রবাহিত করে সিগারেট ধরিয়েছিল। ছবিতে ব্যবহার করা তারটি মাঝখানে সেখানে ইনসুলেশান ছিড়ে গেছে, সেখানে সিগারেট লাগিয়ে ধরিয়ে নিত এখানকার কয়েদীরা।
এই জিনিস তারা জেলে বসে কেনই বা আবিস্কার করল তা আমার মাথায় আসে না। হয়ত, নাই কাজ তো খই ভাজ টাইপের থিউরি। তবে তাদেরকে এই ধরনের মাল সামানা কে সাপ্লাই দিত তা ভেবে দেখার বিষয়। বর্তমানে ট্যাটু ডিজাইনারদের এটাই প্রথম স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এ সাইজের কয়েকটি ব্যাটারিকে কানেকশান দেয়া হয়েছিল একটি সিম্পল মটরে। এবং ব্যবহার করা হয়েছিল সুই। আজকের বিভিন্ন রঙের কোন বালাই ছিল না তখন।
এখন এটা অনেকের কাছে আহামরি কোন আবিস্কার না ও মনে হতে পারে। তবে সেই সময়কালে এই ধরনের আইডিয়াটা জেলারদের কাছে ভয়াবহ বলে মনে হয়েছিল। এরকমই একটি ধারাল অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হত প্রবিত্র ক্রুশের মধ্যে। জেলের কয়েদীদের একই রুমের কেউ ক্রুশের সামনে প্রাথনা করতে বসে যেত। সেই প্রার্থনারত ব্যক্তিটি যদি শত্রু হলে, তার জন্যে সেই ক্রুশ থেকেই বেরিয়ে আসত এই ধারাল অস্ত্রটি।
ছবি থেকে অস্ত্রটা বোঝা মুশকিল। এটা যে কি ভয়নক হতে পারে তা হয়ত এর ভিকটিমরা ই বলতে পারবে। সারাদিন এটাদিয়ে মাথা আচরানো হত। আর বেশিরভাগ সময়েই শু – লেস দিয়ে এর মাঝে তিন তিনটি ব্লেড অ্যাটাচ করে রাখা হত। আর জেলখানায় কয়েদীদের মাঝে প্রায়শই খ্যাচ খ্যাচ লেগে থাকে। তখন একটু মেজাজ খিচড়ে গেলেই বেরিয়ে আসত এই চিরুনি পকেট থেকে।
অনেকেই ইংলিশ সিনেমায় বা সিরিয়ালে গ্লাডিয়েটর ফাইট দেখেছেন মনে হয়। সেখানে অনেকে এক ধরনের বিশেষ চাবুক ব্যবহার করত। যার আগায় একটি কাঁটাযুক্ত গোলাকৃতি পিন্ড লাগানো থাকত। এই থিউরিকেই কাজে লাগিয়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়ে কিছু কয়েদি বানিছে একটি চাবুক। জেলখানার কিছু ব্যাডবয়রা লাঠির আগায় জুতার ফিতা বা ইলেক্ট্রিক্যাল টেপের সাথে লোহার টুকরা এবং ঝাঁকে ঝাঁকে ব্লেড লাগিয়ে বানিয়েছিল এই অস্ত্রটি।
আজকাল যে ডামি গান দিয়ে সিনমার শুটিং হয় এবং বাচ্চারা খেলা করে এই ডামি গানের চিন্তাও প্রথমে উঠে আসে একজন কয়েদির মাথা থেকেই। তারা কাঠের টুকরা থেকে কাছাকাছি লুকের এবটি ডামি গান বানিয়ে জেল থেকে একটি গ্রপ পালাতেও সক্ষম হয়।
এবার চলে যাবো আবিস্কারের আরো কিছু অ্যাডভান্স সেকশানে -
হিটার হিসেবে এরকম কয়েল ব্যবহার অনেকেই নিশ্চই করেছেন। খুবই সিম্পল কন্সট্রাকশান। আমি নিজেও কয়েকবার ব্যবহার করে দেখেছি। হিটার হিসেবে ভালোই কাজ করে। আপনারা নিশ্চই ভাবছেন হিটারের আবিস্কারটাও মনে হয় জেলে। না, তা কিন্তু নয়। এই হিটার ব্যবহরা করে আবিস্কার করেছে আরেক টেকনোলজি। তারা বিভিন্ন ফলকে স্ম্যাশ করে এই হিটিং মেশিনে হিট করিয়ে পান করত। এটাতে তাদের নাকি নেশা হত। তবে এখন এই কয়েলের মডিফাইড ভার্সন এখণ আধুনিক অ্যালকহলিক ব্যবহারেজের হিটার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সাধারণ মানের কাটা তার, টিনের ফয়েল এবং বাস্টেড হিটিং রড দিয়ে তৈরী করে এই টোস্টারটি। মাঝে মাঝে হয়ত তারা বার্বিকিউ ও করে থাকতে পারে। কিন্তু এটা দিয়ে নাকি ভায়োলেন্স শুরু হবার পরে তা ব্যান করে জেলখানা কৃপক্ষ।
দেখলে আসলেই অবাক লাগে, মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে নিজের মস্তিস্ককে কতটা ব্যবহার করতে পারে। কথায় আছে ঠেলার নাম বাবাজি. আমরা এখনও ঠেলায় পড়ি নাই। যেদিন পড়ব হয়ত সেদিন নতুন কিছু নিয়ে ঠিকই ভেবে দেখব। সেদিন আর বিদেশীদের আবিস্কার দেখে হায় হুতাশ করতে হবে না।
আমি দুঃসাহসী টিনটিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 200 টি টিউন ও 1531 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 34 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মানুষ হিসেবে তেমন আহামরি কেউ নই আমি। সাটামাটা জীবনটাই বেশী ভালো লাগে। আবার মাঝে মাঝে একটু আউলা হতে মন চায়। ভালো লাগে নিজেকে টিনটিন ভাবতে .... তার মত দুঃসাহসী হতে মন চায় ..... কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অনেকটা ভীতুই বটে ..... অনেক কিছুই হাতছাড়া হয়ে গেছে জীবনে এই কারনে ..... আবার...
হায় হায় , এত অদ্ভুত সুন্দর টিউন। টিনটিন ভাই তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।