ফেসবুক আমাদের যা দিয়েছে আর যা কেড়ে নিয়েছে ।

আসসালামু আলাইকুম । সবাই কেমন আছেন ।  আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো। ভালো থাকাটাই সবসময়রে প্রত্যাশা ।  সময়ের স্বল্পতার কারণে খুব একটা লেখালেখি করার সুযোগ হয়না । তবুও চেষ্টা করি স্বল্প সময়ে অল্প অল্প কিছু লেখা শেয়ার করতে ।  আর তারই ধারাবাহিকতায় ফেসবুক নিয়ে আজকের এই লেখা । 

প্রযুক্তির কল্যাণে ফেসবুক আজ সর্ববৃহত সামাজিক নেটওয়ার্ক ।  এ নেটওয়ার্ক এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, যাবতীয় সামাজিক যোগাযোগ ছাড়াও অনলাইন মার্কেটিং এবং বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এটিকেই বেছে নেয়া হয় ।  সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক আজ প্রতিষ্ঠিত।  কিন্তু ফেসবুকের একদিকে যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি রয়েছে মন্দ দিকও । চলুন পর্যালোচনা করে দেখি বিষয়টি।  

 

ফেসবুকের ভালো দিক-

১। দ্রুত সময়ে তাতক্ষণিক যোগাযোগ 

২। সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম

৩। পুরনো বন্ধু / বান্ধবী খুজে পাওয়ার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম । 

৪। নতুন বন্ধু / বান্ধবী তৈরী করার উতকৃষ্ঠ পন্থা । 

৫। অনলাইন মার্কেটিং এর বিশেষ মাধ্যম । 

৬। যেকোন বিষয় শেয়ার করার উল্লেখযোগ্য স্থান

৭। পরামর্শ দেয়া নেয়া এবং গ্রুপের মাধ্যমে আলাপ আলোচনার সুযোগ

৮। একডেমিক বিষয়গুলো বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে জানা এবং জ্ঞানার্জন । 

৯। ছবি, ভিডিও এবং নিজের অবস্থান প্রকাশের তাতক্ষণিক মাধ্যম । 

 

ফেসবুকের মন্দ দিক-

১। ফেসবুকের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত করে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার সুযোগ

২। অপরিচিত লোকের সাথে বন্ধুত্ব করে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা প্রচুর

৩। অপরিচিত বন্ধু বান্ধব তৈরী করে তাদের সাথে নিজের সব বিষয় শেয়ার করা

৪। ফেসবুকের নেশায় পড়ায় অমনোযোগী অপার সম্ভাবনা 

৫। রাত দিন বিভিন্ন স্ট্যাটাস শেয়ারের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করার সুযোগ

৬। ফেসবুককে জীবনের অন্যতম অংশ ভেবে নিজের পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা । 

৭। যখন তখন নিজের প্রয়োজনীয় কাজকে তুচ্ছ করে ফেসবুকেই নিমগ্ন থাকা

৮। পরিবার পরিজনের সাথে একসাথ হলেও ফেসবুকের নোটিফিকেশন, লাইক দেয়া, কমেন্টস করার মাধ্যমে কাছাকাছি থেকেও দূরবর্তী  স্থানের মানুষ হতে হয় । 

৯। ফেসবুকের পরিচিত / অপরিচিত সদস্যরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সৃষ্টি হয় । 

১০। ভুয়া আইডি তৈরী করে ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ার আশঙ্কা । 

১১। সর্বোপরি সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাঙ্খিত পথে সে সময় দেয়া প্রয়োজন, শুধুমাত্র ফেসবুকেই সে সময় দিয়ে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হওয়ার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে । 

 

বাবা মা ভাই বোন সবাই একসাথ হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভাই স্ট্যটাসে কমেন্ট করা নিয়ে ব্যস্ত, বোন ছুব আপলোড নিয়ে ব্যস্ত আবার বাবা কিংবা মা ফোনে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত ।  একসাথে দেখেও সবাই দূরে দূরে । এমন অবস্থা শুধু পরিবারেই নয়, বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়ার প্রাক্কালেও পরিলক্ষিত হয়।  এমন অবস্থা তৈরীরর পেছনে ফেসবুকের যথেষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে । 

 ফেসবুক একদিকে যেমন দিয়েছে বেগ, তেমনি কেড়ে নিয়েছে আবেগ । ফেসবুকের কল্যাণে আমরা আজ আমাদের পরিবার পরিজন থেকেও দূরে সরে গিয়েছি ।  পরিবারের লোকজন আমাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত সময় পায় না ।  ফলে সামাজিক অবক্ষয়, পাবারিক ভাঙ্গন এসব প্রকট হয়ে পড়ে । পাশাপাশি ফেসবুকের নেশায় মত্ত হয়ে আজকের তরুণ সমাজ পড়াশোনা থেকেও দূরে সরে যায়, ফলে তাদের মেধাটাও ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে ।  এতে কাঙ্খিত মেধাবী ঝড়ে পড়ছে এবং ফেসবুকের নেশা ছাড়তে না পেরে আমাদের তরুণ সমাজ পর্যায়ক্রমে আরো অবক্ষয়ের দিকেও ধাবিত হতে পারে ।  তাই প্রযুক্তির কল্যাণে ফেসবুকের কাঙ্খিত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।  

ভালো কাজে ফেসবুক ব্যবহার যেন আমাদের সবসময়ের প্রত্যাশা হয় ।   ফেসবুককে নেশার বস্তু না বানিয়ে আমাদের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা যেন এটাকে তাদের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, সামাজিক যোগাযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে তার মূল্যায়ন যেন করা হয়, আমরা যেন এ ফেসবুককে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ না বানিয়ে সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ নির্মাণের মূল চালিকা শক্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারি এমন প্রত্যাশাই থাকুক সব সময়ের জন্য ।  


একটি গ্লাসে যেমন মদ খাওয়া যায়, তেমনি খাওয়া যায় বিশুদ্ধ পানি ।  পানি কিংবা মদের জন্য  যেমন কোনভাবেই গ্লাসকে দায়ী করা যায়না, তেমনি মন্দ কাজে ব্যবহারের জন্য দায়ী করা যাবেনা ফেসবুককে।  সুতরাং সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে । 

আপনি কি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করেছেন? হয়তো হ্যা, হয়তোবা না ।  কিন্তু আরেকটি ট্যাব-এ হয়তো আপনার ফেসবুক খোলা পড়ে আছে, ঠিক এখনই ।  যদি তাই হয়ে থাকে তবে মিলিয়ে নিন, সচেতন কি এখনি হবেন নাকি আরো পরে ।  যিদিও আমার নিজেরটাও এখন খোলা ।  তবে, সমস্যা কোথায় সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ।  অনেক ধন্যবাদ । 

 

সবার জন্য শুভ কামনা রইলো । 

 

আমার ব্লগ      ।।       ফেসবুক পেজ      ।।      ফেসবুকে আমি    ।। 

 

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । 

Level 2

আমি ওবায়েদ উল্লাহ আইমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 107 টি টিউন ও 350 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

Computer Science & Engineering www.facebook.com/aimanbd


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আপনি ভাল গুল বেছে নিন এবং মন্দ গুল এড়িয়ে চলুন।

    @মোঃ আলমগীর হোসেন: অনেক ধন্যবাদ, বিষয়টি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয় সবার ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি ।

ভাল লিখেছেন ভাই । ধন্যবাদ

    @আমির হামজা সুমন: ভাই, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ।

ভাল লিখেছেন

    @মুন্না: অনেক ধন্যবাদ । শুভ কামনা রইলো ।

ফেসবুক জিনিসটা আসলেই সুবিধার না

    @মাহমুদুল হাসান: সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করেই ব্যবহার করতে হবে, ভালো কাজে ব্যবহার আর মন্দ কাজে পরিহার করতে পারলেই এ টিউনের স্বার্থকতা এবং সর্বোপরি দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে এটাও আশা করা যায় ।

বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে ফেসবুকের দৌলতে । আগে কিশোরি/তরুণী মেয়েরা পড়াশোনা বাদে বাকি সময়টা মায়ের কাজে সাহায্য করতো আর এখন ফেবু গুতায়। ছেলেরা এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছুর দিকে মনোযোগ না দিয়ে ফেবুকাসক্ত হচ্ছে । একেকটা ছেলেমেয়ে অগুনিত রিলেশন করতেছে ফেবুতে । ফ্যামিলি বণ্ডিং কি ভয়াবহ আকারে বিনষ্ট হচ্ছে ভাবলেও ভয় লাগে