আসুন মজা করে ইলেক্ট্রনিক্স কাজ শিখি; একেবারে প্রথম থেকে শুরু। আজকের বিষয়ঃ রেজিস্টর; (প্রথম পর্ব)

আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি আপনারা সবাই ভাল আছেন। অনেক দিন আগে থেকেই আমার এই সাইট টিতে যাতায়ত। আজ সাহস করে একাউন্ট করে একটা টিউন করে ফেললাম। জানিনা কেমন হয়েছে। এটাই আমার প্রথম টিউন।

আমাদের অনেকেরই প্রিয় শখ হল ইলেক্ট্রনিক্স। হাতের কাছে কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র পেলেই অনেকেই খোঁচানো শুরু করি। হয়তো অনেকেই ছোট বেলায় কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যেমন ডিজিটাল ঘড়ি বা ক্যালকুলেটর কৌতুহল বসত খুলে তা আর ঠিক মত লাগাতে পারিনি। যার ফলে আব্বু আম্মুর কাছে বকুনি খেয়ে হয়েছে। তার পরেও কি কমেছে আমাদের জানার আগ্রহ। আজ আমি আপনাদের সামনে ইলেক্ট্রনিক্স এর বিশাল জগতের মধ্য থেকে সামান্য কিছু তুলে ধরব। প্রথমেই বলে নিই, আমি খুব বেশি জানি না আমি নিজে শিখছি এবং যা শিখছি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমি চেষ্টা করেছি খুব সহজ ভাষায় বর্ণনা দিতে। কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হয়ে গেলে অবশ্যই জানাবেন।

তাহলে শুরু করি...

ইলেক্ট্রনিক নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গেলে যে নামটি আগে আসে সেটা হল রেজিস্টর। আজ আমি রেজিস্টর ও এর কালার কোড সম্পর্কে আলোচনা করব।


রেজিস্টর


রোধক বা রেজিস্টর (Resistor) তড়িৎ বর্তনীতে (Electric Circuit) ব্যবহৃত, দুই প্রান্ত বিশিষ্ট একপ্রকার যন্ত্রাংশ । এর কাজ হল তড়িৎ প্রবাহকে (Electric Current) রোধ করা বা বাধা দেয়া। তড়িৎ বর্তনীতে থাকা অবস্থায় রোধক তার দুই প্রান্তের মধ্যে বিভব পার্থক্য (Potential Difference) সৃষ্টি করার মাধ্যমে প্রবাহকে বাধা দেয়। সহজ কথায় যে ডিভাইস বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা প্রদান করে তাকে রেজিস্টর বলে।
এর একক ওহম (Ω)। একে R দ্বারা প্রকাশ করা হয়।


রেজিস্টরের প্রকারভেদঃরেজিস্টর মূলত ৬ প্রকার। যথাঃ
১। ওয়্যার উন্ড টাইপ
২। ভেরিয়েবল টাইপ
৩। কার্বন টাইপ
৪। ফিজিউবল টাইপ
৫। টেম্পারেচার সেনসিটিভ টাইপ
৬। ডিপোজিটেড কার্বন টাইপ।

১। ওয়্যার উন্ড টাইপঃ যে রেজিস্টর ওয়্যার বা তার দ্বারা পেঁচিয়ে তৈরি করা হয় তাকে ওয়্যার উন্ড টাইপ রেজিস্টর বলে।

২। ভেরিয়েবল টাইপঃ যে রেজিস্টরের মান পরিবরতন যোগ্য, অর্থাৎ যে রেজিস্টরের মান পরিবর্তন করা যায় তাকে ভেরিয়েবল টাইপ রেজিস্টর বলে।

৩। কার্বন টাইপঃ যে রেজিস্টর কার্বন দ্বারা তৈরি হয় তাকে কার্বন টাইপ রেজিস্টর বলে।

। ফিজিউবল টাইপঃ এই প্রকার রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমানের চেয়ে বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটি আপনা আপনি ফিউজড(কেটে) যায়। এই রেজিস্টর এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যেন এটা একটা সার্কিটকে ওভার লোড হতে রক্ষা করে।

৫। টেম্পারেচার সেনসিটিভ টাইপঃ তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে যে সকল রেজিস্টরের মান পরিবর্তন হয় তাকে টেম্পারেচার সেনসিটিভ টাইপ রেজিস্টর বলে।

৬। ডিপোজিটেড কার্বন টাইপঃ কাঁচ অথবা সিরামিক জাতীয় পদার্থের উপর কার্বনের বাষ্প জমিয়ে ডিপোজিটেড কার্বন টাইপ রেজিস্টর প্রস্তুত করা হয়।


কালার কোড দ্বারা রেজিস্টরের মান নির্ণয়


কালার কোড দ্বারা খুব সহজেই আমারা মিটার ছাড়ায় যে কোন রেজিস্টরের মান নির্ণয় করতে পারি। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কালার কোড কি? উত্তর হল, প্রতিটা রেজিস্টরের গায়ে বিভিন্ন প্রকার রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা থাকে এগুলোকে কালার কোড বলে। কালার কোডের প্রতিটি প্যাচকে ব্যান্ড বলে। রেজিস্টর সাধারনত ৪(চার) ব্যান্ডের বেশি হয়ে থাকে, এছাড়াও ৫ ও ৬ ব্যান্ডের রেজিস্টরও পাওয়া যায়। এখানে সাধারনত ১২ প্রকার কালার ব্যবহার করা হয়। যেগুলো হলঃ কালো, বাদামী, লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি, ধূষর, সাদা এছাড়াও টলারেন্স এর জন্য সোনালী ও রুপালী কালার ব্যবহার করা হয়। সংক্ষেপে এই কালার গুলোকে বলা হয়ঃ কা, বা, লা, ক, হ, স, নী, বে, ধূ, সা।
প্রতিটি বিভিন্ন ব্যান্ডে বিভিন্ন মান রয়েছে তা নিচে একটি চার্টের মাধ্যমে দেখানো হল। (এই চার্টটাই হইল আসল মাল এইডা বুঝন কম্পুলসারি)


এই চার্টটা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এখন কাজে আসা যাক। কিভাবে আমারা রেজিস্টর মাপব? মনে করি আমার কাছে এই রেজিস্টরটা আছে...

সবার আগে আপনাকে রং চিনতে হবে। আপনি নিজে না চিনতে পারলে আপনার ওয়াইফ বা জিফ এর সাহায্য নিন কারণ মেয়েরা কালারের ব্যাপারে ছেলেদের চেয়ে বেশি এক্সপার্ট। উপরের রেজিস্টরটা ৪ কালার ব্যান্ডের একটি রেজিস্টর । অর্থাৎ এখানে ৪ টি কালার আছে। ১ নং ব্যান্ডের রং বাদামী, ২ নং ব্যান্ডের রং কালো, ৩ নং ব্যান্ডের রং লাল ৪ নং ব্যান্ডের রং সোনালী।
তাহলে আমরা এখন হিসাব করি। চার্টের দিকে তাকায়। এখানে দেখি বাদামী রঙের ১ম মান কি আছে? বাদামীর ১ম মান =১, এরপর কালো, এর দ্বিতীয় মান= ০, তারপর লাল, লালের ৩য় মান= ×১০০। মান দেখা শেষ। এবার ক্যালকুলেশন, নিয়ম হল প্রথম ও ২য় মান পরপর বসে যাবে এবং ৩য় মান গুন হিসাবে বসবে অর্থাৎ,
১০×১০০=১০০০ Ω=১KΩ[ যেহেতু ১০০০Ω = ১KΩ।]
সহজ বুদ্ধি হল তিনটা মান সিরিয়ালে বসিয়ে দিবেন। কিছু বুঝলেন? নিশ্চয় বুঝেছেন। না পারলে নিচের চিত্রটি দেখুন। আর ৪র্থ ব্যান্ড ব্যবহার হয় রেজিস্টরের টলারেন্স নির্ণয়ের জন্য। এখানে ৪ নং ব্যান্ডের কালার সোনালী, সোনালীর ৪র্থ মান ±১০%। অর্থাৎ কাজক্ষেত্রে আমারা ১০০০ Ω বা ১KΩ ১০% কম বা বেশি মানের রেজিস্টর ব্যবহার করতে পারব।

আচ্ছা এবার আমরা আর একটা রেজিস্টরের মান নির্ণয় করি।

এখানে প্রথম, ২য় ও ৩য় ব্যান্ডের কালার যথাক্রমে বাদামী, লাল এবং কমলা। চার্ট আনুযায়ী আমারা হিসাব করি। বাদামীর ১ম মান ‘১’ লালের ২য় মান ‘২’ এবং কমলার দ্বিতীয় মান ‘×১০০০’। তাহলে হিসাব নিকাশ দাঁড়ায় ১২×১০০০=১২০০০Ω = ১২KΩ[ যেহেতু ১০০০Ω = ১KΩ।]

৫ ব্যান্ড কালার কোড প্রায় একই রকম। এখানে ১ম, ২য় ও ৩য় মান একত্রে(পাশাপাশি) বসবে ৪র্থ ব্যান্ডের মান গুণিতক হিসাবে বসবে। ৫ম ব্যান্ড রেজিস্টরের টলারেন্স নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় ।

আচ্ছা একটা ৫ ব্যান্ডের রেজিস্টর দেখি ও এর মান নির্ণয় করি।

উপরে দেখতে পাচ্ছি ১ম ব্যান্ডের রঙ লাল(২), ২য় ব্যান্ডের রঙও লাল (২), ৩য় ব্যান্ডের রঙ কাল (০), ৪র্থ ব্যান্ডের রঙ লাল(গুণিতক ১০০)। তাহলে আমরা হিসাব করে দেখতে পাচ্ছি যে ২২০×১০০ = ২২০০০KΩ এবং ৫ম ব্যান্ডের কালার দ্বারা এর টলারেন্স দেখান হয়েছে।


রেজিস্টর সংযোগ সুত্রঃ


রেজিস্টর দুইটি সংযোগ সুত্র মেনে চলে। সুত্র দুটি নিম্নরূপঃ

১. সিরিজ সংযোগঃ

২. প্যারালাল সংযোগঃ

পূর্বে এখানে (আমার সামু একাউন্ট) প্রকাশিত

পরবর্তী পোস্ট ক্যাপাসিটর নিয়ে।

Level 2

আমি সজীব আমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 95 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি সজীব আহমেদ। পেশায় বর্তমানে বিদ্যুৎ শ্রমিক। ডুয়েট থেকে ইইই তে গ্রাজুয়েশন করেছিলাম।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Nice

আমার ব্লগে প্রথম মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

    @সজীব আমান: আপনার টিউন টি খুব ই চমৎকার হয়েছে , অনেক অনেক ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা আপনাকে , আমার ১ টা প্রশ্ন টলারেন্সে এর জন্য কোন কোন রঙ গুলো প্রযোজ্য হবে ? এই লিঙ্কের ছবিতে হলুদ রঙ টি কে টলারেন্স ব্যান্ড হিসেবে দেখানো হল , লালা রঙ টি কেন টলারেন্স ব্যান্ড হল না ? বুঝতে চাইলাম ভাইয়া , https://www.techtunes.io/electronics/tune-id/186286/tondrabilas_1358698280_6-resistor_5_band_code

দেখা জাক কত শিখতে পারি। ধন্যবাদ

    @alihasan045: ভাই আমি নিজেও একজন ছাত্র। আমি যা পারি তাই লেখার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

nice post

Level 0

Valo akta tune pelam.Mone hoe onek valo kichu sikhte parbo.Vaia,evabei chomotkar sob tune amader jonno kore jaben.Thanks…

    @Jiya.uddin: আপনাদের উপকারে লাগলেই আমার পরিশ্রম সার্থক।
    ধন্যবাদ।

অসাধারণ একটা টিউন । এরকম একটা পোস্ট এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম । টিউনার কে অনেক অনেক ধন্যবাদ । চালিয়ে যান ।

    @রাজা: আপনাকেও সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়।

সুন্দর টিউন, চালিয়ে যান…….

Level 0

অসাধারন টিউন সজীব আমান ভাই !! আপনার পরিশ্রম প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। টেক টিউনে বাংলায় একটা মন্তব্য লিখতে আমার প্রায় আধা ঘন্টা সময় লাগে !!! লেখাটার জন্য আপনার পরিশ্রম আমি কিছুটা হলেও মনে হয় বুঝতে পারছি। যাইহোক যা বলছিলাম, আপনার লেখাতে অনেক ডিটেইল আলোচনা করা হয়েছে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নতুন যেকোনো আগ্রহী শিক্ষার্থীর জন্য, এই ব্যাপারটা অনেকেই মাথায় রাখেন না লেখার সময় যে তাদের লেখাটি কতটা সহজ ভাবে বোধগম্য যেকোনো নতুন শিক্ষার্থীর কাছে!! আমরা আশা করছি সবগুলো পর্ব শেষ করার পর আমরা একটা পুরনাঙ্গ ইবুক পাবো আপনার কাছ থেকে যা অনেকের কাজে লাগবে। গুড লাক !!

    @majhiee: আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি ঠিকই বলেছেন লেখাটাতে বেশ পরিশ্রম দিতে হয়েছে।ভাই আমি চেস্টা করেছি জানিনা কতটুকু হয়েছে। আমি যখন কোন কিছু লিখি তখন মনে করি আমার সামনে কেও বসে আছে আমি তাকে ব্যপারতটা সম্পর্কে বলছি।
    শেষে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়।

Nice post…But last formula te akta vul ase..
Parralel connection e formula : 1/RT = 1/R1 + 1/R2 + 1/R3 + 1/R4 + ⋯ hobe

Level 0

@সজীব আমান:Dear Brother, for u,i login to TT after many days .I request to you please don’t stop it.This will help us lot.End with thank’s advance for next tune.I hope i will be the first commenter that tune.ALLAH HAFEZ

    @SHAKIL: আমি চেস্টা করব ভাই। অনেক ভাল লাগল আপনাদের অনুপ্রেরনা পেয়ে। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি ধন্য আপনাদের মত পাঠক পেয়ে।

Level 2

valo laglo aro sundor sundor tune asa korse. congrants man.

Eletronics amar peo beshoy.Asha kore lekha ta continue rakben…R ha tune ta onik sundor hoyaca.Sathe ache…

Level 0

bro.go ahead.we r w8ing next tunes

@অনিক সরকার: থ্যাঙ্কস।

dada sobguli post ek jaigate link diye dilei valo hoy. tahole amara ek jaigatei sobguli post dekte parbo. jokhon 2nd post korben 1st ta upore link thakbe. tahole j pore ashbe she o ager post guli oti shohoje peye jabe.

Level 0

posta darun হয়েছে কিন্তু R যখন হাতে নিব কোন্টা 1 ম মান আর কোন্টা 4 নং মানে tolarence মান চিনব কিভাবে।