ফেসবুক দিয়ে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা করে স্বাবলম্বী-

খুব কম মানুষই আছেন, যিনি দিনে একবারের জন্য হলেও ফেসবুকে ঢুঁ না মারেন। এদের কেউ কেউ ফেসবুকে আকর্ষণীয় জিনিস পত্রের দিকে চোখ রাখেন। ফেসবুক আমাদের জীবনের সাথে এমনভাবে একাকার হয়ে মিশে গিয়েছে, যা সামাজিক অভিজ্ঞতার স্বাদ দিনের পর দিন বদলে দিচ্ছে।
একেকদিন হাজির হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পসরা নিয়ে। আর এই পসরা কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ নিজেকে তৈরি করছেন ফেসবুক উদ্যোক্তা হিসেবে কিংবা ব্যবসায়ী হিসেবে। ফেসবুক উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ধারণাটি নতুন না হলেও অনেক জানেন না, কিভাবে এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে সফল করা যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরির অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটিতে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নিজের একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে আয় করার জন্য ফেসবুক হতে পারে অন্য একটি মাধ্যম। আজ ফেসবুকে ব্যবসা নিয়ে কিছু টিপস আলোচনা করব। আশাকরি আপনিও শুরু করতে পারেন ব্যবসায়ী হিসেবে ফেসবুকে আপনার নতুন ক্যারিয়ার।
এফ কমার্স
ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করাকে ‘এফ কমার্স’ বলে। টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন নেই এখানে। শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি পেজ খুলেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। ফেসবুকে লগ ইন করলেই, এরকম কিছু ব্যবসা আপনার চোখে পড়বে। সাধারণত শাড়ী, বিভিন্ন কাপড় চোপড়, গিফট আইটেম, নকশী কাথা, বিভিন্ন খাবার, হস্তশিল্প ইত্যাদি প্রোডাক্ট নিয়ে অনেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। এই ধরনের ব্যবসা করার জন্য খরচও করার প্রয়োজন হয়না, শুধু দরকার হয় নিজের সৃজনশীল মন মানসিকতা, সময় ও শ্রম।
ছোট ও লোকাল ব্যবসার জন্য ফেসবুক
যেকোন ছোট ও লোকাল ব্যবসার জন্য ফেসবুক হতে পারে শক্তিশালী মাধ্যম। ফেসবুকে লগইন করলে আপনি কিছু কোম্পানির ব্যবসা দেখে বিস্মিত হতে পারেন। কিন্তু লক্ষ্য স্থির রাখলে আপনিও তাঁদের মত হতে বেশী দিন লাগবে না। আমি এক মহিলাকে দেখেছি শুধু টিপ বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেছেন। উনার টিপ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
কী ব্যবসা করবেন?
প্রথমে চিন্তা করুন কি ব্যবসা করবেন? ফেসবুকের ব্যবসা বেশীরভাগ এলাকা ভিত্তিক। আপনার এলাকায় কোন জিনিসের চাহিদা? আপনার বন্ধু, আত্মীয় স্বজন, পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করুন। সিদ্ধান্ত নিন, একটা প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন, নাকি একের অধিক প্রোডাক্ট নির্বাচন করবেন।
ফেসবুকে ব্যবসায়িক পেজ তৈরি
ফেসবুকে যে কোন ব্যবসা শুরু করতে হলে, আপনাকে ব্যবসা সম্পর্কিত একটি পেজ তৈরি করতে হবে। ফেসবুক পেজ তৈরি করা, ওয়েব সাইট এর চেয়েও সহজ। তাছাড়া এতে কোন খরচ লাগে না। ফেসবুক পেজ তৈরির আগে মনে রাখবেন, ব্যক্তিগত পেজ আর ব্যবসায়িক পেজ এক নয়। পেজের নাম হবে ব্যবসার নামে। তবে ব্যক্তিগত প্রোফাইলের সাথেই চলবে ব্যবসায়িক পেজ। ব্যবসা করার দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা ভাবনা করেই নামটা ঠিক করতে হবে। আপনি চাইলে ফেসবুকে বিজনেস একাউন্ট করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আপনার পেজে ব্যবহারের জন্য কিছু টুলস পাবেন। এজন্য ফেসবুক আপনাকে চার্জ করবে। তবে লোকাল ব্যবসার জন্য এটির প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
পেজ ব্যানার, স্লোগান এবং লোগো তৈরি
পেজ ব্যানার ও প্রোফাইল ছবি আপনার ব্যবসায়িক মানকে প্রতিনিধিত্ব করে। মানুষ প্রথমে প্রোফাইল ছবি দেখে, সেই ক্ষেত্রে প্রোফাইল ছবি কোম্পানী লোগোতে পরিণীত হয়। উন্নত লোগো, ব্যানার কিংবা কভার ফটো আপনার পেজকে অবশ্যই সুন্দর এবং প্রফেশনাল করবে। আপনি আরো বেশী প্রফেশনাল করতে চাইলে একজন ভালো ডিজাইনার দিয়ে লোগো তৈরি করে নিতে পারেন। আপনার ব্যবসায়িক পেজের জন্য একটা স্লোগান নির্বাচন করুন। যেটা আপনার ক্রেতা কে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। যেমন বাংলাদেশ বিমানের স্লোগান, আকাশে শান্তির নীড়।
“About” সেকশন কখনো খালি রাখবেন না
আপনি যে ব্যবসাটি করবেন তার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ফেসবুক পেজটির About সেকশনটি ভালভাবে পূরণ করুন। এই সেকশনটি আপনার ব্যবসার প্রধান প্লাটফর্ম। মনে রাখবেন, আপনার পেজের বেশীরভাগ সদস্য এই সেকশন ভিজিট করে জেনে নিবেন আপনার ব্যবসার খুঁটিনাটি। বড় কোন প্রবন্ধ নয়, সংক্ষিপ্ত বিবরণ হওয়া উচিত। আপনি হবেন এই পেজের এডমিন। আপনি চাইলে একটা টিমও তৈরি করতে পারেন। টিম এই পেজের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে।
পেজে মেম্বার যুক্ত করা
আপনার পেজটি প্রস্তুত হয়ে গেলে পেজের মেম্বার বাড়ানো শুরু করতে হবে। সবার প্রথমে নিজের ফ্রেন্ড লিস্টের সবাইকে, নিজের কাছের কোন বন্ধুকে অনুরোধ করে, তার ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে এ পেজে যুক্ত করে নেওয়ার জন্য ইনভাইট করুন। এ পদ্ধতিতেই চেষ্টা করুন পেজে ১০০০ টা লাইক যুক্ত করার। এর পর এলাকা ভিত্তিক ফ্রেন্ড লিস্ট তৈরি করুন। যেমন, আপনি ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করেন। ফেসবুকে ধানমন্ডি লিখে সার্চ করুন এবং দেখুন কি পরিমান ভিজিটর দেখাচ্ছে। তাঁদের কে ফ্রেন্ড লিস্ট এ ইনভাইট করুন, একসেপ্ট করলে আপনার পেজের জন্য ইনভাইট করুন। এতে বেশী না হোক, অন্তত কিছু মানুষকে আপনি পাবেন।
নিজেকে পরিচিত করাটাই আসল
নিজেকে পরিচিত করুন। অনলাইনে ব্যবসার ক্ষেত্রে, যে ক্রেতা, তার কাছে আপনি (ব্যবসার মালিক) একদম অপরিচিত এবং অবিশ্বস্ত। সুতরাং ক্রেতা কখনও প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগে আপনাকে পেমেন্ট করতে সাহস পাবেনা। আবার আপনি নিজেও পেমেন্ট পাওয়ার আগে অপরিচিত একজনকে প্রোডাক্ট দিতে রিস্ক নিবেননা। তাই ক্রেতার সাথে পরিচয় হন, সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। অনলাইনের মাধ্যমেই এখন মানুষের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এ বন্ধুত্ব তৈরির জন্য আপনাকে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। আর অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি হলেই বিশ্বাস এবং আস্থা তৈরি হবে। তখনই ক্রেতা প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে আপত্তি করবেনা। সুতরাং নিজেকে পরিচিত করুন, ব্যবসার পরিধি বাড়ান।
লাইক নয়, সেল এ মনযোগ দিন
অনেকে ফেসবুকে লাইক পেলে বেশী খুশী হয়। এত খুশী হওয়ার কোন কারন নেই। ফেসবুকে লাইক বৃদ্ধি করে ব্যবসার জন্য লাভ নাই। ফেসবুকে লাইক বেশি থাকলে সেল বেশি হবে এটা অনেকের ধারণা। যা সম্পূর্ণ ভুল। ফেসবুক পেজে অ্যানগেজমেন্টটা সবচাইতে জরুরী। অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি করুন, সেল বেড়ে যাবে।
কিভাবে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি
অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি ফেসবুক ব্যবসার প্রাথমিক কৌশল। প্রতিদিন ফেসবুক পেজটিতে কমপক্ষে ২টি করে টিউন দিবেন। আগামীকাল কি টিউন করবেন, সেগুলো নিয়ে আজকে কিছুটা গবেষণা করে নিন। তথ্য নিন ইন্টারনেট থেকে। ইন্টারনেটে অনেক সাইট আছে, সেগুলো থেকে কপি না করে কাস্টমাইজ করে নিন। বার বার স্টাডি করুন। তারপর টিউন দিন। সরাসরি ফেসবুকে না লিখে ওয়ার্ড প্রসেসর এর সাহায্য নিন, এর পর কপি করে আপনার পেজে পেস্ট করুন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারেন মানে আপনি ফেসবুক মার্কেটার হয়ে গেছেন মনে করার দরকার নাই।
ধরুন আপনার ব্যবসাটি হবে দেশীয় শাড়ী, যেমনঃ তাঁতের শাড়ী। এজন্য তাঁতের শাড়ী নিয়ে আপনাকে স্টাডি করতে হবে। আপনিতো তাঁতি নন। তাই তাঁতের শাড়ী সম্পর্কে বেশী জানেন, এমন কারো সাহায্য নিতে হবে। এ সম্পর্কিত অনলাইনে কী কী টিউন আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে আগে সব লিস্ট করে রাখুন।
লিস্ট করে রাখা সব পোস্টগুলো থেকে এবার কন্টেন্ট তৈরি করুন। ফেসবুকের কন্টেন্ট আর ব্লগের কনটেন্ট এক নয়। ফেসবুকের কন্টেন্ট সাধারণত ছোট হয়। সারমর্ম টাইপ হয়। আপনি যদি তথ্য বহুল টিউন দিতে চান, তাহলে নোট অপশন বেচে নিতে পারেন। কপি পেস্ট না করে নিজের মত করে কন্টেন্ট উপস্থাপন করুন। কপি পেস্ট করলে ব্রান্ডিংয়ে কম সফল হবেন। এমন কন্টেন্ট তৈরি করুন, যা মানুষের জন্য উপকারী হবে। মানুষের উপকারী তথ্য দিয়ে কোন টিউন করলেই, পেজের মেম্বাররা আপনাকে বন্ধু মনে করা শুরু করবে, আপনার উপর আস্থা শুধুমাত্র তখনই তৈরি হবে।
টিপস
• প্রতিদিনের ২টি টিউনের মধ্যে একটি টিউন কুইজ টাইপ হতে পারে। কুইজ টাইপ টিউনে টিউমেন্ট এবং লাইক প্রচুর পাওয়া যায়।
• শুরুতে কখনই বিজ্ঞাপণ টাইপ কোন টিউন করবেননা, তাতে বন্ধুত্ব তৈরি হবেনা, দূরত্ব তৈরি হবে।
আজ এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন যদি কারোর কোন কিছু প্রশ্ন থাকে করতে পারেন আমি আপনার ফেসবুক যোনিতে যেকোন সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব

Level 1

আমি মোঃ ফাহাদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস